ধর্ষিতা_বউ পার্ট:২৪

0
3315

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:২৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

_আয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো এক অজানার পথে। কোথায় যাবে কি করবে কিছুই মাথায় আসছে না আয়ানের। বাড়ি থেকে না এসেও উপায় কি? ওই বাড়িতে থাকলে প্রাপ্তিকে বার বার আব্বুর কাছে অপমান আর অপদস্থ হতে হতো।নিজের স্ত্রী কে নিজের চোখের সামনে এইভাবে দেখা আমার পক্ষে দেখা সম্ভব না।কথা গুলো ভাবতেই প্রাপ্তির দিকে নজর পড়লো আয়ানের। সকাল থেকে তো মেয়েটা কিছু খায়নি।আমি অফিসে যাবো বলে সবকিছু রেডি করতেই তো সময় চলে গেলো তারপর তো আব্বু আসার পর আর খাওয়াই হয়নি।
একটা রিকশা দাঁড় করিয়ে, মামা রেস্টুরেন্ট এর দিকে চলেন।কথাটা শুনে প্রাপ্তি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এমন একটা অবস্থায় রেস্টুরেন্টে যাবার কথা মাথায় আসে কি করে। এখন কি রেস্টুরেন্টে যাবার সময়?

আয়ান-হা করে এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? রিকশায় উঠো।

প্রাপ্তি চুপচাপ রিকশায় উঠে বসলো।দুজনে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। আয়ান অনেক গুলা খাবার অর্ডার করলো। প্রাপ্তি শুধু দেখেই যাচ্ছে।

আয়ান প্রাপ্তির তাকানো দেখে, চিন্তা হচ্ছে?
চিন্তা করোনা! দেখবে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।ওয়েট! আসিফ ভাইয়াকে একটা ফোন দিয়ে এইখানে আসতে বলি।
ফোনটা পকেট থেকে বের করে আসিফকে ফোন দিয়ে বললো রেস্টুরেন্টে আসার জন্য।
আসিফ আর কোনো প্রশ্ন করলো না আয়ান কে।
আয়ান আসিফের সাথে কথা শেষ করে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।সকাল থেকেতো কিছুই খাওনি।
এখন খেয়ে নাও।ভাইয়া আসলে তুমি ভাইয়ার সাথে চলে যাবে।এইদিকে আমি বাসা ঠিক করে একটা চাকরি পেয়ে গেলেই তোমাকে নিয়ে আসবো।

প্রাপ্তির হাজার টা প্রশ্ন নিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আমাকে ওই বাড়িতে দিয়ে ওনি কোথায় থাকবে? চাকরি বা পাবে কোথায় এখন?এই কয়েকটা দিন ওনাকে দেখেই কেমন জানি মায়া কাজ করে।

আয়ান প্রাপ্তির চোখের দিকে তাকিয়ে মুছকি হেঁসে,শুধু তাকিয়েই থাকতে পারো মুখে তো আর কিছু বলতে পারো না।মনে যে প্রশ্ন গুলো দানা বেধেছে সেই প্রশ্ন গুলো আনসার পরে দিবো। আগে খেয়ে নাও।

অনেকক্ষণ পরে আসিফ চলে আসলো।আসিফকে দেখে আয়ান উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে ভাইয়া বসুন।

আসিফ -হুম তুমিও বসো।

আসিফ বসতে বসতে তোমরা কোথাও যাচ্ছো নাকি?

প্রাপ্তি -তুই কি করে বুজলি আমরা কোথাও যচ্ছি?
আসিফ -ব্যাগ দেখে।তো হঠাৎ আমাকে ডাকা?
আয়ান -আসলে ভাইয়া,,, আমরা বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি। আমার আব্বু হঠাৎ করে আজ সকালেই দেশে চলে আসে তারপর কি আর বলবো আপনাকে!

আসিফ -আর কিছু বলতে হবেনা আমি বুজেছি।এখন কি! আমার বোন কে আমি নিয়ে যাবো তাই তো? আয়ান আমি তোমাকে বিয়ের দিনে বলেছিলাম এই বিয়েটা করোনা। (প্রাপ্তি আসিফকে আকটাতে চেষ্টা করছে,সেই দিকে আসিফের কোনো খেয়ালি নেই,)কিন্তু তুমি আমার কথা শুনো নাই।আমার বোন আমাদের কাছে এতোটা ফেলনা নয় যে তাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিবো।

আয়ান -ভাইয়া আপনি আমার কথা টা একবার শুনুন?

আসিফ -কি শুনবো তুমি আমার কাছে এখন ক্ষমা চাইবে তাই তো? কোনো প্রয়োজন নেই, আমি আমার বোন কে নিয়ে যাচ্ছি।কথাটা বলেই প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে উঠাতে যাবে তখনি প্রাপ্তি আসিফের হাত ঝেড়ে ফেলে দিয়ে তুই একটু চুপ করবি? অনেকক্ষণ থেকে একটা মানুষের নামে যা নয় তাই বলে যাচ্ছিস।

আসিফ -কি শুনাবি? দেখি শুনা। আবার বসে পড়ে)

প্রাপ্তি -(কমল স্বরে)ওনিও সব কিছু ছেড়ে আমার সাথে চলে এসেছে।প্রাপ্তি সব কিছুই আসিফকে বললো।আসিফ সব শুনে লজ্জা পেয়ে আয়ানের হাত দুটো ছেপে ধরে সরি আয়ান! আসলে আমি বুজতে পারিনি।

আয়ান -কোনো সমস্যা না।আপনাকে শুধু এই জন্যই ডেকেছি প্রাপ্তিকে কয়েক দিনের জন্য আপনাদের বাড়িতে নিয়ে যান আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করেই নিয়ে আসবো।

আসিফ প্রাপ্তিকে নিয়ে আসার দুইদিন পরেই আয়ান অভ্রকে নিয়ে প্রাপ্তিদের বাড়ি আসে প্রাপ্তিকে নিতে। এই দুই দিন প্রাপ্তির কিভাবে যে কেটেছিলো প্রাপ্তি কাউকে বুজাতে পারবেনা।রুমে বসে আয়ানের কথার শব্দ শুনে যেনো সুস্থির নিশ্বাস ফিরে এলো প্রাপ্তির।

আসিফ আর আজাদ সাহেব এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে,,
আজাদ সাহেব -কেমন আছো বাবা?

আয়ান -জ্বী বাবা ভালো।অভ্রর দিকে তাকিয়ে ওহ্ বাবা আপনাদের তো পরিচয় করানো হলোনা।ও হচ্ছে অভ্র আমি যে অফিসে এমডি হিসেবে জয়েন করেছি। ও সেই অফিসে চাকরি করে।

আসিফ -হাই অভ্র কেমন আছো?

অভ্র -জ্বী ভালো।

আয়ান -ভাইয়া অভ্র আমাকে আর ও একটা হেল্প করেছে।নতুন যে বাসাটা নিয়েছি সেটা অভ্রর জন্যই।

নিলিমা বেগম নাস্তা নিয়ে আসতে আসতে আয়ান তুমি দেখছি একদম সব ঠিক করেই আসছো?

আয়ান -আসসালামু আলাইকুম মা! আপনি কেমন আছেন?

নিলিমা বেগম -আমি একদম ঠিক আছি।
এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু ঠিক করে ফেললে?

আয়ান -মা! আমার পক্ষে একা সম্ভব ছিলোনা।পাশে অভ্র ছিলো বলেই এতো তাড়াতাড়ি সব সম্ভব হয়েছে।আচ্ছা মা! প্রাপ্তি কোথায় ওকে দেখছিনা তো।

আজাদ সাহেব -আয়ান! ও এই বাড়িতে আসার পর থেকেই তো কারো সাথে কথা বলে না।সবসময় কেমন যেনো চিন্তার ভাব নিয়ে থাকে।ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া ও করেনা।

আসিফ -তুমি বসো আমি ডেকে নিয়ে আসছি।

আয়ান -ভাইয়া! আমিই যাচ্ছি আপনি বসেন।
আয়ান প্রাপ্তির রুমে গিয়ে দেখে,প্রাপ্তি মুখে হাঁসির ঝলক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আয়ান গিয়ে খাটের উপর বসে পায়ের উপর পা দিয়ে নাড়াতে নাড়াতে বললো মহারাণী! নতুন বাসা ঠিক করে আসলাম।বলেছিলাম না বেশি সময় লাগবেনা।
সব কিছু গুছিয়ে নাও নতুন বাসায় নতুন করে প্রাপ্তিকে পেতে চাই। (কথাটা শুনে প্রাপ্তি হাঁসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো) কি! ভয়ে পেয়ে গেলে?আমি সেই পাবার কথা বলিনি।ওই বাসাতে তো সব কিছু তোমার ছোঁয়াই থাকবে।তোমার হাতের রান্না খাবো।কি! খাওয়াবে তো।আমিও কিন্তু মোটামোটি রান্না পারি তুমি না পারলেও আমি যা পারি ওতেই চলে যাবে আমাদের, কি বলো?ও তুমি তো আবার কথা বলনা আমার সাথে কাকে যে কি বলি।
বিকাল বেলা সব কিছু গুছিয়ে প্রাপ্তি আর আয়ান নতুন এক সংসারে পা বাড়ালো।সেই সংসারে কয়েক দিন পর এলো রেশী। তিন জন মিলেই চলতে থাকলো তাদের নতুন জীবন।

_আপু! আপু! কই তোরা? অরণী বারান্দার দরজায় দাঁড়িয়ে বাহ্ দুজনে এইখানে প্রেম করা হচ্ছে?অরণীর ডাক শুনে আয়ান আর প্রাপ্তি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো।
(পাঠক আপনারাও ফিরে আসুন ভাবনার জগত থেকে।)

প্রাপ্তি -হুম কিরে,,, কিছু বলবি?
অরণীকে দেখে আয়ান আবার অন্য দিকে ফিরে আছে।

অরণী আয়ানের মুখ ফিরেতে দেখে ভাইয়া আপনি কেনো যে আমার সাথে এই রকম করেন আমি জানি না।যদিও আমার কোনো অন্যায় থাকে তাহলে কি ক্ষমা করা যায়না?

প্রাপ্তি আয়ান কিছু বলার আশায় তাকিয়ে দুজনকেই দেখছে।আয়ান কিছু বলছেনা দেখে প্রাপ্তি বললো,আপনি কিন্তু অরণীকে আজ ক্ষমা করা উচিত। আপনি তো ভাবতেন সেইদিনের ঘটনার জন্যই আমি আপনার সাথে কথা বলিনা।আজ তো আমি আপনার সাথে কথা বলছি তাহলে আপনার ও উচিত ওর সাথে কথা বলার।
প্রাপ্তির কথা শুনে আয়ান অরণীর দিকে ফিরে তাকিয়ে, বলতে পারি যদি তুমি কাল প্রাপ্তির সাথে শপিং এ যাও।

অরণী অট্ট হাঁসি দিয়ে আমার জন্য কোনো মানা নাই ভাইয়া।যেতেই পারি।

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে