ধর্ষিতা_বউ
পার্ট: ১৪
__প্রাপ্তিকে দেখেই সিয়াম চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে, আপনি কে?
প্রাপ্তি আস্তে করে নিজের কাঁধের থেকে সিয়ামের হাত দুটো সরিয়ে সিয়ামকে সামনে থেকে সরিয়ে চুপচাপ দরজার দিকে এগুতে লাগলো।প্রাপ্তির নিস্তব্ধতায় চেহারায় কোনো বিষণ্ণতার কোনো চাপ নাই।আছে শুধু একরাশ অভিমান। দরজাটা খুলেই প্রাপ্তি ড্রইংরুমে চলে গেলো।প্রাপ্তিকে দেখে সব কিছু যেনো থমকে গেলো,যারা বসা ছিলো তারা দাঁড়িয়ে গেলো।যারা হাট ছিলো তারাও দাঁড়িয়ে গেছে তাকে দেখে।নিলিমা বেগম মেয়েকে দেখে কাছে এসে বললো প্রাপ্তি তুই এইখা,,,,,,,,,নিলিমা বেগম কে হাত দিয়ে এশারায় করে থামিয়ে দিলো প্রাপ্তি।অরণীর রুমে গিয়ে অরণীকে হাত ধরে টেনে ড্রইংরুমে নিয়ে আসলো।
অরণী -আপু তুই কি করছিস?এইভাবে এইখানে টেনে নিয়ে এলি কেনো?
প্রাপ্তির রুম থেকে সিয়াম এসে দাঁড়াতেই অরণী ঘাবড়ে গিয়ে চুপ করে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।
প্রাপ্তির অবস্থা দেখে নিলিমা বেগম আজাদ সাহেব কে আসিফকে ডেকে আনতে বললো।প্রাপ্তির কাণ্ড দেখে বাহিরের লোকজন ও ভিতরে আসতে শুরু করলো।
আয়ানদের আর সিয়ামদের বাড়ীর সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ঝিনুক সুমি কানের কাছে গিয়ে ভাবী এইগুলো কি হচ্ছে মান সম্মান তো কিছুই থাকবে না।আকাশ ঝিনুক কে থামিয়ে, চুপ কর এইখানে এমন কিছু আছে যা আমরা জানিনা।হয়তো আমাদেরকে জানানো হয়নি।
সুমি -আমি আগেই বলেছিলাম। মা আমাকে সেইদিন চুপ করিরে দিয়েছিলো।
নিহাদ-ভাবী এইসব না ভেবে নাটক শেষ পর্যন্ত দেখা উচিত আমাদের।দেখিনা কি হয়।
রাহাত -ভাইয়া! আয়ান তো ওইখানে একা একা বসে আছে।
আকাশ -আগে দেখি এইখানে কি হয়।তারপর না হয় ডাকবো।
প্রাপ্তি নিস্তব্ধতা ভেঙে সবার উদ্দেশ্য বললো, আপনাদের সবার কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আজ এই পরিস্থিতি জন্য।
আসিফ এসে প্রাপ্তিকে থামানোর চেষ্টা করছে,প্রাপ্তি আসিফের দিকে তাকিয়ে আজ শুধু আমি বলবো।আর তুই চুপ থাকবি।আমি আমার ফ্যামিলিকে একটা কথা আগে জিজ্ঞাস করতে চাই আচ্ছা আমি কি তোমাদের কাছে এতোই বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম? যার কারণে একটা ছেলের কোনো মতামত না জেনে আমাকে তার কাছে বিয়ে দিচ্ছো?তোমরা আমাকে বলতে পারতে আমি সবাইকে ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতাম।
আসিফ -কি বলছিস তুই এইসব? তুই কখনো আমাদের কাছে বোঝা হয়ে যাসনি।তোকে কি আমরা কখনো বুজতে দিয়েছি?
প্রাপ্তি -হুম এতো দিন দেসনি তবে আজ আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিস।কেনো রে ভাইয়া আমি জানি সেইদিনের ঘটনাটা পরিণাম শুধু আমাকেই ভোগ করতে হবে।কিন্তু তোদের কাছ থেকে করতে হবে তা কখনো ভাবিনি।
আজাদ সাহেব -প্রাপ্তি তুই কি বলছিস মা?আমরা তো তোর ভালোর জন্যই করছি।
প্রাপ্তি -আব্বু আমাকে বলতে দাও।আজ যদি আমি চুপ করে থাকি তাহলে চারটা জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।
আপনারা যারা এইখানে আছেন আমি সবাইকে বলছি এবং এইখানে থাকা অনেকেই কমবেশি জানেন আমার সম্পর্কে।
যাইহোক আমি ওই দিকে এগুতে চাচ্ছিনা।আপনারা সবাই এইখানে আছেন তাই আমি বলছি আজ দুইটা বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু এইখানে এখন একটাই বিয়ে হবে আর সেটা অরণী আর সিয়ামের।কথাটা শুনেই সবাই অবাক চোখে প্রাপ্তি আর অরণীকে দেখছে।
নিলিমা বেগম -আসিফ তুই চুপ করে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? ওকে এইখান থেকে নিয়ে যা।
প্রাপ্তি -আম্মু! আমাকে এইখান থেকে সরালেই কি সত্যিটা চাপা পড়ে যাবে, কখনোই না।সিয়াম এইখানে তোমার বড় মেয়েকে বিয়ে করতে আসেনি এসেছে অরণীকে বিয়ে করতে।সেইদিন তোমাদের আর ওর বাবা মায়ের ভুলের কারণে আজ সবাইকে এই জায়গা এসে দাঁড়াতে হচ্ছে।
আসিফ -কি বলছিস তুই এইগুলো?
আমি কিছুইতো বুজতে পারছিনা।(সিয়ামের দদিকে তাকিয়ে)সিয়াম তুমি কি বলেছো ওকে?
সিয়াম -আমি ওনাকে খারাপ কিছু বলিনি।আমি সেইদিন আমার বাবা মা কে পাঠিয়েছিলাম অরণীকে দেখে যাওয়ার জন্য কিন্তু সেটা বিপরীত হয়ে গেলো।
প্রাপ্তি -অরণী তুইকি এখনো চুপ করে থাকবি? তুই যদি চুপ করে থাকিস তাহলে আমিই বলছি।ভাইয়া, আম্মু, আব্বু তোমরা একটা বার ভেবে দেখেছো যে মানুষ টা সারাক্ষণ হাঁসি খুশি থাকতো সেই মানুষ টা হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো কেন? কিন্তু আমি ভেবেছি।আমার কাছে সবকিছু গোলমাল লাগছিলো আর সেটা আজ পুরোপুরি ক্লিয়ার হলো।অরণী আর সিয়াম দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে।
আকাশ -কি বলছে এই সব এরা। আজ কি অপমানিত হয়ে বাড়ীতে যেতে হবে নাকি।রাহাত! তুমি গিয়ে আয়ানকে ডেকে আনো। দেখি ও কি বলতে চায়।
আসিফ অরণীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে, নিছের দিকে তাকিয়ে না থেকে আমার দিকে তাকা।(ধমকিয়ে)তাকা বলছি!
(অরণী ভেজা চোখ দুটো নিয়ে আসিফের দিকে তাকাতেই) প্রাপ্তি যা বলছে সব কি সত্যি? অরণী কথা বলছেনা দেখে ধাক্কা দিয়ে কি হলো অরণী সেইদিনের মতো আজও চুপ করে থাকবি? তোর সেই দিনে চুপ থাকায় প্রাপ্তির আজ এই অবস্থা! আর আজও চুপ করে থেকে ওর কোন ক্ষতি করতে চাস তুই?
কথাটা শুনে অরণী চিৎকার দিয়ে কি বলছিস ভাইয়া? আমি আপুর কোনো ক্ষতি চাইনা।সেই দিন আমি ভেবেছিলাম সিয়ামের বাবা মা আপুকেই দেখতে আসছে তাই আমি আপুর ভালো থাকার কথা ভেবে সব কিছু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম।
প্রাপ্তি -(প্প্রাপ্তির চোখের পানি গুলো অনবরত ঝরছে।)বাহ্ তুই সাক্রিফাইস করা শিখেগেছিস। তোরা সবাই এইটা কেনো বুজতে চাস না আমার মতো মেয়েদের কেউ বিয়ে করেনা বা করবেও না।কথাটা বলেই প্রাপ্তি কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে চলে যাচ্ছে তখনি আয়ান পিছন দিক থেকে বললো দাঁড়ান!কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
আয়ানের ডাক শুনে প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে দেখে সেই ছেলেটা, যার সাথে তার এক পলক দেখা হয়েছিলো।
আয়ান একটু এগিয়ে এসে ভাবী সেইদিন তোমরা কাকে দেখে গেছো?
সুমি -(অরণীকে দেখিয়ে) ওকেই তো দেখে দেখে গেলাম।কিন্তু এখন তো,,,,,,
আয়ান -কিন্তু আমি তো তোমাকে সেইদিন এই মেয়ের কথা বলিনি।(প্রাপ্তিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে)আমি তো তোমাকে এর কথা বলেছিলাম।
সুমি -মানে, কি বলছো?
আয়ান -হ্যাঁ ভাবী আমি এর কথাই বলেছিলা।আর বিয়ে করলে আমি একেই করবো।
প্রাপ্তি আয়ানের কথা শুনে চিৎকার দিয়ে এইখানে শুধু একটাই বিয়ে হবে।আর সেটা অরণী আর সিয়ামের।কথাটা বলেই প্রাপ্তি নিজের রুমে চলে গেলো।
আসিফ -আপনাদের সবার উদ্দেশ্য বলছি আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিছু ভুল বুঝাবুঝির কারণে আজ এই অবস্থা।আপনারা সবাই খাওয়াদাওয়া শেষ করুন এইদিকে আমরা বিয়ের জন্য সব গুছিয়ে নিচ্ছি।
কথা গুলো বলতেই গেস্টরা সবাই বাহিরে চলে এলো।আয়ান দের বাড়ীর সবাই ড্রইংরুমেই আছে।
আকাশ -আসিফ এখন আমারা এইখানে থাকাটা মনে হয় ভালো দেখায়না।আমাদের মান সম্মানের একটা ব্যাপার আছে।তোমাদের কি ঘটেছে না ঘটেছে তার জন্য ফল আমরাও ভোগ করতে হলো।
আয়ান -ভাইয়া চুপ কর! বিয়েটা হবে আর সেটা আমি প্রাপ্তি নামের মেয়েটাকেই করবো।ভালো হয়েছে ঝামেলাটা আগেই শুরু হয়েছে না হলে তো আমিই ঝামেলা করতাম। কারণ আমি ওর কথাই সেইদিন বলেছিলাম ভাবীকে।
আসিফ -সরি ভাই! বিয়েটা আর হচ্ছে না।আর ওর অতীতের কথা শুনলে তুমিও এই বিয়ে করবে না।
আয়ান -ওর অতীত নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে চাইনা।আপনারা চাইলে আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই।
ঝিনুক -তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? এতোক্ষণ লোকজন ওই মেয়েকে নিয়ে অনেক কানাঘুষা করতে শুনলাম আর তুই কিনা সেই মেয়েকে,,,,,,,,
আয়ান -আপু শুন আমরা যা দেখি তা কিন্তু ঘটনা নাও হতে পারে। আমাদের দেখার বাহিরেও যে কিছু থাকতে পারে সেটা আমরা মানিনা।
(প্রাপ্তির ফ্যামিলির দিকে তাকিয়ে) প্লিজ আমি আপনাদের আবারো বলছি ওর সাথে আমাক একবার কথা বলতে দিন।
চলবে,,,,,,,,