চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০৭

0
2999

চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০৭

লেখা আশিকা জামান

ঘুমন্ত মুখশ্রীর নিপুণ কারুকাজে মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে অঙ্কনের বড় দুর্বোর্ধ্য ইচ্ছে হচ্ছে। ইশ্ সময়টা যদি থমকে যেতো! বিন্দু বিন্দু করে যে সুক্ষ্ণ অনিভূতিটা তৈরী হয়েছে তা যদি অনন্তকাল ধরে রাখতে পারতো!

নিজের পাগলামো ইচ্ছেগুলোকে বাড়তে না দিয়ে ফের অনন্যার দিকে তাঁকায়। কেমন শান্ত হয়ে কাধে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে। এভাবে কি আদৌ ঘুমোনো যায়! নিজের মনে নিজেই হেসে উঠছে৷ পরক্ষণেই মনে হলো এইরকম নিষ্পাপ ঘুমন্ত চেহারা দেখে বোঝারও উপায় নেই এই মেয়ে প্রচন্ড জেদি আর খিঁটখিঁটে মেজাজের! একটু তাল পেলে তুলকালাম বাজানো তার বা হাতের খেল! কিন্তু অঙ্কন সেও কি কম যায়। নিজেও এক পা ও ছাড়েনি। পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করেছে। না এরকম আচরণ করাটা তার মোটেও ঠিক হয়নি। সত্যি হলো এই মেয়ের সামনে আসলে কি যেন কি হয়ে যায় নিজেকে ঠিক যেভাবে উপস্থাপন করতে চায় সেভাবে না পেরে উলটো রাগের প্রকাশভঙ্গিটাই এক্সট্রিম লেভেলে চলে যায়।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



গাড়ির সামনে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অঙ্কন হকচকিয়ে উঠে। ব্রেক কষিয়ে অনন্যার মাথাটা সাবধানে সিটে এলিয়ে দিয়ে নেমে আসে। আকাশ জুড়ে থালার মত চাঁদের আলোয় চারপাশটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। দু’ধারে ঘণ জঙ্গল মাঝখান দিয়ে রাস্তাটা শাপের মত একেঁবেকেঁ চলেছে। কেমন যেন গা ছমছমে ভাব। যায়গাটা খুব বিপদজনক!
পুলিশ এখানে নিয়মিত টহল দেয়। অনৈতিক কার্যকলাপের ঝুঁকি কমাতে উনারা গাড়িতে উঠে জঙ্গল পার করে দেয়ার ব্যাবস্থা করেন।। এখানে হয়তো সেরকম কিছুই ঘটতে যাচ্ছে।

অঙ্কন পুলিশের সাথে কথা বলে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা চালায়। পুলিশ জানায় সামনে একটা বেশ বড় সড় গাছ পড়েছে৷ তাই রাস্তা ব্লক। কাল সকালের আগে রাস্তা ক্লিয়ার করা সম্ভব নয়। হয় উনাদের ফিরে যেতে হবে নয়তো সামনে রসুলপুর মাজার নামক স্থানে ফরেস্ট অফিসের রেস্ট হাউজে আজকের রাতটা কাঁটাতে পারে। এতদূর এসে ফিরে যাওয়ার কোন মানেই হয়না। অঙ্কন গাড়ির দিকে চোখ ভীড়ায়। অনন্যাকে ঘুম থেকে জাগাতে হবে। সবটা শুনে ভাবওয়ালি কি রিএক্ট করবে আল্লাহ জানে।

গাড়ি থেমে গেছে। অনন্যা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে নিজেকে এক গহীন অরণ্যে আবিষ্কার করে রীতিমতো আৎকে উঠে। এ কোথায় এসেছে? এতো তার বিছানা নয়। এতোক্ষণ তো মনে হচ্ছিলো নিজের বিছানায় আরাম করে বালিশে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছিলো।
সেটা যখন নয়তো অসভ্যের হাড়ীটাই বা কোথায়?
” অনন্যা, যাক ঘুম ভেঙ্গেছে তাহলে?”
অঙ্কন গাড়িতে উঠে বসে সহাস্যে অনন্যার দিকে তাকায়।
” আমি এখানে কেন? আমারতো মনে হচ্ছিলো আমি নিজের বিছানায় ঘুমিয়েছি। যদি জানতাম ঘুম ভেঙ্গে আপনার মুখটাই দেখতে হবে ট্রাস্ট মি আমি চোখ খুলতাম না।”

” প্রথমত তোমার অতিরিক্ত জেদের কাছ হার মেনে এখনো আমাকে মধুপুরের উদ্দেশ্যে ড্রাইভ করতে হচ্ছে। আর দ্বিতীয়তো তুমি নিজের বিছানাতেই ঘুমিয়েছো!”
অঙ্কন নিজের শরীরে হাত দিয়ে দেখাতে দেখাতে বললো, ” এই যে আমার শরীরটাকে বিছানা আর এই যে কাধঁ দেখতে পাচ্ছো এটাকে বালিশ বানিয়ে পুরো রাস্তাই আরাম চে ঘুমিয়ে কাঁটালে। আর আমি এক কাঁত হয়ে ড্রাইভ করতে করতে পুরো ঘাড় মাথাসহ ব্যাথা বানিয়ে ফেলেছি। এইতো তার প্রতিদান পাচ্ছি! এখন আমার মুখ দেখতেও তোমার অস্বস্তি হচ্ছে। এই তোমার জন্মের সময় কি মুখে মধু টধু দেয়নি নাকি! ”

অনন্যা অবিশ্বাস্য সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে পরক্ষণেই লজ্জায় কুকঁড়ে যায়। ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। কি ভাবে নিজেকে প্রকাশ করবে সেই অভিব্যাক্তিকে যেন হারিয়ে ফেললো। তাই পট করে বললো,
” ন্যাহ্ কোন সমস্যা!” কথাটা বলেই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
” নাহ্ আমার আর কি সমস্যা। দায়েঁ পড়েছি তাই আজকের রাতটাও সহ্য করতে হবে। এই যে শুনুন ভালো মানুষ রাস্তায় একটা বড় গাছ পড়েছে সামনে আর আগানো যাবে না।”
অনন্যা চোখ কপালে তুলে বললো,
” তাহলে কি করবো? এতদূর এসে ফিরে যাবো।
” না সেই ইচ্ছে আপাতত নেই। সামনেই রেঞ্জ অফিসে ওখানে অনুমতি নিয়ে আজকের রাতটা রেস্ট হাউজে কাটাতে হবে। নাহ্ যদি আপনি রাজি থাকেন!”
” রাজি না হওয়ার কি আছে! দেখুন আমি অতো ভয়টয় পাইনা। ইনফ্যাক্ট আমারতো অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার লাগছে৷ উফ্ কি থ্রিলিং ব্যাপার হবে ভাবুনতো!”

” হ্যাঁ সেটাই স্বল্পপরিচিত একটা মেয়ের সাথে গোটা একটা রাত কাঁটানো কি কম থ্রিলিং ব্যাপার! তার উপর মেয়েটার আবার নাকি এসব বিষয়ে কোন ভয় ডর নেই। তাহলেতো গোটা ব্যাপারটা বেশ মাখো-মাখো হবে কি বলো।” কথাটা বলেই অঙ্কন বাঁ চোখে টিপ বসায়।
অনন্যা ভয়ে জমে যেতে থাকে। এই লোকটা সত্যি সত্যিই সুযোগে সদ্বব্যবহার করবে নাতো! তার উপর এইসব মিডিয়ার ছেলেদের ভয়াবহ রকমের চরিত্রের দোষ থাকে! এখনতো মনে হচ্ছে নিজের ফাঁদে নিজেই আঁটকে গেছে।

” কি ভাবছো?”
অঙ্কন অনন্যার সামনে তুড়ি বাজিয়ে প্রশ্নটা করতেই সে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাঁকায়। সেই চোখের ভাষা বোঝতে পেরে অঙ্কন খিঁলখিঁল করে হেসে উঠে। এই হাসিটাও অনন্যার এখন বড় দূর্বোধ্য ঠেকছে।
” আমি ননভেজ মানুষ ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যেমন অক্ষত অবস্থায় বাড়ি থেকে তুলে এনেছি তেমন অক্ষত অবস্থাতেই বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে আসবো কেমন!”
নিজের নির্বুদ্ধিতায় নিজের মাথার চুলই ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছে অনন্যার। কথা ঘুরানোর জন্য কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
” এই দেখুন আমি মোটেও ভয় পাইনি। এভাবে বোকা বোকা কথাগুলো না বলে চলুন।”
অঙ্কন ঘাঁড় নাড়িয়ে সাঁয় দেয়।

অনন্যাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে অঙ্কন সমস্ত ফর্মালিটিজ গুলো কম্পলিট করে তারপর অনন্যাকে নিয়ে মহুয়া কটেজের দিকে যায়।
গাড়িটা পার্ক করে এসে অনন্যাকে তখনো বাংলোটার সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।
” সে কি, তোমাকে না ভেতরে যেতে বললাম!”
” না ভাবলাম একসাথেই যাই।”
অঙ্কন কথা না বাড়িয়ে ভেতরে যেতে থাকে পেছনে অনন্যাও আসে। পাশাপাশি দুটো ঘর সামনে টানা বারান্দা। একটাতে অনন্যা থাকার বন্দোবস্ত হয় আর অন্যটাতে অঙ্কন। পুরো ঘরজুড়ে হাস্নাহেনার সুবাস ভেসে আছে। সাথে আরেকটা ভিন্ন ফুলের সুবাস ও বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। হ্যাঁ অনন্যার মনে পড়েছে ছাতিম ফুলের তীব্র সুবাস! এই ফুলের গন্ধে কেমন যেন মাতাল অনুভূতি হয়। তার মানে কাছে কোথাও ছাতিম গাছ! কয়েক গাছি সাদা সাদা ছোট্ট ফুলের থোকা হাতে পেলে নেহাৎ মন্দ হয়না। যেই ভাবা সেই কাজ!

অঙ্কন হাত মুখ ধোয়ে কেবলই সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে। আঁজ সারাদিন বড্ড ধকল গেছে। ক্লান্ত শরীর একটু এলিয়ে দিলেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যাবে। তবে কাধের বাঁ পাশে খুব ব্যাথা হচ্ছে কেউ মালিশ করে দিলে ভালো লাগতো! আপাতত একটা পেইন কিলার খেয়ে নিলেই হবে।
আর এই মুহুর্তে ক্ষিধেটা বড্ড বেশিই লাগছে। অনন্যার নিশ্চয়ই খিদে পেয়ে গেছে। হঠাৎ অনন্যার কথা মনে পড়ায় অঙ্কন উঠে দাঁড়ায়। ঠিক তখনি দরজার নক পড়ে। অঙ্কন উচ্চস্বরে ভেতরে আসতে বলে শার্ট গায়ে দিতে থাকে।
খাবার হাতে একটা লোক দোড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। অঙ্কন ভয়ার্ত চোখে লোকটার দিকে তাঁকায়। কেমন অদ্ভুতুড়ে লাগছে বেটে গোছের দাড়ি মোছে জরাজীর্ণ লোকটাকে।
লোকটা খাবার টেবিলে রাখতে রাখতে বললো,
” আপনাগো খাওন দিয়া গেলাম। কোন দরকার হইলে আমারে ডাকবেন আশেপাশেই পাইবেন। আমি এহানকার নাইট গার্ড।” লোকটা কেমন গম্ভীরভাবে কথাটা বলেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। পরপক্ষণেই যেন আবার কি মনে করে পেছনে ঘুরে।
” রেঞ্জার সাহেবের বউ, বাচ্চারা আপনার লগে দেহা করবার চায় আমার মারফত খবর পাঠাইছে। আফনে নাকি সিনেমা করেন মস্ত বড় নায়ক! তা আফনে যদি বেশী ক্লান্ত না থাকেন তাইলে উনাদের আসতে বলি?”

অঙ্কন ঘাড় ঘুরিয়ে বললো, ” নাহ্ প্লিজ এত রাতে উনাদের বিরক্ত করবেন না আমি খুবই টায়ার্ড৷ কাল সকালে দেখা যাবে। আর হ্যাঁ এখন আপনি আসতে পারেন। আচ্ছা আপনার নামটা যেন কি?”
” মোহাম্মদ মুনসের আলী! ”
” আচ্ছা মুনসের আপনি নিশ্চিন্তে যান। দরকার হলে নিশ্চয়ই ডাকব।”
” আমার নাম মোহাম্মদ মুনসের আলী। মুনসের কয়া পাপ কামাই করেন কেন? মুসলমানগো নামতো সংক্ষেপ করোন যায় না। গুনা অয় গুনা।”

অঙ্কন হতভম্ব হয়ে এই অদ্ভুত মানুষ টার দিকে তাকায়। কথাটা বলেই লোকটা আর একমুহূর্ত দাঁড়ায়নি হনহন করে চলে গেছে ঝড়ের গতিতে।

চলবে..

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে