জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৩

0
1891

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৩

লেখিকা: সুলতানা তমা

খুব ভোরে শ্রাবনের ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো, এমনিতেই সারা রাত ঘুম হয়নি ভোরের দিকে চোখ দুইটা লেগে আসছিল শুধু তখনি ফোন দিল, রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–তমা একটু হসপিটালে আসতে পারবা
–এতো সকালে
–হুম নিপার জ্ঞান ফিরেছে কিন্তু এক্সিডেন্টে ওর কিডনি দুইটা নষ্ট হয়ে গেছে ৩-৪ দিনের ভিতরে কিডনি না পেলে….
–চেষ্টা করো পেয়ে যাইবা
–অনেক টাকা প্রয়োজন কি করবো মাথায় আসছে না তুমি একটু আসো নিপার আম্মুকে দেখে রেখ আমি টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করি
–ঠিক আছে আসছি

ফোন রেখে ফ্রেশ হতে বাতরুমে গেলাম, আয়নার সামনে যেতেই নিজেকে দেখে চমকে গেলাম, মাত্র একদিনে কি অবস্থা হয়েছে শরীরের, আয়নায় নিজের চেহারার দিকে থাকিয়ে ভাবছি আজ নিপা ওর জীবনে না আসলে তো আমার এমন অবস্থা হতো না, কেন আসলো মেয়েটি আমার জীবন নষ্ট করার জন্য, খুব কঠোর ভাবে নিজের চোখের দিকে থাকিয়ে ভাবলাম এই নিপাকে আমি সরাবো শ্রাবনকে আমার করে নিবো

পানির ঝাপটা মুখে দিতেই মনে হলো আমি এতোক্ষণ কি ভাবলাম এসব, নিপাকে কেন দোষ দিচ্ছি আমি এতে মেয়েটার কি দোষ, শ্রাবন না চাইলে তো নিপা ওর জীবনে আসতো না, দোষ করলে শ্রাবন করেছে আমি নিপাকে কেন দোষ দিচ্ছি
আর এতোক্ষণ এসব কি ভেবেছি নিপাকে সরাবো শ্রাবনকে আমার করে নিবো…..?
ছিঃ আমি এতো নিছে নামলাম কিভাবে নিজের সুখের জন্য অন্য মেয়ের জীবন নষ্ট করবো….?
এইটা তো ভালোবাসার নীতি না….?

ভালোবাসি তাই বলে জোর করে নিজের করে নিবো নাকি, ভালোবাসা মানে তো শুধু নিজের করে পাওয়া না, ভালোবাসার মানুষটা কে সুখে রাখাই তো প্রকৃত ভালোবাসা, শ্রাবন যদি নিপার কাছে সুখে থাকে ভালো থাকে তাহলে আমি ওকে ভালো রাখার জন্য নিপার হাতে তুলে দিতে পারবো না কেন….?

সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম শ্রাবন আর নিপাকে মিলিয়ে দিয়ে আব্বু আর তুলিকে নিয়ে এই শহর ছেড়ে চলে যাবো, বাকি জীবনটা নাহয় শ্রাবনের স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবো

ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বেরুতেই রিয়া সামনে এসে দাঁড়াল
–কোথায় যাচ্ছিস এতো সকালে
–হসপিটালে
–কেন
–শ্রাবন ফোন দিয়েছিল নিপার জ্ঞান ফিরেছে
–তাতে তোর কি নিপা শ্রাবনের ভালোবাসা শ্রাবনকে ওর পাশে থাকতে দে তুই কেন যাবি
–শ্রাবনের ভালোবাসা তো আমারও ভালোবাসা
–তমা চুপ কর যে মেয়ের জন্য তোর এই অবস্থা সেই মেয়ের সেবা করতে হসপিটালে যাচ্ছিস
–নিপার তো কোনো দোষ নেই
–হইছে এতো মহৎ হতে হবে না
–বাদ দে তো যেতে দে
–তোকে একা যেতে দিচ্ছি না দাড়া আমি আসছি
–হুম

এই রিয়াটা যে কি আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করে উফফফফফ

রিয়া রেডি হয়ে আসলো দুজন বেড়িয়ে পড়লাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে

কেবিনের সামনে নিপার মা বোন কান্না করতেছে আর শ্রাবন তাদের শান্তনা দিচ্ছে, আমাদের দেখে শ্রাবন এগিয়ে আসলো
শ্রাবন: এখানে একটু থাক তোমরা আমি আসছি
রিয়া: একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না শ্রাবন
আমি: রিয়া চুপ কর
শ্রাবন: দেখ রিয়া আমি তমাকেই ভালোবাসি নিপা অসুস্থ একজন মানুষ হিসেবে তো পাশে থাকা প্রয়োজন
রিয়া: হুম আমি সব বুঝি
আমি: রিয়া থাম তো শ্রাবন তুমি যাও
শ্রাবন: হুম

শ্রাবন চলে গেলো রিয়া আর আমি গিয়ে নিপার মায়ের কাছে বসলাম, খুব কাঁদছেন উনি কি বলবো খুঁজেই পাচ্ছি না, হঠাৎ রিয়া নিপার বোনকে জিজ্ঞেস করলো
রিয়া: তোমার নাম কি
–জ্বী নিধি
–তোমার আপু এখন কেমন আছে
–কিডনি দুটিই নষ্ট হয়ে গেছে ডক্টর ৩-৪ দিনের সময় দিয়েছে এর ভিতরে কিডনি না পেলে আপুকে….
–চিন্তা করো না খুঁজলে পাওয়া যাবে কিডনি
–পাওয়া যাচ্ছে না ডক্টরও চেষ্টা করেছে তাছাড়া টাকারও সমস্যা

ওরা দুজন কথা বলছে আমি একটু দূরে গিয়ে বসলাম, বসে বসে ভাবছি কি করা উচিত এখন কি শ্রাবনকে টাকা জোগাড় করতে সাহায্য করবো কিন্তু এতো টাকা পাবো কোথায়, অন্তত একটা কিডনি তো জোগাড় করতেই হবে অনেক টাকা প্রয়োজন, শ্রাবন কি একা এতো টাকা জোগাড় করতে পারবে….?
হঠাৎ মনে পরলো আব্বুর দেওয়া দশ লক্ষ টাকার কথা, আব্বুকে জিজ্ঞেস করতে হবে টাকাটা ব্যাংকে আছে কিনা থাকলে সেখান থেকেই যত টাকা লাগে দিয়ে দিব, তাড়াতাড়ি আব্বুকে ফোন দিলাম
–হ্যালো আব্বু
–কিরে এতো সকালে দুজন কোথায় গেলি
–এসে বলবো একটা কথা আব্বু
–বল
–আমার জন্মদিনে যে টাকাটা দিয়েছিলে সেটা কি এখনো ব্যাংকে আছে
–হ্যা আছে তো তোর টাকা আমি খরচ করবো কেন কিন্তু হঠাৎ এই কথা জিজ্ঞেস করলি কেন
–আব্বু আমার কিছু টাকা প্রয়োজন
–কত
–৬-৭লক্ষ
–এতো টাকা দিয়ে তুই কি করবি
–বাসায় এসে সব বলবো আগে বল টাকাটা দিবা
–ঠিক আছে
–এখন রাখি আব্বু বাসায় আসতে দেরি হবে
–আচ্ছা

ফোন রেখে ভাবছি টাকার ব্যবস্থা তো হলো কিন্তু কিডনি কোথায় পাবো, আচ্ছা শ্রাবনকে আগে বলি টাকার ব্যবস্থা হয়েছে ও যেন কিডনি খুঁজে, তাড়াতাড়ি শ্রাবনকে ফোন দিলাম
–তমা বল
–টাকার ব্যবস্থা হয়েছে তুমি বিভিন্ন হসপিটালে গিয়ে কিডনির ব্যবস্থা কর দেখ পাও কিনা
–টাকা তো অনেক লাগবে এতো টাকার ব্যবস্থা কিভাবে করেছ
–করেছি যেভাবেই হউক তুমি কিডনি খুঁজ
–তমা তুমি এভাবে সাহায্য করবে ভাবতেও পারিনি
–তোমার ভালোবাসা তো আমারও ভালোবাসা এইটুকু তো করতেই পারি
–আমার ভালোবাসা মানে তমা দেখ আমি আবারো বলছি আমি তোমাকেই ভালোবাসি
–হুম ঠিক আছে এইটা নিয়ে পরে কথা বলি আগে কিডনির ব্যবস্থা কর
–হুম ঠিক আছে

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে