ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩৭

0
3821

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩৭

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আসিফের বিয়ের সব কিছু মিটে গেছে।আকাশ সুমিকে ডেকে বলছে সব কিছু গুছিয়ে নিতে আজ তারা বাড়ি চলে যাবে।আকাশে কথা শুনে নিহাদও একি কথা বলছে।নিলিমা বেগম তাদের চলে যাওয়ার কথা শুনে মন খারাপ করে, বাবা আকাশ! তোমরা সত্যিই আজ চলে যাবে? আরো দুই দিন থেকে যাও।বিয়ের ঝামেলাতে তোমাদের তেমন আদর যত্নআত্তি করতে পারিনি।নিহাদ! বাবা তুমিও অমত করোনা।

নিহাম -আন্টি আমি সব কাজ পেলে এখানে ছুটে এসেছি শুধু আপনাদের সাথে আনন্দটা ভাগাভাগি করবো বলে।আমার অফিসে কাল গিয়ে জয়েন হতে হবে।

নিলিমা -আকাশ তুমি আর সুমি না হয় আরো দুটো দিন থাকো।

আয়ান আর প্রাপ্তি এসে, কি হয়েছে মা?

নিলিমা বেগম -আকাশ আর নিহাদ বলছে চলে যাবে। তাই ওদের বলছি আরো দুই দিন থেকে যেতে।নিহাদ বলছে কাল ওর অফিসে জয়েন করতে হবে।এইজন্য আকাশকে বললাম থেকে যেতে।

আয়ান -হে রে ভাইয়া! তুই আরো দুই দিন থেকে যা পরে আমরা সহ এক সাথে চলে যাবো।
আকাশ -না আয়ান তুই তো আব্বুকে চিনিস।সত্যি কথা বলতে আমি আব্বুকে এখানে আসবো এইটা বলিনি।আমি শুধু বলেছি সুমিকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। আব্বু আর কিছু জিজ্ঞাস করেনি কোথায় যাবো বা অন্য কিছু। আমি শুধু তোদের কথা রাখার জন্যই এসেছি।(প্রাপ্তির কাছে এগিয়ে এসে তার মাথায় হাত রেখে)আমার এই ছোট্র বোনটার আবদার টা রাখার জন্যই আসলাম।

আয়ান -ঠিক আছে তাহলে তোদের আর আটকাবো না।তবে আবার কখন দেখা হয় কি জানে।

ঝিনুক -শীঘ্রই দেখা হবে।কারণ অভ্রর বিয়েতে আমরা বর পক্ষ হয়ে আসতে হবে না?
ঝিনুকের কথায় সবাই অট্র হাঁসি দিয়ে,
প্রাপ্তি -রাইট আপু!তবে এর আগেই হয়তো দেখা হবে তবে সেটা সারপ্রাইজ হিসেবে থাক।
নিহাদ -ওকে প্রাপ্তি! তোমার সারপ্রাইজের অপেক্ষায় রইলাম।
সন্ধ্যার আগেই আকাশ আর নিহাদরা বেরিয়ে পড়লো।আকাশ বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে।রফিক মেইন দরজা খুলে দিয়ে, ভাইয়া আপনারা চলে আসছেন? ভালোই করছেন বাড়িটা আপনাগোরে ছাড়া ভালো লাগেনা।আকাশ আর সুমি ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে,
আকাশ -রফিক চাচা আব্বু কোথায়? আম্মুকেও তো দেখছিনা।
আয়েশা বেগম এসে, এইতো আকাশ তোরা চলে এলি? তবে ভালো হয়েছে।বাহিরের থেকে এসেছিস উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
সুমি আয়েশা বেগমের দিকে এগিয়ে এসে মা শরীরের কি অবস্থা? এই কয়দিন আমার এই মা কে কতো মিস করেছি তা বলে বুজাতে পারবোনা।

আয়েশা বেগম- হে আর পাম দিতে হবে না।আমার মেয়েটা যে আমায় কতো মিস করেছে সেটা আমি বুজেছি।এখন যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।

প্রাপ্তিদের বাড়ির সবাই রাতে খেতে বসেছে,আজাদ সাহেব নীরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

অরণী -আব্বু ওনি আগের দাদীদের নিয়ম পালন করছেন।কতো বার করে আমি বললাম খেতে বসো, না ওনি মায়ের সাথে এক সঙ্গে খাবেন।প্রাপ্তি এসে বসতে বসতে কি হয়ে চেঁচাচ্ছিস কেনো? আস্তে করে বললেই তো হয়।
অরণী -হুম আরেক জন এসে জুটেছে।ইনি আর কম কিসের। একি দাঁড়িপাল্লার লোক।
কথাটা শুনে রেশী ফিক করে হেঁসে দিতেই। আয়ান অরণীর দিকে তাকিয়ে,এতোদিন পর একটা কাজের কাজ করছো।

অরণী -কি বলতে চাইছো এতো দিন আমি অকাজ কুকাজ করে বেড়াতাম নাকি?
আপু তোর এই আয়ানকে সামলা বলে দিলাম পরে কিন্তু ঠেলা বুজবে এই অরণীর পিছনে লাগলে কি হয়।

আয়ান -আচ্ছা সিয়াম! তুমি এই দজ্জালটাকে সামলাও কি করে। রেশী ওর কথা শুনে হাঁসলো বলেই কথাটা বললাম।আর ও কি উল্টাপাল্টা বকবক করেই যাচ্ছে।
সিয়াম -একমাত্র আপনিই আমার কষ্টটা বুজেছেন।

অরণী -কিহ আমি দজ্জাল?ঠিক আছে দজ্জাল কাকে বলে আমি বুজিয়ে দিবো।

আসিফ -আয়ান এর সাথে আর কথা বলার দরকার নেই। না হলে সত্যি কি করে না করে এর কোনো বিশ্বাস নেই।

প্রাপ্তি -নীরা তুমি বসো। আব্বু! কাল আমরা চলে যাবো সকাল বেলা।

আজাদ সাহেব -কি বলিস তোরাও চলে যাবি?

প্রাপ্তি -তোমার দুই মেয়ে গেলে কি হয়েছে তোমার আরেক মেয়ে আসছে।এখন তার একটু আদর যত্ন খাও।কি বলিস অরণী?

অরণী -হুম আপু ঠিকি বলেছে।ভাবী তুমি আমাদের আদরে ভাগ বসিয়ে দিলে?যাক ভালোই।
সবাই খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে চলে গেলো।সকালে উঠে প্রাপ্তিরা নাস্তা করে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো।অভ্র আর রেশীর বিয়েটা ঠিক হলেও রেশী আর অভ্রর তেমন কথা হয়না।
প্রাপ্তি রান্না করতে ব্যস্ত, রেশী কলেজ থেকে এসে দেখে প্রাপ্তি রান্না করা নিয়ে খুব ব্যস্ত।রেশী চেঞ্জ করে এসে ভাবী তুমি এখনো রান্না করছো।দেখি আর কি লাগবে আমাকে বলো আমি তোমাকে হেল্প করছি।

প্রাপ্তি -আর বলিস না, তোর ভাইয়া হঠাৎ ফোন করে বললো অভ্র আর নিশান ভাইয়া আসবে তাই একটু ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
কথাটা বলতে না বলতেই কলিংবেলের শব্দ শুনে ওই যে ওরা মনে হয় এসে গেছে তুই গিয়ে দরজাটা খুলে দে আমি আসছি।

রেশী কথাটা শুনেই গলাটা যেনো শুকিয়ে আসছে।ভাবী আমি যাবো?

প্রাপ্তি -হ্যাঁ যাও। দরজাটা খুলে দিয়ে আসো।রেশী আর কিছু না বলে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।আয়ান মুচকি হেঁসে কিরে দরজা খুলতে এতো দেরি কেনো তোর?

প্রাপ্তি এসে আরে সে অভ্রর কথা শুনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেবেছে সে দরজা খুলবে কি না তারপর আমি বলাতে এসে দরজা খুলে দিলো।

অভ্র রেশীর দিকে তাকিয়ে,আমার মনে হয় এইখানে আসাটা রেশীর কাছে ভালো লাগেনি তাই হয়তো দরজা খুলতে চায়নি।

রেশী প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে ভাবী ওনি কিন্তু আমায় মিথ্যা অপবাদ দিতেছে।আমি এইরকম কোনো কিছুই মনে আনি নি।

আয়ান -অভ্র তুই আমার বোনটা কে কেনো এই অপবাদটা দিচ্ছিস? তোর কিন্তু একদম উচিত হয়নি।বলে হাঁসতে শুরু করলো।

প্রাপ্তি -আচ্ছা তোমাদের দুজনকে দেখছি, নিশান ভাইয়া এখনো আসিনি কেনো?

আয়ান -আর বলো না।ও আসতে ছেয়েছিল নীরা ফোন করেছিলো তোমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাই ও এইখানে না এসে তোমাদের বাড়িতে গেছে।অভ্র তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।প্রাপ্তিকে রুমে যাওয়ার জন্য ইশারা করে রুমে চলে গেলো।
প্রাপ্তি-আচ্ছা তোমরা বসে কথা বলো আমি আসছি।
প্রাপ্তি কথাটা বলে আয়ানের পিছুপিছু চলে গেলো।রেশীও চলে যাবে এমন সময় অভ্র বলেতে লাগলো,চলে যাচ্ছো কেনো? তুমি আমাকে দেখে এমন ভাব করো যে আমার সাথে তোমার কোনো সম্পর্কই নেই।রেশী! কয়েকদিন পর আমাদের বিয়ে। এখনো তুমি দূরে সরে থাকবে?

রেশী -(নিজের নিরবাতা ভেঙে) সেইদিনের ঘটনার জন্য সরি।আমার জন্য আপনাকে কতো অপমান সহ্য করতে হয়েছে। আসলে আপনিই বলুন আমার জায়গা থাকলে আপনি কি করতেন?

অভ্র মুচকি হেঁসে বসা থেকে উঠে রেশীর কাছে এসে সামনে দাঁড়িয়ে, তোমার জায়গায় থাকলে আমি কি করতাম জানো? যে ছেলের সাথে আমার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার সাথে দেখা করতে চাইতাম।তাকে জানতে চাইতাম।সে কি আমার ভালোবাসার যোগ্য কিনা পরিক্ষা করার চেষ্টা করতাম।

রেশী অভ্রর কথা গুলো শুনে নিচের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে,বুজেছি আমার ভুল ছিলো।আচ্ছা আপনি আমার সাথে তাহলে দেখা করেননি কেনো? আমি না হয় দেখা করতে বলিনি কিন্তু আপনি কেনো করেননি?

অভ্র -আমি দেখা করতে অনেক বারই বলেছিলাম।কিন্তু তোমার সৎ মা বলেছিলো তুমি নাকি দেখা করতে চাওনা।তাই আমিও আর জোর করেনি।

রেশী -আচ্ছা পরে যখন এই বাসায় আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিলো তখন বলেননি কেনো?

অভ্র- বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে।হয়তো তখন বললে আয়ান আমায় ভুল বুজতো এই ভয়ে বলিনি।সব কিছুরই একটা সময়ের প্রয়োজন হয় রেশী।

রেশী -হুম। আপনি বসুন এখুনি ভাইয়া এসে যাবে।আপনার আর একা লাগবেনা।

অভ্র -কে বলেছে আমি এইখানে একা আছি।আমার সাথে এমন একজন আছে যাকে আমি পৃথিবীর সবছেয়ে কাছের
মানুষটাই ভাবি।আচ্ছা সেই কি সারাজীবন আমার পাশে থাকবে? নাকি মাঝ পথে আবার আমাকে ছেড়ে পালাবে?তবে এইবার সে পালাতে চাইলেও পালাতে দিবোনা বলে দিলাম।কথাটা শুনে রেশী লজ্জা পেয়ে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

প্রাপ্তি অনেকক্ষণ আয়ানের জন্য অপেক্ষা করে, কই গো তোমার হলো?কখন সে ফ্রেশ হতে ঢুকলে এখনো বের হয়ে আসছো না কেনো?

আয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে, কথাটা আবার বলো তো।

প্রাপ্তি -কোন কথা?

আয়ান -ওইযে একটু আগে বললা না,কই গো তোমার হলো।তোমার কথাটা একদম বুকের বাম পাশে লাগছে।এখন যে আবার শুনতে ইচ্ছে করছে।

প্রাপ্তি -ফাজিল একটা। অভ্র ভাইয়া কখন থেকে একা একা বসে আছে, খাবেটা কখন?

আয়ান -(দুষ্টু একটা হাঁসি দিয়ে)কোথায় একা রেখে এলাম। সাথে তার প্রেমিকা দিয়ে আসলাম কথা বলার জন্য আর তুমি বলছো একা একা।

প্রাপ্তি-(ভ্রু গুলোকে কুঁচকে) কিহ্ তুমি না ওর ভাই। নিজের বোনকে,,,ছিঃ ছিঃ

আয়ান-এই তুমি ছিঃ ছিঃ করছো কেনো? আমি ভাই ঠিক আছে,কিন্তু আমি বন্ধুও।আর অভ্রর প্রতি আমার সেই বিশ্বাস আছে, সে এমন কোনো কাজ করবেনা যেটা আমার খারাপ লাগবে। এখন চলো অনেক ক্ষুধা লাগছে বউয়ের হাতের রান্না খাবো বলে বাহিরের থেকে খেয়ে আসিনি।

প্রাপ্তি -আচ্ছা চলো।
দুজনে গিয়ে দেখে অভ্র একা বসে বসে বই পড়ছে,
আয়ান এসে কিরে অভ্র রেশী কোথায় ওকে দেখছিনা।

অভ্র -আয়ান! ও মনে হয় ওর রুমে চলে গেছে।

আয়ান-তুই এতো আনরোমান্টিক কেনো?

অভ্র-মানে?

আয়ান -(বিরক্তিকর ভাব নিয়ে)কিছুনা এখন খেতে আয়।

কিছুদিন পর,,,,,,,,,,,,,,,,

আয়ান অফিস থেকে বাসায় এসে দেখে প্রাপ্তি রুমে নেই। ওয়াশ রুমে আছে ভেবে নিজের জামা কাপড় চেঞ্জ করে রেশীকে ডেকে চা দিতে বলে বারান্দায় গিয়ে বসলো।প্রাপ্তি তো ওয়াশ রুমেই আছে আমার কাছে এতোটা খারাপ লাগছে কেনো।মনে হচ্ছে প্রাপ্তি বাসায় নেই।নাহ আগে গিয়ে দেখে আসি বলে উঠতে যাবে তখনি রেশী এসে চায়ের কাপ টা হাতে দিয়ে চলে গেলো।আয়ানের কেমন জানি খটকা লাগছে, রেশী এতো গম্ভীর হয়ে আছে কেনো।অবশ্য ও তো এমনিতেই আমার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না।অনেক মেয়ে আছে অনেক চটপটে কিন্তু রেশী শান্ত প্রকৃতির মেয়ে,চা টা খেতে খেতেই কথা গুলো ভাবছে আয়ান।কিন্তু প্রাপ্তি এতক্ষণ ওয়াশ রুমে কি করছে। আমি বাসায় এসেছি এতক্ষণ হয়ে গেলো,,, না না আমি নিজেই দেখে আসি বলেই উঠে চায়ের কাপ টা রেখে ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখে দরজা খোলা কিন্তু ভিতরে কেউই নেই।প্রাপ্তিকে না দেখে আয়ানের বুকের ভেতর টা জেনো ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।কোথায় গেলো প্রাপ্তি? ও তো আমাকে না বলে কোথাও যাবেনা।
নাহ্ রেশীকে জিজ্ঞাস করে দেখি। কোথায় গেছে ও।
রেশী! রেশী! ডাকতে ডাকতে ড্রইংরুমে এসে দেখে রেশী বসে চোখেরজল পেলছে।
রেশী তুই কান্না করছিস কেনো? তোর ভাবী কোথায়?

রেশী- ভাইয়া আমিও কলেজ থেকে এসে দেখি ভাবী বাসায় নেই। কোথায় গেছে আমি কিছুই জানিনা।আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে আছে কিন্তু তুমি যখন অফিস থেকে একা বাসায় এলে তখন বুজলাম তোমার সাথে নেই।ভাইয়া ভাবী কোথায় গেছে তুমিও জানো না?আমার খুব খারাপ লাগছে ভাবীর জন্য।
রেশীর কথা শুনে আয়ানের ধম বন্ধ হয়ে আসছে।ঘরের চারদিকটা যেনো ঘুরছে।প্রাপ্তির কোনো বিপদ হলো নাতো?

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে