তোমার_স্পর্শে পর্বঃ ০১

0
4658

তোমার_স্পর্শে পর্বঃ ০১
– অাবির খান

— মে আই কাম ইন স্যার??

আবিরঃ জ্বি আসুন জহির সাহেব।

জহিরঃ স্যার, আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে আমাদের। বড় স্যার আপনাকে ডিল করতে বলেছে।

আবিরঃ আচ্ছা। কখন শুরু হবে মিটিং??

জহিরঃ স্যার, আনুমানিক রাত ৮ টার দিকে।

আবিরঃ ওহহ। আচ্ছা তুমি আমাকে মিটিং এর যাবতীয় ফাইলগুলো দিয়ে যেও।

জহিরঃ জ্বি স্যার এখনই দিয়ে যাচ্ছি।

এরপর জহির চলে গেলো। আবির তার নিজ কাজে মনোযোগ দিলো। হঠাৎই ওর ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠলো। ও ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মায়ের কল। ফোনটা রিসিভ করে কানে দিলো।

আবিরঃ হ্যালো মা, কেমন আছো??

মাঃ ভালো বাবা। তুই??

আবিরঃ জ্বি মা ভালো। বাবার খবর কি??

মাঃ এইতো মাত্র আসলো অফিস থেকে। এখন ফ্রেশ হতে গেছে। তুই ঠিক আছিস বাবা??

আবিরঃ হ্যাঁ মা। ভালো আছি। তা মিলি কই??

মাঃ আছে ঘুমাচ্ছে। মাত্র ভার্সিটি থেকে আসলো। বাবা, তুই আর কতদিন বাংলাদেশে থাকবি এখানে চলে আয়। তোর বাবাও আর কতদিন সব সামলাবে বল??

আবিরঃ মা, ওখানে আমার ভালো লাগে না। এখানে আমি একটা ভালো কোম্পানিতে ভালো পদে আছি। যদি ইচ্ছা হয় ওখানে চলে আসবো। কিন্তু এখানেই আমার ভালো লাগে।

মাঃ আচ্ছা থাক। তোর ইচ্ছা হলে আসিস। আর ছুটি পেলেই কিন্তু এখানে চলে আসবি। তোকে অনেক দিন হয়েছে দেখি না। অসহায় ভাবে।

আবিরঃ আচ্ছা আচ্ছা আসবো। এখন রাখি অনেক কাজ আছে।

মাঃ আচ্ছা।

আবিরঃ সবাইকে আমার সালাম আর ভালোবাসা দিও।

মাঃ আচ্ছা।

আবিরের মা ফোন রেখে দিলো। এই হলো আবির। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তবে ওর একটা ছোট বোন আছে৷ আবির আজ থেকে ৪ বছর আগেও আমেরিকাতে ছিলো ওর বাবা-মায়ের সাথে। সেখানে পড়া লেখা শেষ করে। আবির চাইলেই সেখানে অনেক বড় পদে কাজ করতে পারতো। কিন্তু বরাবরই ওর বাংলাদেশের প্রতি একটা আলাদা টান কাজ করে। সে এখানে থেকেই কিছু একটা করতে চায়। তাই বাংলাদেশ মাতৃভূমিতে ফিরে এসে একটা বড় কোম্পানিতে খুব সহজেই চাকরি পেয়ে যায় তার নিজ যোগ্যতায়। আর আবিরের কাজের প্রতি খুশি হয়ে তাকে প্রোমোশনও দেওয়া হয়। আজ আবির তার অফিসের একটা ভালো এবং বড় পদেই আছে। সবাই তাকে সম্মান করে এবং ভালোবাসে। আবিরের বাবা-মা আর বোন আমেরিকাতে থাকে। তারা সেখানে বেশ ভালো পজিশনেই আছে। বলতে গেলে আবিররা ধনীদের কাতারেই। কিন্তু আবির খুব শান্ত আর সাধারণ ভাবে থাকতে পছন্দ করে। তার ঝাকঝমকতা মোটেও পছন্দ না। সে নিরিবিলি পরিবেশ খুব পছন্দ করে। আর আবির দেখতে কেমন তা না হয় সামনেই জানা যাবে।

আবির গভীর মনোযোগ দিয়ে জহির সাহেবের দিয়ে যাওয়া ফাইলগুলো দেখছিলো। হঠাৎই আবার ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠলো। আবির দেখে রাফির কল। ফোন রিসিফ করে কানে দেয়। ওপাশ থেকে,

রাফিঃ দোস্ত কেমন আছিস??

আবিরঃ ভালো। তুই??

রাফিঃ ওসাম। হাহা। শোন, আজ একটু দেখা করবি। সবাই আসছে। হ্যাংআউট করবো। আড্ডা দিবো কিছুক্ষন। তুই আসতে পারবি??

আবিরঃ আমারতো ৮ টায় একটা মিটিং আছে। প্রেজেন্টেশন সো করতে হবে। যদি তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারি তাহলে অবশ্যই আসবো। তুই প্লেসের এড্রেস ম্যাসেজ করে দিস।

রাফিঃ আচ্ছা দোস্ত আসিস কিন্তু।

আবিরঃ ওকে ট্রাই করবো।

রাফিঃ আচ্ছা।

রাফি ফোন রেখে দেয়। এরপর আবির প্রেজেন্টেশন এর প্রস্তুতি নিয়ে ৮ টার সময় মিটিং এ চলে যায়। ৯ টার মধ্যে সফল ভাবে আবির প্রেজেন্টেশন শেষ করে। এবং ডিলটাও ফাইলান হয়ে যায়। ফলে ওদের কোম্পানি ২০০ কোটি টাকার প্রোজেক্ট পায়। অফিসের বড় বড় কমকর্তারা সবাই আবিরের প্রতি খুশি।

ফারুক আহমেদ(বস)ঃ সত্যিই আবির তোমার জবাব নেই। কিভাবে এত্তো ঝামেলার ক্লাইন্টদের খুশি করলে?? আমাদের চেয়েও বড় বড় কোম্পানিকে তারা না করে দিয়েছে। কিন্তু তুমি তাদের খুশি করে ফেললে। সত্যি আমি খুব খুশি তোমার মতো একজন দক্ষ কর্মীকে পেয়ে। এভাবে সবসময় কাজ করবে। যা লাগবে আমাকে বলবে।

আবিরঃ অবশ্যই স্যার। দোয়া করবেন।

অফিসের সবার সাথে আবিরও এখন বেশ খুশি। রাফিকে ফোন দিয়ে বলল ও আসছে। রাফিও অনেক খুশি হলো। আবির সব গুছিয়ে নিজের গাড়ি নিয়ে সোজা রাফির দেওয়া এড্রেসে চলে গেলো। আবির যাওয়াতে সবাই অনেক খুশি হলো। বন্ধুরা আবার একসাথে হয়েছে। আবিরের সবচেয়ে কাছে বন্ধুরাই এখানে। তারা হলো, রাফি, সিয়াম, হিসাম, মেহেদী আর শুভ। এই ছয়জন খুব ভালো বন্ধু একে অপরের। সবসময় কথা হয় কিন্তু এখন সবাই কাজের চাপে ব্যস্ত।

সবাই আবিরকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করে। তারপর,

সিয়ামঃ ওররে, মামা দেখি পুরাই হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে। মজা করে।

আবিরঃ আরে না না।

রাফিঃ দেখিস না। হিরো হিরো লাল পুরা। হাহা।

সবাই হেসে দেয়। আবির সবার উদ্দেশ্য বলে,

আবিরঃ অারে শোন শোন, আজ আমি অনেক খুশি। অফিসের অনেক বড় একটা ডিল আমি ফাইনাল করতে পেরেছি। তাই আজ আমি তোদের ট্রিট দিবো চল।

রাফিঃ ওই যে ওই প্রেজেন্টেশনটা??

অাবিরঃ হ্যাঁ।

সবাইঃ কি বলিস। আগে বলবিনা। কংগ্রেস দোস্ত৷

আবিরঃ আচ্ছা চল এখন একটা রেস্টুরেন্টে যাই। জমপেশ একটা খাওয়া দাওয়া করি।

হিসামঃ তা আবার বলতে হয় চল চল।

এরপর সবাই একসাথে একটা দামী রেস্টুরেন্টে চলে যায়। বেশ মজা মাস্তি আর খাওয়া দাওয়া করে সবাই সবাইকে বিদায় দিয়ে যে যার বাসায় চলে যায়।

রাত এখন প্রায় ১২.৩৪ মিনিট। আবির ফাঁকা রাস্তায় বেশ ভালো গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছে। কারণ ওর প্রচুর ঘুম আসছে। তাই তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে বিছানায় গা’টা এলিয়ে দিতে পারলেই হয়। আবিরের একটু ঘুম ঘুম ভাব হতেই কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে আবিরের গাড়ির সামনে পরে। আবির তাৎক্ষণিক হার্ড ব্রেক কষলেও মেয়েটা জোরে ধাক্কা খেয়ে রাস্তা পরে যায়। পুরো রাস্তা খালি। আবির দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটার কাছে যায়। আর সামনে তাকিয়ে দেখে মানুষ নামে হায়নাদের দল মেয়েটাকে তাড়া করছিলো। যার কারণে হঠাৎ করে আবিরের গাড়ির সামনে মেয়েটা পরে যায়। মেয়েটা বেশ ভালোই আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। মাথা ফেটে গিয়েছে। অঝোরে রক্ত ঝরছে। আবিরের হাত পা ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। জীবনে আজ অবধি এমন সিচুয়েশনে পরেনি ও। কিন্তু আজ তাকে পরতে হলো। আবির দ্রুত মেয়েটাকে কোলে তুলে গাড়িতে উঠায়। উঠানোর সময় আবির খেয়াল করে মেয়েটার সাথে একটা বড় ভারী কালো ব্যাগও অাছে। আবির সেটাও তুলে তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে কাছেই একটা হাসপাতালে চলে যায়। দ্রুত ইমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয় মেয়েটিকে। ডাক্তাররা প্রথমে নিতে না চাইলেও আবির ম্যানেজ করে ফেলে। রক্তে আবিরের শার্ট একাকার হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ নার্স বাইরে এসে বলল,

নার্সঃ এখনই রোগীর (O-) রক্ত লাগবে এক ব্যাগ। আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ম্যানেজ করুন। আমাদের এখানে নেই।

আবিরের হাত পা সমানে কাঁপছিলো। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এটা খুব রেয়ার একটা রক্তের গ্রুপ। কার রক্ত (O-) ?? হঠাৎই আবিরের মনে পরে, রাফি একবার রক্ত দিয়েছিলো। ওর রক্তও (O-)। আবির দ্রুত রাফিকে ফোন দেয়।

রাফিঃ হ্যাঁ দোস্ত বল। পৌঁছেছিস??

আবিরঃ ভাই তাড়াতাড়ি *** এই হাসপাতালে চলে আয়। তোর রক্ত লাগবে৷ প্লিজ তাড়াতাড়ি আয়। বলেই আবির টেনশনে ফোন কেটে দেয়।

রাফি হতভম্ব হয়ে যায়। এখন ওর ও খুব টেনশন হচ্ছে। রাফি দ্রুত গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে এসে আবিরের এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যায়। আবির অস্থির হয়ে দ্রুত রাফির কাছে এগিয়ে যায়। আর বলে,

আবিরঃ ভাই আসছোছ। তাড়াতাড়ি চল রক্ত লাগবে। অস্থির হয়ে।

রাফি স্তব্ধ হয়ে আছে আবিরকে দেখে। আবির তাড়াতাড়ি রাফিকে রক্ত দিতে পাঠিয়ে দেয়। কেনো যেন খুব টেনশন হচ্ছে ওর। রাফি রক্ত দিয়ে কেবিনে শুয়ে আছে।

নার্সঃ আপনি কি আবির??

আবিরঃ হ্যাঁ, কেনো?? অস্থির হয়ে।

নার্সঃ আপনার বন্ধু আপনাকে ডাকছে ১০৯ এ।

আবির দ্রুত রাফির কাছে যায়।

রাফিঃ কিরে কাহিনি কি আমাকে বলবি??

আবির এরপর রাফিকে সবটা খুলে বলল। রাফি আবিরকে স্বান্তনা দিয়ে বলল,

রাফিঃ আরে টেনশন করিস না। আল্লাহ ভরসা কিচ্ছু হবে না। তোরতো কোনো দোষ নেই।

আবিরঃ হুম। কিন্তু…

এরপর দীর্ঘ ৪ ঘন্টা কেটে যায়। ওটি থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এসে আমাদের যা বললেন তার জন্য আমি আর আমার বন্ধু মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। সে বলেন…..

চলবে…

সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। ধন্যবাদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে