চাঁদের আলোয় জোছনা ভাঙ্গে পর্ব ০৫
লেখা আশিকা জামান
” মিস অনন্যা ওয়েলকাম।”
অনন্যা পাথরের মত নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকায়। সত্যি বলতে আজ তার ভীষণরকমের ভয় করছে। কেন করছে কারণটা অজানা।
হয়তো ভয়ের চোটে মস্তিষ্কও রেস্পন্স করছে না। অনন্যা উত্তর দিলো না চোখ নামিয়ে সিটবেল্ট বাধায় মনোযোগ দিলো। কিন্তু হাত পা ও কেমন বেঈমানী শুরু করেছে। কেমন অবশ হয়ে আসছে। কাপাঁকাপিঁ শুরু হয়ে গেছে। এতোদিনের চেনা আত্নপ্রত্যয়ী, স্পষ্টভাষী অনন্যা নিজেই নিজেকে চিনতে পারছে না।
আচমকাই অঙ্কন অনন্যার হাত সরিয়ে নিজেই সিট বেল্ট বেধে দিলো। অনন্যা ভয়ের চোটে অন্যদিকে ঘুরে চোখ বুজে থাকলো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
” একটা সামান্য সিটবেল্ট বাধতে পারছেন না। আবার চ্যাটাং চ্যাটাং কথার বেলায় তো মুখে একদম খই ফুটে।”
অপমানটা অনন্যার ঠিক হজম হলো না। তাই মুহুর্তের মাঝেই নিজের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে দু’বার ভাবলো না। খিটখিটে মেজাজে বলে উঠলো,
” দেখুন আমি কিন্তু যেচেঁ আপনার সামনে আসি নি। আপনি নিজে আমাকে বলেছেন আমি যেন বাকি জীবনে আপনার চোখের সামনে না পড়ি। কিন্তু কি অদ্ভুত দেখেছেন আপনি নিজেই হ্যাংলার মতো আমার কাছে এসেছেন।”
” হুয়াট?” অঙ্কন চেঁচিয়ে উঠলো। রেগে গেলে সে হিতাহিতজ্ঞান শুণ্য হয়ে পড়ে। অবশ্য অনন্যার তা জানার কথা নয়।
” আরে হিরো মশায় রেগে গেলেনতো হেরে গেলেন। এত চাপ নিচ্ছেন কেন? হয় হয় লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলেওতো একটা কথা আছে নাকি! জানেন আমি না এই ব্যাপারটা খুব উপভোগ করি।”
মেয়ের দুঃসাহস দেখে অঙ্কনের ভীমড়ি খাওয়ার যোগাড়। অবশ্য এই মেয়ের ওভার কনফিডেন্স এর প্রমাণ এর আগেই পেয়েছে। দাতঁ কটমট করে বিড়বিড় করে বললো, ” ভাবওয়ালী তোমাকে যদি জন্মের মতো উপভোগ না করিয়েছি আমার নাম অঙ্কন চৌধুরী না।”
অনন্যা হয়তো সে ভাষা কিঞ্চিৎ বুঝতে পারলো তাই মৃদু হাসার চেষ্টা করে বললো,
” কিছু কি বললেন? কিছু বলতে হলে না বোল্ডলি বলতে হয়। না হলে সারাজীবন আফসোস করতে হয়।”
অঙ্কন নিজের ঘোল পালটে ফিচেল হেসে বললো, “ঠিক তাই আমি না সত্যিই আপনাকে না দেখে একমুহূর্ত থাকতে পারছি না। তাই সকাল সকাল আপনার বাড়িতে এসে পড়েছি। এবার আমাকে আপনার বুকের মাঝখানে যেথায় হৃদয় লুক্কায়িত আছে না ওখানে একটুকু ঠাঁই দিবেন গো।”
অনন্যা জানে অঙ্কন মজা করে এমনি এমনি এই কথাগুলো বলছে। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে তার বুকের রক্ত ছলকে উঠলো। কান গরম হয়ে গেলো। পলকহীন ভাবে অঙ্কনের দীঘল পাপড়ির কুচকুচে কালো চোখের দিকে বিস্মিত হয়ে তাকালো।
কিন্তু পরক্ষণেই অঙ্কনের এক ধমকে অনন্যার হুশ ফিরে,
” খুব মজা লাগে ছেলেদের মুখে প্রেম নিবেদন শুনতে তাই না! শুধু আমার মা আর বোনের জন্যে নয়তো অঙ্কন চৌধুরীর পাশে বসার কোন যোগ্যতাই আপনার নেই। খুব ওভার কনফিডেন্স তাই না! গাড়ী থেকে নামুন। এক্ষুনি নামুন।”
অসভ্য লোকটার পাশে বসতে অনন্যার ঘেন্নায় গা গুলিয়ে আসছে। তবে সে এখন চুপ থাকবে। আর একটাও কথা বলবে না যতোক্ষন না ঐ অনীহা নামের ন্যাকাকুমারীকে না পাচ্ছে। মনে মনে তানভীর কে একশত বার গালি দিয়ে কটমট করে অঙ্কনের দিকে তাকায়।
” কি হলো নামুন। তবে আপনাকে এখনি ছেড়ে দিচ্ছি না আমাকে অতোটাও ভালো ভাবার কোন কারণ নেই। আপনার বন্ধু কি যেন নাম ও হ্যাঁ নিনিত উনার বাসার সামনে এসে গেছি নামুন।”
” দেখুন নিনিততো বললো ওর ওখানে আসে নি তাহলে অযথা ওর বাসায় খুঁজে কি লাভ। ”
” লাভ ক্ষতির হিসেব অঙ্কন চৌধুরী করে না। তাছাড়া আপনার কোন বন্ধুকে বিশ্বাস করার মত অতোটাও বোকা আমি নই। আপনি একাই আপনার সকল বন্ধুদের বাসায় যাবেন আর তল্লাশি চালাবেন। আমি এখানেই বসে থাকবো। এম আই ক্লিয়ার!”
অনন্যা চুপচাপ নিনিতের বাসায় গেলো আর খালি হাতে ফিরে এলো। অঙ্কনের ভীষণ রকমের মেজাজ খারাপ হলো। তবে কিছু প্রকাশ করলো না।
তখন প্রায় সন্ধ্যে। চারপাশটা আধাঁরে ছেঁয়ে যেতে খুব একটা দেরি নেই। এমনি সন্ধ্যেবেলায় সারাদিন ব্যার্থ্যতার গ্লানিতে অঙ্কন মুষড়ে যেতে লাগলো। সেই চোখ মুখ অন্ধকার করা মুখপানে তাকিয়ে অনন্যার বুকে গভীর শেলের মতো বিধঁতে লাগলো। এত কষ্ট কেন হচ্ছে? ওরতো এত কষ্ট হওয়ার কথা না।
” দেখুন, আমরা ঠিক খুঁজে পাবো। প্লিজ এভাবে ভেঙে পড়বেন না।” অনন্যা গলাটা খাদে নামিয়ে বললো।
মুহুর্তেই অঙ্কন ফুসে উঠে বললো, ” ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন অঙ্কন এতো সহজেই ভেঙে পড়ে না। শুধু মেজাজ খারাপ হচ্ছে এই যা! বদমায়েশটা লুকিয়ে থাকার জন্য ঢাকা শহরে কোন জায়গা খুঁজে পেলোনা। পুরো শহর চষে ফেললাম তাদের দেখা নেই। আর পাবেই বা কি করে কতিপয় বন্ধু নামের সেলফিসগুলা বিপদে সাহায্য না করে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়। আল্লাহ জানে আমার বোকা বোনটাকে নিয়ে না জানি কোথায় কোথায় ঘুরছে। কত রকমের বিপদ উৎ পেতে আছে চারপাশে। ”
খোঁচাটা অনন্যা স্বভাবশতই সহ্য করতে পারলো না। একরকম জেদ চেঁপে গেলো যেভাবেই হোক দুই বিচ্ছুকে ঠিক খুঁজে বের করবেই। তখনি মনে পড়ে যায় তানভীরের পুলক নামের এক বন্ধু ছিলো। অন্য এক ভার্সিটিতে পড়তো তবুও কিভাবে যেন বন্ধুত্ব হয়। তবে খুবই ক্লোজড়। তানভীর যেখানে যে প্রয়োজনেই ডাকতো চোখ বন্ধ করে সেখানে উপস্থিত হতো। সেই হিসেবে বেশ কয়েকবার আলাপ ও হয়েছিলো। আচ্ছা তানভীর সেই ছেলের বাসায় যায়নিতো! পরক্ষণেই মনে পড়ে পুলকতো হলে থাকে। তাহলে! তবুও অনন্যা দুশ্চিন্তাটা এড়াতে পারলোনা। এখন সেই পুলক নামের ছেলের ফোন নম্বর দরকার। অবশ্যই নিলয়ের কাছে আছে। অনন্যা ফোন বের করে নিলয়ের নম্বর ডায়াল করে।
পাশ থেকে অঙ্কন চেঁচিয়ে উঠে, ” আপনাকে আর কাউকে ফোন করতে হবে না। বেশ করেছেন সারাদিনে আমার অনেক উপকার করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। এবার মায়ের মেয়ে মায়ের কোলে ফিরে গিয়ে আমাকে উদ্ধার করেন।”
এত কষ্ট আর অপমানেও অনন্যার মুখে হাসির রেখা দেখা গেলো। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো। নিলয় জানায় পুলকের নম্বর সুইচড অফ তবে তার শফিক নামের এক রুমমেটের নম্বর চাইলে দিতে পারে। অনন্যা শফিকের নম্বর নিয়ে তাকে পুলকের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে,সে জানায় পুলক কাল রাতে হুট করেই কিছু না বলে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তারপর থেকে ফোনটাও সুইচড অফ। অনন্যা দুই এ দুই এ চার মেলায়। তার অনুমান ভুল না হলে তানভীর এখন পুলকের সাথেই আছে। তবে পুলকের বাড়ির ঠিকানা শুনেতো অনন্যার চক্ষু চড়কগাছ। এত দূর। এখন মধুপুরে যাওয়া কি আদৌ সম্ভব! হারামজাদাটা যাওয়ার আর জায়গা পেলো না। কিন্তু এতদূরে পৌছে যদি ওদের না পায় তবে তো মিঃ হিরো একদম তাকে কাঁচায় খেয়ে ফেলবে। আচ্ছা অনন্যা কি এখন এই সম্ভাব্য ঠিকানার কথা বলবে নাকি বলবেনা?
হ্যাঁ অনন্যা বলবে। যাই হয়ে যাক নিজের ঘাড়ের দোষ যে করেই হোক নামাবে নামাবেই!
” আমার মনে হয় ওরা মধুপুরে আছে। ”
অঙ্কন শ্রাগ করে বললো, ” তা এইটা কি জিনে এসে বলে গেলো। ফাজলামো করেন আমার সাথে? ফাজলামো! আসল কথা হলো আমার পাশে বসে বাকি রাতটুকুও কাটানোর ধান্দা তাই না! তারপর কোনভাবে নিউজ হয়ে গেলে আমার গলায় ঝুলে পড়তে সুবিধে হবে তাইতো।”
” হ্যাঁ আপনি যা ভেবেছেন একদম ঠিক ভেবেছেন। আপনার পাশে বসাতো এই জেনারেশনের প্রায় সব মেয়েরই স্বপ্ন তাহলে আমি সুযোগ পেয়েও খামোকা কেন হাতছাড়া করতে যাবো! আমি এখন মধুপুরে যাবো সাথে আপনিও। কথা ক্লিয়ার আর কোন কথা হবেনা।”
” আপনি কি আমাকে অর্ডার করছেন?”
” আদেশ ভাবলে আদেশ অনুরোধ ভাবলে অনুরোধ! ”
” আপনি কি আমার বিয়ে করা বউ যে আপনার আদেশ অনুরোধ দুইটাই আমাকে রাখতে হবে।”
অনন্যা কথার পিঠে কথা বলতে প্রায়শই খেই হারিয়ে ফেলে। এটা তার জন্মগত অভ্যাস। অতিমাত্রায় উত্তেজনায় ভুলভাল কিছু বলে দেওয়াও খুব একটা অসম্ভব নয়। তাই দ্রতই বলে দিলো,
” হ্যাঁ আমি আপনার বিয়ে করা বউ।” কথাটা বলেই জিভে কামড় দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
অঙ্কন ও কেমন শান্ত বনে গেলো। মুখ হা করে তাকিয়ে থাকলো বোজা চোখের প্রানবন্ত উচ্ছ্বল কিশোরীর মুখ পানে। কেবলই মনে হলো এমন মুগ্ধতার আবেশ কখনো কোনদিনও তো মন ছুয়ে দেয়নি। সমস্ত ইন্দ্রিয় জুড়ে এক অজানা অপরিচিত অনুভূতি খেলে যাচ্ছে। এর ঠিক কি নাম দেয়া যায়? অঙ্কন সেদিক হতে মনটাকে টেনে হিঁচড়ে বর্তমানে ধাবিত করলো। গাড়ি ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,
” বেশতো আপনি স্বীকার করে নিলেন। এবার আমি আমার স্বামীত্ব ফলাতে আসলে নিশ্চয়ই বাধাঁ দিবেন না।”
অনন্যা চমকে উঠে উৎসুক একজোড়া চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকায়। চার চোখের মিলনকে
বোধ হয় শুভদৃষ্টি বলে। কিন্তু এখানে কারো সেদিকে হুশ নেই। হয়তো অন্যরকম কিছু হতে যাচ্ছে, যা তাদের ভাবনারো অতীত।
চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/