তুমি রবে ১৬

0
1946
তুমি রবে ১৬ . . এই যে মেয়েটি যখন তার ঘন পাপড়িযুক্ত চোখ দুটো মেলে তার সুন্দর ওষ্ঠদ্বয়ের হাসি হাসে দিশানের সামনে, রাতুলের সামনে তখন আশফির বলতে ইচ্ছে করে মাহিকে, – “শোনো মেয়ে, এই হাসি শুধু তুমি আমার সামনেই হাসবে আর কারো সামনে নয়।” কিন্তু এই কথাগুলো সে বলতে চাইলেও বলতে পারে না। অফিসের এমপ্লয়ি রাতুলের সামনে যখন লাজুক হাসি হাসে মাহি, আর সেই হাসি যখন রাতুল মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখে, সেই মুহূর্তে আশফির কেবল মনে হয় ওই হাসি দেখার একমাত্র এবং শুধুমাত্র অধিকার কেবল তার। পাঁচ দশ মিনিট বসে থেকে আশফি নিজের মাথা ঠান্ডা করে রুমে এলো। মাহির চোখে চোখ পড়তে আশফি নজর ফিরিয়ে নিয়ে তাকে বলল, – “আমি দুঃখিত আমার ব্যবহারের জন্য।” – “আমিও দুঃখিত।” – “আমি নিচে যাচ্ছি। হামিদ খাবার নিয়ে এলো কি না দেখে আসি।” কিছুক্ষণ পর আশফি খাবার ট্রে হাতে করে রুমে এলো। এসে দেখল মাহি খুড়িয়ে খুড়িয়ে ট্যারেসের দিকে যাচ্ছে। আশফি খাবারটা সেন্টার টেবিলের পাশে রেখে দ্রুত মাহির কাছে গেল। আর ঠিক তখনই মাহি পায়ের ব্যথায় আর এগোতে না পেরে নিচে বসে পড়ল। আশফি বলল, – “একটু অপেক্ষা করতে পারতেন। আমি নিয়ে আসতাম আপনাকে।” – “আমি একটু হাঁটতে চেষ্টা করছিলাম।” – “আরে বাবা এখন তো আপনার পা ঠিক নেই। ডক্টর বলে গিয়েছেন আরও দু থেকে তিন দিন সময় লাগবে আপনার স্বাভাবিকভাবে হাঁটা-চলা করার জন্য।” মাহি বিস্ময়ের কণ্ঠে বলে উঠল, – “দু তিন দিন!” – “জি।” আশফি নিচু হয়ে বসে মাহিকে বলল, – “আমার কাঁধে হাত ভর করে উঠে দাঁড়ান এবার।” প্রায় কয়েক সেকেন্ড অতিক্রম হলো, মাহি সংকোচবোধ করে বসে রইল ওর দিকে চেয়ে। আশফি তাকে বলল, – “আপনি এত সেকেলে কেন বলুন তো?” – “সেকেলের কী হলো? আমি কখনো আমার দাদু, বাবা, চাচা আর আমার ভাইদের হাত ছাড়া কারো হাত ধরিনি। আমার কোনো ছেলে বন্ধু ছিল না।” – “হ্যাঁ জানি, কিন্তু আমি তো আপনাকে আমার হাত ধরতে বলিনি কাঁধ ধরতে বলেছি।” – “ওই একই হলো। আপনি উঠুন, আমি নিজেই উঠতে পারব।” আশফি খানিকসময় বিরক্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর উঠে দাঁড়াল। মাহির ব্যর্থ চেষ্টা চলল প্রায় দুই মিনিট। আশফি তখন বলল, – “এবার আমি ট্রাই করি?” মাহি প্রশ্ন চোখে তাকাল ওর দিকে। আশফি তার মুখ আর চোখের নজর অন্যদিকে রেখে ঠোঁটে হালকা হাসি চেপে মাহিকে পাঁজাকোলা করে ট্যারেসে নিয়ে এলো। মাহি নিশ্চুপ। শুধু চেয়ে রইল আশফির দৃষ্টিতে। আশফিও তখন চেয়ে ছিল মাহির দৃষ্টি পানে। – “ডিভানে বসবেন?” – “না।” – “তাহলে কি নিচে?” – “না।” – “তবে?” মাহির চাহনিতে আচ্ছন্নতা জড়িয়ে তখন। সে আলতো সুরে বলল, – “এভাবেই থাকি না?” আশফির ওষ্ঠে স্ফূর্তির হাসি ফুটে উঠল। নীরবে তাকে নিয়ে নেমে এলো বাগান কিনারায়। যেখানে শ্যুটের জন্য ডেকোরেশন করা হয়েছিল। একটা বড় আকারের দোলনাও পেতে রাখা সেখানে। মাহিকে সেখানে বসিয়ে বাগানের আলোগুলো নিভিয়ে দিতে থাকল। মাহি তখন একটু গলার স্বর উঁচু করে বলল, – “আমি ঘাসের ওপর বসব।” আশফি আলো নেভানো শেষে মাহির কাছে এসে দাঁড়াল। – “পায়ে ব্যথা হবে।” – “হবে না। আপনি আমাকে নিচে বসিয়ে দিন।” আশফি মুচকি হেসে উঠল তখন। মাহি জিজ্ঞেস করল, – “হাসছেন যে?” – “পরে বলছি।” আশফির হাত ধরে উঠে এবার মাহি নিচে ঘাসের ওপর বসে পড়ল। – “এবার বলুন হাসলেন কেন?” – “শুনলে তো দেখা যাবে আবার রাগ করে বেরিয়ে যাবেন।” – “আপনি বলবেন?” – “বলছি একটু বসুন। দু কাপ কফি নিয়ে আসি।” – “আর সঙ্গে আপনার মাউথ অর্গানটাও নিয়ে আসবেন। সুরটা খুব ভালো লাগছিল।” – “আপনি শুনেছিলেন?” – “অল্প। কিন্তু ভীষণ ভালো লেগেছিল।” কিছুক্ষণ বাদে আশফি দু কাপ কফি আর তার মাউথ অর্গান নিয়ে উপস্থিত হলো। মাহির হাতে এক কাপ কফি ধরিয়ে দিয়ে নিজেও জাপটে বসলো তার পাশে। আশফি কফিটা খেতে শুরু করলে মাহি বলল, – “এত ধীরে ধীরে চুমুক দিচ্ছেন কেন? একটু দ্রুত চুমুক দিন।” – “অদ্ভুত! গরম তো। কফি কি কেউ পানির মতো করে ড্রিংক করে?” – “স্যরি। আসলে ওই সুরটা আবার শোনার জন্য খুব এক্সাইটেড তাই আর কী…!” আশফি কফিটা ঘাসের ওপর রেখে মাউথ অর্গানটা হাতে তুলে বলল, – “ও তাই বলুন। সেটা আগে বলবেন তো।” আশফি আর দেরি করল না। মাউথ অর্গানে সেই সুরটা আবার তুলল। প্রায় দুই মিনিট অবধি সুরটা বাজাল আশফি। মাহি শিশুদের মতো হাতে তালি বাজিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠল, – “মনে পড়েছে মনে পড়েছে। উফ্ কী দারুণ একটা গান! কত যে গিটারে সুর তুলেছি এই গানটার!” আশফি সুরটা থামিয়ে আশ্চর্য চোখ করে তাকাল মাহির দিকে। – “আপনি গিটার বাজাতে জানেন?” – “হ্যাঁ, কেন জানতে পারি না?” – “যার ছেলে ফ্রেন্ড থাকতে পারে না, যার চলাফেরার পথে সঙ্গে গার্ড থাকত সে কী করে গিটার বাজানো শিখল? প্রশ্নটা জাগতেই পারে মনে।” মাহি চোখদুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে আশফির দিকে মুখ এগিয়ে এনে বলল, – “আমি আমার ভাইয়ার থেকে শিখেছি। আমার ভাইয়া দারুণ গিটারিস্ট। আর ও খুব ভালো গানও করতো।” – “আচ্ছা! আপনি নিশ্চয় গাইতে জানেন না?” মাহি অনেকটা ক্ষিপ্ত সুরে বলল এবার, – “কেন জানব না? আমিও জানি তবে ভাইয়ার মতো অতো ভালো নয়। আপনি আমাকে যতটা সেকেলে ভাবেন আমি ততটাও নই।” আশফি হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়াল। – “আরে কোথায় যাচ্ছেন?” – “ওয়েট, আসছি।”
আশফি একটা কালো গিটার এনে মাহির হাতে ধরিয়ে দিলো। বলল, – “এটা দিশানের। ও খুব ভালো গিটার বাজাতে জানে। আপনি এবার শুরু করুন। আমি আমার মাউথ অর্গানে সুর দিচ্ছি।” – “আমি বাজাব?” – “হ্যাঁ, পারেন তো না কি? আমিও পারি এটা বাজাতে। তবে পারফেক্টলি নয়। তাই আপনিই বাজাবেন। আর তাছাড়া আমার এখন খুব শখ করছে আপনার গান শোনার। দেখব না আসলেই আপনি গান জানেন কি না?” – “ছোট করছেন? ওকে, দেখুন।” মাহি চুলগুলো পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে ভালো করে এঁটে নিলো। তবুও কপালের ওপর কয়েক গাছা ছোট চুল কপালের এক পাশ জুড়ে রইল। তারপর গিটারটা ভালো করে ধরে গিটারের তারে টুংটাং আওয়াজ করার মুহূর্তে আশফির দিকে তাকাল সে। আশফি মিটিমিটি হাসছে তখন। হাসিটা এবার আড়াল রেখে মাউথ অর্গানটা মুখে নিলো। গানের সুরটা সেই আগে তুলল। খুবই চমৎকার একটি মুহূর্ত। বর্ষার ক্ষণ কেটে গেছে। আকাশে ধোঁয়া ধোঁয়া মেঘ বইছে মাঝে মাঝে। আবার মেঘ সরে আকাশ পরিষ্কার। তখন রাতের আকাশে নক্ষত্রপুঞ্জের মৃদু কিরণ। যদিও চন্দ্রকিরণে রাতের বুক জুড়ে আছে। সেখানে নক্ষত্রের মেলা রইলেও তা দর্শন করার সুযোগ কই? মৃদুমন্দ বাতাসের তোড়ে আশফি কপালের ওপর পড়ে থাকা উড়ন্ত সিল্কি চুলগুলোতে মাহির নজর থেমে গেল। ওই উড়ন্ত চুলগুলো যেন তাকে বলছে, “হৃদয়ের গহীনে লুকানো অনুভূতি প্রিয় বুঝিয়ে দাও তোমার সুরেরই মূর্ছনায়।” কথাটা মনে হতেই মাহি স্মিত হাসলো। আশফি সুর তোলার ফাঁকে মাহিকে ভ্রু উঁচিয়ে ইশারা করল গানটা ধরার জন্য। টুংটাং আওয়াজ থেকে মাহি মূল সুরে এসে গাইতে শুরু করল এবার, “Kitna pyara hai ye pyar, pyara pyara Hua hai pehli baar, hota hai ek baar Phir na hoga ye dobara ~~~~~~~~~~~~~~~ Haye mera dil churake le gaya Churane wala, mera qaatil ~~~~~~~~~~~~~~~ Haye mera dil churake le gaya Churane waala mera qaatil ~~~~~~~~~~~~~~~ Ye dil tujhpe aaya hai, aate-aate Dard-e-dil toh jaata hai, jaate jaate Jaage hain, soye hain Hum donon khoye hain Kaisi tanhayi hai, masti si chaayi hai Ye mausam hai pyar ke kaabil Haye mera dil churake le gaya Churane wala, mera qaatil ~~~~~~~~~~~~~~~~ Ab to kaate na katein pyasi raatein Kuchh kuchh hota hai sun ke aisi baatein Bechaini sahne de, palkon mein rahne de Teri baahon mein hai, teri raahon mein hai Jaan-e-jaan meri manzil Haye mera dil churake le gaya Churane waala, meri qaatil Haye mera dil churake le gaya Churane wala, mera qaatil Kitna pyara hai ye pyar, pyara pyara Hua hai pehli baar, hota hai ek baar Pqaatil hoga ye dobara” – “সত্যিই প্রেম করার জন্য আজকের আবহাওয়াটা দারুণ।” মাহি নীরব রইল আশফির দিকে চেয়ে। আশফি এবার বলল, – “আচ্ছা গানের মাঝে মেল মিউজিক মানে লিরিক্সটা আপনি ফিমেল করে নিয়েছিলেন তাই না?” – “হ্যাঁ। কারণ এখানে তো আমি একা গাইছি। কোনো ছেলে তো গাইছে না আমার সঙ্গে। তাহলে ছেলের লিরিক্স কেন রাখব?” – “হ্যাঁ তাই তো।” এরপর দুজনেই নীরব কিছু সময়। মানুষ দুটো থেকে থেকে যে কথা হারিয়ে ফেলছে তা তারা দুজনই বুঝতে পারছে। কিছুক্ষণ পার হতে আশফি বলল, – “চলুন খেতে হবে তো।” – “হু।” আশফির ওঠার আগেই মাহি উঠতে নিলে আশফি তাকে বলল, – “তখন উঠতে অসুবিধা হলো না আর এখন উঠতে অসুবিধা?” – “আমি হাঁটতে চাই।” আশফি কিছু বলল না। শুধু মাহির হাতটা নিজের কাঁধে উঠিয়ে নিলো। মাহি আশফির কাঁধটা সাপোর্টে রেখে কিছুদূর অবধি হেঁটে এলো ঠিকই। কিন্তু গোড়ালিতে ভর পড়ে যায় বিধায় সে থেমে গেল। আশফি দেখল মাহি মুখটা কাচুমাচু করে রয়েছে। আশফি ওকে বলল, – “চোখদুটো বন্ধ করুন।” – “কেন?” মাহির বিস্ময়পূর্ণ চোখদুটো দেখে আশফি হেসে মজা করে বলল, – “প্যান্টের বাটন খুলব।” মাহি ‘ইস’! বলে চোখদুটো বন্ধ করতেই আশফি ওকে কোলে তুলে ট্যারেসে চলে এলো। কাউচে চুপচাপ বসে পুলের পানি দেখছিল মাহি। স্বচ্ছ পানিতে চাঁদের কিরণ আর তার প্রতিচ্ছবির এত বেশি রোমাঞ্চকর দৃশ্য মাহি এর পূর্বে কখনো দেখেনি। সে তো আজ ভুলেই গেছে বাড়ি ফেরার কথা। আশফি খাবারগুলো গরম করে নিয়ে এলো। দুজনে এক সঙ্গে খেতে বসলেও আশফি বেশি সময় আর মাহির সামনে বসে খেতে পারল না। হামিদ কোথা থেকে খাবারগুলো নিয়ে এসেছে কে জানে! খাবারগুলোর সঙ্গে এত দারুণ জলপাইয়ের আচার দিয়েছে যা মাহি বাচ্চাদের মতো চেটেপুটে খাচ্ছিল। জিহ্বার ডগা দিয়ে ঠোঁটদুটো থেকে যখন আচারের অংশ চেটে নিচ্ছিল মাহি, তা দেখেই আশফির খাওয়া থেমে যায়। কেউ এত সুন্দর করে আচার খেতে পারে! ঠিক এমনটাই আশফির মন ভাবছিল। এরপর যখন মাহি ঠোঁটদুটো চেটে ঠোঁট চোঁখা করে আশফিকে বলল, – “উম্মম! কী দারুণ আচারটা! আমার তো আরও খেতে ইচ্ছে করছে। আমি আরও খাই?” এ কথা শোনার পর আশফির সেই মুহূর্তে খুব ইচ্ছা করছিল মাহির ওই ঠোঁট থেকেই আচারটার স্বাদ নিতে। আশফি তখন কম্পন জড়ানো কণ্ঠে মাহিকে বলল, – “একদম নয়। ঘোর বিপদ ঘটে যাবে তো এবার।” মাহি প্রশ্ন চোখে তাকিয়ে বলল, – “আচার খেলে ঘোর বিপদ হবে?” আশফি মনে মনে বলল, – “শুধু ঘোর বিপদ নয়, ঘোর মাতাল হয়ে পড়ছি। তুমি কি বুঝবে এই বিপদের আশঙ্কা!” এরপরই আশফি বিনাবাক্যে খাবারের প্লেট ছেড়ে রুমে চলে যায়। – “রাতের প্রহর যত বাড়ছে চাঁদের দীপ্তিও যেন ততই ছড়িয়ে পড়ছে।” আশফি মাউথ অর্গানে সুর তোলার ফাঁকে ফাঁকে মাহিকে দেখছিল। তার কথা শুনে সুরটা থামাল। আশফিও বলল, – “সত্যিই আজকের এই রাতটার মতো এত মনোরম জ্যোৎস্নালোকিত রাত আমি দেখিনি।” মাহির দিকে আড়নজরে চেয়ে সে বলল, – “সবকিছু যেন একটু বেশিই মায়াবী লাগছে।” – “হ্যাঁ।” চাঁদটার পানে চেয়ে বলল মাহি। আশফিকে মাহি বলল, – “এই রাতটাকে আপনার কণ্ঠের একটা গান ডেডিকেট করবেন?” আশফি আড়নজরেই বেশ কিছুক্ষণ চেয়ে থাকল ওর দিকে। তারপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে নাকটা একটু চুলকিয়ে বলল, – “আই ডেডিকেট দ্যা নাইট দ্যা ফেইরীটেল।” মাহি ভ্রু জোড়া উঁচু করে তাকাল আশফির দিকে। আশফি বলল, – “সুরটা তুলতে পারবেন?” – “কী গান?” আশফি গানের সুরটা মাউথ অর্গানে তুলল। মাহি শোনার পর বলল, – “গানটা দারুণ। কিন্ত এটার সুর আমি তুলতে পারব না। আপনি আপনার কণ্ঠেই ধরুন না গানটা।” আশফি রেলিংয়ের ধার ঘেষে দাঁড়িয়ে ছিল। হেঁটে এসে মাহির মুখোমুখি বসলো। তারপর গিটারটা হাতে তুলে সে নিজেই গিটারে সুর তুলে খুব ধীর কণ্ঠে গাইতে শুরু করল, “I Never knew a love A love that could be sweeter No matter what my mind says You’re music gives me fever The moment that we danced Your arms felt like a cradle And when you took my hand I was no longer able It never felt so right before I need to be with you much more I can’t believe this kind of fate We can runaway… Is it love? [Repeat] I’m always in a spell Even when I sleeping You’re always on my mind I hope that I’m not dreaming If I am let me stay asleep Don’t wake me up I feel complete I never want to feel it end What a lovely moment Is it love? [Repeat] I wanna give you my love Overtime overtime I wanna make love to you Overtime overtime I wanna be right next to you Overtime overtime I wanna be in love with you Overtime overtime” গানটা শেষে মাহি চুপটি করে রইল। কিছু বলল না। আশফি দেখল মাহির মুখটা কিছুটা ভার। ও জিজ্ঞেস করল, – “আমি তো আপনার মতো এত সুন্দর গাইতে পারি না।” মাহি গম্ভীর সুরে বলল, – “এত সুন্দর করে যার জন্য গাইলেন, সে কে?” আশফি নীরব চাহনিতে তাকিয়ে থাকল শুধু। ওষ্ঠে তার মৃদু হাসি। ওর খুব বলতে ইচ্ছা করল মাহিকে, – “আয়নাতে নিজের মুখটা কি কখনো দেখেননি?” কিন্তু এ কথার পরিবর্তে আশফি শুথু হাসলোই। মাহি সেই ভার মুখেই বলল, – “এবার হাসলেন কেন?” – “বলা বারণ।” – “তখনো কিন্তু বলেননি।” – “ওইযে বললাম, বলা বারণ।” – “অদ্ভুত!” – “হ্যাঁ সত্যিই অদ্ভুত।” দুজনের গল্প আড্ডা আর হাসি তামাশার মাঝে রাতটার প্রহর কখন যে দ্বিগুণ থেকে দিগুণ হতে আছে তার খেয়াল আর দুজনের কারোরই রইল না। আশফিও ভুলে গেল মাহিকে তার বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা। এদিকে সোমের মিসড কল প্রায় একশো ছুঁইছুঁই। রাত বাজে এগারোটা একুশ। মাহি পুলটার দিকে চেয়ে আশফিকে বলল, – “ওখানে একটা ছোট্ট দীঘি হলে খুব দারুণ হতো।” আশফি মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল, – “তাই! আর কী হলে মানাতো?” – “বাগান জুড়ে থাকবে বর্ষজীবি, বসন্তকালীন টিউলিপ ফুল। লাল, হলুদ, সাদা সবক’টা রঙের ফুল থাকবে।” – “যথা আদেশ শেহজাদী। তবে দীঘিটা করতে পারব বলে কথা দিতে পারছি না।” মাহি খিলখিল করে হেসে উঠল। আশফি সেই হাসি দেখার মাঝে মাহিকে সে গম্ভীর সুরে বলেই ফেলল, – “একটা কথা রাখবেন?” মাহি জিজ্ঞাসু চোখে ওর দিকে তাকালে আশফি ওকে বলল, – “এভাবে আর কোনো পুরুষের সামনে হাসবেন না প্লিজ।” মাহি কিছুটা অবাক হলো তার কথাতে। – “কেন?” – “কথাটা রাখতে পারলে রাখবেন।” নির্ঘুম রাতজাগা পাখি হবে আজ দুজন। হয়তো এমন কিছুই ওরা দুটিতে আজ প্রতিজ্ঞা করেছে। রাতের নিস্তব্ধতা যত বাড়ছে দুটি রাতজাগা পাখির ভেতরের নিবিড়তাও যেন ততই বেড়ে উঠছে ওদের মাঝে। পুরুষ পাখিটা রেলিং ঘেষে নিচে বসে মাউথ অর্গানে তার ফেইরীটেলের উদ্দেশে এক এক রকম সুর তুলছে। আর কন্যা পাখিটা কাউচে পা তুলে গুটিসুটি হয়ে বসে সেই সুরে মাতোয়ারা হয়ে উঠছে। রাত জাগা পুরুষ পাখিটা সুর থামিয়ে কন্যা পাখিটার পানে চেয়ে ভাবছে, – “নিশীথে এমন রাতপরী কখনো যে নামেনি আমার বেলকনিতে। কী করি তাকে আমি ছাড়ব মাবুদ!” রাত প্রায় শেষের দিকে। রাতের আকাশের নক্ষত্রপুঞ্জের বিদায়ের পালা এখন। চন্দ্রকিরণে ঝলমলিত আকাশটার দিকে চেয়ে আশফি মাহির উদ্দেশে বলল, – “ছোটবেলাতে মাঝেমধ্যে যখন শেষ রাতে ঘুম ভাঙতো আর ঘুম আসতে চাইতো না, তখন দাদীবু কোলের মাঝে জড়িয়ে ধরে বলতো শেষ রাতে তারা ঝড়ে পড়াকালীন যে মন থেকে যা উইশ করবে, গড নাকি তাই-ই পূরণ করে দ্যান। আপনি বিশ্বাস করেন মাহি?” – “খুব। আপনিও করেন?” – “করতাম না, তবে আজ করতে ইচ্ছা করছে। করবেন উইশ?” মাহি তার প্রশ্নের উত্তরে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল শুধু। এরপর দুটিতে নক্ষত্রপুঞ্জ ঝড়ে পড়ার মুহূর্তে তাদের মনোবাসনা ব্যক্ত করল মনের মাঝে। আশফি বলল, – “কিছুইতো চাইনি আজ অবধি। আজ কেন এত চাইতে ইচ্ছা করছে জানি না মাবুদ। কিন্তু খুব চাইতে ইচ্ছা করছে। আজকের রাতটা কি বারবার ফিরিয়ে দেবে আমায়? এই চাঁদ, এই চাঁদের কিরণময় রাত যেমন আজীবন তোমার দুনিয়াতে রবে ঠিক তেমনই ওই মেয়েটাও যেন আমার দুনিয়াতে আজীবনের জন্য রয়।” আশফি তার উইশ শেষে যখন মাহির দিকে তাকাল তখন দেখল মাহি ওর দিকে চেয়ে মুচকি হাসছে। আশফি জিজ্ঞেস করল, – “হাসছেন যে?” – “বলা বারণ। আচ্ছা বলুন কী উইশ করলেন?” আশফি মাহির দিতে তাকিয়ে শোধ নেওয়ার মুখভঙ্গীতে বলল, – “বলা বারণ, জানেন না? বললে পূরণ হয় না। আপনি কী উইশ করলেন?” – “বলব না। বললে পূরণ হয় না জানেন না?” আশফি হাসলো শুধু। এরপর মাহি বলল, – “আমার সঙ্গে এই মুহূর্তে বসে যে অন্য মানুষটি উইশ করেছে, আল্লাহ যেন তার মনোবাসনা পূর্ণ করেন। এটাই ছিল আমার উইশ।” আশফি ম্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইল মাহির দিকে। নির্বাক আশফি উঠে এসে মাহির খুব কাছে বসলো। নিস্তব্ধ চাহনি মেলে তাকিয়ে আছে দুজন। ……………………………… (চলবে) – Israt Jahan Sobrin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে