ছোটঘরের ভালোবাসা সিজন ২ পর্বঃ ০৬

0
1879

ছোটঘরের ভালোবাসা সিজন ২ পর্বঃ ০৬
– আবির খান

এরপর রিয়া যা দেখে, সে তার নিজ চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। রিয়া দেখে,

আবিরের বিছানায় একটা মেয়ে শুয়ে আছে। আর আবির তার পাশে বসে কেমন করে যেন কাঁদছে।

রিয়াঃ আবির!!!!

রিয়ার ডাকে আবির চমকে উঠে। মাথা উঠিয়ে রিয়ার দিকে তাকায়। রিয়া প্রশ্নসূচক ভংগিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

আবির ও রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে ওকে বুঝতে পারছে না।

রিয়াঃ আবির ও কে?? ওর কি হয়েছে?? আর ও এখানেই বা কেন??

আবিরঃ আমি সব বলছি আগে তুমি আমার সাথে ওই রুমে চলো। (কাদো কণ্ঠে)

আবির রিয়াকে নিয়ে ড্রইংরুমে চলে যায়। আবির ওকে সোফাতে বসিয়ে ওর সামনে একটা চেয়ার পেতে বসে।

রিয়াঃ প্লিজ আবির তারাতারি বলো। আমার অনেক চিন্তা হচ্ছে।

আবিরঃ বলছি। ও কি হয় আমার জানো??

রিয়াঃ কি??

আবিরঃ ও আমার সেই চাচাতো বোন মায়া। বলেই অনেক কেদে দেয়।

রিয়াঃ আহ তুমি এভাবে কাদছো কেন?? আর ওর এ অবস্থা কেন?? আর তুমি ওকে পেলে কই??

আবিরঃ তাহলে সব খুলে বলছি শুনো।

আমি যখন ৩ টার দিকে গাড়ি নিয়ে ডক্টরের কাছে যাই। তখন তার সাথে কথার মাঝে একজন নার্স আসে।

বিকেল ৩.৪৫ মিনিট,

ডাক্তারঃ আবির তুমি এখন পুরোই সুস্থ। তোমার ঘা টাও এখন অনেক সেরে গিয়েছে। তবে মাঝে মাঝে আসতে হবে।

আবিরঃ জ্বি ডক্টর অবশ….

নার্সঃ স্যার স্যার ১০৬ এর পেশেন্টটা অনেক কান্নাকাটি করছে আবার। এখন কি করবো??

ডাক্তারঃ তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দেও। আমি একটু পরই আসছি।

নাসঃ ওকে স্যার।

ডাক্তার সাহেব মন খারাপ করে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন।

আবিরঃ ডক্টর কি হয়েছে এই পেশেন্টের কথা শুনে আপনার মন খারাপ হয়ে গেলো যে??

ডাক্তারঃ আর বলো না। মেয়েটার ভাগ্য এতোই খারাপ কি বলবো। আজ থেকে ১০ দিন আগে, মেয়েটা ওর পরিবার সহ সিএনজিতে করে কোথাও হয়তো যাচ্ছিলো। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা ওভার স্পিডে আসা বাস ওদেরকে ধাক্কা দেয়। ভাগ্যক্রমে দরজাটা খুলে জাওয়ায় মেয়েটা সিএনজি থেকে ছিটকে রাস্তা পরে যায় কিন্তু ওর মা বাবা স্পটেই ওকে এতিম করে সারাজীবনের জন্য চলে যায়। মেয়েটার আর কেউ নেই বলে আমি নিজ দায়িত্বে আর খরচে ওর ট্রিটমেন্ট করছি। মেয়েটার আসলেই ভাগ্য খারাপ। এই জীবনের চেয়ে ওর বাবা মায়ের সাথেই চলে গেলে ভালো হতো।

আবিরঃ স্যা…

নার্সঃ স্যার পেশেন্ট তো ইনজেকশন দিতে দিচ্ছে না। বলছে ও ওর বাবা মার কাছে যাবে।

ডাক্তারঃ আবির তুমি বসো একটু আমি আসছি।

আবিরঃ ডক্টর কিছু মনে না করলে আমি আসতে পারি আপনার সাথে?? মেয়েটাকে অনেক দেখতে ইচ্ছা করছে।

ডাক্তারঃ আচ্ছা আসো।

এরপর আবির ডক্টরের সাথে যেই ওই পেশেন্টের কেবিনে ঢুকে আর সেই মেয়েটিকে দেখে আবির যেন আকাশ থেকে পরে। এ যে মায়া।

আবিরঃ মায়া।

আবির অঝোরে কেদে দেয়।

মায়া আবিরকে দেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে একটু পরই অনেক জোরে কেদে দেয়। আবির আর না পেরে মায়ার কাছে দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। আর কাদতে থাকে।

ডাক্তারঃ আবির তুমি ওকে চিনো??

আবিরঃ ডক্টর ও আমার চাচাতো বোন। (কাদতে কাদতে বলল)

মায়া আবিরকে জড়িয়ে ধরে শুধু কেদেই যাচ্ছে।

আবিরঃ ডক্টর আমরা একটু একা থাকতে পারি।

ডাক্তারঃ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।

সবাই কেবিন থেকে চলে গেলো।

আবিরঃ এ কি হয়ে গেলো মায়া??? কাদতে কাদতে বলল।

মায়াঃ….

আবিরঃ আর কেদো না মায়া। আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না।

মায়াঃ আমার বা…বা..বাবা…মা আর নেই ভাইয়া। আমি এখন কোথায় যাবো??আমিও যে তোমার মতো এতিম হয়ে গেলাম। বলেই আবার কান্না।

আবির কি বলে ওকে শান্তনা দিবে তা ওর জানা নেই। আবির মায়াকে ওর বুকে জড়িয়ে ধরে অনেক শক্ত করে। দুই এতিম আজ একসাথে কাদছে। আবির একসময় মায়ার আর কান্না শুনতে পায় না। আবির দেখে মায়া কথাও বলছে না লড়াচরাও করছে না। আবির অনেক চিন্তায় পরে যায়।

আবির মায়াকে শুয়ে দিয়ে তারাতাড়ি ডক্টরকে ডাক দেয়।

আবিরঃ ডক্টর প্লিজ দেখুন না ওর কি হয়েছে?? হঠাৎ কথা বলতে বলতে কেমন নিস্তেজ হয়ে গেলো।

ডাক্তারঃ দেখছি আবির। তুমি শান্ত হও।

ডক্টর মায়াকে ভালো করে দেখে নার্সকে বললেন ওকে সেলাইন ইঞ্জেক্ট করতে।

আবিরঃ কি হয়েছে ওর??

ডাক্তারঃ আসলে কাদতে কাদতে অনেক দূর্বল হয়ে পরেছে তাই অজ্ঞান হয়ে পরেছে।

আবিরঃ ডক্টর আমি ওকে এখন থেকে নিয়ে যেতে চাই। ওকে নিয়ে যাওয়া যাবে??

ডাক্তারঃ যাবে। কিন্তু ওর অনেক খেয়াল রাখতে হবে। কারণ ও মানুষিক ভাবে অনেক ভেঙে পরেছে। আর নিয়মিত কিছু ঔষধ খেতে হবে। কারণ ও বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা পেয়েছে।

আবিরঃ আচ্ছা। ওর কোনো সমস্যা হবে না আমি নিজেই ওর খেয়াল রাখবো।

ডাক্তারঃ ওকে। আর থ্যাংকস তোমাকে। মেয়েটাকে নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলাম যে কাকে ওর দায়িত্বটা দিবো। কিন্তু তুমি ওর দায়িত্ব নেওয়াতে আমি এখন চিন্তা মুক্ত। বাবা ওর ভালো মতো খেয়াল রেখো। মেয়েটা এখন খুবই অসহায়।

আবিরঃ জ্বি ডক্টর আপনি একটুও চিন্তা করবেন নাহ। আজ থেকে ওর সব দায়িত্ব আমার।

এরপর বিকেল ৫ টায় মায়াকে নিয়ে আবির চলে আসে ওর নিজের বাসায়। মায়াকে নার্স ঘুমের ইনজেকশন আর সেলাইন লাগিয়ে দিয়ে চলে গেছে। মায়া এখন ঘুমাচ্ছে আর আবির ওর পাশে বসে কাদছিলো। আর সেই সময় রিয়া আবিরের বাসায় আসে।

বর্তমানে,

রিয়াঃ তুমি ফোন ধরনি কেন??

আবিরঃ ফোনটা যে কই রেখেছি খেয়ালই নেই।

রিয়া আস্তে করে উঠে মায়ার কাছে চলে যায়। সাথে আবিরও। রিয়া মায়ার কাছে গিয়ে বসে। ওর দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে। রিয়ার খুব খারাপ লাগছে মায়াকে দেখে। এক নিমিষেই মেয়েটার সব শেষ। এখন যদি মায়ার কেউ থাকে তাহলো আবির।

রিয়াঃ আবির এই সেই মায়া যার কথা তুমি সেদিন বলেছিলে না??

আবিরঃ হুম।

রিয়াঃ ও তোমাকে অনেক ভালোবাসে তাই না??

আবিরঃ হুম। কিন্তু আমি শুধু তোমাকে ভালো বাসি।

রিয়াঃ হুম।

আবিরঃ কি হলো এভাবে কথা বলছো কেন??

রিয়াঃ…..

রিয়া শুধু মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

রিয়াঃ মেয়েটা আমার থেকেও অনেক সুন্দরী আর মায়াবতী তাই না??

আবিরঃ আমি ওকে ওভাবে কখনো দেখেনি। তুমিতো জানোই।

রিয়াঃ আচ্ছা ওর এখন কি হবে?? কে ওকে দেখবে??

আবিরঃ সেই চিন্তায়ই আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। কার হাতে ওকে তুলে দিবো??

রিয়াঃ বাবা মা ছাড়া কোনো মেয়েকে কি কেউ নিবে আবির??

আবিরঃ রিয়া কি হয়েছে তোমার তুমি এভাবে কেমন জানি করে কথা বলছো?? আর এরকম প্রশ্ন করে আমাকে আরো চিন্তায় ফেলছো।

রিয়াঃ আচ্ছা আর করবো না। কাল ওকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো।

আবিরঃ বাবা কি বলবে??

রিয়াঃ সে কিছুই বলবে না। ও এখন থেকে আমার কাছেই থাকবে। ও কোথাও যাবে না।

আবিরঃ মানে??

রিয়াঃ সময় হলেই বুঝবে।

হঠাৎই মায়ার ঘুম ভেঙে যায়। মায়া চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে ওর মাথার কাছে খুব সুন্দরী একটা মেয়ে বসা।

রিয়াঃ উঠেছো মায়া?? কেমন লাগছে এখন??

মায়াঃ ভালো। আবিরের দিকে তাকিয়ে।

আবিরঃ মায়া ও তোমার ভাবি রিয়া। মানে ওর সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে।

মায়া কথাটা শুনে খুব কষ্ট পেলো। ও হয়তো ভেবেছিলো আবিরকে আবার ফিরে পেয়েছে। হ্যাঁ ফিরে অবশ্য পেয়েছে কিন্তু অন্যকারোর সাথে। মায়া ওর কষ্টটা আড়াল করে চুপচাপ শুয়ে রইলো। আর কোন কথা বললো না। কারণ ওর ভবিষ্যত কি ও তা জানে না। সব হারিয়ে আবার সেই ভালোবাসার মানুষটাকে ফিরে পেয়েও হারিয়ে ফেলতে হলো। মায়া এই কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। তাই চোখটা বন্ধ করে রইলো। কিন্তু অশ্রু যে বন্ধ রয়নি। পাশ বেয়ে গড়িয়ে পরলো।

মায়ার পাশে বসা মেয়েটা মানে রিয়া সে কিন্তু সবই বুঝতে পারলো। আসলে একটা মেয়ের কষ্ট কিন্তু একটা মেয়েই বুঝে। রিয়া মায়ার চোখজোড়া মুছে দিলো। আর ওর কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলল,

রিয়াঃ এখানো কিছুই হারায় নি।

মায়া রিয়ার এ কথা শুনে ঠাস করে চোখ মিলে রিয়ার দিকে তাকায়। রিয়া খুব সুন্দর করে একটা হাসি দিয়ে মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আর বলে,

রিয়াঃ কাল তোমাকে আমার বাসায় নিয়ে যাবো। সেখানে তোমার যত্ন ভালো হবে। কি যাবে না??(হেসে বলল)

মায়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

আবির শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের দেখছে। আবির ভাবছে, রিয়াও আমাকে অনেক ভালোবাসে আবার মায়াও আমাকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু আমি ভালোবাসি শুধু রিয়াকে। রিয়াও তা জানে। কিন্তু রিয়া করতে চাচ্ছে কি??

অনেকদিন আগে যখন আবির অসুস্থ ছিলো তেমনি এক রাতে,

রিয়াঃ আচ্ছা আবির এখন তোমার কেমন লাগছে??

আবিরঃ তুমি যে ভাবে সেবা করেছো তাতে ভালো না থেকে পারি বলো??

রিয়াঃ হুম তাও ঠিক। আচ্ছা তোমাকে একটা প্রশ্ন করি সত্যি সত্যি উত্তর দিবে তো??

আবিরঃ হুম দিবো করো।

রিয়াঃ আচ্ছা তোমাকে কি কেউ ভালোবাসতো??

আবিরঃ হঠাৎ এ প্রশ্ন??

রিয়াঃ না এমনিই।

আবিরঃ হুম ভারসিটির প্রায় সব মেয়েই। হা হা। কেন তুমি জানো না??

রিয়াঃ আরে ভারসিটির বাইরে।

এবার আবির চুপ হয়ে গেলো। কিছুই বলছে না। কারণ একজন ওকে অনেক বেশি ভালোবাসতো। হয়তো এখনো বাসে। কিন্তু তাকেতো ছেড়ে এসেছে আবির। আর একটি বারও খবর পর্যন্ত নেয় নি। আবিরের মনটা খারাপ হয়ে যায়।

রিয়াঃ আবির আমি তোমাকে বুঝি আর বিশ্বাসও করি। প্লিজ বলো।

আবিরঃ আচ্ছা বলছি। মায়া।

রিয়াঃ মায়া। মায়া কে??

আবিরঃ আমার চাচাতো বোন। তোমাদের কাছে আসার আগে যে চাচার কাছে ছিলাম না তার মেয়ে।আমাকে অনেক ভালোবাসতো, আমার অনেক কেয়ার করতো। জানো মেয়েটা নিজে না খেয়ে আমার জন্য খাবার রেখে দিতো। কারণ চাচি আমার জন্য খাবার রাখতো না।

এরপর আবির মায়া সম্পর্কে রিয়াকে সব খুলে বলে। সেই ডাইরির কথাও সব।

আবিরঃ এই ছিলো আমার জীবনের কিছু স্মৃতি। এখন তুমি সবই জানো।

রিয়াঃ তুমি ওকে ভালোবাসো নি??

আবিরঃ না রিয়া। ওকে আমি কখনো ওভাবে দেখিনি। আর আমার মন যে আগেই কাউকে দিয়ে দিয়েছিলাম।

রিয়াঃ কাকে??

আবিরঃ যে এখন আমার কাছে আছে তাকে।

রিয়াঃ দুষ্ট। কিন্তু আবির সত্যিই মায়া মেয়েটা তোমাকে অনেক ভালোবাসতো তাইনা??

আবিরঃ হুম।

রিয়াঃ ওতো এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে তাইনা??

আবিরঃ হুম। ও হয়তো এ বছর ভারসিটিতে ঢুকবে।

রিয়াঃ তাহলে ওর সাথে একদিন দেখা করিনা??

আবিরঃ নাহ। ও আমাকে দেখে কষ্ট পাবে। আর তোমাকে দেখলে আরো।

রিয়াঃ হুম ঠিক বলেছো। কিন্তু মায়া আসলেই তোমাকে অনেক ভালোবাসতো।

আবিরঃ হুম কিন্তু আমিতো তোমা…

রিয়াঃ কি আমাকে??

আবিরঃ জানি না।(মজা করে)

রিয়াঃ না জানলে নাই। পরে আমিও জানবো না কিছু।

আবিরঃ দেখা যাবে নে। হি হি।

এখন,

রিয়াঃ আমি তাহলে এখন যাই।- আবিরকে উদ্দেশ্য করে। কাল তোমাকে নিতে আসবো। – মায়াকে উদ্দেশ্য করে।

আবিরঃ আমি এগিয়ে দিয়ে আসবো??

রিয়াঃ আরে না না লাগবে না আমি গাড়ি নিয়ে আসছি। তুমি ওর কাছে থাকো। রাতে কোনো সমস্যা হলে বলো।

আবিরঃ আচ্ছা। গিয়ে আমাকে ফোন দিয়ো।

রিয়াঃ হুম।

রিয়া মায়ার কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
রিয়াঃ যাই বোন। কাল নিতে আসবো সকালে রেডি থেকো। আর একটুও মন খারাপ করো না। কাল থেকে তোমার খেয়াল আমি রাখবো।

আবিরঃ আর আমার??

রিয়াঃ এহ আসছে। তুমি কে??তোমাকে চিনিই নাহ। এই যে ও এখন থেকে আমার বান্ধবী। নিজের খেয়াল নিজে রাখো। আসি।-মায়াকে উদ্দেশ্য করে।

মায়াঃ একটু হেসে। আচ্ছা।

রিয়া দরজা দিয়ে বের হতে নিলেই আবির ওকে পিছন থেকে টান দিয়ে ধরে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।

আবিরঃ রিয়া তুমি হঠাৎ এতো শান্ত হয়ে গেলে কেন?? আমি কিন্তু বলেছি আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।

রিয়াঃ হুম। এখন ছাড়ো আমায় যেতে হবে।

রিয়া একপ্রকার জোর করেই মুখ না দিখিয়ে চলে আসে। যা আবিরকে বিভিন্ন ভাবনায় ফালায়। কারণ রিয়া কোন সময়ই এমন করে না।কিন্তু আজ??

রিয়া বাইরে এসে তারাতারি গাড়িতে উঠে বসে। খুব কান্না পাচ্ছে রিয়ার। অশ্রুগুলো আটকে রাখা খুব কঠিন হয়ে পরছে। তাই নিরবে অশ্রু ফেলছে রিয়া। রাতের এই নিস্তব্ধ শহরে ল্যাম্পপোস্টের আলোতে শহরের অনেক মানুষের কষ্টগুলো দেখা যাচ্ছে রাস্তার দুপাশে। গাড়ি চলছে আর তাদের দেখছে রিয়া আর সাথে ভাবছে অনেক কিছু। শেষমেশ অনেক কিছুকে বুক চাপা দিয়ে রিয়া একটা সিদ্ধান্ত নেয়। যা কাল থেকে বাস্তবায়ন করা শুরু করবে কিন্তু সবাই কি মেনে নিবে???

এদিকে,

আবিরঃ মায়া এখন কেমন লাগছে?? হাতে কি ব্যাথা করছে??

মায়া কি বলবে??আর কি মুখ নিয়েই বা আবিরের সাথে কথা বলবে?? কারণ আবির জানে মায়া ওকে ভালোবাসে। তাই মায়ার অনেক অসস্থি লাগছে আবিরের সাথে কথা বলতে। তাই মায়া মুখ ঢেকে শুয়ে আছে ঘুমের ভাব নিয়ে।

আবিরঃ মায়া আমি তোমাকে চিনি। আমি জানি তুমি ঘুমাও নি। হয়তো আমার সাথে কথা বলতে চাওনা।আচ্ছা সমস্যা নেই আমি অন্য রুমে চলে যাচ্ছি। তুমি ঘুমাও কিছু লাগলে বলো।

আবির উঠে আসতে নিলেই কেউ পিছন থেকে আবিরের হাতটা টেনে ধরে। আবির ঘুরে তাকিয়ে দেখে মায়া।

আবিরঃ প্লিজ আমাকে একা ফেলে যাবেন নাহ। আজ আমার কেউ শুধু আপনি ছাড়া। বলেই কেদে দিলো।

আবিরঃ কেদো না। আমি আছি তোমার কাছে। সবসময়।

মায়াঃ কেনো মিথ্যা বলেন??আপনি কিভাবে সবসময় আমার কাছে থাকবেন?? আপনি এখন রিয়া আপুর৷ শুধুই তার। (কাদো কণ্ঠে)

আবিরঃ….

আবির আর কি বলবে। মায়াতো সত্যিই বলছে। ওকে এই মিথ্যা শান্তনা দেওয়ার কোনো মানে হয় না।

মায়াঃ আচ্ছা আমার ভাগ্যটা এমন কেন বলতে পারেন?? আমি যাদেরকেই বেশি ভালোবাসি তারাই আমাকে ছেড়ে চলে যায়। আমি কেন একা থেকে গেলাম। আমাকেও তারা সাথে নিয়ে যেতো। (কাদো কণ্ঠে)

মায়ার প্রতিটা কথা আবিরের বুকে এসে তীরের মতো লাগছে। আবির যে মায়াকে আপন করে নিবে তাও সম্ভব নয়। কারণ এখন ওর জীবনে রিয়াই সব৷ কিন্তু মায়া?? এসব ভাবতেই আবিরের নয়নজোড়া অশ্রুতে ভরে আসে।

এভাবে পুরো রাত কেটে যায় মায়ার এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে খুজতে।

পরদিন সকালে,
রিয়া এসে মায়াকে ওর বাসায় নিয়ে যায়। মায়ার অনেক যত্ন আর সেবা করে মায়াকে একদম সুস্থ করে তুলে। মায়া এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। রিয়া আর মায়ার মাঝে এখন খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। রিয়া মায়াকে ছাড়া কিছু বুঝেনা মায়া রিয়াকে ছাড়া কিছু বুঝেনা।

কিন্তু মায়া আবিরের কথা ভাবতেই ওর মন খারাপ হয়ে যায়। আবির বাসায় আসলে মায়া আবিরের সামনে আসে না। আবিরকে এড়িয়ে চলে। যা রিয়া খুব ভালো ভাবেই বুঝে। আবির আর রিয়ার বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গিয়েছে।

একদিন,

মায়া রিয়ার মাথায় তেল লাগিয়ে দিচ্ছে।

রিয়াঃ আচ্ছা মায়া তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?? সত্যিটা বলবে।

মায়াঃ জ্বি আপু বলেন।

রিয়াঃ তুমি কি আবিরকে এখনো আগের মতো ভালো বাসো??যেমনটা সেই ডাইরিতে লিখিছিলে??

মায়া জানতো না যে রিয়া জানে ও আবিরকে ভালোবাসে।

রিয়াঃ মায়া আমি সব জানি। আবির আমাকে সব বলেছে। বলোনা তুমি কি এখনো আবিরকে অনেক ভালোবাসো??

মায়াঃ আপু ওসব পুরনো কথা। এখন আপনিই সব আবির ভাইয়ার। এসব নিয়ে আর ভাববেন। আবির ভাইয়া আপনাকে অনেক ভালোবাসে। আর এটাই সত্যিই।

রিয়া বুঝতে পেরেছে মায়ার খুব কষ্ট হচ্ছে।

রিয়াঃ মায়া??

মায়াঃ জ্বি??

রিয়াঃ আবির যদি তোমার হয়ে যায় খুব খুশি হবে??

মায়াঃ ধুর আপনি এসব কি বলছেন। আপনি তাকে অনেক ভালোবাসেন। এসব বলেন নাহ।

রিয়াঃ না বলো না প্লিজ। অনেক খুশি হবে??

মায়াঃ তা তো হতামই। কারণ উনার মতো কাউকে পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। আর আপনি সেই ভাগ্যবতী।

রিয়াঃ তাহলে তাই ই হবে। (মনে মনে)

রিয়াঃ হুম। ঠিক বলেছো৷ তুমিও অনেক ভাগ্যবতী হবে দেখো।

মায়াঃ কি যে বলেন না আপু।

এভাবে অনেক দিন কেটে যায়। বিয়ের আয়োজন সব শেষ। কাল রিয়া আর আবিরের বিয়ে। কিন্তু হঠাৎ রিয়া সবাইকে একসাথে হলরুমে ডাক দেয়। মানে আবির, মায়া আর রিয়ার বাবাকে। এরপর রিয়া যা সবাইকে বলে তা শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলনা।

বাবাঃ রিয়া তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস??

আবিরঃ রিয়া কি বলছো কি এসব। এটা কোনো ভাবেই সম্ভব না।

চলবে…. ?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে