তিনি এবং ও ! ২৯.

0
1849
তিনি এবং ও ! ২৯.
তিনি এবং ও ! ২৯.

তিনি এবং ও !

২৯.
– আজকের মতো থাক। অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে যান।
সুফি সাহেব কথাগুলো বলে উঠতে গেলেন তখনি নিদ্র বলে উঠলো
– আমি কাল চলে যাবো। যেতে আমাকে হবেই।
সুফি সাহেব আবার বসলেন তারপর মৃদু স্বরে ধীরেধীরে বললেন
– অন্ধকার থাকতেই মৌরি আপনাকে ঘুম থেকে টেনে তুলবে। অনেক রাত হয়েছে এখন। ঘুম না হলে সারাদিন ওর সাথে পেরে উঠতে পারবেন না।
আজকে আপনি ওর দেয়া চা ফেলে দিয়ে বিরাট ভুল করেছেন। ও আপনাকে এতো সহজে যেতে দিবেনা।
গল্প বা ঘটনা যেটাই বলুন শোনার অনেক সময় পাবেন।
নিদ্র তীক্ষ্ণ স্বরে কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো।
সুফি সাহেব বললেন
– আসলে আমি আপনাকে এখানে আটকে রাখতে চাইনি। কিন্তু মৌরির কারণে পারছিনা। আপনাকে ঝামেলায় ফেলার জন্য আমি দুঃখিত।
ফ্লাক্স ভরা চা আছে, খাবেন?
নিদ্র মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলো।
মেয়েটা পাগল নাকি? নাকি তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার ফন্দি আঁটছে এরা?
মেয়েটার গায়েররঙে তার সমস্যা না। সমস্যা তার গায়েপড়া স্বভাবে। এরকম গায়েপড়া মেয়ে নিদ্রের মোটেই ভালো লাগেনা।
ওয়ান টাইম কাপে চা বানিয়ে দিলো নিদ্রকে। নিদ্র নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে।
তীরে এসে তরী ডুবানোর ইচ্ছা তার নেই।
সে একটি সাদাফুলকে বাঁচাতে চায়। না সে তার কেউ হয়। অদ্রি তার কী হয়? মাত্র কদিনেরই বা পরিচয়? কটাই বা কথা হয়েছে? তার জন্য সে এতো বড় ঝামেলায় ফেঁসে গেছে। হয়তোবা এটাই বন্ধুত্ব। নাকি তার থেকেও বেশি কিছু?
সুফি সাহেব বললেন
– চা মৌরির বানানো। খেতে পারেন ভয় পাবার কিছুই নেই। আর দরজা লক করে ঘুমাবেন।
নিদ্র চায়ে চুমুক দিলো। সত্যি অসাধারণ চা। অদ্রির চা কেমন যেন পানসে টাইপের হয়। একদিন কাছে দাঁড়িয়ে চা বানানোটা দেখতে হবে। দিনের পর দিন এরকম পানসে চা খাওয়ার কোনো মানে হয়না।

নিদ্রের মনে হচ্ছে সে গভীর কোনো স্বপ্ন দেখছে। তার মুখের ঠিক উপরে কেউ ঝুকে আছে। তার এলোপাথাড়ি চুল নিদ্রের মুখে বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছে। খুব সুন্দর ঘ্রাণ তার নাকে ধাক্কা লাগলো। খিলখিল করে হাসার শব্দ তার কানে ভেসে আসছে। তার মনে হলো প্রায় আধা মাইল দূর থেকে ভেসে আসছে।
থেমে থেমে হাসির শব্দ তার কানে অজানা সুর সৃষ্টি করছে।
তার মুখের উপর গভীর উষ্ণ নিশ্বাসের স্পর্শ অনুভব করলো। কী হচ্ছে? কেনো হচ্ছে সে তার চিন্তায় আনতে পারলো না। এটা স্বপ্ন না বাস্তব সে তার পার্থক্য করতে এখন আর পারছেনা।
প্রায় লাফিয়ে উঠে তার খুব কাছে সেই কৃষ্ণ সুন্দরী কে দেখে ভয়ে প্রায় আৎকে উঠলো।
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো এখনো অন্ধকার। সময় টা দেখা তার জরুরী। স্বপ্ন না বাস্তব পার্থক্য করা যেতো।
তার স্পষ্ট মনে আছে দরজা খুব ভালোভাবেই লক করে ঘুমিয়েছে। কিন্তু কীভাবে কী?
সুফি সাহেবের কথার কারণে তার হ্যালুসেনেশন হচ্ছে না তো?
ঠাণ্ডার রাতেও নিদ্র ঘামতে শুরু করলো।
মৌরি ঠাট্টার স্বরে বলল
– আপনি মশাই আমাকে ভয় পাচ্ছেন কেনো?
নিদ্র জড়ানো কণ্ঠে বলল
– এতো রাতে আমার ঘরে কেনো? এখান থেকে যান।
মৌরি মুচকি হেসে বলল
– আপনাকে নিয়েই তবে যাবো।
– মানে কী? আমি কেনো আপনার সাথে যাবো?
নিদ্র বিছানা ছেড়ে উঠে ঘরের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
মৌরি ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বলল
– আপনি আমার সাথে যাবেন। ভয় পাবার কিছুই নেই। রাজপুত্র কে আমি ক্ষত করবো না। কারণ, স্বয়ং রাজপুত্র আমাকে ক্ষত করেছে।
– আপনি এখন যান। আমি ঘুমাবো। সুফি সাহেবকে ডাকতে হবে।
– ডাকুন। সালিশ বসান। ভালোই হবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আমাদের গাটবাধা হয়ে যাবে। তখন আর আমাকে তাড়াতে পারবেন না।

নিদ্র কথাগুলোর সারমর্ম বুঝতে পেরে থমকে গেলো। কী করা যায়? এই মেয়েকে বিয়ে? জীবন আমার মরুভূমি হয়ে যাবে।
নিদ্র বলল
– আপনি কী চান বলুন?
– আমার সাথে এখন আপনাকে বের হতে হবে। আমরা একটু ঘুরবো ফিরবো। তারপর ছুটি আপনার।
– সত্যি তো?
– মৌরি যা বলে সত্য বলে।

চলবে…….!

#Maria_kabir