তুমি রবে ২৯

0
1847
তুমি রবে ২৯ . . – “এই তানিম? বাবা এদিকে আয় তো।” আফিয়ার ডাকে তার বড় ছেলে তানিম এগিয়ে এলো মায়ের কাছে। – “জলদি বলো মা। হাতে কাজ আছে প্রচুর।” – “পরে করিস কাজ। এখানে তোর সঙ্গে সবাই একটু পরিচিত হতে চায়।” আফিয়া দিলরুবাকে বলল, – “আপা ও আমার বড় ছেলে। এক সপ্তাহ হলো বোনের বিয়ের জন্য ইংল্যান্ড থেকে ফিরেছে। ওখানেই পড়াশোনা করে তো।” তানিম তাকে সালাম জানাল। দিলরুবা হাসি মুখে বলল, – “কেমন আছ বাবা?” – “জি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি ভালো আছেন তো?” – “আলহামদুলিল্লাহ। মাশা আল্লাহ ছেলে আপনার আপা।” আফিয়া দিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য খুঁজল তাকে। না পেয়ে মাহিকে বলল, – “তোমার বান্ধবী কোথায় গেল মা?” – “ওদিকটাতে গিয়েছে একটু।” দিলরুবা তাকিয়ে দেখল দিশান দিয়ার ভাই দিহানের হাসি মজা করছে। আর দিয়া দিশানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যদি দিশানের হাতটার দিকে নজর যেত তো দিলরুবা দেখতে পেতো তার মেয়ের শাড়ির আঁচল দিশান আড়াল করে টেনে ধরে রেখেছে। যার জন্য দিয়া চাইলেও নড়তে পারছে না। দিলরুবার দিকে দিয়ার চোখ পড়তে দিলরুবা তাদের তিনজনকেই আসতে বলল। দিয়া দাঁত চেপে দিশানকে বলল, – “কী হচ্ছেটা কী? এটা কেমন বেয়াদবি? ছাড়ুন, মা ডাকছে।” – “সে তো আমিও দেখতে পাচ্ছি।” – “সমস্যা কী আপনার? এভাবে আঁচল ধরে রেখেছেন কেন? আমি কিন্তু মাকে ডাকব।” – “ডাকুন না। আমিও বলব, মেয়ে আপনার শুধু আজগুবি ছেলেদের সাথে গল্প করছে আর ধৈই ধৈই করে তাদের সাথে নেচে বেড়াচ্ছে।” – “তাতে আপনার কী? মাহির ইশারা পেয়ে দিশান জানাল ‘আসছি।’ ওরা তিনজন আসার পর আফিয়া ওদের সঙ্গে তানিমের আলাপ করিয়ে দিলো। মাহির সঙ্গে আলাপটা শুরুতেই হয়েছে তানিমের। আফিয়া তানিমকে আগে থেকেই মাহির ব্যাপারে অনেক কিছু বলেছে। দুজনের মাঝে কথা বলাটাও শুরু হয়েছে আসার পর থেকেই। দিশান খেয়াল করল তানিম খুব সহজ স্বাভাবিকভাবে পরিচিত হিসেবে মাহির সঙ্গে কথা বলছে। কিন্তু তানিমের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে দিশানের সময় লাগল না। তার তাকানোর ভঙ্গি, কথা বলার ধরন এসব দিশানের চোখে খুব দ্রুতই ধরা পড়ল। বেশ ভালো গল্প গুজব চলছিল সবার মাঝে। তানিম আর মাহি কথা বলতে বলতে হেঁটে খানিকটা দূরে চলে গেল। দিশান দিহানের সঙ্গে এক জায়গায় বসে তার সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে। বসে থেকে সে লক্ষ্য করল দিলরুবা তার মেয়েকে দূরে একটা জায়গায় নিয়ে দাঁড়িয়ে তাকে কিছু কথা বলছে। দিয়ার চেহারা দেখে দিশান বুঝে গেছে সে কী বলছে তার মেয়েকে। একটা ঘন শ্বাস বেরিয়ে এলো তার মাঝ থেকে। তানিম আর মাহিকে দেখল দারুণ গল্পে মেতেছে তারা। দিশান সেদিকে তাকিয়ে একটু বাঁকা হাসলো। দিয়া মাকে কী একটা বলে হনহন করে চলে গেল সামনে। তিরিক্ষি নজরে তাকিয়ে আছে দিলরুবা মেয়ের যাওয়ার দিকে। দিশান এবার উঠে দিলরুবার কাছে এলো। দুজনে দাঁড়িয়ে অনেক সময় নিয়েই গল্প করছিল। এর ভেতরে বরযাত্রী উপস্থিত। সবাই তাদের বরণ করতে চলে গেল। বরের বাড়ি একই ব্লকে হওয়াই একটু দেরিতেই এলো তারা। বিয়েটা সম্পূর্ণ হবে রাতে। দিশান দিলরুবাকে বিদায় জানিয়ে মাহির কাছে গেল। দিয়াও সেখানে এলো একটু পর। দিশান খেয়াল করল দিয়া এবার তার দিকে একবারের জন্যও তাকাচ্ছে না। নাকটা বেশ লাল হয়ে আছে তার। মাহি কিছুটা আন্দাজ করল দিয়ার মন খারাপের ব্যাপারে। দিশানের সামনে কথা বলতে একটু আনইজি লাগছিল বলে মাহি তাকে বলল, – “দিশান কিছু মনে না করলে তুমি একটু বসো। আমরা আসছি।” – “অবশ্যই।” মাহি দিয়াকে নিয়ে একটু দূরে গেল। দিশান নিজেও চাইছিল দিয়ার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য। কিন্তু তার দায়িত্বটা মাহি পালন করল। হ্যাঁ, দিয়াকে হতাশ না হতে দেওয়াটা দিশান নিজের দায়িত্বই ভেবে নিয়েছে। . বরযাত্রীর আপ্যায়ন পর্ব শেষ। এবার সবাই একজায়গায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। হাসির মাঝে দিশান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতে দেখতে পেল একজন ছয় ফুট লম্বা, সুঠাম বলিষ্ঠ দেহের তার একজন সুপুরুষ ফরমাল ড্রেসআপে পকেটে হাত পুরে এগিয়ে আসছে সামনের দিকে। বলা জরুরি, সে বছরের প্রায় দীর্ঘ সময় অ্যামেরিকা বসবাস করার নিমিত্তে তার মাঝে বৃটিশদের কিছুটা প্রতিকৃতি পাওয়া যায়। শুধু তার বাঙালি চেহারাতেই ভিন্নতা। দিশান হাসিমুখে এগিয়ে গেল তার কাছে। – “কিছু খেয়াল করেছো কি ভাই?” আশফি দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, – “কী?” – “বরযাত্রীদের আগমনেও কারো এত সাড়া পড়েনি যতটা তোমার আগমনে হয়েছে।” আশফি চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে দেখল অধিকাংশ নজর তার দিকে আটকে আছে। আফিয়া এগিয়ে এসে বলল, – “প্রচন্ড খুশি হয়েছি বাবা তোমাকে দেখে।” তানিমকে ডেকে আশফির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাকে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে দিতে বলল। আশফি তাদের পুরোপুরি না জানিয়ে অনুরোধ করল ব্যস্ত না হতে। মাহি দূর থেকে নিষ্পলক চাহনিতে দেখছে তাকে। এভাবে বেহায়ার মতো দেখাটা একজন মেয়ে হয়ে ঠিক শোভা পায় না। একটু আড়ালে চলে এলো সে। ব্যাস, এখন নিশ্চিন্তে তাকে দেখা যাবে। .
আশফির সঙ্গে তানিম পরিচিত হওয়ার পর তার বন্ধুমহলের প্রায় সবার সঙ্গে আশফি আর দিশানকে আলাপ করিয়ে দিলো। বিয়ের কাজ প্রায় শেষ। কিছুক্ষণ বাদেই বর বউকে নিয়ে বিদায় নেবে। হাতে জুসের গ্লাস নিয়ে আশফি তানিমের বন্ধু হৃদয়ের সঙ্গে কথা বলছে। দিশান আশফির দিকে মৃদু হেসে তাকাতে আশফি আলতো স্বরে বলল, – “কী?” – “খুঁজছো না যে?” আশফি নির্বিকারভাবে বলল, – “লুকিয়ে থাকলে খুঁজি কী করে?” দিশান হাসলো শুধু। আশফির মনে হলো আসাটা তার একদমই বৃথা। কারণ আসার পর থেকে সে মাহির টিকিটাও দেখতে পায়নি। এদিকে বউয়ের বিদায়ের পালা। আশফি এইসব মুহূর্ত কখনোই দেখেনি। আর তার দেখতে ইচ্ছাও করে না। কমিউনিটি সেন্টার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে সে দেখতে পেল গেটের কাছে মাহি আর তানিম দাঁড়িয়ে আছে। মাহির কাছে মাহির বান্ধবী দিয়া। ওরা বর পক্ষের ছেলেদের সঙ্গে খুব মজা করছে। এত কিছুর মাঝে আশফির আর ইচ্ছা করল না মাহির সাজসজ্জার দিকে তাকাতে। এত বেশি এড়িয়ে যাওয়াটা খুবই অপমানজনক আশফির জন্য। নির্বিকারভাবে সে কোনোদিকে আর না দেখে যেতে গেল, তখন তানিম পিছু থেকে ডেকে বাঁধা দিলো তাকে। আশফি পিছু ফিরে তাকাতে মাহির সঙ্গে চোখাচোখি হলেও দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। তানিম এগিয়ে এসে বলল, – “চলে যাচ্ছেন আপনি? কিছুই তো খেলেন না।” – “আসাটাই বড় ব্যাপার নয় কি?” – “সে তো অবশ্যই। আর একটু সময় থাকুন।” – “আমি আসলে ক্রাউডেড প্লেস প্রচন্ড অ্যাভোয়েড করি। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।” – “না না মনে করব কেন? আমরাও কিছুক্ষণ পরই বাসায় ফিরব।” – “আচ্ছা তবে আসুন। দেখা হবে আবার।” আশফি সোজা গাড়িতে উঠে পড়ল। পিছু ফিরে আর একবার তাকালে সে দেখতে পেতো মাহির নিষ্পলক দৃষ্টি। . . অ্যাপার্টমেন্টের প্রেসিডেন্টের থেকে অনুমতি নিয়ে তানিম আর ওর সব কাজিন, বন্ধু সবাইকে নিয়ে ছাদে এসেছে। পুরো রাতটা ওরা আজ এখানে এনজয় করবে। আফিয়া গিয়ে দিয়া আর মাহিকেও জোর করে টেনে নিয়ে এলো ছাদে। বিয়ের ওখান থেকে বেশ সবার সাথেই ওদের খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। এর মাঝে তানিমের চাচাত বোন রুহি বলল, – “আচ্ছা অনেক পরে একটা ছেলে এসেছিল। স্টাইল একদম স্টারদের মতো। লোকটা কে ছিল রে?” আফিয়া বলল, – “কার কথা বলছিস?” তানিম বলল, – “ও বোধহয় আশফি মাহবুবের কথা বলছে। উনিই সবার পরে এসেছিলেন।” – “আরে হ্যাঁ সেই। ওনার একটা ভাইও ছিল মেবি তোমাদের সাথে।” মাহি রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের সব কথায় শুনছে। তানিম বলল, – “ওরা তো আমাদের অ্যাপার্টমেন্টেই থাকে না?” আফিয়া জবাব দিলো, – “হ্যাঁ নয় তলাতে। আচ্ছা ওই ছেলেটা কিছু খেয়েছিল? আমি তো খেতে দেখলাম না।” – “জুস খেয়েছিল শুধু। খেতে বলেছিলাম অনেক। খায়নি।” – “আচ্ছা তো এখানে থাকলে ওনাদেরও ডাক। সবাই ভালো মজা হবে।” রুহির কথার ইঙ্গিত সবাই-ই বুঝতে পারল। ওকে সবাই কিছুক্ষণ পিঞ্চ করে তানিম বলল, – “আমারও ওনার কথাবার্তা খুব ভালো লেগেছে। ইংলিশ বলে একদম বৃটিশ এক্সটেন্টে। ডাকতে গেলে আবার কী ভাববে? অনেক বড় শিল্পপতি কিনা।” – “অনেক বড় শিল্পপতি হয়ে যখন আমাদের প্রোগ্রাম অ্যাটেন্ড করেছে তখন এখানেও আসবে। বুঝাই যাচ্ছে অনেক ফ্রি মাইন্ডেড। খুব বেশি মুড নেই।” তানিম তার এক বন্ধুকে সঙ্গে করে আশফির অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে দরজায় নক করতে দিশান এসে দরজা খুলল। – “আপনারা যে! ভেতরে আসুন।” তানিম হেসে বলল, – “আমরা নয়। আপনারা বাইরে আসুন।” – “মানে?” – “মানে হলো আমরা ছাদে একটা আড্ডার আসর বসিয়েছি। আপনাদের দুজনকে ডাকতে এলাম। আসুন না, কিছু সময় স্পেন্ড করবেন আমাদের সঙ্গে।” আশফি কিচেন থেকে বের হয়েছে তখন। দিশানকে দরজা মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে এগিয়ে এলো। – “কে দিশান?” আশফি ওদের দেখে ভেতরে আসতে বলল। – “ভেতরে তো এলাম। কিন্তু আপনাদের যেতে হবে আমাদের সঙ্গে।” – “কোথায়?” – “ছাদে।” আশফি বুঝতে পারল বিয়ের আড্ডাখানা সেখানে। যা তার বরাবরই অপছন্দ। সে দিশানকে বলল, – “ওকে নিয়ে যান। ও খুব পছন্দ করে। দিশান তুমি যাও।” – “ভাইয়া আমি একা যাব কেন? তুমিও চলো।” – “হ্যাঁ আপনি আসুন না। কিছুক্ষণ থাকবেন। এরপর খারাপ লাগলে চলে আসবেন না হয়।” এত বেশি অনুরোধ আশফির বরাবরই বিব্রত লাগে। তাকে মুখের ওপর না বলাটা সত্যিই খুব অপমানজনক সেই ব্যক্তির জন্য। বাধ্য হয়ে আশফি বলল, – “যাব কিন্ত এভাবেই যাব। কোনো আপত্তি নেই তো?” তানিমের বন্ধু বাপ্পি বলল, – “এতেই কুপোকাত হবে সব।” তানিম সঙ্গে সঙ্গে চিমটি কাটল বাপ্পিকে। আশফি বুঝতে না পারলেও দিশান ঠিকই বুঝে মুচকি হাসলো। কিচেন থেকে হাতটা ধুয়ে আশফি আর দিশান এলো ছাদে। একদম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি হলো সে ছাদে এসেই। আচমকা আশফির গায়ের ওপর এসে পড়ল কান্তা নামের একটি মেয়ে। আশফি তাকে জাপটে না ধরলে বেচারি সিঁড়ি বেয়ে নিচে পড়ে এখনই অক্কা পেত। – “ঠিক আছেন আপনি?” কান্তা দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, – “জি ভাইয়া। অনেক ধন্যবাদ।” সব থেকে ভয়ংকর ব্যাপার হলো মাহি আর দিয়া দূর থেকে আগেই দেখেছে আশফি আসছে। আর মাত্র যে ব্যাপারটা ঘটে গেল তা পুরোটাই মজার ছলে করা ছিল। এটা দেখতেই রাগে মাহি উঠে দাঁড়াল। দিয়াকে বলল, – “ছিঃ! এটা কেমন মজা?” – “গায়ে পড়া স্বভাবের এরা। শুনলি না এত সময় কী সব আলোচনা চলছিল ওদের নিয়ে!” – “আমার আর এখানে থাকতে ইচ্ছা করছে না। চলে যাচ্ছি।” দিয়া পেছন থেকে কয়েকবার ডাকল, মাহি শুনল না। মাহিকে চলে যেতে দেখে তানিমও ডাকল ওকে। আশফিকে পাশ কাটিয়ে যখন মাহি যাচ্ছিল আর তখনই তানিম মাহির হাত টেনে ধরল। – “আরে কোথায় যাচ্ছেন আপনি?” আশফি শুধু তাকিয়ে রইল মাহির ধরে রাখা হাতটার দিকে। মাহি নিজেও বিস্মিত হলো তানিমের আচরণে। মুহূর্তে তানিম হাতটা ছেড়ে বলল, – “স্যরি।” – “আমার প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। আপনারা এনজয় করুন।” – “ক্লান্তি সব কেটে যাবে। এসে বসুন। কোথাও যাবেন না। অনেক মজা।পাবেন কিন্তু।” শেষমেশ সবাই অনেকগুলো চেয়ার গোল করে বসলো। দিশান আর দিয়া পাশাপাশি। দিয়ার পাশে মাহি। আশফির আর তানিম পাশাপাশি, তানিমের পাশে রুহি। রুহির পর একে একে গোল হয়ে মাহির পাশে ছিল তানিমের বন্ধু আকাশ। তানিম বলল, – “কী শুরু করবি যেন বলছিলি তোরা?” রুহি বলল, – “খালি মুখে শুরু করব না কি? যা এনেছিস তা সবার সামনে আন এখনই।” তানিম বলল, – “ওগুলো তোদের মতো বাচ্চাদের জন্য না। তাই চুপচাপ থাক।” রুহি ক্ষেপে গিয়ে বলল, – “একদম দাবাতে চেষ্টা করবি না আমাদের। যা যা দ্রুত আন।” তানিম উঠে গেল। তারপর দূর থেকে বলল, – “কেউ একজন হেল্প কর আমাকে এসে।” বাপ্পি উঠতে গেলে রুহি টেনে ওকে বসিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, – “তুই যাবি না। ওই আপুকে যেতে বল।” মাহিকে ইশারা করে বলল রুহি। বাপ্পি প্রথমে ভ্রু কুচকালেও রুহির হাসি দেখে বুঝতে পারল। বাপ্পি কণ্ঠ উঁচু করে বলল, – “আমি পারব না যেতে।” মোটামোটি সবাই এর ওর গা ঠেলাঠেলি করছিল। ব্যাপারটা খুব চোখে লাগার মতো। মাহি উঠে বলল, – “আমি আসছি।” আশফি ট্রাওজারের পকেট থেকে ফোনটা বের করে সময় দেখে নিলো। রুহি আশফিকে জিজ্ঞেস করল, – “ভাইয়া আপনি কি বাইরে থাকেন?” আশফি রুহির কথা খেয়াল না করে ফোন চাপছিল। দিশান বলল, – “তোমাকে কিছু বলছে ভাইয়া।” আশফি মাথা উঁচু করে সামনে তাকাল। রুহি তাকিয়ে একটু মিষ্টি হাসলে আশফি বলল, – “স্যরি আমি খেয়াল করিনি। কিছু বলছিলেন?” – “বললাম যে আপনি কি দেশের বাইরে থাকেন?” – “না তো। দীর্ঘ অবসরে যাওয়া হয়।” – “আপনাকে দেখে আপনার কথাবার্তা শুনে আমরা ভেবেছিলাম আপনি ইউএসএ থাকেন।” – “আসলে ছোট সময়ে প্রায় সাত বছর ওখানে কাটিয়েছি। এর মাঝেও অনেক দিনের জন্য করে যাওয়া হয়। তাই হয়তো…” বাপ্পি বলল, – “ভাইয়া বিজনেস চালু করেছেন কতদিন?” প্রশ্নটা আশফির কান অবধি পৌঁছাল না। ততক্ষণে তার দৃষ্টি মাহি আর তানিমের দিকে। তানিম আর মাহি দুটো বড় ট্রে করে অনেকগুলো কোকের ক্যান নিয়ে এলো। রুহি বলল, – “এটা কী? এটার কথা তো বলিনি আমি।” – “চুপচাপ খা পাঁজি।” সব শেষে মাহি লাস্ট ক্যানটা নিয়ে আশফির সামনে ধরল। মোটামোটি রাগ ঝারার একটা স্কোপ মিলল আশফির। ক্যানের ছিপি মাহির পেটের সামনে বরাবর ধরে খুলল। ছিপি ওপেন হয়েই অনেকখানি কোক মাহির শাড়ি ভিজিয়ে দিলো। মাহি দূরে সরে এলো দ্রুত। মজার ব্যাপার হলো, আশফি সেদিকে তাকিয়ে ক্যানটা মুখে নিলো ঠিকই কিন্তু তাকে একবার স্যরিও বলল না। আশফির আচরণ সম্পর্কে মাহির মোটামোটি একটা ধারণা হয়ে গেছে। তাই সে বুঝতে পেরেছে, কাজটা আশফির ইচ্ছাকৃত। . – “তো এবার কিছু শুরু করি আমরা?” তানিম বলল, – “কর।” রুহি বলল, – “আমরা ট্রুথ অর ডেয়ার খেলব। কারো কোনো আপত্তি?” অনেকেই বলল ‘এসব পিচ্চি খেলা খেলব না।’ – “না খেললে ভাগ। এটাই খেলব।” আশফি কিছুক্ষণ আগেই উঠে গিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ফোন কথা বলছিল। ফিরে এসে সে বলল, – “আপনারা তাহলে এনজয় করুন খুব ভালোভাবে। আসছি আমি।” কথাগুলো সবাইকে শুনিয়ে বললেও উদ্দেশ্য ছিল মাহি। মাহি তা বুঝতে পেরেছে। সত্য কথা এটাই, মাহি খুব চাইছিল আশফির থেকে যাওয়াটা। চলে যাওয়ার কথা শুনে চাপাকণ্ঠে একটু রাগের সুরেই মাহি বলল, – “মিশতে শেখা লাগে।” কথাটা স্পষ্টভাবেই আশফির কানে এলো। কাছে চেয়ার ছিল। চেয়ারের মাথা এমনভাবে মটকে ধরল সবার কানেই সেটা ভাঙার আওয়াজ গেল। মাহির প্রতি রাগ সেই বিয়ে থেকেই। এখানে আসার পর রাগটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে তার। আর তার রাগের লাগাম একবার ছুটলে সবার সামনে সিনক্রিয়েটও করে ফেলতে পারে সে। যে ভরসা তার নিজের প্রতি নিজেরও নেই। যার জন্যই সে জায়গাটা ছাড়তে চাইছিল। চুপচাপ আশফি চেয়ারে বসলো। কিছুটা আন্দাজ সবাই-ই করতে পারল আশফি রেগে আছে। দিশান তাই বলল, – “টেক ইট ইজি ভাইয়া।” আশফি মুখে কৃত্তিম হাসি ফুটিয়ে বলল, – “শুরু করুন আপনারা সমস্যা নেই। আছি আমি।” রুহি প্রচন্ড খুশি হলো। সে মাঝের টেবিলের ওপর ওয়াইনের বোতলটা ঘোরাল। ঘুরে দিয়াকে তাক করল সেটা। রুহি প্রশ্ন করল, – “ট্রুথ অর ডেয়ার আপু?” দিশান হেসে বলল, – “বেচারিকে ডেয়ার দিয়ে জুজুর ভয় দেখিও না।” সবাই হো হো করে হেসে উঠল। শুধু মাহি নীরব চোখে তাকিয়ে আছে আশফির দিকে। আশফির দৃষ্টি নিচে। তার রাগ যে এখনো পড়েনি মাহি নিশ্চিত। এ কারণে একটু টেনশনে আছে সে। দিয়া কটমট চোখ করে দিশানের দিকে তাকিয়ে বলল, – “ডেয়ার।” সবাই ‘ওয়াও’ বলে চিৎকার করে উঠল। দিশান বলল, – “আমি বলি তাকে কী করতে হবে?” দিয়া মুহূর্তেই চেতে গিয়ে বলল, – “কখনোই না। আপু আপনি বলুন।” রুহি হেসে বলল, – “সমস্যা কী? ভাইয়া বলুক না।” দিশান বলল, – “চশমাটা খুলে দ্রুত আমাকে চোখ মারুন।” দিয়া বিস্মিত। – “কী?” – “আবার বলব?” প্রত্যেকের ঠোঁটের কোণে হাসি। দিশান বলল, – “দুই মিনিট সময়। এর মাঝে না পারলে আপনি ভীরু তা স্বীকার করে নেবেন।” দিয়া অসহায় চোখে মাহির দিকে তাকাল। মাহি নিজেও মুখ টিপে হেসে দু হাত উঠিয়ে আত্মসমর্পণের মতো করে ইঙ্গিত করল ‘কিছুই করার নেই।’ এর মাঝে বর্তমানের একটা হিন্দি মিউজিক চলছে। দিয়া চশমাটা খুলে বলল, – “আমি পারি না এটা করতে।” – “আরে এভাবে করতে হয়।” দিশান পরপর বেশ কয়েকবার চোখ মেরে দেখিয়ে দিলো দিয়াকে। হাসির রোল পড়ে গেছে রীতিমতো। অবশেষে দিয়া চোখ মুখ বন্ধ করে বলল, – “আমি ভীরু।” প্রচন্ড হতাশ হলো সবাই। শুধু দিশান হাসলো। পরবর্তীতে বোতল তাক করল তানিমকে। তানিমকে চেপে ধরে ডেয়ার দেওয়া হলো। একে একে পাঁচজনের পর আশফি কিছুটা এনজয় করল খেলা। সে বলল, – “আচ্ছা এবার বোতলটা আমি রিভোলভিং করি?” রুহি বলল, – “অবশ্যই।” বোতলটা হাতে নেওয়ার আগে একবার মাহির দিকে তাকাল আশফি। দিশান ব্যাপারটা ধরতে পেরে হাসলো। সে আশফির কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, – “কাজে নাও লাগতে পারে টেকনিক।” অত্যন্ত দৃঢ় স্বরে আশফি বলল, – “লাগবেই।” মাহির সোজাসোজি কান্তা মেয়েটা বসেছিল। বোতলটা তার দিকে ঘোরাল আশফি। তার এই টেকনিক বিফলে গেলে বোতল তাক করবে কান্তাকে। খুব বেশি জোরে আশফি বোতল ঘোরাল না। বেশি জোরে ঘুরলে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির মুখোমুখি নাও হতে পারে। অবশেষে বোতলা ঘুরে থামল মাহির দিকেই। পুরো চমকে তাকাল মাহি বোতলের দিকে। খেলাতে বেশিরভাগ চলেছে ট্রুথ। তাই সবাই চাপাচাপি করে মাহিকে ডেয়ার নিতে বলল। কিন্তু সে পুরোই নারাজ ডেয়ার নিতে। দিশান বলল, – “আচ্ছা তোমাদের দুই বান্ধবীকে রাস্তাঘাটে দেখলে এদের মাঝে কেউ যখন কাওয়ার্ড বলে ডাকবে তোমাদের ভালো লাগবে? তোমরা এত স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছো সবার সামনে ভীতু সাজতে!” প্রচন্ড লজ্জায় পড়ল মাহি। কেন যেন তার বারবার মনে হচ্ছে এটা আশফি কৌশলে তার দিকে ঘুরিয়েছে। আশফি বলল, – “ট্রুথ হলেই বা ক্ষতি কী?” মাহি আশফির চোখ দেখে বুঝতে পারল সে নিশ্চয় ভয়ানক কোনো প্রশ্ন রেখেছে মনে। যাতে সবার সামনে মাহিকে আরও লজ্জায় পড়তে হয়। মাহি মেরুদণ্ড সোজা করে বসে বলল, – “ডেয়ার।” আশফির ঠোঁটে বিজয়ের হাসি ফুটল। সে বলল, – “তো কিছু বলি?” মাহি তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলল, – “জি।” আশফি নিজের অ্যাপার্টমেন্টের চাবিটা মাহির দিকে ছুঁড়ে দিলো। চাবিটা ক্যাচ করতেই আশফি বলল, – “রুমের লাইট সব অফ। জানালাও সব বন্ধ। দরজাটা খুলে রুমে ঢুকে আবার দরজাটা লক করবেন ভেতর থেকে। এরপর সোফায় বসে টিভিটা অন করে ‘ড্র্যাগ মি টু হেল’ মুভিটা প্লে করবেন। বেশিক্ষণ নয়, মাত্র দশ মিনিট দেখতে হবে।” দেড় বছর আগেই এক চাঁদনিরাতে আশফি জেনেছিল মাহি হরর মুভি কখনোই দেখতে পারে না। এমনকি সবার সঙ্গে বসেও নয়। আর আজ আশফি সেই অসাধ্য কাজটিই তাকে সাধন করতে বলছে। মাহির শরীরের লোম তখনই দাঁড়িয়ে গেছে। আশফি বলল, – “না পারলে আমি শুধু ভীরু বলে স্বীকার করতে বলব না। ওইযে রেলিংয়ের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে হবে আমি ওল্ড উইমেনিশ।” মাহি দাঁড়িয়ে পড়ে চাবি নিয়ে গটগট করে হেঁটে নিচে নেমে গেল। এত সহজে সে মেনে নেবে দিয়া ভাবেনি। কারো সে জানে মাহি নিচে নেমে গেলেও ওই রুমে সে কোনোদিনও ঢুকবে না। দিশান বলল, – “ভাইয়া ও কাজটা সম্পূর্ণ করবে তা কীভাবে জানব?” সবাই-ই একই প্রশ্ন করল। কিন্তু আশফি কোনো উত্তর দিলো না। . দরজার মুখে এসে দাঁড়িয়ে আছে মাহি তিন মিনিট। মুখটা প্রায় কাঁদোকাঁদো। মনে মনে আশফিকে খুব ভয়ংকর রকমের বিশ্রী গালাগালি দিলো। হঠাৎ ফোনে মেসেজ টোন বেজে উঠল মাহির। মেসেজটা পড়েই মাহি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। সত্যিই ভীষণ অন্ধকার রুমে। আলো থাকাকালীন এই রুমটা মাহির খুব পছন্দ হতো। কিন্তু আজ এই অন্ধকার ঘরকে মাহির সত্যিই ভয়ংকর ভূতুরে ঘর বলে মনে হচ্ছে। ফোনের লাইট জ্বেলে মাহি রিমোটটা হাতে নিলো। সোফায় বসে সে থরথর করে কাঁপতে আরম্ভ করেছে। সেই মুহূর্তে আর একটা মেসেজ এলো। দ্রুত মাহি টিভি অন করে মুভিটা প্লে করল। কিন্তু সাউন্ড অফ করে চোখ পুরো বন্ধ করে রইল সে। কারণ এই মু্ভির ব্যাকগ্রাউন্ডের মিউজিক রক্ত হিম করার মতো। প্রায় সাত মিনিট সে এভাবেই চোখ বন্ধ করে একদম জড়সড় হয়ে বসে রইল। হঠাৎ করেই টিভিটা বন্ধ হয়ে গেল। রুম পুরো অন্ধকার, দরজা লক ভেতর থেকে। মাহি চোখ খুলে দ্রুত ফোন খুঁজতে থাকল হাতড়ে। আশ্চর্যকর বিষয়! ফোনটা সে পাশেই রেখেছিল। ফোনটাও নেই। এবার মাহি আতংকে উঠে দাঁড়াল। সে নিশ্চিত, কেউ তার সাথে ইচ্ছা করে এমন কিছু করছে। – “প্রচন্ড খারাপ হবে কিন্তু। কে সামনে আসুন জলদি।” কোনো আওয়াজ পেল না মাহি। মাহির খেয়াল হলো দরজা সে লক করে রেখেছিল। কেউ তো ভেতরে আসার সুযোগই পাবে না। এমনটা ভাবতেই মাহি কেঁদে ফেলল। অতি ভয়ে সে চিন্তাশূন্য হচ্ছে ধীরে ধীরে। এটাই হওয়ার ছিল। কী প্রয়োজন ছিল এত সাহস দেখানোর? এখন তো চিৎকার ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কিন্তু এমন কিছু করলে লোকে ভাববে কী? মাহি অন্ধকারে আন্দাজের বসে দরজার দিকে আস্তে আস্তে এগোতে লাগল। হঠাৎ করে শাড়ির আঁচলটা কেউ পেছন থেকে টেনে ধরেছে। এমনটাই মনে হলো তার। চিৎকার করে কেঁদে উঠল সে। শাড়িটা তখনো টেনে ধরে আছে কেউ। মাহির চিৎকার থামলে সে আঁচলটা টানতে শুরু করল। আর তখনই নিচে কিছু পড়ে ভাঙল। ভাঙার আওয়াজ কানে আসতেই মাহি আরও একবার চিৎকার করে উঠল। সে আশায় আছে কেউ দরজাটা এসে নিশ্চয় খুলবে তার চিৎকারের আওয়াজে। কিন্তু কিছু মুহূর্ত পার হলো, কেউ এসে দরজা খুলল না। মাহি দৌঁড়ে দরজার দিকে ছুটতেই কিছুতে আঘাত পেয়ে নিচে পড়ে গেল। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে সে বলল, – “কেউ আসুন না প্লিজ। দরজাটা খুলুন। প্লিজ! কেউ শুনতে পাচ্ছেন?” শরীর পুরো ঘেমে গেছে তার। বহুকষ্টে সে উঠে দাঁড়াল। হাতড়ে সে দরজা খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু হাতে বাঁধল সেন্টার টেবিল। দরজার পাশে কোনো সেন্টার টেবিল ছিল না। মাহির তা মনে আছে। তাহলে সে কোনদিকে এসেছে? পিছু ফিরে হাতড়ে দরজা খুঁজতে থাকে সে। হঠাৎ মনে হলো তার পেছনে কোনো শরীরের অস্তিত্ব। ঝট করেই সে পিছে তাকাল। কিছু দেখার উপায় নেই। তবু সে অনুভব করল আশেপাশে কারো অস্তিত্ব আছে নিশ্চয়। ‘কে?’ প্রশ্নটা করে লাভ নেই বলে সে চুপ থাকল। যেভাবে হোক তাকে বের হতে হবে। দশ মিনিট ওভার। এর মাঝে না ফিরলে কেউ অবশ্যই আসবে দরজা খুলতে। হেঁটে হেঁটে মাহি দরজা খুঁজতে ব্যস্ত। সে বুঝতে পারছে না, যে দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করেছে সেই দরজা সে কেন খুঁজে পাচ্ছে না? একটা হরর মুভিতে সে দেখেছিল, হিরোইন যতবারই বের হতে চায় ততবারই সেখানে প্রাচীর উঠে যায়। উফ্! সিনটা মনে পড়তেই মাহি কেঁপে উঠল। এবার সে আবার আঁচলে টান পেল। তখনো সে কেঁদেই চলেছে। আঁচলটা টানল আবার, কিন্তু এবার আঁচলটা খুব শক্ত করেই ধরে রাখা হয়েছে মনে হচ্ছে। কিছু নড়ে ওঠার শব্দ পেল মাহি। আঁৎকে উঠতেই আবার কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পেল সে। মাহি ছুটে আসার চেষ্টা করতেই সেফটিপিন ছিঁড়ে আঁচল খুলে নিচে পড়ে গেল। চিৎকারে নিজের কণ্ঠ বারবার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে তার কানে। কোনো একটা দরজার সঙ্গে সে ধাক্কা খেল। কিন্তু বাইরে যাওয়ার দরজা নয় সেটা। কোনো রুমের দরজা হবে। কাঁদতে কাঁদতে সে বলছে, – “ইয়া আল্লাহ আমি মরে যাব। কাউকে অন্তত পাঠাও।” কাঁদতে কাঁদতে মাহির শ্বাসটান উঠে আসার উপক্রম। খুব কাছে সে নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ পেল। চিৎকার করে ছিটকে দূরে সরে যাওয়ার আগে কেউ তাকে এক হাতে হ্যাঁচকা টানে বুকে টেনে নিলো। গায়ের আঁচলটা তখনো নিচে পড়ে। মাহির চিৎকার থামেনি। কেউ ফিসফিসিয়ে বলল, – “শশশশ! চিৎকার নয়। একদম চুপ।” অতি পরিচিত একটি পুরুষ কণ্ঠ। মাহি যেন প্রাণ ফিরে পেল। খুব শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরল সে। সেই ফিসফিসানি কণ্ঠে সে আবার বলল, – “এখন তো আরও ভয়ানক কিছু ঘটবে।” মাহি অনুভব করল লোকটার হাত তার কোমর ধীরে ধীরে খুব শক্ত করে চেপে ধরছে। তাকে ধাক্কা দিয়ে মাহি দূরে সরে আসলো। একদম দেয়ালের সঙ্গে মিশে এসে দাঁড়াল মাহি। কম্পিত স্বরে সে তোতলাভাবে বলল, – “কে আপনি দূরে থাকুন। খুন করে ফেলব নয়তো।” সে খুব কাছে এসে দাঁড়াল মাহির। মাহি দূরে সরে যাওয়ার মুহূর্তে টের পেল সে এখন তার দু’হাতের বেড়াতে বন্দি। আর তার আঁচল পেতে দাঁড়িয়ে আছে সে। তার খোচা দাঁড়ির কপোল স্পর্শ করল মাহির বাম পাশের কপোলে। সে বলল, – “খুব অচেনা লাগছে?” তার স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর শুনে মাহি স্বস্তি পেল। মাহি তাকে ডাকল, – “আশফি!” – “হু।” – “কেন এমন করছেন?” সে নিশ্চুপ। – “ছাড়ুন। যেতে দিন।” জিদ্দি কণ্ঠে বলল, – “না।” – “কেন?” – “রাগ প্রচুর। শীতল না হওয়া অবধি মুক্তি নেই।” – “শীতল কখন হবে?” – “আপনি জানেন।” – “কী করতে হবে?” – “শীতল করতে হবে।” – “লাইটগুলো জ্বালান।” – “উঁহু।” – “আমার শাড়িটা ছাড়ুন।” – “পারব না।” – “সরে তো দাঁড়াবেন?” – “সম্ভব নয়।” – “তাহলে কীভাবে কী করব?” আশফি মাহির কানের কাছ থেকে তার মুখটা এগুলো মাহির একদম ঠোঁটের মুখোমুখি। মাহির নাক আর ঠোঁটের ওপর তার গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। প্রচন্ড অস্থিরবোধ করছে মাহি। মাথার মধ্যে ভনভন আওয়াজ হচ্ছে, বুকে অদ্ভুত রকমের ব্যথা হচ্ছে। উহ্! আজ কি খুব গরম? প্রচন্ড গরম। পারলে যেন পুরো শাড়িটাই সে খুলে ফেলে দিলে বাঁচে। আশফি নীরব আর সেও নীরব। মাহি কম্পন মিশ্রিত মৃদুস্বরে বলল, – “আপনার নিঃশ্বাসের স্পর্শে আমার খুব গরম লাগছে আশফি।” আশফি নীরব। – “দূরে যান প্লিজ।” একইভাবে নিশ্চুপ সে। মাহি জোরে জোরে শ্বাস টানছে। হঠাৎ করে আশফির বুকে মাথা পেতে দিলো মাহি। ক্ষীণ সুরে বলল, – “খুন করে ফেলব কিন্তু। ছাড়ুন আমায়।” এবার আশফির ঠোঁটে স্মিত হাসি। কারণ সে মাহির দুই হাতের মাঝে বন্দি এখন। আর তার হাতদুটো দেয়ালে। – “ছেড়ে দিলে খুশি?” মাহি সেই একই সুরে বলল, – “খুব।” কিছুক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল তারা। আশফি অনুভব করল ভয়ের চোটে তার শরীর, মন দুই-ই দুর্বল। আর এ কথাও সত্য, প্রচন্ড অস্থিরবোধ করছিল সে। নিঃশ্বাস তার ধীরে ধীরে গাঢ় হয়ে উঠছে। ভয় আর অস্থিরতা থেকে যে মাহির ঘুম জেঁকে বসবে কে জানতো? আশফি মাহিকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরার জন্য হাত নামানোর পূর্বেই এক অপ্রত্যাশিত, অভাবনীয় ঘটনা ঘটাল মাহি। – “কী করছেন মাহি?” ……………………………. (চলবে) – Israt Jahan Sobrin ধৈর্য বেঁধে কালকের জন্য ওয়েট করুন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে