ডুমুরের ফুল ১৮.

0
2240

ডুমুরের ফুল ১৮.

হেমলতা আমতা আমতা করে বললো
– আ…..আ…..মি প্রেম কেনো করতে যাবো কেনো? নাদিয়া আন্টি আমাকে পছন্দ করেনা। তাই এসব বলেছে।
– তোর মায়ের বান্ধবী তোকে পছন্দ করবেনা কেনো? আসলে ও সিরিয়াস ক্যাটাগরির মেয়ে। দোলাকে তো সবসময় ঝাড়ির উপর রাখতো। দোলা তো ভয়ে অন্য মেয়ের সাথে মিশতে পারতোনা। নাদিয়ার কথা ও ছাড়া অন্য কারো সাথে মিশতে পারবেনা।
– হিংসুটে স্বভাবের।
মিসেস জয়নাবের প্রেশার এখন ঠিক আছে। হেমলতা সুস্থ আছে, জানার পর থেকে তার প্রেশার কমে গেছে। চিন্তাভাবনা কমে গেলে তার প্রেশারও কমে যায়।
হেমলতা নানীকে ঔষধ খাইয়ে দিলো।
লাইলা বানু বিছানা গুছিয়ে, মশারী টানিয়ে দিলেন।
হেমলতা মোবাইল নিয়ে ওর রুমে চলে গেলো। মোবাইলে চার্জ নেই তবে ব্যালেন্স ভরপুর। নানী ২০০ টাকার নিচে মোবাইলে লোড দেননা।
রুমের দরজা আটকে দিয়ে হেমলতা মোবাইল চার্জে দিলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে নিজের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো।
সত্যিই কি সে সুন্দরী?
তাহলে জাদিদ কেনো তাকে ভালোবাসলো? তার নাক অনেক বোঁচা। গায়ের রঙ অবশ্য ফর্শা কিন্তু চেহারা তো মোটেও ভালো না। তবে চুল গুলো হাঁটু অবদি লম্বা। হয়তোবা জাদিদ এই চুলের কারণে তার প্রেমে পড়েছে!
নাকি পড়েনি? সত্যিই কি জাদিদ ওকে ভালোবাসে নাকি শুধু টাইম পাস করছে?
মিম্মার সন্দেহ যদি ঠিক হয় তখন কী হবে?
হেমলতার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। জাদিদ যদি ওর সাথে মজা করে থাকে তখন তার অবস্থা কী হবে ভাবতে পারছেনা।
জাদিদের নাম্বারে ফোন দিলো। রিং বেজে কেটে গেলো। পরপর তিনবার ফোন দেয়ার পর হেমলতা মোবাইল আবার চার্জে রেখে দিলো। হঠাৎ করে হেমলতার খারাপ লাগতে শুরু করেছে।
ফ্রেন্ডশিপেরও ছয়মাস হয়নি আর তারা রিলেশনশীপে জড়িয়ে গেছে। জাদিদ সম্পর্কে সে যতটুকু জানে তাদের সাথে অন্যকেউ এতোটা জানেনা।
জাদিদের মায়ের সাথেও দেখা হয়েছে। জাদিদের মা অনেক যত্ন করে খাইয়ে দিয়েছিল।
হেমলতা মায়ের ছবিটা হাতে নিলো। মায়ের কোনো স্মৃতি ওর স্মরণে নেই। মায়ের চেহারার সাথে তার কোনো মিল নেই। কতো সুন্দর তার মা। ছবিতে ছোট্ট হেমলতাকে আকড়ে ধরে বসে আছেন দোলা।
হেমলতার মায়ের নামটাও খুব পছন্দ।
তার মা ছবিতে লাল লিপস্টিক নিয়েছেন।
হেমলতা মিম্মার দেয়া লাল লিপস্টিক ঠোঁটে নিলেন। চুলের বেণি খুলে এলোমেলো করলো।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে রইলো হেমলতা।

জাদিদের মনে হলো ওর পাশে কেউ বসে আছে। খুব সম্ভব কোনো মেয়ে। মেয়েটা ধবধবে সাদা শাড়ি পড়ে আঁচল ছড়িয়ে রেখেছে। অদ্ভুত ব্যাপার গুলোর প্রথমটি হচ্ছে, মেয়েটার শরীর দিয়ে খুব সুন্দর একটা গন্ধ আসছে। যদিও সুন্দর গন্ধকে ঘ্রাণ বলে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মেয়েটার মাথায় কোনো চুল নেই। প্লেইন, চকচকে টাক। তৃতীয়তটি হচ্ছে, মেয়েটা ক্রিং ক্রিং ক্রিং শব্দ করছে অনা বরত। মানুষের গলা দিয়ে এমন নিখুঁত শব্দ কীভাবে করছে?
জাদিদের এই প্রশ্নের উত্তর চাই। আর উত্তর পাশে বসে থাকা মেয়েটা ছাড়া কেউই আপাতত দিতে পারবেনা। সে কিছুক্ষণ ভাবলে দিতে পারবে কিন্তু এখন ভাবতে ইচ্ছা করছেনা।
জাদিদ ঘুম থেকে উঠে মেয়েটাকে প্রশ্ন করবে আর তখনই চোখের সামনে থেকে মেয়েটা উধাও হয়ে গেলো। জাদিদের মনে হলো, উধাও হতে ০.১ সেকেন্ড লেগেছে! যদি স্টপ ওয়াচ টা ওর কাছে থাকতো।
কিন্তু ক্রিং ক্রিং শব্দটা এখনো জাদিদ শুনতে পারছে।
মেয়েটা কি আশেপাশে আছে?
জাদিদ শব্দের উৎস টা খুঁজে বের করার জন্য উঠে দাঁড়ালো।
শব্দের পিছনে হাঁটতে হাঁটতে দরজার কাছে গিয়ে থেমে গেলো।
জাদিদ এতোক্ষণে বুঝতে পারলো শব্দটা কলিংবেলের আর কেউ একজন কলিং বেল বাজাচ্ছে।
দরজা খুলে একজন মধ্যবয়সী মহিলাকে দেখতে পেলো জাদিদ।
জাদিদকে দেখে মুচকি হেসে বললেন
– আফনে ঘুমাইতে ছিলেন ভাইজান?
মধ্যবয়সী মহিলার মুখে ভাইজান ডাক শুনে জাদিদের বিরক্ত লাগলো। বিরক্তি লুকিয়ে বললো
– হ্যাঁ।
হাতের বিশাল টিফিনের বাটি জাদিদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন
– খালুজান আমারে আফনার জন্য খাবার দিতে কইছিলো। তাই ডিস্টাব করলাম। কিছু মনে নিয়েন না।
– আব্বু বলছিলো? কিন্তু আমি তো রাতে খেয়েছি।
– ফিরিজ আছে তো। খাবার ফিরিজে রাখি দেন। নষ্ট হইবোনা।
মধ্যবয়সী মহিলা চলে গেলেন।
জাদিদ দরজা আটকে দিয়ে খাবার ফ্রিজে রেখে দিলো।
হাত মুখ ধুয়ে জাদিদ মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো থ্রি মিসড কল।
হেমলতা দুপুরে যে নাম্বার দিয়ে ফোন করেছিলো সেই নাম্বার।
জাদিদ কল ব্যাক করলো। হেমলতা হাতের মধ্যে মোবাইল নিয়ে বসে ছিলো। সে আর ফোন দিবেনা। তিনবার ফোন দিয়েছিলো সে। জাদিদ ফোন দিলে দিলো না দিলে তার এতো ইচ্ছা নাই।
ফোন রিসিভ করলো।
জাদিদ বললো
– ঘুমায়ছিলাম তাই রিসিভ করতে পারিনি।
– হুম বুঝেছিলাম।
– হেম।
– বলো।
– আমার ভালো লাগছেনা। আমার রুমটাকে খুব মিস করছি। আমার পড়ার টেবিলটাকে।
– জাদিদ, বাচ্চামি করলে হয়? আর তোমার তো সামনে ইউনিভার্সিটি এডমিশন এক্সাম। তোমার তো ঢাবি চাই, তাই না?
– হ্যাঁ।
– তাহলে এটুকু তো করতেই হবে। আর আস্তে আস্তে তোমার আর মনে পড়বেনা এসবের কথা।
– হুম। আম্মু একবারও আমাকে ফোন দিলোনা।
– তুমি দিয়েছিলে?
– হ্যাঁ। কিন্তু রিসিভ করেনি।
– খুব ব্যস্ত আছে মনে হয়। তুমি আবার ফোন দিয়ে দেখো।
– না। আম্মু জানেনা আমি তাকে খুব মিস করি।
– জাদিদ, ফোন দিয়ে দেখো আবার।
– পরে দিবো।
– মোবাইল সারারাত আমার কাছে থাকবে। তুমি আন্টিকে ফোন দিয়ে দেখো।
– না। আম্মু আমাকে ভালোবাসে না। ভালোবাসলে সে তো নিজেই আমাকে ফোন দিতে পারে। আমাকে সে ডিভোর্সের পর নিজের কাছে রাখতে পারতো কিন্তু রাখেনি।
জাদিদ কে হেম কী বলে সান্ত্বনা দিবে ভেবে পাচ্ছেনা।
– আচ্ছা ঠিকাছে তোমার ফোন দিতে হবেনা। আন্টি তোমাকে ভালোবাসেনা।
– হেম। একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে?
– হ্যাঁ দিবো।
– আমাকে সত্যি ভালোবাসো? আমার জীবনে না এই একটা জিনিসেরই অভাব, বড্ড অভাব।
– হ্যাঁ, ভালোবাসি।
– কতোটা ভালোবাসো?
– আমি ঠিক জানিনা।
– কেনো জানোনা? তাহলে কি ভালোবাসো না?
– ভালোবাসি জাদিদ। এখন আমি নিজেই তো জানিনা কতোটা তাহলে কীভাবে বলবো?
– তাহলে প্রমিজ করো যেদিন জানবে সেদিন জানাবে?
– হ্যাঁ করলাম প্রমিজ।
– তোমাকে অনেক প্রেশার দিয়ে ফেললাম। স্যরি।
– জাদিদ, কড়া লিকার দিয়ে চা করে খাও তো।
– তুমি করে দাও।
– আমি ফরিদপুরে পাগল।
– ভুলেই গেছিলাম। আচ্ছা আমি চা করি।
১০ মিনিট লাগবে হায়েস্ট। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো না প্লিজ।
– আচ্ছা, তুমি চাইলে সারারাত জাগবো কিন্তু এখন চা বানিয়ে খাও।

ফোন কেটে দিয়ে হেম চিন্তায় পড়ে গেলো। জাদিদের মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ। ওর একজনকে খুব প্রয়োজন এখন।

চলবে…….!

” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir -মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।

২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন।
ধন্যবাদ।

© Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে