তোকে চাই❤(সিজন-২)part:47+48+49+50

0
4929

তোকে চাই❤(সিজন-২)part:47+48+49+50
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#
.
?
.
চোখদুটো পিটপিট করে খুলে চারপাশটা দেখার চেষ্টা চালাচ্ছি।মাথাটা বড্ড ভারি ভারি লাগছে আমার। বাম হাতটাতেও কেমন চিনচিনে ব্যাথা।ঘাড় ঘুরিয়ে বামদিকে তাকাতেই দেখি হাতে লাগানো স্যালাইনের নল….ব্যাপারটায় বিস্মিত হলাম আমি।চারপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলাম ঠিক কোথায় আছি আমি?রুমটা কেমন অপরিচিত লাগছে আমার…কিন্তু একটা পরিচিত গন্ধ চারপাশে…..ডানপাশের দেয়ালে আমার আর শুভ্রর ছবি দেখে বুঝতে পারলাম এটা শুভ্রর রুম।।হসপিটালে দাঁড়িয়ে শুভ্রর বুকে আছড়ে পড়ার পর কি হয়েছিলো….কিচ্ছুটি মনে নেই আমার।বেডে শুয়ে যখন এসব কথা ভাবছিলাম ঠিক তখনই ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো শুভ্র।খালি গা…গলায় ঝুলছে সাদা টাওয়াল…পরনে ছাই রঙের থ্রী কোয়াটার প্যান্ট।কিছু চুল এসে পড়েছে কপালে…ভেজা চুলে বিন্দু বিন্দু জল।বুকের পশমগুলো লেপ্টে আছে পরম আবেশে…চোখগুলো হালকা লাল..ঘাড়ে বুকে ফোঁটা ফোঁটা পানি।।শুভ্র ডানহাতে তাওয়ালে চুল মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো।আমার পাশ ঘেষে মাথার কাছে এসে বলে উঠলো –
.
মহারানীর ঘুম ভাঙলো তবে?কি লজ্জায় ফেলে দিয়েছিলে বলো তো আমায়?স্বামী এক্সিডেন্ট করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে আর বউ সেই দুঃখে ৮ ঘন্টা যাবৎ সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে।
.
উনার কথায় অবাক হলাম আমি।৮ ঘন্টা মানে কি?তবে কি আমি ৮ ঘন্টা যাবৎ সেন্সলেস ছিলাম??আমি বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলাম –
.
৮ ঘন্টা?
.
জি ম্যাডাম ৮ ঘন্টা।আর আপনার স্বামীকে তার ভাঙাচোরা শরীর নিয়েই আপনাকে কোলে উঠাতে হয়েছে।এটুকুতেই এই অবস্থা…সত্যি মরে গেলে কি করতে শুনি?(ভ্রু নাচিয়ে)
.
উনার কথায় ভেতরটা কেঁপে উঠলো আমার।সত্যি এমন হলে কি হতো আমি জানি না।আর এই বিষয়টা আমার মনের কোনো একটা কোণায়ও আনতে চাই না কখনো।সকালে উনার এক্সিডেন্টের খবরে যে বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম সেটাও ইচ্ছেকৃত ছিলো না।অটোমেটিক রিয়েকশন ছিলো ওটা…. স্বামীর মৃত্যু বা বিপদের কথায় যে রিয়েকশনটা প্রতিটি নারীরই হয়ে থাকে।।আমি একটা ঢোক গিলে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলাম –
.
এমন কিছুই হতো না।আমি আল্লাহর কাছে সবসময় একটা জিনিসই চাই আপনার আগে আমার মৃত্যু!! আল্লাহ কারো চাওয়া অপূর্ণ রাখে না তাহলে আমার টা কিভাবে অপূর্ণ রাখে বলুন?
.
আমার কথায় যেনো কেঁপে উঠলেন শুভ্র।চোখের দৃষ্টি কঠিন হয়ে উঠলো মুহূর্তেই।কয়েকসেকেন্ড চোখ বুজে থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে একটা জোড় শ্বাস ফেলে একহাতে জড়িয়ে নিলেন আমায়….আমার মাথা উনার বুকে পড়তেই কেঁপে উঠলাম আমি…উনার ঠান্ডা বুকে আশ্চর্যময় এক প্রশান্তি।।উনার উন্মুক্ত বুকের গন্ধেও অন্যরকম এক মাদকতা।উনি আমার মাথায় আলতো চুমু খেয়ে বলে উঠলেন –
.
এমন স্বার্থপরের মতো দোয়া করো না রোদপাখি।তার থেকে দোয়া করো যেনো আমরা একসাথেই হারিয়ে যাই এই পৃথিবী ছেড়ে।আমি মৃত্যুর পরও তোমাকে অন্যকারো হিসেবে সহ্য করতে পারবো না রোদু।আর না পারবো তোমায় এভাবে অসহায় করে রেখে যেতে।তুমি আমার!!তোমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার নামের সাথে শুধু আমার নামটায় জড়িয়ে থাকবে….শুধু আমার নাম।মিসেস নৌশিন আবরার রোদেলা।
.
উনি ছোট্ট নিশ্বাস ফেললেন।আমি চুপচাপ উনার হৃৎস্পন্দনের মাদকতায় মত্ত হচ্ছি। উনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলে উঠলেন-
.
তোমার থেকে আমি তোমায় অনেক গুণ বেশি ভালোবাসি রোদ।আমার না থাকার কথা শুনে তোমার যদি এই অবস্থা হয় তাহলে ভাবো তোমার না থাকার কথা ভাবলেই কতোটা পুড়ে আমার।।তুমি নতুন প্রেমের জোয়ারে ভাসছো রোদ…আর আমি তো এই জোয়ারে নিজেকে হারিয়েছি কোটি কোটি বার।ভালোবাসা জিনিসটাই বড্ড অসহায় বুঝলে?তুমি যখনই কাউকে ভালোবাসবে তখন থেকেই নিজেকে অসহায় মনে হবে….যেমন আমার নিজেকে তোমার কাছে বড্ত অসহায় লাগে রোদ।।নীর মেয়েটা যেমন এই পৃথিবীর কাছে অসহায়…ওর সব আছে…সব থেকেও কিচ্ছু নেই।
.
“নীর” নামটা শুনেই হসপিটালের ওই মেয়েটির কথা মনে পড়ে গেলো আমার।।সাথে সাথে তাকে আমার মতো মনে হওয়ার কারনটাও ধরতে পারলাম।আমাদের দুজনের চাহনীতেই ছিলো অসহায়ত্ব।। ভালোবাসার কাছে আমরা দু’জনেই ছিলাম অসহায়…তাই হয়তো আমাদের দৃষ্টি ছিলো এক… অনুভূতি ছিলো এক।।আমি একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বুক থেকে মাথা তুলে বলে উঠলাম –
.
ওই মেয়েটার কি হলো পরে?
.
কে? নীর?তুমি সেন্সলেস হওয়ার দু’মিনিট পরই সেন্স হারিয়েছে ও।মেয়েটা দু’মাসের প্রেগনেন্ট… আমি বের হওয়ার আগে ওকে আইসিইউ তে ভর্তি করা হয়েছে।।অবস্থা তেমন ভালো না।স্বামীকে হয়তো প্রচন্ডরকম ভালোবাসে।যতোটুকু জানলাম আজই বিয়ের একবছর পূরণ হলো তাদের।ফাস্ট ইউনিভার্সারি।আর প্রথম বছরেই সব শেষ….
.
শুভ্রর কথায় আত্মাটা ধক করে উঠলো আমার।।এই মেয়েটা কি করে সহ্য করবে এই কষ্ট?আর তার অনাগত সন্তান!! জীবনটা এতো কষ্টের কেনো হয়?এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনাগুলো জীবনটাকে বারবার থমকে দিতে চায় কেন??হার্টবিট দ্রুত ছুটছে আমার…গলাটাও কেমন শুকিয়ে আসছে…প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়টা কি প্রবল।কি যন্ত্রণার!!এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো।।শুভ্র “কে” জিগ্যেস করাতেই ভেতর এলো অভ্র ভাইয়া।আমাকে দেখে মুচকি হাসলো।।আমি দ্রুত শুভ্রর বুকের কাছ থেকে সরে বসে মাথা নিচু করলাম।অভ্র ভাইয়া বাঁকা হেসে মজা করে বলে উঠলেন-
.
তো?আমার একমাত্র ফুপাতো বোন এবং একমাত্র শালিকার ঘুম ভাঙলো ?
.
আমি মুচকি হাসতেই পাশ থেকে অনুযোগের স্বরে বলে উঠলো শুভ্র –
.
ভাই? ও যে আমার বউ… সেটা তুই বারবার ভুলে যাস কেন শুনি?সব বললি! এটা তো বললি না যে,, সে তোর একমাত্র ছোট ভাইয়ের একমাত্র বউ।।
.
শুভ্রর কথায় হুহা করে হেসে উঠলেন অভ্র ভাইয়া।তারপর হাসি থামিয়ে বললেন।
.
আমার ঘাট হয়েছে ভাই।এনিওয়ে তোর ফোন কই রে শুভ্র?সাহেল নাকি সকাল থেকে ট্রাই করছে পাচ্ছে না।
.
ওহ্ শিট! ফোনটা হসপিটালে থাকতে যে ব্যাটারি ডাউন হয়েছিলো সেটা আর চার্জ করে অন করা হয় নি।।আমি এখনই কল ব্যাক করছি ভাই।
.
অভ্র ভাইয়া মাথা ঝাঁকিয়ে “রুহি!” রুহি! বলে চেঁচিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।শুভ্র চার্জ থেকে ফোন খুলে অন করতেই ফোনটা বেজে উঠলো । উনি ফোনটা রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিয়ে “হ্যালো” বলতেই ওপাশ থেকে গালির বহর শুরু হলো….
.
শালা!!কয়বার কল করছি?ফোন কি আলমারিতে তোলে রাখার জন্য কিনেছিস??**********টেনশনে মইরা যাইতাছি আর তুই ফোন অফ করে রঙলিলা করিস শালা*****
.
এতো এতো গালি দেওয়ার পরও শুভ্রর মুখে মুচকি হাসি।।আমার কান রীতিমতো ভো ভো করছে….সাহেল ভাইয়াও স্লেং ইউজ করে জানায় ছিলো না আমার।।শুভ্র খুব ধীরে আমার হাতের সুঁচ খুলে দিতে দিতে বললেন-
.
আমার দুলাভাই হওয়ার যে খুব শখ তোর সেটা আমি ভালো করেই জানি।।বার বার শালা বলে সেটা প্রমাণ করতে হবে না দোস্ত।
.
ব্যাটা ফাজলামো কমা।ফোনটা অফ ছিলো কেন সেটা বল?এদিকে ঘাম ছুটে গেছে আমার।।কাল আমার এসাইনমেন্ট আর আজ আমি সাতঘন্টা যাবৎ এয়ারপোর্টে বসে আছি।।তিন ডাবল টাকা দিয়ে টিকেট নিয়েছি….তবু বালের ওয়েদারের জন্য ফ্লাইট অফ।।নয়তো এতোক্ষণে দেশে থাকতাম আমি।
.
কুল ইয়ার!! ভাষা ঠিক কর।রাগলে তোর ভাষা ঠিক থাকে না।(হাসতে হাসতে)
.
তোর কুলের ******। সাইশাইন কাঁদে কেন?কি করছিস তুই?বিয়ে কি ওকে কাঁদানোর জন্য করেছিস??ইচ্ছে তো করছে তোকে*****।
.
আরে বাবা শুনবি তো আমার কথা!! বাজে কথা থামা…ওকে কাঁদাতে হয় না…একা একাই কাঁদে।আমার ছোট্ট এক্সিডেন্ট হয়েছিলো তাতেই ম্যাডেম কেঁদে কেটে ৮ ঘন্টা যাবৎ সেন্সলেস হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।।
.
কস কি?এক্সিডেন্ট।শালা এক্সিডেন্ট করছিস সেটা তুই এতোক্ষণে বলছিস আমায়??ঠিক আছিস তুই??নিশ্চয় ব্যাপক ইনজুরি হয়েছে….নয়তো সানশাইন এতো হাইপার হবে না।।
.
না রে।মাথায় দুটো সেলাই লেগেছে।হাতে একটু ব্যথা পেয়েছি আর পায়ে।।দিব্যি হেঁটে বেড়াচ্ছি। আমার কথা ছাড়…যা এপার্টমেন্টে গিয়ে রেস্ট নে।।এসাইনমেন্ট কমপ্লিট কর….আমাদের নিয়ে টেনশন করিস না…একদম ঠিক আছি।
.
বাঁচাইলি দোস্ত। টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।একটু সাবধানে তো থাকতে পারিস নাকি?তোর কিছু হলে সানশাইনের কি হবে ভেবে দেখেছিস?সানশাইনের খেয়াল রাখিস!!
.
কথা বলবি ওর সাথে সাহেল?
.
শুভ্রর একথায় চমকে তাকালাম আমি।।ওপাশ থেকে অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো নিয়ে বলেন উঠলেন সাহেল ভাইয়া-
.
আরে না না।।আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।।রাখছি রে….সাবধানে থাকিস আর(একটু থেমে) তোর বউয়ের খেয়াল রাখিস।
.
শুভ্র কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসলেন।।আমি বিহ্বল চোখে তাকিয়ে আছি।এরা দুজনেই দুজনের ফিলিংস জানে….তবু কতো স্বাভাবিক ওরা?কিন্তু কিভাবে এতো স্বাভাবিকতা?অস্বস্তি হয় না ওদের? ওরা কি বন্ধুত্বটাকে সবকিছুর উর্ধে এনে দাঁড় করিয়েছে?যেখানে রাগ,,ক্ষোভ,,হতাশা,,অস্বস্তির কোনো ঠাঁই নেই।।একটুকুও না।।শুভ্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো-
.
উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি খাবার আনছি।
.
না এখন নয়। নামায পড়বো আমি!
.
নামায?এখন কিসের নামায?এশার আযান দেই নি এখনই…. ৭ঃ৪০ বাজে মাত্র!
.
নফল নামায পড়বো।
.
কথাটা বলে বেড থেকে নামতে গেলেই মাথা ধরে উঠলো আমার…উনি দ্রুত আমার কোমর চেপে ধরে “আহ” করে উঠেই বললেন-
.
সাবধানে…
.
আমি উনার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম… ব্যান্ডেজ করা হাতেই কোমর চেপে ধরেছেন উনি।।কিছু একটা বলতে যাবো ঠিক তখনই কিছু একটা মনে পড়ে নিজের দিকে তাকিয়েই বিস্ময় নিয়ে মাথা উঠিয়ে উনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম-
.
আমার ড্রেস!! আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করেছে?
.
কেনো?(ভ্রু কুঁচকে)
.
আপনি করেছেন?(ঢোক গিলে)
.
আমি করলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেতো তোমার??আমার অধিকার আছে বুঝলা?যদিও অধিকারটা এপ্লাই করি নি। বউ মনি এসে চেঞ্জ করে দিয়ে গিয়েছেন।
.
উনার কথায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম আমি।উনা বাহু থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম ।নামায পড়ে আল্লাহকে শুকরিয়া তো জানাতে হবে….!!
.
#চলবে?

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

৪৮+৪৯
#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:48
.
?
.
বিছানায় পা গুটিয়ে বসে আছি।।দৃষ্টি জানালার বাইরে।মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে কিন্তু কোনো শব্দই আসছে না কানে।কি অদ্ভুত!!বৃষ্টি মানেই তো রিমঝিম শব্দ….কিন্তু এখানে কোনো শব্দ নেই।হয়তো এই শহরে,হাজারো দালানের ভীরে বৃষ্টি হারিয়েছে তার নিজস্বতা।।এমন অগোছালো চিন্তা যখন মন ভরে ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো শুভ্র।।বামহাতে খাবারের প্লেট নিয়ে দরজা বন্ধ করে মিষ্টি হেসে বসে পড়লো আমার পাশে।আমি তাকাতেই প্লেটটা ধরিয়ে দিয়ে বলে উঠলো –
.
খাইয়ে দাও!হাত ব্যাথা, খেতে পারবো না।
.
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো আমার।সারা দুনিয়ার সকল কাজ করছেন আর ভাত খাওয়ার সময়ই হাতে ব্যাথা?কি অজুহাত!!আমি একবার উনার দিকে তাকিয়ে প্লেটটা হাতে নিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলাম।উনি চুপচাপ খাচ্ছেন আর লেপটপে কিছু একটা করছেন। আমি একাধারে উনার চোখে মুখে তাকিয়ে আছি।ব্যান্ডেজেও কি সুন্দর মানিয়েছে উনাকে।সাদা ধপধপে মুখ তাতে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি…কপালে পড়ে থাকা সিল্ক চুলগুলো দিয়ে ঢাকা পড়ে আছে অর্ধেকেরও বেশি ব্যান্ডেজ।ডার্করেড ঠোঁটগুলো খাওয়ার তালে তালে নড়ছে তারসাথে নড়ছে থুতঁনির ওই কালো তিল।।উনি লেপটপের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন –
.
তুমিও খাও রোদপাখি।আজ আমি খাইয়ে দিতে পারবো না ….হাতটা সত্যি ব্যাথা করছে।পেইনকিলার খেয়েও ব্যাথা কমছে না।।কাল ভার্সিটি শেষে ডক্টরের কাছে যেতে হবে।এমনি কতো কাজ জমে আছে এই হাত ব্যাথা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না।
.
আপনি কালই ভার্সিটি যাবেন?একদিন না গেলে হয় না?ঠিকমতো হাঁটতেই তো পারছেন না।এতো কাজ কাজ কেনো করেন শুনি?(মুখ ফুলিয়ে)
.
উনি হাসলেন।লেপটপ অফ করে পাশে রেখে আমার দিকে ঘুরে বসলেন।ব্যাড সাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে হাত ধুয়ে প্ল্যাটটা টেনে নিয়ে আমার মুখে খাবার তুলে দিলেন।।আমি অবাক চোখে বললাম –
.
আপনার না হাত ব্যাথা?ছাড়ুন প্ল্যাট!আমি খেয়ে নিচ্ছি।
.
সমস্যা নেই ছাড়ো।
.
সমস্যা নেই মানে?অবশ্যই সমস্যা আছে… ছাড়ুন তো আমি খেয়ে নিচ্ছি বললাম তো।
.
আরে বাবা!এটুকু পারবো।কাজ না করে অলস বসে থাকলে ব্যাথা আরো বেশি করবে।।তবে একটা জিনিস ভালোই হয়েছে….ওই ইন্সিডেন্টের জন্য তুমি একদম শশুড় বাড়িতে চলে এসেছো।বিয়ের পর এটাই শশুড়বাড়িতে তোমার প্রথম রাত।তারমানে আজ আমাদের বাসর!!ওয়াও আই এম সো এক্সাইটেড… (চোখ টিপে)
.
কিহ!বাসর রাত কেনো হতে যাবে?
.
কেন হবে না?শশুড়বাড়িতে বউয়ের প্রথমরাতই হলো বাসর রাত।ওই হিসেবে আজ আমাদেরও বাসর রাত। বাহ বাহ….বাইরে বৃষ্টি,, ভেতরে খাট আর খাটের উপর কম্বল আর কম্বলের নিচে…..(দুষ্টু হেসে)
.
ছিহ! আপনি তো দেখি ব্যাপক অসভ্য।(রাগী গলায়)
.
আহা!অসভ্যই তো হতে চাই রোদপাখি। কিন্তু পাখি তো ধরা দেয় না।এই দহন আর মনে মানে না….
.
আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছি আর উনি হুহা করে হেসে চলেছেন।।উনার হাসির শব্দ যেনো দেয়ালে ধাক্কা লেগে প্রতিধ্বনিত করে উঠছে বারবার….সেই শব্দে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে আমার মন।বৃষ্টির শব্দের চেয়েও কি ভীষন সুন্দর এই শব্দ।।হৃদয়কে নিগড়ে দেওয়া একমুঠো আবেগ এই শব্দ।একগুচ্ছ কম্পন!!
.
?
.
ভার্সিটির বটতলায় বসে আছি আমি আর চিত্রা।আমার মুখে শয়তানী হাসি আর চিত্রার চোখে মুখে সন্দেহ।চিত্রা বারবার আড়চোখে আমাকে দেখছে আর পানি খাচ্ছে। অবশেষে থাকতে না পেরে বোতলটা পাশে রেখে আমার পাশে আরেকটু ঘেষে বসেই বলে উঠলো –
.
এই? তুই এভাবে হাসছিস কেন?তোর এই হাসি মানেই ভয়ংকর কিছু।কি করতে চাইছিস বলতো…
.
আমি চিত্রার দিকে তাকিয়ে ভুবন ভুলানো হাসি দিলাম।এবার যেনো কেঁদেই উঠবে সে।।কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আবারও বলে উঠলো চিত্রা-
.
দেখ রোদু?তুই একদম আমার দিকে এভাবে তাকাবি না।আমার হার্ট দুর্বল যেকোনো টাইম আট্যাক ফ্যাটাক করে ফেলতে পারি।এমন মধুর হাসি তোর জামাইকে দেখা গিয়ে।তোর এই হাসি আমার সহ্য হয় না …..শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়।দয়া করে হাসি অফ কর মেরি মা।
.
ছিহ!তোর বাপের সাথে আমার বাপ -মেয়ের মতো সম্পর্ক। এসব বিশ্রী অপবাদ আমায় দিস না…..তাহলে আমি নিজেই হার্ট অ্যাটাক করে মরে যাবো।রাস্তাঘাটে অনেক মানুষ আছে মা ডাকার জন্য তাদের রেখে আমায় কেন ডাকছিস?
.
তুই… তুই আসলেই অসহ্য।কিছু বলবোই না আমি।যায় বলি টেনে হিঁচড়ে নেগেটিভ দিকেই নিয়ে যাস…..ভাল্লাগেনা।(মুখ ফুলিয়ে)
.
ভাল্লাগবে গো বান্ধবী ভাল্লাগবে….ওই দিকে তাকাও ভালো লাগবে।।তোর জামাই সরি তোর হাফ জামাই এদিকেই আসছে।বি রেডি জানু….(দুষ্টু হেসে)
.
ম ম মানে?কককিসের রেডি?
.
কেন মনে নাই?সেদিন ছাদে কি কথা হয়েছিলো?শর্তটা কিন্তু এখনও পালন করিস নি।নেভারমাইন্ড আজ করবি।চল উঠ।
.
ররররোদদ পপ্লিজজ!!
.
প্লিজ টিজ কাল বলিস এবার উঠ তো…
.
কথাটা বলেই চিত্রাকে টেনে উঠিয়ে স্যারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।মুখে অমায়িক হাসি টেনে নিয়ে বলে উঠলাম –
.
আসসালামু আলাইকুম স্যার!!
.
ওয়ালাইকুম আসসালাম।(মুচকি হেসে)কেমন আছো তোমরা?
.
ফাস্ট ক্লাস আছি স্যার….তাই না চিত্রা??(চোখ টিপে)
.
কথাটা বলেই কনুইয়ের নিচে চিমটি কেটে দিলাম আমি।।সাথে সাথেই চিত্রা তুমুল গতিতে মাথা নাড়াতে লাগলো।।আমি আবারও চিমটি কেটে চোখের ইশারা দিতেই করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়েই কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দিলো সে।।পুরো দুই মিনিটের চেষ্টায় বহুত কষ্টে বলে উঠলো –
.
কককককেমন আআছো শশশশিশির!!
.
চিত্রার কথায় শিশির স্যার চরম অবাক।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না উনি।কিছুক্ষণ শক লাগা চোখে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন –
.
সরি?কি বললে?
.
চিত্রা যেনো এখনই দৌড় লাগাবে এমন ভাবসাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে পায়ে একটা পাড়া দিতেই আবারও বলে উঠলো সে-
.
বববলছিলাম কককেমন আছো শশশিশির….
.
কথাটা বলেই আমাকে নিয়ে উল্টো দিকে দিলো এক দৌড়।আমি পারলে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাই।শিশির স্যার বিহ্বলিত চোখে তাকিয়ে আছেন।এতোবড় শক হজম করতে পারছেন না বেচারা।স্যারের নজরের আড়ালে এসে থামলো চিত্রা।ঘাসের উপর বসে হাঁপাতে লাগলো।ব্যাগ থেকে বোতল বের করে একদমে পুরোটা পানি খেয়ে আমার দিকে ফিরে তাকালো সে।মুখ চোখ লজ্জা আর ঘামে লাল হয়ে এসেছে।আমিও মুচকি হেসে ওর পাশে বসতেই কোথা থেকে সাকিব ভাই এসে বললো-
.
গুড মর্নিং চিতল সুন্দরী। কতোদিন দেখি না তোমায়।
.
চিত্রার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে এবার চরম বিরক্ত।পারলে এই বোতল দিয়েই মাথা ফাঁটিয়ে দেয় সাকিব ভাইয়ের।আমি মুচকি হেসে সাকিব ভাইয়ের উদ্দেশ্য বললাম-
.
সাকিব ভাইয়া?আপনার সুন্দরী তো গভীর জলের মাছ।সে এখন শিশিরে ভিজে টুইটম্বুর…তার এখন অন্যদিকে মন নাই।
.
মানে?বুঝলাম না ভাবি।
.
পেছনে তাকান!ওই যে সুদর্শন পুরুষ অর্থাৎ আমাদের শিশির স্যারকে দেখতে পাচ্ছেন… আপনার সুন্দরী তার হাফ বউ।
.
আমার কথায় সাকিব ভাই যেনো আকাশ থেকে পড়লো।চোখ বন্ধ করে আবারও খোলে ড্যাবড্যাব করে তাকালো চিত্রার দিকে।।তারপর আমার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো –
.
আমাদের ডিপার্টমেন্টের শিশির স্যার?
.
আমি মাথা নাড়তেই একটা ঢোক গিলে “এবার আমি শেষ” কথাটা বলেই পেছন ফিরে হাঁটা দিলো।আমি আর চিত্রা একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই হুহা করে হেসে উঠলাম।।হঠাৎ ই ফোন বেজে উঠায় হাসি থামিয়ে ফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে শুভ্রর উত্তেজিত কন্ঠ ভেসে উঠলো-
.
রোদপাখি…রোদপাখি…জলদি পার্কিং এ আসো ফাস্ট।
.
কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলেন উনি।আমি কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ বসে থেকেই চিত্রাকে রেখে দৌড় লাগালাম পার্কিং এ।।পার্কিং গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি পার্কিং একদম ফাঁকা।আরেকটু এগিয়ে যেতেই কেউ একজন হেঁচকা টানে কোলে তুলে নিলো আমায়।আমি ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে আবারও চোখ মেলে তাকালাম।চোখের সামনে শুভ্রর হাসি হাসি মুখ ফুটে উঠলো।।উত্তেজনায় ফর্সা মুখটা যেন লাল হয়ে আছে।আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরতেই আমাকে নিয়ে ঘুরতে লাগলেন উনি।আমি চাপাস্বরে বললাম-
.
নামান!আপনার হাতে ব্যাথা তো…
.
থাকুক ব্যাথা।।টুডে আই এম সো হ্যাপি রোদপাখি।এই খুশির সামনে তো এই ব্যাথাটা কিছুই না….
.
আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কিসের এতো আনন্দ তার?
.
#চলবে…?
#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:49
.
?
.
আচ্ছা এবার তো নামান।আর কি হয়েছে সেটা বলুন….এতো খুশি কেন?
.
রোদপাখি আমি চাচ্চু হচ্ছি…..আর তুমি কাকিমনি।
.
কিহহ!!সত্যি?
.
হ্যা সত্যি।আমার এতো খুশি লাগছে যে আমি সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। দেখো হাত-পা কাঁপছে আমার।তুমি ভাবতে পারছো রোদু আমাদের বাড়িতে আমার থেকে ছোট কেউ আসবে…এই ছোট্ট চিকন চিকন হাত থাকবে।খিলখিল করে হাসবে।।পাতলা ঠোঁটে আমায় চাচ্চু ডাকবে।ইশশ রোদপাখি তোমায় আমি বোঝাতে পারছি না….!!জানো?ছোট থেকে আমি মার পেছনে ঘুরঘুর করতাম আর বলতাম আমাদের বাসায় ছোট বাবু নেই কেন?ছোট বাবু এনে দাও….মা তখন বলতো আমিই নাকি ছোট বাবু।।ফাইনালি এতোদিন পর সেই ছোট্ট পা গুলো আসছে।।আচ্ছা রোদপাখি বউমনিকে একটা গিফ্ট দিলে কেমন হয়??আমার তো মনে হচ্ছে পুরো মার্কেটই কিনে দিই উনাকে…
.
উনার মুখ রকেটের গতিতে ছুটছে।বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করছেন।আমি অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনার আনন্দ দেখে আমার নিজের আনন্দটুকু যেনো ভেতরে ফ্রিজড হয়ে গেছে।উনি আমাকে ঝাঁকিয়ে বললেন-
.
কি হলো?এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?চলো বাসায় চলো।ফুপ্পিরাও আমাদের বাসায় আছেন….বউমনিকে একটা টাইট হাগ দিবো গিয়ে…এট লাস্ট তুমি কাকিমনি হচ্ছো…
.
কিসের কাকিমনি?আমি খালামনি হবো…..আপনার বউমনি আমার বোন।
.
তো?তুমি তো আমার বউ।
.
তাতে কি?আপনিও তো আমার বর।তাহলে আপনি ওর খালুমশাই হবেন।
.
অবশ্যই না।আমি চাচ্চু আর তুমি কাকিমনি।
.
নো
.
ইয়েস..
.
এভাবে খুনসুটি করেই বাসায় পৌঁছে গেলাম আমরা।গাড়িতে থাকাকালীন পুরো সময়টায় কোমর বেঁধে ঝগড়া করেছেন উনি।আনন্দের চোটে ঝগড়াটের রূপ ধারন করেছে শুভ্র।ভাবা যায়?আমরা বাড়িতে ঢুকতেই হাসির রোল কানে এলো।। সবার মাঝেই আজ অন্যরকম উচ্ছ্বাস। ভেতরে ঢুকে আপুকে দেখেই লাফিয়ে উঠলাম আমি।দৌড়ে গিয়ে আপুকে জড়িয়ে ধরেই চিল্লাতে লাগলাম।ঠিক তখনই শুভ্র এসে আমাকে ছাড়িয়ে দিয়ে বললো…
.
এই এই আমার বউমনি।দূরে থাকো..
.
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।আপুকে একটানে আমার কাছে এনে বললাম-
.
আমার বোনননন
.
উনিও কম যান না।আপুকে সফ্টলি নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললেন-
.
এই পিচ্চি?গিয়ে ললিপপ খাও।বড়দের সাথে তর্ক করে না সোনা।এটা আমার বউমনি সো ফুটো।
.
আমি বলছি না এটা আমার আপু।।আপু আগে পরে বউমনি,,টউমনি,চউমনি….এখন ছাড়ুন ওকে…
.
আমাদের টানাটানিতে সবাই হাসিতে মেতে উঠেছে।আপু একবার আমার দিকে তো একবার শুভ্রর দিকে তাকাচ্ছে।এমন সময় অভ্র ভাইয়া মাঝখান থেকে আপুকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে অাসহায় কন্ঠে বলে উঠলেন-
.
এটা আমার বউ!!এভাবে টানিস না রে…হালকা পাতলা মানুষ ছিঁড়ে যেতে পারে।
.
ভাইয়ার কথায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি আর শুভ্র।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আবারও ভাইয়ার দিকে ফিরে তাকালাম।তারপর একসাথেই হেসে উঠলাম সবাই।।আমি গিয়ে আম্মুর পাশে বসে পড়লাম…আর শুভ্র গিয়ে বসলো দিদার পাশে।দিদা উনার গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন –
.
এইযে ছোট নাতবউ!এইদিকে আয়…আমার পাশে এসে বস দেখি।
.
আমি উঠে গিয়ে দিদার পাশে বসতেই কপালে চুমু একে দিলেন উনি।তারপর কথায় কথায় বলে উঠলেন –
.
এবার তোমার পালা গো বউ।।কি গো ছোট সাহেব?(শুভ্রর দিকে তাকিয়ে)
.
একদম দিদা।তুমি এতো চাপ নিও না তো….দরকার পড়লে বছরে বছরে একটা করে গিফ্ট করবো তোমায়।তোমার বংশের প্রদীপ আর প্রদীপ থাকবে না একদম আগ্নেয়গিরি বানিয়ে দিবো….(চোখ টিপে)
.
উনার কথায় আমি মুখে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলাম।সবাই চুপচাপ নীরবে হাসছেন।পাশ থেকে মাধবি আর রাহেলা ফিক করে হেসে উঠতেই ধীরে ধীরে সবাই হুহা করে হেসে উঠলো।ইশশ….কি লজ্জা!!এই খাটাস টাকে ধরে ড্রেনের পানিতে চুবাতে ইচ্ছে করছে….লাগামহীন কথাবার্তা সবসময়…..তাও আবার সবার সামনে!!
.
সবার হাসি থামলে অভ্র ভাই ফুড়ন কেটে বলে উঠলেন –
.
তো শুভ্র?আগ্নেয়গিরির প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু কর….নয়তো লেইট হয়ে যাবে না?
.
এবার ইচ্ছে করছিলো মাটি ফাঁক করে ভেতরে ঢুকে যাই আমি।দুই ভাই এক টাইপ,, ঠোঁট কাটা।কই আপুকে নিয়ে মজা করবে তা না ইচ্ছে ইচ্ছে করে দুই ভাই আর দিদা মিলে আমায় পচাচ্ছে।। সাদা বিলাই কোথাকার…!!
.
?
.
সবাই ডায়নিং এ বসে আছে।সবার মনোযোগ খাবার দিকে।আমি কয়েকবার মুখে নিয়েই মাথা তুলে অভ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম –
.
ভাইয়া?আমাকে গিফ্ট দিলেন না তো!!এটা কি ঠিক??এতো বড় ভুল কিভাবে করলেন আপনি?হাও?
.
আমার কথায় সবাই খাওয়া ছেড়ে আমার দিকে তাকালেন।অভ্র ভাইয়া আকাশ থেকে পড়ার মতো ভাব নিয়ে বলে উঠলেন –
.
গিফ্ট?কিসের গিফ্ট?
.
কিসের গিফ্ট?হায় আল্লাহ বলে কি?এই কথাটা শোনার আগে মরে গেলাম না কেন আমি?এতো কষ্ট করে আপনার বাচ্চার খালামনি,,কাকিমনি,,ফুপিমনি সবকিছুর রোল প্লে করতে চলেছি তো আমায় গিফ্ট দিবেন না??এতোটা অকৃতজ্ঞ আপনি??
.
অভ্র ভাইয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলাম –
.
দেখ আপু!তোর জামাই কিপ্টা।
.
আমার কথায় হেসে উঠলেন শুভ্র।সামনে রাখা গ্লাস থেকে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে নিয়ে হাসিমুখে বলে উঠলেন উনি-
.
সত্যি তো!ভাই?বাচ্চা মেয়েটার সাথে এমন অন্যায় করতে পারলি তুই??আমারটা নাহয় বাদই দিলাম…তুই এই পিচ্চিটাকে এভাবে ঠকাতে পারিস না।
.
তোরটা মানে??তোর আবার কি??আজব তো….আমার থেকে গিফ্ট চাচ্ছিস কেন তোরা?তোদের উচিত আমাকে গিফ্ট দেওয়া…. কতো কষ্ট করে বাবা হচ্ছি আমি।
.
তুই শুধু বাবা হচ্ছিস…আর তো কিছু হচ্ছিস না।আমি চাচ্চু,খালু,মামু সব হচ্ছি।তো তোর উচিত আমাকে গিফ্ট দেওয়া….যাহ্ আমার গিফ্টটা মাফ।।তার বদলে আমার পিচ্চিকে দিয়ে দিস গিফ্ট….(মুচকি হেসে)
.
উনার কথায় ঠোঁট উল্টালাম আমি।।এমন ভাবে পিচ্চি পিচ্চি করছেন উনি,,যেনো আমি ফিডার খাওয়া বাবু।আমি উনার দিকে তাকিয়েই মুখ ভেঙিয়ে বলে উঠলাম –
.
থেংকিউ শুভ্র ভাইয়য়য়য়য়া।।তো…গিফ্টটা আমাকেই দিন দুলাভাই,,ভাইয়া,,বাসুর জি।
.
আমার মুখে “ভাইয়া” শব্দটা শুনে বিষম খেলেন শুভ্র।তাড়াতাড়ি পানি খেয়ে চোখ কটমট করে আমার দিকে তাকালেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিলাম।অভ্র ভাইয়া পাশ থেকে বলে উঠলেন –
.
তোমার দ্বারাই সম্ভব রোদ।আমার তো মনে হয়…. তুমি শুভ্র থেকে নিজের বাচ্চার ফুপি হিসেবেও গিফ্ট নিবা।
.
অভ্র ভাইয়ার কথায় শুভ্র চোখ গরম করে উনার দিকে তাকালেন।অভ্র ভাইয়া সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলে উঠলেন –
.
যেভাবে ভাইয়া ডাকো আহা!!নিজের বোন বোন ফিলিংস হয়….একদম বুকে গিয়ে লাগে।এই খুশিতে হলেও তোমায় একটা গিফ্ট দিতেই হয় রোদ।
.
ভাইইই….বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!! চুপ কর নয়তো খবর আছে।
.
আরে?আমি কিছু বলেছি নাকি?শুধু শুধু আমায় শাসাচ্ছিস তুই।।আমি তো রোদকে বলছিলাম যে,,, যখন ও নিজের বাচ্চার ফুপি হবে(শুভ্র রাগী চোখে তাকাতেই) ওহ সরি মিসটেক…হে হে হে…আমি বলছিলাম যে যখন আমি কষ্ট করে ওর বাচ্চার জেঠো,মামু,খালু হবো… তখন একটা গিফ্ট দিবো ওকে….আপাতত আমার ভাইকে গিফ্ট করে দিলাম….নিয়ে যাও….কিন্তু প্লিজ দয়া করে তাকে ভাইয়া ডেকো না।হার্ট আট্যাক করতে পারে বেচারা।
.
উনার কথায় দাঁত কেলিয়ে একটা ক্লোজ আপ হাসি দিলাম আমি।।টেবিলে সবাই মিটিমিটি হাসছেন আর শুভ্র রাগে ফাঁটছেন।
.
.
দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর আমার ঠিক সামনে হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছেন শুভ্র।।তার মুখে রাগী রাগী ভাব আর আমার মুখে কাঁদো কাঁদো ভাব।।উনার ভাব দেখে মনে হচ্ছে, এই বুঝি টুপ করে গিলে ফেললেন আমায়।আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম –
.
এএভাবে তাকিয়ে আছেন কককেন?
.
উনি এবার কয়েক পা এগিয়ে এলেন।বামহাতটা পাশের দেয়ালে রেখে আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞেস করলেন –
.
আমি তোমার কি হই?
.
মমমানে??
.
ভাইয়া হই তাই না?
.
ন ননা এএকদম না।
.
তাহলে বললা কেন?আমাকে দেখলেই কি ভাইয়া শব্দটা তোমার মুখ থেকে স্লিপ করে বেরিয়ে পড়ে?
.
আআমি ততো…মমানে হহলো যে….আপনি তো আগে ভাইই ছিলেন…তাই।অভ্যাস..
.
অভ্যাস??গ্রেট!ওকে দেন…আমাকে এবার এমন কিছু করতে হবে যাতে করে আমাকে দেখলে আর ভাই শব্দটা আসবে না।।আর ইউ রেডি ডেয়ার??(বাঁকা হেসে)
.
কথাটা বলেই বাঁকা হেসে ডানহাতটা আমার কোমরের উপর রাখলেন।সাথে সাথেই কেঁপে উঠলাম আমি।এবার চিত্রার কাঁপাকাঁপি আমার উপর ডাইবার্ট হওয়ার পালা….হে খোদা!রক্ষা করো আমায়।
.
#চলবে…?

#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:50
.
?
.
হহহাত সরান,প্লিজ!
.
কেনো?(অস্পষ্ট স্বরে)
.
অস্বস্তি লাগছে।
.
কোমরে হাত রাখতেই অস্বস্তি? কিন্তু অস্বস্তি লাগলেও তো কিছু করার নেই সোনা….এই মুহূর্তে হাত সরানোর কোনো মোড নেই আমার।
.
কথাটা বলে কোমরটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে খানিকটা এগিয়ে এলেন উনি।উনার চোখে নেশা….আর আমার মনে একঝাঁক ভয়।উনাকে আমার মুখের উপর ঝুঁকে পড়তে দেখেই চোখ-মুখ কুঁচকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম উনাকে।অনেকসময় ভয়ই নির্ভয়ের কাজ করে।দূর থেকে যে জিনিস দেখে ভয়ে আত্মা কাঁপে সেই জিনিসটির খুব কাছে চলে গেলে অদ্ভুতভাবেই ভয়টা অনেকটায় কমে আসে।।আমার ক্ষেত্রেও তাই।শুভ্রর চোখের নেশাটা যতোটা ভয়ঙ্কর তার বুকটা ততটায় নির্ভয়ের।।শুভ্রকে হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরবো হয়তো ভাবতে পারেন নি উনি।হুট করে করা আমার এই কাজে উনি যেনো বোকা বনে গেলেন।কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বলে উঠলেন-
.
এটা ঠিক নয় রোদপাখি।আমি তোমাকে পানিশমেন্ট দিতে চেয়েছিলাম। সোজা হয়ে দাঁড়াও!
.
উনার কথায় গুটিসুটি হয়ে একদম উনার বুকের ভেতর ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা চালালাম আমি।উনি আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আলতো হাতে জড়িয়ে নিলেন আমায়….কানের কাছে একটা চুমু দিয়েই ঝুঁকে এসে কাঁধে শক্ত একটা কামড় বসিয়ে দিলেন।সাথে সাথেই ছিঁটকে সরে গেলাম আমি।।কাঁধে হাত বুলাতে বুলাতে উনার দিকে তাকাতেই হুহা করে হেসে উঠে একটানে নিজের কাছে এনে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলেন।।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি স্তব্ধ…. চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।।চোখের পাতা ধীর গতিতে একবার বন্ধ করে মেলে তাকাতেই দরজায় কাশির শব্দ শোনা গেল।।দরজার বাইরে থেকে কেউ একজন বলে উঠলো –
.
শুভ্র?ভাই রুমের ভেতর কি করিস?
.
অভ্র ভাইয়ার কথা কানে যেতেই ছিঁটকে সরে গেল শুভ্র।একবার আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট মুছে দরজা খুলতেই হুরমুর করে ভেতরে ঢুকে গেলেন অভ্র ভাইয়া। শুভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চরম বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো –
.
ফুটবল খেলি।তাতে তোর কি?
.
ফুটবল খেলছিলি??ওওওও আমি আরো ভাবলাম আগ্নেয়গিরির প্ল্যানিং করছিস কি না…হে হে হে।
.
ভাই?যাবি তুই?(রাগী গলায়)
.
অবশ্যই যাবো। তবে আমার একমাত্র শালিকাকে নিয়ে যাবো।
.
না।ও কেন যাবে?যাবে না ও তবে তুই যাবি…এবং এক্ষনি যাবি!!(দাঁতে দাঁত চেপে)
.
ঠিক আছে।চলে যাচ্ছি…আমি তো এসেছিলাম রোদকে আইসক্রিম দিতে।।তিন কার্টুন আইসক্রিম এনেছি…নিচে অলরেডি কাড়াকাড়ি লেগে গেছে।সাব্বির,রোহান,নীলি সবাই এসেছে।আমি তো আর ওদের মতো নির্দয় নই…একমাত্র শালিকাকে রেখে কখনোই খেতে পারি না…তাই ওকে ডাকতে এলাম।পরে যদি শেষ হয়ে যায়?(নিরীহ ভঙ্গিতে)
.
আইসক্রিমের কথা শুনেই মনটা নেচে উঠলো আমার।দুই লাফে উনাদের কাছে গিয়ে বললাম-
.
ওয়াও?আইসক্রিম!! আগে বলেন নি কেনো আমায়??
.
শুভ্র এবার করুন চোখে অভ্র ভাইয়ার দিকে তাকালেন।তারপর আমার দিকে ফিরে বলে উঠলেন-
.
ওগুলো ওদের খেতে দাও।তোমাকে পরে ওর থেকেও বেশি কিনে দিবো রোদ।
.
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো আমার।ডিরেক্ট জানিয়ে দিলাম আমি এখনই খাবো এবং ওদের সাথেই খাবো।আমার কথা শুনেই দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠলেন অভ্র ভাইয়া।শুভ্র পারে তো চিবিয়ে খেয়ে ফেলে উনাকে।অভ্র ভাইয়া হাসিমুখেই বলে উঠলেন –
.
আহা কি শান্তুি!এটস কল্ড রিভেঞ্জ মেরি ভাই।তুই আর সাহেল মিলে কি জ্বালাতনই না করেছিস আমায়।রুমের বিভিন্ন জায়গায় ফোন লুকিয়ে রেখে সারারাত কল দিয়ে দিয়ে ডিস্টার্ব করেছিস।প্রতিবার ফোনের রিংটোনে আত্মা কেঁপে ওঠেছে আমার।বউকে টাচ করার সাহস পর্যন্ত পাইনি।এবার বুঝো ঠেলা….তোর ভাতিজাকে শুধু পেট থেকে বেরুতে দে।আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি সে তার চাচ্চু বলতে অজ্ঞান থাকবে…তার তোমার রোমাঞ্চের বারোটা বাজবে।।ইশশ…এতো সুখ সুখ লাগছে কেনো??
.
এটুকু বলতেই শুভ্র “দাঁড়া তুই” বলেই তেঁড়ে গেলেন… ততক্ষণে অভ্র ভাইয়া পগারপার।। দুজনেই বাচ্চাদের মতো ছুটছেন আর উচ্চস্বরে হাসছেন।।দেখে মনেই হচ্ছে না এরা দুই ভাই…একদম বন্ধুর মতো ব্যবহার।।আমি কিছুক্ষণ উনাদের দিকে তাকিয়ে থেকেই দ্রুত নিচে নেমে গেলাম।আইসক্রিম যদি শেষ হয়ে যায় তবে?
.
?
.
বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছি আমি।।আমার ঠিক সামনে বসে আছে চিত্রা।আমি কয়েক সেকেন্ড পর পর ওর দিকে তাকিয়ে একটা ক্লোজ আপ হাসি দিচ্ছি আর ও কাঁদো কাঁদো মুখে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।।তার মুখ ফুলানোর প্রধান কারণ শিশির স্যার।চিত্রার মুখে তুমি ডাক শুনেই নাকি তার মনে বিয়ের ঘন্টি বেজে গেছে।ভার্সিটি থেকে সোজা চিত্রাদের বাসায় গিয়ে বাবা-মা নিয়ে একসপ্তাহের মধ্যে বিয়ের ডেইট ফিক্সড করে এসেছেন উনি।চিত্রার ভাষ্যমতো সব দোষ আমার…আমার জন্যই আজ সে নদীতে ভেসে যাচ্ছে।।আমি আবারও দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলাম –
.
এভাবে মুখ ফুলিয়ে রেখেছিস কেন চিতা বাঘ??স্যার চুমু দিয়েছে বুঝি?
.
তুই একদম কথা বলবি না আমার সাথে।।তোর জন্যই সব হচ্ছে….কি দরকার ছিলো এতো ন্যাকামো করে কথা বলতে বলার??(মুখ কালো করে)
.
চিত্রার কথায় ভ্রু কুঁচকে এলো আমার।কপালে এসে পড়া চুলোগুলো কানের পেছনে ঠেলে দিয়ে বললাম-
.
এই এদিকে আয়??
.
কেন??
.
ওর কথায় কিছুটা এগিয়ে গিয়ে গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললাম “এইজন্য” চিত্রা কিছুক্ষণ “হা” করে তাকিয়ে থেকে মুখ গোমড়া করে বলে উঠলো –
.
মারলি কেন?
.
তুই চড়টা ডিজার্ব করিস তাই মেরেছি।ইউ ফুল!!তুই কোন সাহসে আমাকে দোষ দিস??তোকে আমি একটা শর্ত দিয়েছিলাম তুই পালন করেছিস ব্যস।।তোর কাছে সেকেন্ড অপশন ছিলো….তবু তুই রাজি হয়েছিস তারমানে সব দোষ তোর।এনিওয়ে ওসব ছাড়….(একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে) এটা তোর হাফ জামাইকে দিয়ে দিস।
.
এটা কি?(অবাক হয়ে)
.
এটা লিস্ট।তোর বিয়েতে আমি যা যা পড়বো তার লিস্ট।তোর সাথে সেই স্কুল লাইফ থেকে ডিল করা…তোর বিয়েতে যা কিছু পড়বো সবকিছু তোর জামাই দিবে।।কি রে ভুলে গেছিস??(ভ্রু নাচিয়ে)
.
চিত্রা এবার কেঁদেই দিলো।আমি ভ্র কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে টিস্যু বাক্সটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম –
.
এমন ফেচফেচ করে কাঁদছিস কেন??
.
আমি বিয়ে করবো না।
.
কেন?বিয়ে কেন করবি না?চিরকুমারী থাকার প্লেন আছে নাকি?কাহিনীটা কি?
.
কোনো কাহিনী নেই।।আমার খুব ভয় লাগছে রোদু।।বিয়ের পর কি হবে কে জানে??
.
তুই বিয়েটাকে যতটা ভয়ঙ্কর ভাবছিস সেটা কিন্তু ততটা ভয়ঙ্কর নয় ।খুবই সিম্পল একটা বিষয়। তোকে আমি বলেছিলাম না?টুস করে কবুল বলে ঠুস করে বাসর ঘরে ঢুকে যাবি।তুই বরং এই ট্রিকটায় অবলম্বন কর তাহলে দেখবি সব একদম পানির মতো সহজ লাগছে….আর বাকি সব তোর হাফ জামাইয়ের উপর ছেড়ে দে… নো চাপ বেবি!!
.
তুই এমন ভাবে বলছিস যেনো বাসর ঘর নিয়ে সেঞ্চুরি করে এসেছিস।
.
তুই এমন ভাবে ভয় পাচ্ছিস যেন ডাবল সেঞ্চুরি করে এসেছিস।। এমন ভাবে ভয়ে কাঁপছিস যেন কতো শত সংসার করে এসেছিস তার সব ভয়াবহতা তুই জানিস।।শোন বেশি ঢং না করে বিয়েটা করে নে….. শিশির স্যার অসাধারণ একটা মানুষ….উনাকে রিজেক্ট করার কোনো মানেই হয় না।।
.
তুই তো ম্যারিড… বল তো শাশুড়ী মাকে কিভাবে ইম্প্রেস করা যায়?শাশুড়ী নামটা শুনলেই ভয়ে বুক কাঁপে আমার….ছেলে সামনে এলে ৬ ডিগ্রীতে কাঁপা-কাঁপি শুরু হয় আর মা সামনে এলে ১০ ডিগ্রিতে….(মুখ ফুলিয়ে)
.
নিজেকে এখনও ম্যারিড ফিলই হয় না আবার শাশুড়ী।। আমার শশুড় বাড়ি বাপের বাড়ি সব এক। নো ডিফারেন্স ইয়ার….
.
চিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠলো তার।।স্ক্রিনে বাংলা ফন্টে ভেসে উঠলো “অসভ্য”। লেখাটা দেখেই চোখ বড় বড় হয়ে এলো আমার।।সাথে সাথেই লজ্জায় রাঙা হলো চিত্রার মুখ।।বিছানা থেকে ওঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে কথা বলতে লাগলো সে।।ঠোঁটে লাজুক হাসির ছোঁয়া।।আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি….লজ্জা রাঙা মুখে চিত্রাকে বড্ড মায়াবি লাগছে…. কোনো এক বিকেলের মিষ্টি আলোয় এই মায়াতেই হয়তো জড়িয়ে গেছেন স্যার।।আমি বালিশে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আবারও তাকালাম…. বেশ প্রেম প্রেম ভাব নিয়েই কথা বলছে ও….যা আমি ৬ মাসের বিবাহিত জীবনেও পারলাম না….এই মুহূর্তে একটা কথায় মনে আসছে বার বার হাও আনরোমান্টিক আই এম!!
.
#চলবে..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে