তোকে চাই (সিজন-২)part: 66
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
?
” না ” শব্দটা বড্ড প্রবলেমেটিক শব্দ। “হ্যাঁ” শব্দটা যত সহজে বলা যায়, না শব্দটা ততটা সহজে বলা যায় না। অল্প পরিচিত মানুষদের সামনে সমস্যাটি আরো বিরাট আকার ধারণ করে। অতি পরিচিত মানুষকে কোনো কিছুতে যেমন চট করে না বলে দেওয়া যায় অল্প পরিচিত মানুষদের ক্ষেত্রে তা হয় না। ভদ্রতার হাসি হেসে ইনিয়ে বিনিয়ে না বলতে হয় তবুও মাঝে মাঝে শেষ রক্ষাটা হয়ে ওঠে না। আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ঠিক সেরকম। বড়-ছোট সবাই মিলে ছাদে বসেছে আড্ডা দিতে। মামানি আর মামুর বিয়ের রোমাঞ্চকর গল্প শোনার পর সবারই ইচ্ছে জাগলো নাবিলা আপুর গান শুনবে। বেশ ভালো কথা, গান শুনতেই পারে তাতে ক্ষতি কিছু নেই। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। নাবিলা আপু খুব কৌশলে গানের বেড়াজালে জড়িয়ে নিলেন আমায়। তিনি দৃঢ়ভাবে ঘোষনা করলেন, তিনি গাইবেন। কিন্তু তার সাথে গলা মেলাতে হবে আমাকে। দু’তিন বার মৃদু হেসে অসম্মতি জানালেও বিশেষ একটা লাভ হলো না। অতি পরিচিত মানুষ হলে চোখ গরম করে মানা করা গেলেও এক্ষেত্রে তা করা যাবে না তাই বাধ্য হয়েই রাজি হতে হলো আমায়। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে অসম্ভব মিষ্টি কন্ঠে গান ধরলেন নাবিলা আপু। বাংলা গান। বাংলা গান শুনে বেশ স্বস্তিই পেলাম তবু এতোগুলো মানুষের সামনে গান! কথাটা ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম, চূড়ান্ত অস্বস্তি নিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই গলা মেলালাম,
”
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার দিনগুলো সব রং চিনেছে, তোমার কাছে এসে।
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে,
ভোরের শিশির খুব ছোঁয়ে যায়,
তোমায় ভালোবেসে।
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
……………………………
…………………….………
আমার ক্লান্ত মন ঘর খুঁজেছে যখন-
আমি চাইতাম,পেতে চাইতাম,
শুধু তোমার টেলিফোন।
ঘর ভরা দুপুর,আমার একলা থাকার সুর
রোদ গাইতো, আমি ভাবতাম,
তুমি কোথায়, কতো দূর?
আমার বেসুর গিটার সুর বেঁধেছে তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার একলা আকাশ চাঁদ চিনেছে,
তোমার হাসি হেসে,শুধু তোমায় ভালোবেসে।
………………………………..
………………………………..
অলস মেঘলা মন আমার আবছা ঘরের কোণ
চেয়ে রইতো, ছুঁতে চাইতো,
তুমি আসবে আর কখন?
শ্রান্ত ঘুঘুর ডাক,ধুলোমাখা বইয়ের তাক
যেনো বলছে, বলে চলছে-
থাক, অপেক্ষাতেই থাক।
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার দিনগুলো সব রং চিনেছে, তোমার কাছে এসে।
শুধু তোমায় ভালোবেসে।❤”
গানটা শেষ করতেই রুহি আপুর চাঁপা আর্তনাদ কানে এলো। সবাই একসাথে আপুর দিকে তাকাতেই অভ্র ভাইয়ের গায়ে ঢলে পড়লো আপু। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, চোখ-মুখ ফ্যাকাশে। আপু ডান হাতটা পেটের উপর রেখে বামহাতে অভ্র ভাইয়ার কলার আকঁড়ে ধরে বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে বলে উঠলো,
— প্রচুর ব্যাথা করছে। আমায় হসপিটালে নিয়ে চলো অভ্র। আমি আর পারছি না।
আপু কথাটা বলে শেষ করতেই দৌড়ে নিচে নেমে গেলেন শুভ্র। সাহেল ভাইয়া ফোন লাগালেন হসপিটালে, শেষ মুহূর্তে ডক্টর সঙ্কট কারোরই কাম্য নয়। অভ্র ভাইয়া হতভম্ব হয়ে বসে আছেন। কিছুই যেন তার মাথায় ঢুকছে না। কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থেকে গাড়ির হর্ণ শুনে ওঠে দাঁড়ালেন উনি। আপুকে কোলে তোলে নিয়ে সিঁড়ির দিকে দৌঁড় লাগালেন। সাহেল ভাইয়া ওদের পিছু নিয়ে সিঁড়িঘর পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েও ঘুরে এসে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। নাবিল আপুর মাথায় হাতরেখে শীতল গলায় বললেন,
— সাবধানে থেকো। তোমাকে তাড়াহুড়ো করে হসপিটালে যেতে হবে না, আমরা তো আছি।
কথাটা বলে আমার দিকে তাকালেন উনি। ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি। সাহেল ভাইয়া আমার দিকে তাকাতেই ঘোর কাটলো আমার। ” আপু অসুস্থ ” কথাটাও চট করে আঘাত হানলো মাথায়। সাহেল ভাইয়া আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— রোদ তুমি যে…
এরপরের শব্দটা আমার কানে পৌঁছানোর সুযোগ না দিয়েই নিচের দিকে ছুঁটে গেলাম আমি। মাথায় তখন একটা কথায় ছুঁটে চলেছে ক্রমাগত, “আপু অসুস্থ “, “আপু অসুস্থ”
আমি, অভ্র ভাইয়া আর আপু বসে আছি পেছনের সিটে। আপুর মাথা এলিয়ে আছে অভ্র ভাইয়ার কাঁধে। ক্লান্ত আপু নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে, চাপা আর্তনাদ করে চলেছে যেন এই আর্তনাদ করার শক্তিটুকুও তার শরীরে অবশিষ্ট নেই। অভ্র ভাইয়া ঘেমে চিপচিপে,কপাল বেয়ে ঝরে পড়ছে ঘামের ধারা। একহাতে আপুকে জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে বারবার কপালের ঘাম মুছছেন উনি। সামনের সিটে বসে আছেন সাহেল ভাইয়া আর শুভ্র। গাড়ি ঝড়ের গতিতে ছুঁটছে। সাহেল ভাইয়া একবার ফোনে হসপিটালে কল করছেন তো একবার শুভ্রকে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলছেন। হসপিটালের কাছাকাছি আসতেই শ্বাস কষ্টের সমস্যা শুরু হয়ে গেল আপুর। টেনে টেনে শ্বাস নিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
— অভ্র? আমার মনে হচ্ছে এটা ওয়ান ওয়ে জার্নি। আমি হয়তো আর ফিরবো না।
আপুর কথায় অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন অভ্র ভাইয়া। যথাসম্ভব শান্ত স্বরে বলে উঠলেন-
— কিসব বলছো,রুহি? চুপ করো। এই টাইমে সব মেয়েদেরই এমনটা মনে হয়। ইটস্ নরমাল। জাস্ট টেক আ ডিপ ব্রেথ। এভ্রিথিং উইল বি ওকে!
— যদি সব ঠিক না হয়। যদি সব অন্যরকম হয়ে যায়, তাহলে তুমি আবারও বিয়ে করতে পারো অভ্র। আমার কোনো সমস্যা নেই তবে প্লিজ একটা রিকুয়েষ্ট রাখবে?
— রুহি! তোমাকে চুপ থাকতে বলেছি। না তোমার কিছু হবে না আমি অন্যকাউকে বিয়ে করবো৷ বাচ্চাদের মতো কথা কেনো বলছো?
— আগে বলো রাখবে। রিকুয়েস্ট! বলো। আমার বেবিটাকে আমার বোনের কাছে দিয়ে তারপর বিয়ে করো। “সৎ মা”- এর ছায়াটা ওর ওপর পড়তে দিও না। আমি জজানি র রোদ ওকে নিজের বাচ্চার মতোই ভালোবাসবে। রেখো?
অভ্র ভাইয়া জোরে শ্বাস নিলেন। কনুই দিয়ে মুখের উপরের ঘামটা মুছে নিয়ে ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
— হবে না। কিচ্ছু হবে না তোমার। এসব বলো না, আমার ভালো লাগছে না। প্লিজ রুহি! স্টপ। দোহাই তোমার।
অভ্র ভাইয়ার কথার জবাব দেওয়ার জন্য নিজেকে জাগিয়ে রাখতে পারলো না আপু। হসপিটালে পৌঁছানোর পাঁচ মিনিট আগেই জ্ঞান হারালো ও। ভয়ে হাত-পা শক্ত হয়ে আসছে আমার। সবার মুখেই অজানা আতঙ্কের ছাপ। রাত ২ টা ৩০ মিনিটে হসপিটালে গিয়ে পৌঁছালাম আমরা। গাড়ি থেকে নামতেই স্ট্রেচারে করে অটি-তে নেওয়া হলো আপুকে। বাড়ির সবাই ধীরে ধীরে হসপিটালে ভীর জমালেন। অভ্র ভাইয়া করিডোরের এককোণে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছেন। উনার ঘামে সিক্ত শরীর যে অল্প অল্প কাঁপছে তা দূর থেকেও বুঝতে পারছি আমি। হঠাৎ-ই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো আমার। ১১ টায় স্যালাইন খুলে ১২ টায় সবাই মিলে ছাদে বসেছিলাম আর এখন প্রায় ৩ টা বাজে….আমার শরীরটাও যে দুর্বল তা এবার জানান দিয়ে চলেছে আমার ব্রেন। ডান হাতের তালু দিয়ে মুখটা মুছে নিয়ে বামপাশে তাকালাম। করিডোরের একপাশের চেয়ারে সাহেল ভাইয়া আর শুভ্র মাথা নিচু করে বসে আছেন। আমি ধীর পায়ে হেঁটে শুভ্রর পাশে বসে পড়লাম। আমি বসতেই চোখ তুলে তাকালেন শুভ্র। মৃদু কন্ঠে বললেন,
— খারাপ লাগছে?
— নাহ। একটু ক্লান্ত লাগছিলো জাস্ট। আচ্ছা? একটা সিজারে কতক্ষণ সময় লাগে? প্রায় আধাঘন্টা হয়ে গিয়েছে, তাই না?
শুভ্র জবাব দিলো না। সোজা হয়ে বসে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে আমার মাথাটা কাঁধে টেনে নিয়ে বললেন,
— রেস্ট নাও। টেনশন করো না। এভ্রিথিং উইল বি ফাইন।
সবাইকে টেনশনের ব্লান্ডারে ব্লেন্ড করে বেশ কিছুক্ষণ পর বাচ্চার তীক্ষ চিৎকার কানে এলো। এই প্রথম বাচ্চাদের চিৎকার এতোটা আরামদায়ক আর আনন্দের মনে হলো আমার কাছে। অটি-র লাইট অফ হলো। একটা তরুন হাসি-খুশি ডক্টর বেরিয়ে এসে মাস্ক খুলতে খুলতে হাসি মুখেই বললেন,
— আমাদের মিষ্টি কোথায়?
অভ্র ভাইয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে নার্ভাস গলায় বললেন,
— ডক্টর! আমার ওয়াইফ এন্ড বেবি?
— এভ্রিথিং ইজ ওকে মিষ্টার আহমেদ। আপনি দু’দুটো কিউট ছেলের বাবা হয়ে গেছেন।
— রুহি!
— উনিও ঠিক আছেন। ব্যাথা সহ্য করতে না পারায় সেন্স হারিয়েছিলেন। একটু শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে বাট সেটা তেমন সিরিয়াস নয়। উনি জলদি ঠিক হয়ে যাবেন। কিছুক্ষণ পর কেবিনে শিফট করা হবে। তখনই দেখা করতে পারবেন আপনারা।
ডক্টর আবারও হাসলেন। উনার হাসি দেখে মনে হচ্ছে উনার সামনে মজার কোনো ফ্যামিলি শো চলছে যা দেখে উনি দারুন আনন্দ পাচ্ছেন। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকেই লাফিয়ে উঠলাম। আপুর জমজ বাবু হয়েছে…কথাটা ভাবতেই নাচতে ইচ্ছে করছে আমার। শুভ্র আর সাহেল ভাইয়া তো রীতিমতো হৈ-হুল্লোড় শুরু করে দিয়েছেন। মামু-মামানি, আব্বু-আম্মু সবার মুখই খুশিতে উজ্জল, একসাথে দু’নাতি পেয়ে গেলেন বলে কথা। উফফ! ডাবল সেলিব্রেশন!!
হসপিটালে সাতদিন থাকার পর বাড়িতে আনা হয়েছে ওদের। সারা বাড়িটা খুশির আমেজে ভরে উঠেছে। আমি সুযোগ পেলেই গালে হাত দিয়ে বাচ্চাদুটোর সামনে বসে থাকছি। দু’জনেই একদম সেইম। গোলাপী চিকন ঠোঁট আর কেমন লালচে ফরসা গায়ের রং। ছোট ছোট হাত-পাগুলো ক্রমাগত ছুঁড়াছুঁড়ি করে চলেছে আর দন্তহীন মুখে হেসে চলেছে। আবার কখনো বা একসাথে গলা মিলিয়ে কেঁদে উঠছে। আমি আর চিত্রা মিলে নামও ঠিক করে ফেলেছি ওদের। একজনের নাম রাখা হয়েছে, রাফসান আহমেদ আদ্র। অন্যজনের নাম রাখা হয়েছে আরাফ আহমেদ রোদ্র। কিন্তু সমস্যা হলো, কে যে আদ্র আর কে যে রোদ্র তাই নিয়ে বিশাল কনফিউশান! মনে হচ্ছে কোমরে দুই ধরনের সুঁতো বেঁধে চিন্হ করতে হবে এবার।
#চলবে….
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
Next part ta chai apuuu
Next part ta cai apu (tomake cai season 2er)
Toke cai season 2er next part ta cai apu please
আপু তাড়াতাড়িএই গল্পটার next part দাও please please……. আমি আসলে বুঝেই পাইনা এত সুন্দর সুন্দর গল্পের আইডিয়া তোমাদের মাথায় কি ভাবে আসে। আমিতো সারাদিন চিন্তা করেও এক লাইনও লিখতে পারবনা……Anyway…soooooo nice stor… Next part pleas… আর অপেক্ষা করাইও না দয়া করে….. ,???❤️❤️❤️
আপু তাড়াতাড়ি next part টা দাও plzz,,, আমি আবার বেশী সময় wait করতে পারিনা by the ways…story টা just wow হইছে,,,,,,এরকম আরো story দিবা। আর হ্যাঁ next part টা তাড়াতাড়িদিও plz plz plz…..
Ato sundor golpo ki kore lekhen sotti hat’s of you…. plzzzz next part taratari din….opekhha r korte parchi na
Kub sundor.story ta porle kub valo lage apu.plz next part ta rly den…..waiting for ur story part…
আপু তুমি কই হারাইয়া গেলা। পরের পর্ব দাও না কেন? এত সুন্দর কেমনে লেখ? খুবই সুন্দর গল্প । আর কি বাকি অংশ দিবা না। সমস্যা থাকলে জানাও। তুমি করে বললাম কিছু মনে কর না।