জুয়া

0
1834

জুয়া

© আবির খান

রয়েল গ্রুপ। বর্তমানে দেশের এক নাম্বার কোম্পানি। এই রয়েল গ্রুপ মাত্র ১ বছরে মার্কেটে এসে দেশের বাজারে বেশ নাম কামিয়ে ফেলে। এর সর্বশ্রেষ্ঠ কারণ হলো রয়েল গ্রুপের মালিক মেহেদি রাজের জন্য। মেহেদি রাজ আজ একজন সফল ব্যবসায়ী। মেহেদি রাজের বয়স খুবই কম। এইতো ৩ মাস আগেও সে বিয়ে করেন তার স্ত্রী রূপাকে। খুব ধুমধামে বিয়ে করে এনে ছিলেন তার স্ত্রীকে। তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে কমছে কম হলেও ১ হাজার মেহমান এসে ছিলো। কারণ সে এখন দেশের একজন বড় আর সফল ব্যবসায়ী। তার সফলতা এতোটাই তাকে প্রভাবিত করে যে, সে আরো তিনটা জায়গায় তার কোম্পানি খুলে প্লাস আরো অনেক সম্পত্তি ক্রয় করে। সবার মুখেই শুধু মেহেদি রাজ। সবার অঢেল প্রশংসায় পঞ্চমুখ মেহেদি রাজ। তার স্ত্রীতো তাকে নিয়ে বেজায় খুশি৷ আর এত্তো সুন্দরী রূপবতী স্ত্রীকে পেয়ে মেহেদি রাজও অনেক খুশি। মেহেদি রাজের মধ্যে কোনো লোভ বা অহংকার ছিলো না। সে ছিলো খুবই ভালো প্রকৃতির মানুষ। তার ব্যবসায়ী একজন খুবই ভালো বন্ধু হলো৷ নাম জাহিদ খান। জাহিদ খান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক সে। মেহেদি রাজ আর জাহিদ খানের বন্ধুত্ব হওয়ার কারণ হলো, জাহিদ খান ছিলো মেহেদি রাজের পরেই অর্থ্যাৎ দ্বিতীয় নামকরা কোম্পানি। তাই তাদের বন্ধুত্বটাও বেশ ভালো। একদিন,

জাহিদ খানঃ আচ্ছা বন্ধু, তুমি কি তোমার এই সম্পত্তিকে ডাবল করতে চাও??

মেহেদি রাজ বেশ অবাক হয়ে বলল,

মেহেদি রাজঃ কিভাবে??

জাহিদ খানঃ আমার এক পরিচিত ক্যাসিনো আছে। সেখানে যদি একবার তোমার লেগে যায় কোটি কোটি টাকা সাথে সাথে। তোমার কোম্পানি একমাসে যে লাভ করে তা তুমি এক ঘন্টায় করতে পারবে। হারার চাঞ্চ খুবই কম। আমিও যাই। এইতো গতকালকে ৬০ লক্ষ টাকা জিতেছি। আজ সন্ধ্যায় যাবো। ভাবছি আজ তোমায় নিয়ে দানটা দিবো। কি বলো যাবা??

মেহেদি রাজ তাচ্ছিল্য করে হাসি দিয়ে বলে,

মেহেদি রাজঃ ধুর এও কি সম্ভব নাকি। আর এই ক্যাসিনো ট্যাসিনো ভালো না। হারলে তো আমি শেষ। আমার ক্ষতি।

জাহিদ খানঃ আরে হারার চাঞ্চ খুবই কম থাকে। আর মাত্র একটা রিস্কে তুমি একমুহূর্তে যদি কোটি টাকা জিতো তাহলে খারাপ কি??

মেহেদি রাজঃ না না আমার এসব ভালো লাগছে না। এমনিই ভাই ভালো আছি।

জাহিদ খানঃ আচ্ছা ভাই সমস্যা নাই। যদি তোমার ইচ্ছা হয় আমাকে জানিও। আজ সন্ধ্যায় একসাথে গেলাম। তাহলে এখন আমি যাই। তুমি ভেবে দেখো কিন্তু।

জাহিদ খান মেহেদি রাজের মাথায় ক্যাসিনোর পোকা ঢুকিয়ে দিয়ে চলে যায়। মেহেদি রাজ একা বসে বসে ভাবছেন, আসলেইতো এত্তো কষ্ট করে এতো দিন লাগিয়ে আমার কোম্পানি যে প্রফিট করে তা যদি আমি এক ঘন্টায়ই পেয়ে যাই তাহলে দোষ কি। নাহ একবার ট্রাই করতে দোষ নেই। আচ্ছা দেখি আজকে যেয়ে সেখানে কি হয়।

বিকেলে,

মেহেদি রাজ জাহিদ খানকে ফোন দেয়।

জাহিদ খানঃ হ্যাঁ বন্ধু বলো কি ভাবলে??

মেহেদি রাজঃ বন্ধু আজ যাবো। কিন্তু খেলবো না। শুধু দেখবো। আগে একটু দেখি শিখি।

জাহিদ খানঃ আচ্ছা আচ্ছা কোনো সমস্যা নেই। তুমি ৭ টায় আমার দেওয়া ঠিকানায় চলে এসো। আর কাউকে কিছু বলো না। ঠিক আছে??

মেহেদি রাজঃ আচ্ছা।

এরপর ফোন রেখে দেন মেহেদি রাজ। একটা খুশি খুশি ভাব কাজ করছে তার মধ্যে। মেহেদি রাজ তার স্ত্রী রূপাকে ফোন দিলেন।

রূপাঃ হ্যালো।

মেহেদি রাজঃ রূপা আজ রাতে আমার আসতে একটু দেরি হবে একটা মিটিং আছে।

রূপাঃ আচ্ছা। তাড়াতাড়ি আসবেন। আমি আপনার অপেক্ষায় থাকবো।

মেহেদি রাজঃ তুমিও না। আচ্ছা।

ফোন রেখে দেয়।

সন্ধ্যা ৭ টা। মেহেদি রাজ গাড়ি নিয়ে ক্যাসিনোতে চলে চায়। ক্যাসিনোর সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো জাহিদ খানের জন্য। একটুপরই জাহিদ খান এসে মেহেদি রাজকে নিয়ে ভিতরে গেলো।

মেহেদি রাজ ভিতরে ঢুকে যেন অবাকের সাত আসমানে। এ দুনিয়া যেন অন্যরকম। বিদেশি মুভিতে যে ক্যাসিনো দেখেছে তার চেয়েও বিলাসবহুল। মেহেদি রাজের চোখ ধাদিয়ে যাচ্ছে। জাহিদ খান রসিকতার সুরে বলে উঠলো,

জাহিদ খানঃ কি কেমন লাগছে এখানে??

মেহেদি রাজঃ বন্ধু আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমেরিকার ক্যাসিনোতে আসছি আমি। আর তুমি মনে হয় রেগুলার প্লেয়ার। সবাই তোমাকে যেভাবে সালাম দিচ্ছে বাহ।

জাহিদ খানঃ হ্যাঁ প্রতিদিন জিতি তো তাই।

মেহেদি রাজঃ আচ্ছা দেখি আজকে তুমি কিভাবে জিতো।

জাহিদ খানঃ হ্যাঁ অবশ্যই৷ চলো।

এরপর শুরু হয় জুয়া খেলা। মেহেদি রাজের সামনেই জাহিদ খান নগত ৭০ লক্ষ টাকা জিতে যান। মেহেদি রাজ দেখেতো অবাক। আর সেই সাথে তার মধ্যে লোভ তৈরি হয়ে যায়।

জাহিদ খানঃ কি বন্ধু দেখলে তো কিভাবে আমি জিতলাম। তুমিও চাইলে এভাবে জিততে পারো। একবার খেললে বারবার খেলতে ইচ্ছা করে।

মেহেদি রাজঃ বন্ধু, কাল আমি আসবো খেলতে। দেখি তুমি কিভাবে জিতো।

জাহিদ খান অনেক খুশি হয়ে বলল,

জাহিদ খানঃ হ্যাঁ অবশ্যই। তুমিই জিতবে।

পরদিন যথারীতি এই সময়ে মেহেদি রাজ খেলতে আসেন। জাহিদ খান সহ আরো তিন জন ছিলো। জীবনের প্রথম খেলা। জিতলেই প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা পাবেন মেহেদি রাজ। ইয়েস মেহেদি রাজ জিতে গেলো। জাহিদ খান অসহায় ভাবে বসে আছে। মেহেদি রাজ খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে।

মেহেদি রাজঃ কি বন্ধু হেরে গেলোতো সব তোমারা।

জাহিদ খানঃ আসলেই তোমার ভাগ্যতো দেখছি অনেক ভালো। কালকি আবার আসবে নাকি??

মেহেদি রাজঃ আসবো না মানে অবশ্যই আসবো।

জাহিদ খানঃ তাহলে কাল আমিই জিতবো দেখো।

মেহেদি রাজঃ সে দেখা যাবে নে। তাচ্ছিল্য করে।

এরপর দিনও মেহেদি রাজ জিতলো। এভাবে প্রায় একমাসে মেহেদি রাজ ৩০ কোটি টাকা জিতে যায়। জাহিদ খান শুধু অসহায় ভাবে বসে থাকে।

জাহিদ খানঃ ভাই তুমি আর খেলো না। তোমার জন্য আমরা ফকির হয়ে যাচ্ছি।

মেহেদি রাজঃ মাথা খারাপ। এটা এখন আমার নেশা হয়ে গিয়েছে। না খেললে না জিতলে আমার ঘুম আসে না। কালকেও খেলতে আসবো। আর তোমাদের সবাইকে আবার হারাবো দেখো।

জাহিদ খানঃ আচ্ছা দেখি কাল তুমি কিভাবে জিতো। কাল জান প্রাণ দিয়ে খেলবো। এতো দিন হারিনি আর এখন এভাবে হারবো। না কাল আমিই জিতবো।

মেহেদি রাজ হাসতে হাসতে চলে যায়। পরদিন সত্যিই জাহিদ খান ৮০ লক্ষ টাকা জিতে যায়। মেহেদি রাজ একটা সক খায় প্রথম হেরে।

জাহিদ খানঃ কি বন্ধু হেরে গেলেতো। আবার পালাবে নাকি??

মেহেদি রাজঃ না না। আজ হারছি তো কি হয়েছে কাল জিতবো।

এভাবে লাগাতার মেহেদি রাজ হারতে থাকে। মাঝে দু এক বার জিতলেও তা হেরে যায়। হারতে হারতে একে একে তার সব কোম্পানি ক্যাসিনোতে চলে যায়। টাকা, সম্পত্তি সব ক্যাসিনোতে চলে যায়।

জাহিদ খানঃ কি বন্ধু সবইতো হেরে গেলে। এই লাস্ট দানটা যদি তুমি জিতো তাহলে ১০০ কোটি টাকা পাবে।

মেহেদি রাজঃ কিন্তু আমার কাছে আর দেওয়ার মতো কিচ্ছু নেই।

জাহিদ খানঃ কিছু না মনে করলে তোমার সুন্দরী স্ত্রীকে দানে লাগাতে পারো। জিতলেই যা হারিয়েছো সব আবার তোমার।

মেহেদি রাজ সব হারিয়ে এখন পাগল। তার বিবেক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সে আর কোনো কিছু না ভেবে তার শেষ সম্বল স্ত্রীকেও দানে লাগিয়ে দেয়।

ভাগ্যের চাকা ঘুরছে তো ঘুরছে। আর যখন থামলো মেহেদি রাজকে একদম নিঃস্ব করে থামলো। মেহেদি রাজ এখন পথের ফকির। সব হারিয়ে ফেলেছে এই ক্যাসিনোতে।

জাহিদ খানঃ বন্ধু, তুমিতো তোমার স্ত্রীকেও হারিয়ে ফেললে। তোমার যা কিছু আছে আজ থেকেতো সব আমার। এমনকি তোমার স্ত্রীও।

মেহেদি রাজঃ ভাই তোমার দুইটা পা ধরি আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেও। ওর কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার।

জাহিদ খান এবার তার আসল রূপ বের করলেন।

জাহিদ খানঃ ওরে বোকা, তুই এখনো বুঝিস নি?? এই ক্যাসিনো আমার। তোকে পথের ফকির বানানোর জন্য আমি তোকে এখানে নিয়ে এসেছি। তুই যে প্রথমে জিতলি তা আমার আদেশেই জিতেছিস। আর তোর সব কিছু কেড়ে নেওয়ার জন্যই তোকে লোভ দেখিয়ে জিতিয়ে এই জুয়া খেলায় আনি। আজ থেকে রয়েল গ্রুপ সহ তোর সব কিছু আমার। এমনকি তোর বউও হাহাহা।

জাহিদ খানঃ এই ফকিরটাকে ছুড়ে ফেলে দেও রাস্তায়। আজ তোর লোভ তোকে ধ্বংস করলো। যাহ।

ক্যাসিনোর বয়রা মেহেদি রাজকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিলো। শেষ মেহেদি রাজ দ্যা ওনার অফ রয়েল গ্রুপ। মেহেদি এখন নিঃস্ব।

কিছু কথাঃ—

দেখলেন কিভাবে মেহেদি রাজ দেশের সনামধন্য ধনী ব্যক্তি হয়েও তার লোভের কারণে তাকে ফাঁদে ফালিয়ে জুয়া খেলায় আসক্ত করে জাহিদ খান তার সব কিছু কেড়ে নিলো। জুয়া খেলাটা ঠিক এমনই। এখানে একবার জিতলেই বারবার হারলেও তা গায় লাগে না। কিন্তু একসময় সে হারতে হারতে তার সবটা হেরে যায়। এমনকি তার অস্তিত্ব পর্যন্ত হারিয়ে যায়। জুয়া খেলা একটা বিষাক্ত রোগ। একবার শরীরে ঢুকলে তা থেকে আর রেহাই পাওয়া যায় না। এরজন্য জুয়ার মতো মারাত্মক খেলায় যেন আমরা আসক্ত না হয়ে পরি বা সেদিকে যেন পা না বাড়াই তার জন্য আমাদের মনের মধ্যে ধর্মীয় মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভয় পেতে হবে। তাহলে কোনোদিন এই জুয়া খেলায় নিজেকে জড়াতে পারবেন না। আশা করি আমার এই গল্পটি আপনাকে কিছু শিক্ষা দিতে পেরেছে। সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ।

– সমাপ্ত।

© আবির খান।

আর কেমন লেগেছে জানিয়ে আপনার গঠনমূলক একটি মন্তব্য করুন।

– কোনো ভুল হলে মাফ করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে