টেম্পরারি_বিয়ে _পর্ব__১

0
5174

টেম্পরারি_বিয়ে
_পর্ব__১
Written by Avantika Anha
.
.
বিয়ে নিয়ে হয়তো সবার ইচ্ছে থাকে । স্বপ্ন থাকে । আমারো ছিলো । আজ আমার বিয়ে কিন্তু আমি খুশি কি দুঃখী বুঝছি না । খুশি কি এই জন্য হবো যে বাবার অপারেশনের টাকা টা জোগাড় হয়ে গেলো । নাকি এই জন্য যে আজ আমার বিয়ে‌ । শুধু বিয়ে বললে ভুল #টেম্পরারি_বিয়ে ।‌ অনেকের মনে প্রশ্ন হচ্ছে নিশ্চই কি এই টেম্পরারি বিয়ে । আসলে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লো । আমার টাকার প্রয়োজন অপারেশনের জন্য । কিন্তু আমি জব করি না কেবল ইন্টার পরীক্ষা দিলাম । এতেই এতো বড় প্রব্লেমে পড়ে যাই । ফুপিরা ভালো পাত্র পেয়ে বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগে যায় ।‌
.
.
যেদিন আমাকে দেখতে আসে সেদিনই একান্তে মি. আবির জানিয়ে দেন যে তিনি বিয়ে করতে ইচ্ছুক নয় । তিনি অন্য কাউকে ভালোবাসতেন কিন্তু সে তাকে ধোকা দিয়ে অন্যের কাছে চলে যায় । আজও নাকি তিনি তাকেই ভালোবাসেন । সব শুনে হাসি মুখে বলি আচ্ছা ।
.
তিনি বলেন আমার বাবার অপারেশন টা তিনিই করার খরচ দিবেন । এটাই যথেষ্ঠ ছিলো । তাই নিজের স্বপ্নগুলো ভেঙ্গে দিলাম ।
.
তার বন্ধুরা তাকে জোড় করে বাসর ঘরে ঢুকিয়ে দিলেন । আমি কিছু না বলে সালাম করে বললাম , “টেম্পরারি হলেও নিয়ম অনুযায়ী সালাম টা করে নিলাম । জানি শীগ্রই এই বিয়ে ভেঙ্গে যাবে । আপনি কি নামায পড়বেন আমার সাথে ?”
.
আবির : যে বিয়ের মানে নেই তাতে এতো নিয়ম মানারও প্রয়োজন নাই ।‌ আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো আপনি শোফায় শুয়ে পড়িয়েন আর আপনার যা ইচ্ছা করুন । আমাকে বলার প্রয়োজন নেই ।
আমি : জ্বী আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন তারপর নাহয় আমি যাবো ।
আবির : আপনাকে বলতে হবে না‌।
আমি : আচ্ছা
.
আমি বিয়ের গহনা খুলতে লাগলাম । আবির ফ্রেশ হয়ে আসার পর আমি ফ্রেশ হলাম এবং ওযু করে নিলাম । আবির ঘুমিয়ে পড়েছে । আমি নামায পড়ে নিলাম ।
.
তারপর আমিও শুয়ে পড়লাম ।
.
আমার জায়গা পরিবর্তন‌ করলে সহজে ঘুম হয় না । তাই কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করলাম । ঘুম আসতেছিলো না তবুও । তাই বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম । বেলকনির ওই নিস্তব্ধ পরিবেশ আর আমার বর্তমান অবস্থার কথা ভেবে চোখে পানি চলে এলো ।
.
আবিরের ঘুম ভেঙ্গে গেলো কারো কান্নার শব্দে । তাকিয়ে দেখে আনহা রুমে নেই । আবির খুঁজতে লাগলো আনহা কে । দেখলো বেলকনিতে দাড়িয়ে ।
.
আমি কাঁদছিলাম । হঠাৎ কেউ আমার পিছনে এসে দাড়ানোতে সামান্য চমকে উঠলাম । ভুত ভেবে ভয়ে বলে উঠলাম “আম্মু ভুততততততত”
আবির : এ্যা কই ভুত ?
আমি : ( চোখ খুলে দেখি আবির ) ও আপনি
আবির : আপনি এতো রাতে‌ বেলকনিতে কাঁদছেন কেনো ?
আমি : শখ লাগছে তাই ।
আবির : মানে‌
আমি : কিছু না । আপনি এমনে ভুতের মতো দাড়ায় ছিলেন কেনো ?
আবির : আপনি রুমে ছিলেন না তাই দেখতে এলাম ।
আমি : ও । একটা প্রশ্ন আছে ?
আবির : বলতে পারেন । ( আবির ভাবছে বিয়ের ব্যাপারে কিছু নাকি )
আমি : এখানে কি ভুত আছে ?
আবির : মানে ( এ কেমন প্রশ্ন )
আমি : আরে ভুত ভুত যে হাউ মাউ করে
আবির : হুম আছেই তো আপনি নিজেই তো একটা ভুত ।
আমি : কোন দিক দিয়া ।
আবির : ভুত না হলে কেউ‌ এতো রাতে বেলকনিতে আসে ?
আমি : ঘুম আসতেছিলো না
আবির : গুড জব
আমি : আর আমি ভুত না আপনি নিজেই রাক্ষস
আবির : হুহ বললেই হলো । নিজে তো পেত্নির মতো ।
আমি : আপনি যে রাক্ষস
আবির : এই মেয়ে আমি রাক্ষস না ।
আমি : তো আমিও ভুত না ।
আবির : আল্লাহ গো এই মেয়ে এতো কথা বলে কেন ?
আমি : ইচ্ছা হইছে ।
আবির : হইছে বাদ দেন । এতো বেশি কথা বলা ভালো না । তা আপনি টেম্পরারি বিয়ে তে রাজি হলেন কেনো ? আপনি তো ভালো কাউকে পেতে পারতেন ।
আমি : ভাগ্যে হয়তো এটাই ছিলো আর আপনি জানেন ই আমার বাবা অসুস্থ ।
আবির : শুধুমাত্র এ জন্য নিজের সব ইচ্ছা ত্যাগ করলেন ?
আমি : জানি না । হয়তো সবাই বোঝা মনে করে তাই হয়তো ।
আবির : ও ( হয়তো মেয়েটার খুব কষ্ট )
আমি : আচ্ছা আপনার ভালোবাসার মানুষটির নাম কি ?
আবির : নিহা
আমি : অনেক ভালোবাসেন তাই না ?
আবির : এখনো ওর অপেক্ষায় ।
আমি : ওহ
আবির : জ্বী শুয়ে পড়ুন ।
আমি : শুনুন
আবির : বলুন ।
আমি : বন্ধু হতে তো পারি তাই না আমরা ?
আবির : নাহ
আমি : কেনো
আবির : কোনো মায়ায় জড়াতে চাই না
আমি : আচ্ছা । একটা কথা বলি ?
আবির : হুম বলুন
আমি : আমি বিছানায় ঘুমাবো আপনি শোফায় যান
আবির : মানে ? কেনো ?
আমি : কোলবালিশ আর বিছানা ছাড়া ঘুম আসে না ।
আবির : ওহ আচ্ছা ( আবিরেরও আসে না । কিন্তু ও কিছু বললো না )
.
আমি : তাইলে গুড নাইট আমার ঘুম পাইছে ।
.
বলে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়লাম ।
.
আবির কিছু না বলে শুয়ে পড়লো ।
.
সকালে আনহা উঠে গোসল করে নিলো । রেডি হচ্ছিলাম । এমা খাইছে রে আমি যে শাড়ি পড়তে পাড়ি না ভুলেই গেছি ।
.
আবিরের ঘুম ভেঙ্গে গেলো । দেখলো আনহার ব্যর্থ চেষ্টা । আনহার ব্যর্থ চেষ্টা দেখে হেসেই ফেললো আবির ।
.
আমি : হাসার কি আছে ?
আবির : আপনি শাড়ি পড়তে পারেন না । হাহা ।
আমি : আম্মু পড়তে দেয় নি আমার কি দোষ ।
আবির : হাহা ভালোই তা পড়ছেন কেনো ?
আমি : পড়া বাধ্যতা
আবির : ও ।
আমি : আপনার ফোন টা দেন তো ।
আবির : মানে ?
আমি : ফোন দেন ।
আবির : আপনাকে কেনো দিবো ?
আমি : আপনার ফোন চেক করবো না আমি নেটে দেখবো শাড়ি পড়া ।
আবির : এই নিন । ( আইডিয়া আছে ভালোই )
আমি : (ফোনে নিহার পিক ও দেখে ফেললাম । এখনো আগলে রেখেছেন । যাই হোক আমার কি)
.
শাড়ি পড়ে ফেললাম ।
.
আবির আনহার দিকে তাকিয়ে আছে । দারুণ লাগছে শাড়িতে । আমার সাথে চোখ পড়তেই আবির চোখ সরিয়ে নিলো ।
.
হঠাৎ দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ পেলাম ।
আমি : কে ?
আরোহি : আমি ভাবি ।
( আরোহি আবিরের বোন )
দরজা খুলো ।
.
আমি : দাড়াও
.
ওই আপনি জ্বলদি বিছানায় যান ।
আবির : কেন
আমি : আরোহি দেখলে জেনে যাবে যে আমাদের মাঝে কিছু একটা ভুল
আবির : এই রে ঠিক তো ।
.
আবির জ্বলদি সব উঠায় বিছানায় গেলো ।
.
আরোহি : আরে ভাইয়া ভাবি পরে রোমান্স করিস দরজা খুল ।
.
আমি দরজা খুললাম….
আরোহি : কি রে ভাই এতো ঘুম কেনো ?
আবির : তোর কি । এখানে কেন আসছিস?
আরোহি : বাহ বাহ এখনো রোমান্স‌ বাকী নাকি ?
আবির : তুই যাবি না মার খাবি ?
আরোহি : হুহ যা তোর সাথে কথা নাই । আমি ভাবির কাছে এসেছি ।
আমি : বলো ননোদিনী
আরোহি : ভাবি আই লাভ ইউ
আমি : আই লাভ ইউ টু
আবির : যা ভাগ নিজের ভাইয়ের তো খোঁজ নাই ।
আরোহি : নিবোও না । টাকা দে তো ।
আবির : হুহ টাকার বেলায় আমি । যা দিবো না ।
আরোহি : দে ভাবির জন্য শপিং করতে যাবো
আবির : কেনো ?
আরোহি : আম্মু বলেছে
আমি : আমার কিছু লাগবে না
আরোহি : আরে ভাবি লাগবে
আবির : আচ্ছা নে
আরোহি : ওকে রেডি থাক একটু পর শপিং এ যাবো
আবির : আমি কেন ?
আরোহি : তোকে তো যেতেই হবে
আবির : আমি যাবো না ।
আরোহি : আম্মু কে বলবো নাকি
আবির : না থাক আমি যাবো ( আবির তার মা কে একটু ভয় পায় )
.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে