ছোটগল্পঃরহস্য

0
1001

ছোটগল্পঃরহস্য
লেখাঃসানজিদা আক্তার

এই গভীর রাতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাস থেকে নেমে যেতে হলো। সামনে নাকি বড় রকমের এক্সিডেন্ট হওয়ায় রাস্তা ব্লক করে রেখেছে। সেই বিকাল ৫টায় অফিস শেষে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জের বাসে উঠেছিলাম,রাস্তায় কাজ চলছে যার জন্য জ্যামে আটকা পরতে হইছে।
এমনি ক্লান্ত আমি,এর মাঝে আরেক ঝামেলা শুরু হলো। এখন যে জায়গায় দাড়িয়ে আছি,সেখান থেকে আমার বাড়ির হাঁটা পথ ২০মিনিট। এত্তো ক্লান্ত লাগছে যে এই ২০ মিনিট আমার জন্য ২ঘন্টার শামিল।
ধুর, বেছে বেছে সব ঝামেলা আমার সাথেই হতে হয়। দিন হলে তাও কথা ছিলো, এই গভীর রাতে একা যেতেও সাহস হচ্ছে না।এমনিতে আমি যথেষ্ট সাহসী, তবে এই গভীর রাতে যেনো সব মিইয়ে গেছে।
ফোনটারো এখনি চার্জ ফুরাইতে হইছে,নাহলে ছোট চাচা কে ফোন দিয়ে সাইকেল নিয়ে আসতে বলতাম।যাইহোক, এসব ভেবে সময় নষ্ট করে আর লাভ নাই। রাত বেড়েই চলেছে, শুধু শুধু দাড়িয়ে থেকে মশার কামর খাওয়ার মানে হয় না।
আচ্ছা,আমি তো ক্ষেতের আইল হয়ে যেতে পারি,তাহলে সময় কম লাগবে।
কিন্তু ওই তালগাছ??
শুনেছি ওই গাছে নাকি কি থাকে,গভীর রাতে অনেকেই দেখেছে।একবার ওই গাছের নিচে এক নববধূর লাশ পাওয়া যায়।কে বা কারা মেরেছে, আর মেয়েটাই বা কে তা এখনো রহস্য রয়ে গেছে।পুলিশ অনেক খোজ করেও কোন হদিস করতে পারে নাই,যার জন্য এক সময় কেসটাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। অনেকের কথা মতো গভীর রাতে ওই তালগাছের নিচে কোন মেয়েকে বধূবেসে বসে থাকতে দেখা যায়,কখনো বা হাটাহাটি করতে।
অনেকে বলে গভীর রাতে ওই রাস্তা দিয়ে কেও আসলে তাকে আর পরদিন দেখতে পাওয়া যায় না।আবার কেও বলে গাছের নিচে ঐ ব্যাক্তির লাশ পরে থাকে।এই সব কিছুই লোক মুখা শোনা।
যদিও আমার এসব জিনিসে কোন রকম বিশ্বাস নাই,কিন্তু আজ এই অন্ধকার রাতে আমার অবচেতন মন যেন এসব বিশ্বাস করতে রীতিমতো আমার সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।

এসব আজগুবি চিন্তা করতে করতে অনেকটা পথ চলে এসেছি,আর একটু হাঁটলেই ঐ তালগাছ।তারপর বাঁয়ের রাস্তার ৩বাড়ি পরেই আমার বাড়ি।অনেকদিন পর বাড়ি আসছি।এখনো হয়তো আসা হতো না,যদিনা বাবা ফোন দিয়ে আমার বোনের বিয়ের কথা বলতো।আমরা এক বোন দুই ভাই।আমি ছোট আর আমার পরেই বোন।ঢাকা শহরে একটা প্রাইভেট কম্পানি তে জব করি।বিয়ে করে ওখানেই থাকা হয় এখন।বাড়ির সবাই আমার ওখানেই থাকে।বাবা অনেক দিন যাবত বাড়ি আসতে চাচ্ছিলো। বড় ভাই কাজের সুবাদে ঢাকার বাইরে ছিলো আর আমারও ছুটি না থাকায় বাবা কে বাড়ি নিয়ে আসতে পারছিলাম না।কদিন আগে বাবা তাই জোড় করেই বোন আর মা কে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন।আর কালকে ফোন দিয়ে বলে বোনের বিয়ে ঠিক করেছে।হটাৎ কি থেকে কি হইছে,কার সাথেই বা বিয়ে ঠিক করছে কিচ্ছু জানিনা,ভাইয়া বললো তুই গিয়ে দেখ, দুদিন পর আমি আসছি।এদিকে সীমা কে রেখে এসেছি একা বাসায়,পাগলিটা কি করছে কে জানে।এতোক্ষনে হয়তো আমার চিন্তায় কান্নাকাটি শুরু করছে।নাহ,তারাতাড়ি বাসায় গিয়ে আগে ওকে একটা ফোন দিতে হবে।

আর দুই-তিন পা গেলেই তালগাছ, এতক্ষণ সব ভুলে ছিলাম। হটাৎ গাছটি দেখায় আবার সব মাথা চারা দিয়ে উঠছে।
আচ্ছা, সত্যি কি কিছু আছে এখানে? সেই ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি,সব কি বানানো ছিলো?
ধুর কি সব ভাবছি, বোকার মতো দারিয়ে আছি কেন?আর কই এখন তো গাছের সামনেই আছি,কিছু তো নেই,শুধু শুধু ভয় পাচ্ছি।
হাটা শুরু করবো এমন সময় পিছন থেকে কে যেনো আমার নাম ধরে ডাক দিলো। এতো রাতে এখানে আমাকে কে ডাকবে? কেমন যেন ভয়ে আমি জমে যাচ্ছিলাম,পিছন ফিরে দেখার শক্তি যেনো হারিয়ে ফেলেছি। তাহলে কি লোক মুখে শোনা কথা সত্যি।
আবার ডাক দিলো। নাহ,এভাবে ভয় পেলে হবে না।মনে মনে আল্লাহর নাম করে পিছনে ঘুরে দেখি আমাদের গ্রামের মসজিদের বড় হজুর দাঁড়িয়ে আছেন। এখানে ওনাকে দেখে আমি কিছু বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলছি।উনি এতো রাতে এখানে কেন? আর আমাকেই চিনলো কেমনে? হাবিজাবি চিন্তায় কিছু বলতেও পারছি না।
-এই রাহান, শুনতে পাচ্ছো না? কখন থেকে ডাকছি।
-আপনি এখানে?
-আজকে পাশের গ্রামে মাহফিল ছিলো, ওখানেই গেছিলাম। দুপুরে তোমার বাবার সাথে দেখা হইছিলো, তখন বললো তুমি নাকি আজকে বাড়ি আসছো।
-আপনি আমাকে চিনলেন কেমনে? এতো অন্ধকার।তার উপর আপনার সাথে অনেক দিন দেখাও হয় নাই।

আমার মনে সন্দেহ কাজ করছে,কিছুতেই নিশ্চিন্ত হতে পারছিলাম না।আমার প্রশ্ন শুনে হুজুর সাহেব মুচকি হাসলেন। এই অন্ধকার রাতেও যেন আমি তা স্পষ্ট দেখতে পেলাম।

– তোমাকে বড় রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম, তোমার কাছে আসার আগেই তুমি আইলে নেমে গেলা।তখন থেকে তোমার পিছন পিছন আসছি,কতবার ডাক দিলাম।তুমি তো শুনছিলাই না।

ওনার কথা শুনে বেশ লজ্জা পেলাম এবার,আমি আজগুবি চিন্তায় এতোই বিভোর ছিলাম যে কেও এতক্ষণ যাবত আমার পিছন পিছন আসছে আর আমি খেয়ালি করি নাই।
-ক্ষমা করবেন, আমি খেয়াল করিনি।
-আরে না,ক্ষমা চাইতে হবে না।বাড়ি যাবা তো? চলো তোমাকে বাড়ি রেখে আমি আমার বাড়ি যাবো।
-নাহ হজুর, আমার জন্য এমনি অনেক কষ্ট করছেন।সামনেই তো বাড়ি,আমি একাই চলে যেতে পারবো। তাছাড়া অনেক রাত হইছে,আপনার বাড়ি তো আমার বাড়ির উল্টা রাস্তায়।
-কষ্ট কেন হবে? তোমাকে ভালভাবে বাড়িতে পৌঁছে দিতেই তো এলাম।
-জ্বি?
-কিছু না চলো, আর তুমি আয়াতুল কুরসি পারো?
-হ্যা।
-তাহলে মনে মনে পড়তে থাকো, আর ভুলেও পিছনে তাকাবা না।যাই হয়ে যাক,খবরদার!

বলেই উনি আগে আগে হাটা শুরু করলেন।
ওনার কথায় কেমন যেন সন্দেহ লাগলো। তার কথার মাঝে কিছু ছিলো। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা হলো, এসব কেন বললেন। কিন্তু মন সায় দিলো না।
শরির এমনি ক্লান্ত, এখন বাড়ি যেতে পারলেই বাঁচি।তাই কিছু না বলে তার কথা মতো মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়া শুরু করলাম। কালকে নাহয় একসময় জিজ্ঞেস করে নিবো নামায পরতে গেলে।

হটাৎ মনে হলো আমাদের সাথে আরও কেও আসছে,কেমন পা ঘসে হাঁটার শব্দ।পিছনে ঘুরতেই যাবো এমন সময় হজুরের কথা শুনে থেমে গেলাম।
– তোমাকে মানা করলাম না পিছনে না দেখতে, যাই হয়ে যাক।
তার কথা শুনে খুব অবাক হলাম,তিনি এখনো আমার সামনে হেটে চলেছে,একবারের জন্যও তাকে পিছনে তাকাতে দেখি নি।তাহলে তিনি বুঝলো কেমনে, আমি পিছনে ঘুরতে নিছিলাম।
তাকে জিজ্ঞেস করতেই যাবো এমন সময়…

– তোমার বাড়ি চলে এসেছে।আমার কাজ এতটুকুই ছিলো। ভালো থেকো!
কিছু বলার আগেই তিনি উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলেন।
আর আমি এক সমুদ্র রহস্যের মাঝে ডুবে রইলাম।
বাবার ডাকে হুস ফিরল।
-কিরে এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোর ফোন বন্ধ, চিন্তায় আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে।এদিকে বৌমা একটু পরপর ফোন করে কান্নাকাটি করছে। তুই ঠিক আছিস তো বাবা?
-হু,ঠিক আছি আমি, চিন্তা করোনা,চলো ঘরে গিয়ে কথা বলি। খুব ক্লান্ত লাগছে।
-হ্যাঁ, তাই চল। জানিস কি হইছে,আজকে বড় হজুর পাশের গ্রামে মাহফিলে গেছিলো। আসার পথে বড় রাস্তায় মালবাহী ট্রাকের সাথে এক্সিডেন্ট করছে,ওখানেই নাকি মারা গেছে।এর জন্যই রাস্তা বন্ধ। লোকটা খুব ভালো ছিলো রে,আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুক।
আয় তুই ঘরে আয়,ও আসমা,তোমার ছেলে এসেছে, কই তুমি।
বাবা মা কে ডাকতে ডাকতে ঘরে চলে গেলো।
আর আমি মুর্তির মতো উঠানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। বাবা এসব কি বলে গেলো?কোনটা সত্যি, এতোক্ষন যা হলো তা,নাকি বাবা যা বলে গেলো সেটা??
এ কেমন রহস্যের মাঝে আটকে পরলাম আমি?…..

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে