ছোটঘরের ভালোবাসা পর্বঃ ০৬
– আবির খান
আবির ভারসিটিতে ঢুকতেই আবিরকে দেখে সবাই যেন আকাশ থেকে পরে। কারণ আবির প্রতিদিন এক কোচকানো কালার উঠা জামা পরে আসতো। কিন্তু এ আজ অন্য আবিরকে দেখছে সবাই।
ডিজাইনার টি-শার্ট, জিন্স আর স্নিকার্স। আবিরকে যে লাগছে না। ভারসিটির সব ছেলে মেয়েরা আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। এর মধ্যে রিয়া আর সানজিদাও ছিলো। রিয়া আবিরকে দেখে হা করে আছে। সানজিদা আবিরের কাছে দৌড়ে গেলো। আবিরের চারপাশে ঘুরে ঘুরে আবিরকে দেখছে।
সানজিদাঃ তুমিকি আবির নাকি অন্য কেউ??
আবিরঃ না অন্য কেউ হতে যাবো কেন!!আমি আবিরই।
সানজিদাঃ ওএমজি তুমিতো অনেক হ্যান্ডসাম। তোমাকে আজ এই পোশাকে যা লাগছে না। একদম বাংলা সিনেমার হিরো। মানে সাকিব খান।
আবির সানজিদার কথা শুনে হেসে দেয়। আর আড় চোখে রিয়ার দিকে তাকায়। রিয়া এখনো আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ আবিরের চোখে চোখ পরাতেই রিয়া বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে যায়।
রিয়াঃ ধুহ এভাবে কেন তাকিয়ে ছিলাম। ও কি মনে করবে?? আর গতকাল যা করলাম। ইসস। চিন্তা করলেই কেমন জানি লাগছে।
সানজিদাঃ আবির চলো ক্লাসে যাই। নাহলে অনেক মেয়েরা তোমাকে তাদের চোখ দিয়েই গিলে খাবে।
আবির সানজিদার কথায় মৃদু হেসে ওর সাথে হাটা শুরু করে।
সানজিদাঃ কিরে রিয়া তুই ওখানে দাড়িয়ে আছিস কেন??এদিকে আয়। ক্লাসে যাবিনা??
রিয়া কি করবে বুঝে পাচ্ছে না। আবিরের কাছে যেতেও কেমন জানি লাগছে।
সানজিদাঃ কি হলো কি ভাবছিস চল।
রিয়াঃ আসছি আসছি।
আবির আর সানজিদা সামনে হাটছে আর পিছনে রিয়া। সানজিদা আবিরের সাথে অনেক কথা বলছে।পড়াশোনা নিয়ে, ঘুরাঘুরি নিয়ে, তার পরিবার নিয়ে। হঠাৎ,
নীলাঃ সানজিদা দোস্ত এদিকে আয় তোর সাথে একটা কথা আছে। জরুরি অনেক।
সানজিদাঃ আচ্ছা আসছি। আবির তুমি রিয়ার সাথে ক্লাসে যাও আমি আসছি।
রিয়া সানজিদার কথা শুনে আঁতকে উঠল। হায় আল্লাহ যার কাছ থেকে পালাতে চাই আর তুমি তার কাছে যেতে বলছো।
আবিরঃ আচ্ছা তুমি যাও।
সানজিদা চলে গেলে আবির রিয়ার অবস্থা বুঝে পিছে রিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
আবিরঃ কি যাবেনা ক্লাসে??
রিয়া চমকে উঠে।
রিয়াঃ হ্যা চলো।
রিয়ার কাছে বেশ অবাক লাগছে আবিরের স্বাভাবিক কথা বলা দেখে। ওরা পাশাপাশি হাটছে কিন্তু কোন কথা বলছে না। রিয়ার কেমন জানি লাগছে তাই,
রিয়াঃ গতকালকের জন্য অনেক সরি। সত্যিই আসলে আমি অনেক খারাপ। আমার এমনটা করা ঠিক হয়নি।
আবিরঃ কি করেছিলে গতকালকে আমারতো কিছুই মনে নেই।(আসলে সবই মনে আছে)
রিয়া আবিরের কথা শুনে কিছুটা আশ্চর্য হলেও আবার ভাবনায় পরে যায়। ওরা ক্লাসে চলে যায়।
ক্লাস শেষ করে,
সানজিদাঃ এই আবির… এই আবির দাড়াও।
আবিরঃ হ্যা বলো।
সানজিদাঃ আগে বলো না করবে না??
আবিরঃ কি না করবো না??
সানজিদাঃ আমি যা বলবো।
আবিরঃ আগে বলো।
সানজিদাঃ না আগে বলো না করবে না।
আবিরঃ আচ্ছা করবো না বলো।
সানজিদাঃ আজ আমি তোমায় আমার গাড়িতে নামিয়ে দিবো। প্লিজ না করবে না।
আবির একটু ভেবে দেখে, বিষয়টা মন্দ না। ওর গাড়ি ভাড়া বাচবে অনেক আর সময়ও কম লাগবে।
আবিরঃ আচ্ছা চলো।
সানজিদাঃ অনেক থ্যাংকস তোমাকে। আচ্ছা তুমি দাড়াও আমি একটু আসছি।
আবিরঃ আচ্ছা।
সানজিদা রিয়ার কাছে ছুটে গেলো।
সানজিদাঃ দেখিছিস আবির রাজি হয়েছে। বলেছিনা ও রাজি হবে। তুইতো বেট হেরে গেলি। ও আমাকে পছন্দ করে তাই রাজি হয়েছে। কালকে কিন্তু ট্রিট চাই।
রিয়াঃ হুম যা।
রিয়ার কেন যেন হঠাৎ খারাপ লাগছে। ও ভেবেছিলো আবির না করে দিবে কিন্তু আবির হ্যা করবে ও ভাবতেও পারেনি।
রিয়াঃ আবির আসলেই অনেক লুচ্চা। কেন ওকে সানজিদার সাথে যেতে হবে!!কিন্তু আমিই বা কেন এতো ভাবছি??আবির যার সাথে খুশি যাবে তাতে আমার কি। পচা একটা। ওহ ভালো লাগছে না। বাসায় চলে যাই। ওফফ আবির।
সানজিদা আবিরকে নিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছে। কিন্তু আবিরের এ পথ অচেনা।
আবিরঃ আমরা কোথায় যাচ্ছি??আমার বাসাতো এদিকে না।
সানজিদাঃ আরে ভয় নেই তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
আবিরঃ আমরা বাসার দিকে যাচ্ছি না??
সানজিদাঃ নাহ।
আবির আর কি করবে চুপচাপ বসে আছে। একটু পরই গাড়ি থামলো।
সানজিদাঃ আমরা এসে গিয়েছি। নামো।
আবির গাড়ি থেকে নেমে দেখে বিশাল বড় এক রেস্টুরেন্ট।
আবিরঃ এখানে??
সানজিদাঃ তোমার সাথে মানে টপারের সাথে আজকের সন্ধ্যাটা কাটাতে চাই। যাকে বলে লিল ডেইট। এখন চলো ভিতরে।
আবির সানজিদার সাথে ভিতরে যায়। বিশাল বড় আর আলিসান রেস্টুরেন্ট। এরকম আগে আবির কখনো দেখেনি। সানজিদা আবিরকে নিয়ে একটা প্রাইভেট প্লেসে বসে। জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। ব্যাকগ্রাউন্ডে রোমান্টিক গান বাজছে। সানজিদা আবিরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আবিরের খুব বিব্রত লাগছে। কি করবে বুঝতেও পারছে না। এদিকে সানজিদা আবিরের যেন ঘোরে পরে গিয়েছে। ঘোরটা ভাঙ্গলো ওয়েটারের ডাকে।
ওয়েটারঃ ম্যাম অ্যান্ড স্যার বলুন কি ওর্ডার করবেন।
সানজিদা মেনু দেখে কি কি যেন ওর্ডার করলো। যার নাম আবির জীবনেও শুনে নি।
সানজিদাঃ কি কেমন লেগেছে সারপ্রাইজ টা??
আবিরঃ যা লাগেছে না একদম তীরের মতো লাগছে।(মনে মনে)
আবিরঃ না ভালোই লেগেছে।
সানজিদাঃ শুধু ভালো লেগেছে বুঝি।
আবিরঃ না না অনেক ভালো লেগেছে।
এর মধ্যে ওয়েটার খাবার নিয়ে এসেছে। আবির আস্তে আস্তে করে খাবার গুলো খেতে শুরু করে। খাবার গুলো আবিরের এতো ভালো লেগেছে যে সে যে কারো সাথে এসেছে তাই ভুলে গেছে। শুধু খেয়েই যাচ্ছে। এতো মজা আর সুস্বাদু খাবার আবির তার জীবনে প্রথম খাচ্ছে। তাই লোভ সামাল দিতে পারছে না। আর এদিকে সানজিদা শুধু মুগ্ধ হয়ে আবিরকে দেখেই যাচ্ছে।
খাওয়ার একপর্যায় আবির সানজিদার দিকে তাকায়। আবির লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। একটা মেয়ের সামনে সে কিভাবে খাচ্ছে।
আবিরঃ সরি আসলে এতো মজার খাবার আগে খাইনি তো তাই এভাবে খেয়ে ফেললাম।
সানজিদাঃ আরে না না কিসের সরি। তোমাকে খাওয়াবো বলেই এখানে এনেছি। তাহলে তুমিতো খাবেই।
আবিরঃ হুম কিন্তু এভাবে খাওয়াটা ঠিক হয়নি।
সানজিদাঃ ধুর বোকা। আমি কিছুই মনে করিনি। বরং তুমি যে তৃপ্তি করে খেয়েছো তাতেই আমি অনেক খুশি হয়েছি।
এরপর ওদের টেবিলটা পরিষ্কার করে দিয়ে ডিজার্ড দিয়ে গেলো। আবির আর সানজিদা ডিজার্ড খাচ্ছে।
সানজিদাঃ আবির এটা তোমার জন্য।
সানজিদা আবিরের হাতে একটা বক্স দিলো। আবির বক্সটা খুলে দেখে একটা ঘড়ি। বেশ দামি মনে হচ্ছে।
আবিরঃ প্লিজ সানজিদা এটা আমি নিতে পারবো না।এমনিতেই আজ অনেক খাইয়েছো। এটা লাগবে না। প্লিজ নিয়ে যাও।
সানজিদাঃ দেখো এটা তোমাকে নিতেই হবে। নাহলে কিন্তু আমি অনেক রাগ করবো। তুমি আমার পড়াশোনায় অনেক সাহায্য করো তার জন্য এই ছোট্ট গিফট।
আবিরঃ না না তা হয়না।
এরপর সানজিদার অনেক জোরাজুরির পর আবির ঘড়িটা নিতে রাজি হয়।
আবিরঃ সানজিদা তুমি অনেক কিছু করলে আজকে। বলো তুমি কি চাও আমার কাছে??
সানজিদাঃ আজ না আরেকদিন। এটা পাওনা থাক। সেদিন যা চাবো তাই কিন্তু দিতে হবে।
আবিরঃ আচ্ছা।
এরপর আবিরকে নিয়ে ওর বাসার সামনে চলে আসে। আবির নামতে নিলেই,
সানজিদাঃ দাড়াও আবির।
বলেই যেই আবির সানজিদার দিকে তাকায় সানজিদা আবিরের গালে একটা চুমু দিয়ে দেয়। ঘটনার আকশ্মিকতায় আবির পুরো বোকা হয়ে যায়। আর তারাতারি গাড়ি থেকে নেমে পরে। সানজিদা বায় বলে তারাতারি চলে যায়। সানজিদার মুখে লজ্জা স্পষ্ট।
আবির ভেবে পাচ্ছেনা সানজিদা এটা কি করলো?? রিয়া ঠোঁটে এখন সানজিদা গালে। সবাই খালি ওকে চুমু খায়। কিন্তু এদের মাঝে শুধু একজনার চুমুই ভালো লেগেছে। তা আপনাদের বলা যাবে না।
আবির বাসায় চলে যায়। সন্ধ্যা ৭ টা বাজে। আবির ওর রুমে যেতেই দেখে মায়া বসে আছে।
আবিরঃ কি মায়া এখানে এভাবে বসে আছো??
মায়াঃ না এমনি। আজ এতো দেরি হলো??
আবিরঃ এক জায়গায় গিয়েছিলাম।
মায়াঃ ওহ। তাহলে তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার দিচ্ছি।
আবিরঃ না না মায়া। আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। জানো আজ যা খেয়েছি না। জীবনেও এতো মজার খাবার খাইনি।
মায়াঃ তা কে খাওয়ালো শুনি??
আবিরঃ ওইযে বলেছিলাম নাহ যার কুকুর দেখে ভয় পেয়ে ছিলাম ওই মেয়েটা। মানে সানজিদা। মেয়েটা অনেক ভালো। দেখো এই ঘড়িটাও গিফট দিয়েছে।
মায়ার মুখটা মলিন হয়ে গেলো। মায়া কিছু না বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আবির ব্যাপারটা বুঝতে পারলো না। এরপর আবির ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে টিউশনিতে চলে যায়। টিউশনি করে প্রায় রাত ১১ টার দিকে বাসায় ফিরে। ভিতরে ঢুকতেই দেখে মায়া খাবার টেবিলে বসে আছে।
আবিরঃ তুমি ঘুমাও নি??
আবির খেয়াল করলো মায়ার চোখগুলো ফুলে আছে।
মায়াঃ নাহ। তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম।
আবিরঃ কেন!!!যাও ঘুমিয়ে পরো। না ঘুমাতে ঘুমাতে চোখগুলো কেমন ফুলে গিয়েছে। চাচি যদি দেখে তুমি এখনো জেগে আছো তাহলে বকা দিবে। যাও যাও ঘুমিয়ে পরো।
মায়াঃ আমি একটা কথা জানতে চাই তা বললেই চলে যাবো।
আবিরঃ আচ্ছা দাড়াও আমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসি। ঘেমে অবস্থা খারাপ।
মায়াঃ আচ্ছা।
আবিরের কাছে আজকের মায়াকে অন্যরকম লাগছে। মায়া আবিরের সাথে কোন সময় এমন ভাবে কথা বলে না। তাহলে আজ??
আবির ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এসে দেখে মায়া বসে আছে। আবিরও এর সামনে গিয়ে বসে।
আবিরঃ হুম এখন বলো কি জানতে চাও।
মায়াঃ তুমি কি সানজিদাকে পছন্দ করো??মানে ভালোবাসো কিনা??
আবিরঃ তুমি জেনে কি করবে??
মায়াঃ না এমনি বলো না।
আবিরঃ আরে নাহ। ভালোবাসিনা।তবে মেয়েটা ভালো। ভালোলাগে ওর কথাবার্তা, ব্যবহার, আচরণ।
মায়াঃ সত্যিই তুমি তাকে ভালোবাসো নাতো??
আবিরঃ আরে নাহ। এসবের সময় নেই আমার।
মায়াঃ যাক। (আস্তে করে বলল)
মায়াঃ তুমি কিছু খেয়ে এসেছো??
আবিরঃ না রে। সেই সন্ধ্যায় খেয়েছিলাম। (অসহায় ভাবে)
মায়াঃ ধুর আগে বলবা না। আমিও নাহ। দাড়াও তুমি বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।
আবিরঃ আচ্ছা।
আবিরের কাছে এ মায়া পরিচিত। এ মায়াকে আবির ভালো ভাবেই চিনে। এক্সট্রা কেয়ার নিবে আদর করবে। কিন্তু একটু আগের মায়াটা কে ছিলো?? আর কেনই বা ছিলো?? আবির হয়তো বুঝে ফেলেছে যে এই ছোট্ট মায়া তার প্রেমে পরেছে। কিন্তু সেতো….
মায়াঃ কই হা করো।
আবির তাকিয়ে দেখে মায়া নিজ হাতে খাবার নিয়ে আবিরের দিকে ধরে আছে। আবির যে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।
মায়াঃ কই নেও।
আবির মায়ার হাত থেকে খাবার খাচ্ছে। এখন মায়াকে খুব মায়াবতী লাগছে। মুখটা উজ্জ্বল লাগছে। হাসিখুশি মনে হচ্ছে। আবির খেতে খেতে মায়াকে প্রশ্ন করলো।
আবিরঃ আচ্ছা মায়া আমি যেদিন থেকে এই বাড়িতে এসেছি তুমি আমার অনেক খেয়াল আর যত্ন নেও। কারণ কি বলো তো??
মায়াঃ জানি না। আর সব কথা মুখ দিয়ে বলতে নেই বুঝে নিতে হয়।
আবিরঃ আমি বুঝিনা। তুমি বলো।
মায়াঃ সময় হলে বলবো নে। এখন খাও তারাতারি।
আবিরঃ তুমি খেয়েছো??
মায়া চুপ করে আছে।
আবিরঃ তার মানে তুমি খাওনি নাহ।দাড়াও বলে আবির মায়ার জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। নেও তুমিও খাও।
মায়া প্লেট ধরছেনা।
আবিরঃ কি হলো নেও।
মায়াঃ তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে প্লিজ??
আবির একটু ভেবে। আচ্ছা নেও হা করো। মায়া আবিরের কাছ থেকে খাচ্ছে। আর আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। খাওয়া শেষ হলে মায়া ওর রুমে চলে যায়।
আবিরও ঘুমাতে যাবে ঠিক তখনই মায়াকে যেখানে বসা দেখেছিলো সেখানে একটা বই টাইপ কিছু দেখতে পাচ্ছে আবির। আবির তারাতারি গিয়ে সেটা হাতে নিতেই দেখে এটা ডাইরি। আবির পড়তে না চেলেও কৌতুহল বসতো তারাতারি ডাইরিটা পড়া শুরু করে।
১০ পেইজ লেখা আছে এতে। আবির তারাতারিই পড়ে ফেলে। ডাইরিটা পড়ার পর আবির এমন ভাবে সকড খায় মানে কি বলবো। মায়া আবিরকে কি পরিমান ভালো বাসে তা এ ডাইরির প্রতি পেইজে স্পষ্ট। আবির কি করবে??কি বলবে কিছুই মাথায় আসছে না। মাথাটা ঘুরাচ্ছে। আবির ডাইরিটা জায়গা মতো রেখে তারাতারি শুয়ে পরে। আবির একটু পরই দেখে মায়া ওর রুমে এসেছে। আবির একদম ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছে।
মায়া ডাইরিটা নিয়ে আবির কাছে আসে। মায়া ভাবে আবির হয়তো ঘুমেয়ে গিয়েছে। তাই আবিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওর কপালে আস্তে করে একটা চুমু দিয়ে চলে যায়।
আবির বড় এক ঝামেলায় পরেছে। আবিরের মায়াকে ভালো লাগে তবে এ সম্পর্ক কেউ মেনে নিবে না। কারণ মায়া আবিরের চাচাতো বোন। আর চাচিতো জীবনেও নাহ। এসব ভাবতে ভাবতে আবির ঘুমিয়ে পরে।
এভাবে মায়ার স্পেশাল কেয়ার, সানজিদার সাথে ঘুরাঘুরি খাওয়া দাওয়া আর টিউশনি করে আবিরের দিন যাচ্ছিলো। কিন্তু রিয়া মেয়েটা কেন যেনো আবিরের কাছ থেকে এড়িয়ে চলতো। যা আবিরের খারাপ লাগতো। তবে আবির দেখতো রিয়া আড়ালে লুকিয়ে মাঝে মাঝে আবিরকে দেখতো। এমনকি ক্লাসেও।
একদিন রাতে আবির টিউশনি করে বাসায় ফিরছিলো হেটে হেটে। রাত তখন প্রায় ১১.৩০ বাজে। আবির বাসার কিছুদূর কাছে আসতেই দেখে, কয়েকটা লোক একটা ৫০-৬০ বছরের বয়স্ক লোকের সাথে জোরাজুরি করছে। আবির দ্রুত সেখানে গিয়ে ওইলোক গুলোকে মেরে আধমরা করে সরিয়ে দেয়।
আবিরঃ আঙ্কেল আপনি ঠিক আছেতো??
আঙ্কেলঃ হ্যা বাবা, তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আজ তুমি না থাকলে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো। ধন্যবাদ বাবা।
আবিরঃ আরে আঙ্কেল কি যে বলেন নাহ। এটা আমার দায়িত্ব। কিন্তু ওরা কারা ছিলো??
আঙ্কেলঃ ওরা আমার শত্রু পক্ষের লোক। এই ব্রিফকেসে আমার খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজ আছে। যা হয়তো ওরা পেলে আমার অনেক বড় ক্ষতি করতে পারতো। কিন্তু তুমি বাচিয়ে দিলে বাবা।
আবিরঃ ওহ। তা আঙ্কেল আপনি বাসায় যাবেন কিভাবে?? আমি এগিয়ে দিয়ে আসবো??
আঙ্কেলঃ না বাবা। দাড়াও আমার ড্রাইভারকে ফোন দি।
বলেই আঙ্কেল ড্রাইভারকে ফোন দিলে অনেক দামী গাড়ি নিয়ে চলে আসে।
আঙ্কেলঃ বাবা আসো তোমাকে নামিয়ে দেই।
আবিরঃ না আঙ্কেল আমার বাসা সামনেই যেতে পারবো।
আঙ্কেলঃ আচ্ছা বাবা এই কার্ডটা রাখো কোন সময় দরকার হলে আমাকে ফোন দিও।
আবিরঃ আচ্ছা। সাবধানে যেয়েন।
আঙ্কেলঃ আচ্ছা বাবা।
লোকটা চলে গেলে আবিরও বাসায় ফিরে যায়। আবির এখন মায়ার সাথে কথা কম বলে। মানে এড়িয়ে চলে। কিন্তু মায়া ওর সাথে লেগেই থাকে।
এভাবে প্রায় ১ বছর কেটে যায়। ফাস্ট ইয়ার থেকে এখন ওরা সেকেন্ড ইয়ারে। আবির সেই ক্লাস টপারই রয়ে যায়। রিয়া কোন ভাবেই প্রথম না হতে পারলেও ২য় তে আছে। রিয়াও এখন মাঝে আবিরের সাথে কথা বলে তবে পড়াশোনা নিয়ে অন্য কিছু না। কিন্তু রিউয়া কাছে আসলেই আবিরের কেমন জানি লাগে। মনের ভিতরটা কেমন জানি করে। রিয়াও পড়ার মাঝে আবিরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।আর এদিকে সানজিদা সারাদিন আবিরের সাথে লেগেই থাকে। সবাইতো ভাবে সানজিদা আবিরের গার্লফ্রেন্ড। অবশ্য এতে রিয়ার মাঝে আবির কিছুটা হিংসে লক্ষ্য করেছে।
একদিন হঠাৎ আবির ভারসিটিতে ঢুকতেই সানজিদা আবিরকে টেনে ভারসিটির মাঝে এনে সবার সামনে ওপেন প্রপোজ করে বসে। আবিরতো পুরা ভেবাচেকা খেয়ে যায়।আবির….
চলবে….?