তোমাতেই পূর্নতা পর্ব-১+২

0
1951

#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ১
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

” তোমাকে একটা আছাড় দিয়ে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করতেছে ”

আমি রিয়ান ভাইয়ের কথা শুনে চমকে পিছনে তাকালাম । তাকিয়ে দেখি উনি অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ইশশশ এখন কি হবে ? উনি তো অফিসে চলে গেছিলেন তাহলে এখানে আসলো কিভাবে ? উনি আমায় একটা রাম ধমক দিয়ে বললেন,

” তুমি জানো না কেউ আমার রুমে আসার সাহস পায় না । তুমি কেন আসলে আমার রুমে ?

কেন রে তোর রুমে কি এমন সোনা, রূপা , হীরা আছে যে কেউ তোর রুমে এসে চুরি করে নিয়ে চলে যাবে । যওসব ঢং ! কথাটা মনে মনে বললেও মুখে বলার সাহস আমার হলো না । তাই আমি চুপ করেই আছি। আমাকে চুপ থাকতে দেখে রিয়ান ভাইয়া আবার ধমক বলল,

” এখনই বের হও আমার রুম থেকে ।

আমি উনার ধমকে কেঁপে উঠলাম । তাও মনের মধ্যে এক ঝাঁক সাহস নিয়ে উনাকে বললাম,

” আমার মতো একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে এতো জোরে ধমক দেওয়া লাগে ? দেইখেন আপনি জীবনে ও বউ পাবেন না !

আমি মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি । এটা কি বলে ফেললাম আমি। এখন দেখা যাবে আমাকে সত্যি সত্যি আছাড় দিয়ে মেরে ফেলবে । আল্লাহ গো আমাকে এই দানবটার কাছ থেকে রক্ষা করো। আমি এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলেই আমার উপর দিয়ে সুনামি বয়ে যাবে। তাই কিছু না ভেবেই দিলাম দৌড় । পিছন থেকে রিয়ান ভাইয়া চিৎকার করে বলে উঠলো ,

” বর্ষা দাঁড়াও বলছি !

কে শুনে কার কথা আমি তো আর এক মূহুর্ত উনার কাছে থাকবো না । আমি এক দৌড়ে তিন্নির রুমে চলে গেলাম। আমি তিন্নির রুমে গিয়ে হাঁপাতে লাগলাম । আমাকে এভাবে হাঁপাতে দেখে তিন্নি এক গ্লাস পানি দিয়ে বলল,

” এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন ? কি হয়েছে ?

আমি পানিটা খেয়ে বললাম,

” তোর ভাইয়ের কাছ থেকে প্রান নিয়ে ফিরে এসেছি।

” তুই কি করেছিস ভাইয়াকে ?

” তর কেন মনে হলো আমি কিছু করেছি ? তর ভাই কি কিছু করতে পারে না ?

” তুই কিছু ঝামেলা পাকিয়েছিস না হলে ভাইয়া চিৎকার করে তোকে ডাকলো কেন ?

” আরে আমি কিছুই করেনি শুধু তোর ভাইয়ার রুমে গিয়েছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে জানি তোর ভাইয়া চলে এলো ।

” তোকে আমি কতো বার বারন করেছি ভাইয়ার রুমে যেতে তাও তুই গিয়েছিস !

” তর ভাইয়া কাউকে যেতে দেয় না তাই তো আমি কৌতুহল বশত গেলাম উনার রুমে কি আছে দেখার জন্য । তর ভাইয়ার রুমটা কিন্তু অনেক গোছানো । আমার রুমটা ও এতো সুন্দর করে গোছাতে পারি না । উনি ছেলে হয়ে কিভাবে এতো সুন্দর করে রুমে গুছিয়ে রাখে ?

” ভাইয়া সবদিক দিয়েই পারফেক্ট তাই এতো সুন্দর করে রুম গুছাতে পারে !

” তর ভাইয়াকে একদিন বলবো আমার রুমটা যেন সুন্দর করে গুছিয়ে দেয় !

” এটা কোনো দিন ও সম্ভব না । ভাইয়া দিবে তর রুম গুছিয়ে ইম্পসিবল !

” তুই তো বলেছিলি আমি তর ভাইয়ার রুমে যেতে পারবো আমি গিয়ে দেখিয়েছি । এইবার উনাকে দিয়ে আমার রুম ও গুছিয়ে দেখাবো !

” অসম্ভব !

” তুই শুধু দেখিস আমি কি করি ! কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা হয়ে যাবে আমি এখন বাসায় যাই !

” আজকে থেকে যা !

” আম্মু বকবে আজ যাই !

” আচ্ছা চল আমি এগিয়ে দেই ।

” হুম চল !

তিন্নি আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড । রিয়ান ভাইয়া তিন্নির বড় ভাই এবং আমার ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড । আজকে কলেজ থেকে তিন্নির সাথে ওদের বাসায় এসেছিলাম । আমি আন্টির হাতের রান্না খেতে অনেক ভালোবাসি তাই আন্টি আমাকে আসতে বলেছিলেন।
আন্টি আমাকে তিন্নির মতোই ভালোবাসে । আমার কোনো কথাই আন্টি ফেলতে পারে না । আমি আমাদের বাসায় আসার পর নাচতে নাচতে সিঁড়ি বেয়ে আমার রুমে উঠতে লাগলাম । তখন ভাইয়া আমার সামনে এসে বলল,

” কিরে এভাবে ব্যাঙের মতো লাফালাফি করছিস কেন?

” আমি মোটেও ব্যাঙের মতো লাফালাফি করছি না তুমি কেন আমার সাথে কাকের মতো কা কা করছো ?

” বেয়াদব মাইয়া বড় ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না ?

” ছোট বোনের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা তুমি জানো না ?

” কে ছোট বোন ? তোকে তো আমরা রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনেছিলাম !

” দেখো ভাইয়া আমার সাথে ঝগড়া করতে আসলে একদম ভালো হবে না !

” আমি কি ঝগড়া করছি নাকি সত্যি কথাই বলছি!

” আম্মু !

আমি ডাক দেওয়ার সাথে সাথে আম্মু রান্নাঘর থেকে ছুটে এলো তারপর বলল,

” আবার দুজনে ঝগড়া করছিস ! শুভ্র তুই কোথায় যাচ্ছিস যা তো !

” হুম যাচ্ছি যাচ্ছি !

ভাইয়া কথাটা বলেই আমার চুল গুলো টান দিয়ে চলে গেল। আর আমি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রুমে গেলাম । রাতে রুমে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছি তখন হঠাৎ করে রিয়ান ভাইয়ার আইডিটা সামনে এলো । সাথে সাথে মাথায় দুষ্টা বুদ্ধি খেলতে লাগলো । আমার একটা ফেইক আইডি দিয়ে রিয়ান ভাইয়াকে মেসেজ দিলাম,

” কি করছো জান !

কিছুক্ষণ পর রিপ্লাই আসলো ……

#চলবে

#তোমাতেই_পূর্নতা
#পর্বঃ২
#লেখিকা_নিদ্রানী_নিদ্রা

আমি মেসেজ দেওয়ার পর রিপ্লাই আসলো একটা ভয়েজ। আমি ভয়েজটা অন করে শুনলাম একটা মেয়ে এই ভয়েজটা পাঠিয়েছে। আমি আবার ভয়েজটা শুনলাম। ভয়েজে বলেছে,

” এই মেয়ে তুমি কে । আমার বরকে জান বলো ? তোমাকে সামনে পেলে একদম খুন করে ফেলবো ।

এই মেয়ে আবার কে ? আয়ান ভাইয়াকে বর কেন বলছে ? আয়ান ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড নিশ্চয়ই ! তা না হলে আয়ান ভাইয়ার আইডিতে কীভাবে আসবে ? তিন্নি তো বলে ,

“আয়ান ভাইয়ার মতো নাকি ছেলেই হয় না । কোনো মেয়ের সাথে রিলেশন তো দূরের কথা মেয়েদের সাথে নাকি কথাই বলতে পারে না !

কথা যদি বলতেই না পারে তাহলে এইগুলো কী ? মনে মনে ভাবলাম কালকে কলেজে গিয়ে তিন্নিকে ভয়েজটা শুনাবো । এখন আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে কানের কাছে এলার্মটা বাজতেছে । ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও চোখ খুলে তাকালাম। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি ৯ টা বাজে। এই এলার্ম তো দেখি কোনো কাজেরই না। ঠিক টাইমে আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিলো না । আমি মনে মনে এলার্মটাকে বকে ফ্রেশ হতে গেলাম। তারপর একেবারে রেডি হয়ে নিচে নেমে নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্য রওনা হলাম।

কলেজে এসে দেখি তিন্নি এখনো আসেনি। আমি তিন্নির নাম্বারে কল দিলাম। তিন্নি কল রিসিভ করে জানালো আজকে নাকি কলেজে আসবে না। আমার ও কলেজে তেমন কোনো ফ্রেন্ড নেই। তিন্নিকে ছাড়া একা একা ভালো লাগছে না কিছু। আমি একটা ক্লাস করেই কলেজ থেকে বেরিয়ে এলাম। আমাদের কলেজ থেকে কিছু দূরে একটা পার্ক আছে। অনেক বাচ্চারা পার্কে খেলতে আসে । আমার ও বাচ্চাদের সাথে খেলতে ভালোলাগে । তাই ভাবলাম পার্কে যাই।

পার্কে গিয়ে তো আমি অবাক। আয়ান ভাইয়া আর একটা মেয়ে পাশাপাশি বসে আছে। একজন আরেকজনকে চিপস খাইয়ে দিচ্ছে । আমি আয়ান ভাইয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আয়ান ভাইয়ার পাশে থাকা মেয়েটা অসম্ভব সুন্দর। একটা স্বচ্ছ গোলাপের মতো । আয়ান ভাইয়া আমাকে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

” তুমি এখানে কি করছ ?

আমি আয়ান ভাইয়ার কথার উত্তর না দিয়ে কোমরে দুহাত রেখে গোয়েন্দাদের মতো বললাম,

” আপনি কি করছেন এখানে ? এই মেয়েটি কে ? কালকে কি এই মেয়েটি ভয়েজ দিছিলো ?

কি বলে ফেললাম আমি ? এখন তো বুঝে ফেলবে কাল রাতে আমি ভয়েজ দিয়েছিলাম । আমার কথায় আয়ান ভাইয়া বলে উঠলো,

” তারমানে তুমি কালকে মেসেজ দিয়েছিলে ? তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে এই মেসেজ দেওয়ার ? ডাফার ?

” আমি তো দুষ্টামি করে দিয়েছিলাম !

আমার কথায় আয়ান ভাইয়া আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো । পারলে আমাকে উনার চোখের আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দিবে । আমার দিকে এভাবে তাকাতে দেখে মেয়েটা বলল,

” আয়ান তুমি ওর দিকে এভাবে তাকাচ্ছো কেন ? বলছে তো দুষ্টামি করে মেসেজ দিয়েছে।

” নিলা তুমি দেখনি কী মেসেজ দিয়েছে আমাকে ?

” দেখেছি। আমার ওকে খুব ভালো লেগেছে দেখতে কি মিষ্টি।

মেয়েটির নাম নিলা। আমার থেকে প্রায় ৩ বছরের বড় হবে । আপুর কথা বলার ধরন অনেক সুন্দর। আপুর সাথে আয়ান ভাইয়া আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। আর এটাও বলে দিলো , আমি যেন কাউকে তাদের সম্পর্কে না বলি ! বিশেষ করে তিন্নিকে। তিন্নি জানলে এখনই আন্টিকে গিয়ে সব বলে দিবে। আমিও বাধ্য মেয়ের মতো কাউকে কিছু বললাম না। আপুর সাথে আমার মাঝে মাঝে কথা হয়। আপু আমাকে ছোট বোনের মতো অনেক ভালোবাসে।

আয়ান ভাইয়ার মতো রাগি মানুষকে আপু খুব সহজেই শান্ত করে ফেলে। দুজন দুজনকে অসম্ভব ভালোবাসে। একজন ছাড়া আরেকজন বাঁচতেই পারবে না। একদিন রাতে আমি শুয়ে আছি। তখন নিলা আপু কল দিলো । আমি কল রিসিভ করতেই আপু বলে উঠলো,

” কেমন আছো বর্ষা ?

” ভালো আপু ! তুমি কেমন আছো ?

” আমার হাতে আর সময় নেই। এখন হসপিটালে ভর্তি আছি। আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি প্লিজ আয়ানকে দেখে রেখো !

” এসব তুমি কি বলছো । তোমার কিছু হবে না আপু। তুমি ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে ।

” বর্ষা প্লিজ বলতে দাও আমায় । ডক্টর বলে দিয়েছে আমার হাতে আর কয়েক ঘণ্টা সময় আছে । তুমি আমার হয়ে আয়ানকে আগলে রেখো । আয়ানের কিছু হলে আমি যে মরেও শান্তি পাবো না ।

আমি আপুর সাথে আর কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম। সিদ্ধান্ত নিলাম কাল সকালে হসপিটালে গিয়ে আপুকে দেখে আসবো । সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি হসপিটালে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি সব শেষ হয়ে গেছে। আয়ান ভাইয়া পাথরের মতো বসে আছে। নিলা আপুর বাসার সবাই চিৎকার করে কান্না করছে । আমি আয়ান ভাইয়ার কাছে গিয়ে উনার কাঁধে হাত রাখলাম। আয়ান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

” আমার নিলা আমায় কথা দিয়ে কথা রাখেনি। আমাকে বলেছিল সারাজীবন আমার সাথে বাঁচবে কিন্তু আমাকে একা করে স্বার্থপরের চলে গেলো । আমায় শেষ করে দিলো বর্ষা।

আয়ান ভাইয়া বাচ্চাদের মতো করে কান্না করতে লাগলো। আপুর মৃত্যুর পর আয়ান ভাইয়া ভিতর থেকে একদম ভেঙে গিয়েছে। আগের মতো আর কারো সাথে কথা বলে না, হাসে না। কেউ কিছু বললেই রেগে উঠে। এভাবে কয়েক মাস কেটে গেল। আয়ান ভাইয়ার আম্মু আয়ান ভাইয়ার টেনশনে দিন দিন অসুস্থ হয়ে উঠছো । আয়ান ভাইয়ার এই পরিবর্তনের কারণ শুধু আমি আর ভাইয়া জানি।

একদিন বিকেলে আম্মু একটা লাল বেনারশি আর কিছু গহনা এনে আমার হাতে দিয়ে বলল,

” এগুলো পড়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে ।

” এইসব তো বিয়ের পোশাক আমাকে কেন এইগুলো পড়তে বলছো ?

” আজকে তর বিয়ে !

” আমার বিয়ে ! কিন্তু কার সাথে ?

” আয়ানের সাথে ।

আম্মুর কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আয়ান ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ? এটা কিভাবে সম্ভব ! আয়ান ভাইয়া এখনো নিলা আপুকে অনেক ভালবাসেন । উনি কিছুতেই এই বিয়েতে রাজি হবেন না। আমি আম্মুকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আম্মু আমার কোনো কথাই বুঝলো না । আমি ভাইয়াকে গিয়েও বললাম আমি এই বিয়ে করবো না। ভাইয়া আমায় বলল ,

” প্লিজ বোন রাজি হয়ে যা। তুই একমাত্র আয়ানকে আগের মতো করতে পারবি। আয়ানকে আবার ও আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে পারবি ।

কেউ আমার কথা শুনলো না । জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল আয়ান ভাইয়ার সাথে। কিন্তু আয়ান ভাইয়া , উনি কি আমায় মেনে নিবে নিজের বউ হিসাবে। কোনোদিন দেবে কি বউয়ের অধিকার ?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে