ডুমুরের ফুল ৪১.

0
1829
ডুমুরের ফুল ৪১. মিম্মা নাক মুখ কুঁচকে এক চুমুকে পুরো গ্লাসের চুয়ানিটা শেষ করলো। কেমন বাজে একটা গন্ধ আর স্বাদটাও ঝাঁঝালো। মনে হলো ঝাঁঝালো কিছু একটা গলা দিয়ে দ্রুত নেমে গেলো। আরেক গ্লাসে চুমুক দিবে হেম হাত থেকে গ্লাস কেড়ে নিয়ে রূঢ়ভাবে বলল – আর একবার চুমুক দিবি তো তোকে মেরে ফেলবো আমি। বেয়াদব মেয়ে এখানে এসে একেবারে ফাজিল হয়ে গেছে। মেয়েরা এসব খায়। মিম্মার মনে হলো পুরো রুমটা ঘুরছে ৩৬০° এঙ্গেলে। সবকিছুই কেমন সুন্দর আর সুখকর মনে হচ্ছে। আহা! কি সুন্দর জীবন আর অনুভূতি। হেমলতার কথা তার কানেই যাচ্ছেনা। হেমলতার হাত থেকে জোরাজোরি করে গ্লাসটা নিয়ে নিলো। আগের মতো এক চুমুকে গ্লাস খালি করে ফেললো। হেমলতা আর কিছুই বললো না। বিছানায় গিয়ে শুয়ে রইলো মরার মতো। কিছুই ভালো লাগছেনা তার। ভেতরে একটা ছটফটানি কাজ করছে। মিম্মা বিছানায় চার হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে আবোলতাবোল কথা বলছে। বেশ জোরে জোরে বলছে। কী বলতেছে তার আগা মাথাও হেমের মাথায় ঢুকছেনা।
জাদিদ গোল্ড লিফ ধরাতে যাবে শাহীন বাঁধা দিয়ে বলল – গোপাল বিড়ি চুয়ানির সাথে যায়। দুটোই লো কোয়ালিটির বুঝেছিস? – তা নাহয় বুঝলাম। জাদিদ গোপাল বিড়িতে আগুন ধরিয়ে একটা টান দিয়ে বলল – গোপালকে একটা ভিডিও কল দে। – ক্যান? – ওর সামনে বিড়িতে টান দিয়ে কমু দ্যাখ হ্লার পুত তোর গোয়ায় আগুন ধরাইয়া টানতেছি। শাহীন হো হো হো করে হাসতে শুরু করলো। জাদিদের পিঠে চাপর মেরে বলল – শালা তুই একটা জিনিস। – একটা ফেভার করতে পারবি? – কীরকম? – হেমকে একটু ডেকে নিয়ে আসতে পারবি? – তোর তাহলে সেই রকমের নেশা হয়ে গেছে। এতো রাতে ওকে ডেকে আনা অসম্ভব। আর তুই পুরোপুরি মাতাল অবস্থায় আছিস। – একটু কথা বলতাম। তাহলে মন শান্ত হতো। এই চুয়ানি টুয়ানিতে কাজ করে না। – তাহলে তুই ছাড়ছিলি ক্যান ওরে? – ওর নানীও মেনে নেয়নি আর আমার দাদীও। বাপরে কইলাম। সে বলল, তোর দাদীর বিপক্ষে আমি যেতে পারবোনা। আমার নতুন মাও দাদীকে প্রশ্রয় দিলো। হেমকে তার পছন্দ হয়নি। তার রাজপুত্রের মতো ছেলের সাথে ওরকম প্যাঁচা টাইপের কন্যা মানায় না৷ হেমের বিয়ের দিন প্রচণ্ড মন খারাপ আমার। থাকবেও না ক্যান বল? প্র‍থমে মা – বাবার সেপারেশন, তারপর মা চলে গেলো গ্রিসে আর বাবা শীপে। তাও মায়ের সাথে যোগাযোগ হতো মাঝেমধ্যে। মা কী করলো জানিস? – উঁহু না৷ – মা বিয়ে করলো আবার। তারপর বাবাও বিয়ে করলেন। বিয়ের পর বাবা অনেক চেঞ্জ হয়ে গেলো। যে বাবা আমাকে ছাড়া এখানে আসলে ভাত খায়না সেই বাবাই আমি খেয়েছি কিনা জিজ্ঞেসও করেনা। হেম এমনিতেই আমার ভালো থাকার টনিক ছিলো তখন আরো বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে গেলো। ওকে জড়িয়ে ধরে কিছু সময় পার না করলে আমার ভালো লাগতো না। সেই হেমেরও বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো। কেউই রাজি হলোনা আমাদের দুজনের পরিবারের। নতুন মায়ের সাথে এক কথায় দুই কথায় লেগে গেলো বিশাল ঝগড়া। বাবা এসে আমাকে রাগারাগি করলেন৷! হ্যাঁ আমি মানছি আমার দোষ কিন্তু আমার মানসিক অবস্থাটা কেউই তখন বুঝতে চাইলোনা। বাবা আমাকে সেদিন প্রথম মারলেন৷ আমার ছোটো বেলার ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে। আঘাত গুলো না দোস্ত শরীরে লাগছিলো না সেদিন। ঠিক মনের ভেতরে লাগতেছিল। দাদী আর নতুন মা অনেক খুশি হয়েছিল। আমি বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকায় চলে আসলাম৷ হেমের স্মৃতি ওখানে রেখে চলে আসলাম৷ কবর দিয়ে দাফন কাফন করে। কিন্তু ভাগ্যের মজা নেয়ার অনেক সখ আছে। তাই হেমের স্মৃতি ভূত হয়ে আমার চারপাশ ঘিরে ঘুরেফিরে বেড়ায়। – হেম বিবাহিত রে। ওর জামাই এতো রাতে একটা ছেলের সাথে এখানে আসতে দিবেনা আর তুই পুরোপুরি মাতাল। খারাপ কিছু ঘটিয়ে ফেলবি। – তাহলে সকালে নিয়ে আসতে পারবি? – তা পারবো। কিন্তু ওরা কোন রিসোর্টে উঠেছে সেটা তো জানা দরকার। – ওর ফ্রেন্ডের নাম্বার আছে। আমি সকালে নাম্বার দিবানি। জাদিদ বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বিরবির করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো। শাহীন নিজের রুমে না গিয়ে জাদিদের পাশেই শুয়ে পড়লো। শাম্মীকে দিয়ে হেমলতাকে ডেকে পাঠানো হলো। হেমকে শাম্মী সামনাসামনি একবার না দুইবার দেখেছিল কিন্তু চেহারা তেমন একটা মনে নাই। তবে যতটুকু মনে পড়ে মেয়ে খ্যাতের বাসা। হেম শাম্মীর সামনে এসে দাড়ালো। হেম শাম্মীর চেহারা ভুলেই গেছে। জাদিদের সাথে কয়েকবার দেখেছিল। হেম আমতা আমতা করে বলল – আপনি কি শাম্মী? শাম্মী অবাক হয়ে বলল – আপনি হেমলতা? – হ্যাঁ, একি আপনাকে তো চেনাই যায়না। হেম মুচকি হাসার চেষ্টা করলো। শাম্মী বিজ্ঞের মতো বলল – আপনি তো বিবাহিত ভুলেই গেছিলাম। বাচ্চা কয়টা? – বাচ্চা হয়নি। – আপনার সমস্যা নাকি তার? – সে আসলে এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা চায়না। – ওহ আচ্ছা। জাদিদ আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে তাই এভাবে ডেকে আনা। গতকাল রাতে ও অনেক ড্রিংক করেছে। যদিও ড্রিংক করা এখন ওর অভ্যাস। হেম অবিশ্বাসের সাথে বলল – ও আজকাল ড্রিংক করে? – আজকাল না আপনার বিয়ের পর থেকে। যাইহোক ওর সাথে কথা বলবেন,ধীরে সুস্থে। ওকে রাগিয়ে দিবেন না প্লিজ। এখনো নেশা কাটেনি ওর পুরোপুরি। বুঝেছেন? হেম হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। জাদিদের রুমে পা টিপে টিপে ঢুকলো হেম৷ জাদিদ উপর হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে আছে। জাদিদ হেমের উপস্থিতি বুঝতে পেরে শোয়া ছেড়ে উঠে বসলো। গায়ে কম্বল জড়িয়ে বিছানার একপাশে ইশারায় বসতে বলল। হেম চেয়ার টেনে বসলো। জাদিদ জিজ্ঞেস করলো – চা খেয়ে এসেছো? – না। – তোমার হাজবেন্ড জানে প্রাক্তনের সাথে দেখা করতে এসেছো? হেম ফ্যালফ্যাল করে জাদিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছেলেটার চেহারায় কেমন বিমর্ষ ভাব! চলবে…..
~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে