চন্দ্রকণার রাহা পর্ব-০৩

0
87

#চন্দ্রকণার_রাহা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৩

নিত্তিকা ব্যস্তভঙ্গিতে বলল,
“তাহলে চলো যাই।”

নিত্তিকা আর সায়রা দুইজন মিলে একসঙ্গে রুম ছেড়ে রান্নাঘরের দিকে গেল।

শাহানা বেগম নাস্তা বানাচ্ছিলেন। নিত্তিকাকে আসতে দেখে মুচকি হেসে বললেন,
“শুভ সকাল”

নিত্তিকাও হাসিমুখে বলল,
“শুভ সকাল আন্টি, আমি কি আপনাকে কোনো সাহায্য করবো!”

শাহানা বেগম কপালে ভাঁজ ফেলে বললেন,
“আমি তোমার কি হই?”

নিত্তিকা শাহানা বেগমের কথা বুঝতে পেরে মাথা চুলকিয়ে বলল,
“সরি আম্মু।”

শাহানা বেগম আড়চোখে একবার তাকিয়ে বললেন,
“আচ্ছা ঠিক আছে এরপর যেন আর ভুল না হয় বলে দিলাম। এখন চা করেছি সেটা তোমার আব্বুকে দিয়ে আসো তো।”

নিত্তিকা পাশ থেকে চায়ের কাপ নিতে যাবে তখনি শাহিয়ানের চাচি মাফুজা বলে উঠলো,
“ভাবি তোমার প্রশংসা না করে পারছিনা। এমন ভাব করছো মনে হয় বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে।”

নিত্তিকার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তুমিও বাবা কি মানুষ! ছেলেটার বিয়ে হয়নি একদিন হবে তাও ধরে রাখতে পারলে না।”

নিত্তিকা কিছু বলার জন্য এগোবে তখনি পুরুষালি গমগমে আওয়াজ ভেসে এলো,
“মানুষকে তখনি ধরে রাখা যায় না চাচি। আর জন্ম মৃত্যু বিয়ে সবটাই আল্লাহ ঠিক করে রাখেন। তাই সবটা যে যত তাড়াতাড়ি মেনে নিতে পারবে ততোই তার কাছে ভালো।”

নিত্তিকা কপাল কুচকে তাকাতেই দেখলো প্যান্টের পকেটে হাত রেখে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কথাটা বলছে শাহিয়ান। মাফুজা বেগম প্রতিউত্তরে বলে উঠলেন,
“একরাতেই পোলা দেখি বউ পাগলা হয়ে গেছে!”

শাহিয়ান একই ভঙ্গিতেই বলল,
“এখানে বউ পাগলার কিছু হয়নি। সত্যি কথা যা তাই বলেছি। তাছাড়া এতটুকু কথা বললে যদি বউ পাগলা হয় তাহলে তোমার মেয়ের জামাই কি?”

মাফুজা বেগম চিল্লিয়ে বললেন,
“শাহিয়ার তুমি কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলছো।”

শাহানা বেগম এবার ওদের থামানোর জন্য বলে উঠলেন,
“আহা ছোট থাম তো তোরা সকাল সকাল কী শুরু করলি। আর শাহি তুই এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলি যে।”

শাহিয়ান মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কিছু কাজ ছিলো, ওটা করে বাকিটা আমার ম্যানেজারকে বুঝিয়ে এসেছি।”

শাহানা বেগম বললেন,
“ওও ভালোই করেছিস। যা ফ্রেশ হয়ে আয়। আমরা তো নাস্তা করে ফেলেছি তুই, নিত্তিকা আর সায়রা বাকি আছে। তোদের নাস্তা আমি দিচ্ছি যা।”

শাহিয়ান চলে গেল। নিত্তিকাও গেল সায়রার সাথে হামিদুল সাহেবকে চা দিতে। সায়রা যেতে বলল,
“আপি তুমি কি চাচির কথায় মন খারাপ করেছো?”

নিত্তিকা হাসি মুখ নিয়ে বলল,
“আরে না কী মনে করবো।”

সায়রা হেসে বলল,
“তবে আর যাই বলো ভাইয়া কি সুন্দর করে চাচিকে কুপোকাত করে দিলো। একদম যেন সিনেমা চলছিলো। নায়িকার অপমানের জবাব নিলো নায়ক।”

সায়রার কথা শুনে হেসে ফেলল নিত্তিকা। সায়রাও হাসলো।

——————-

রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে শাহিয়ান খাবার টেবিলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে দেখলো সায়রা আর নিত্তিকা এখনো আসেনি। শাহিয়ান চেয়ার টেনে বসে পরলো। খাবারের প্লেট টেনে খেতে লাগলো। খানিকবাদেই সায়রার সাথে নিত্তিকা খাবার টেবিলের কাছে এলো। ঘড়িতে প্রায় দশটা ছুঁইছুঁই। নিত্তিকা খাবার টেবিলে বসতেই শাহিয়ান নিত্তিকার দিকে না তাকিয়েই বলল,
“কখন উঠেছো?”

নিত্তিকা কপালেভাঁজ ফেলে বলল,
“কেন শুনে কি করবেন?”

শাহিয়ান ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“সোজা কথা বলতে পারোনা।”

নিত্তিকা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“না পারিনি। আর আপনার মতো মানুষের সাথে আরো পারিনা।”

শাহিয়ান এবার চোখ তুলে নিত্তিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার মতো মানুষ মানে!”

নিত্তিকা উত্তর দিলো না। শাহিয়ান তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়েই রইলো নিত্তিকার দিকে।

সায়রা গলা খাকারি দিয়ে বলল,
“ভাইয়া ভাবির দিকে পরে তাকিয়ে থাকিস। এখন খা তো তাড়াতাড়ি। একটু পরে তো রেডি হওয়া লাগবে।”

শাহিয়ান বাম হাত দিয়ে সায়রার মাথার পিছনে গাট্টা দিয়ে বলল,
“বেশি কথা না বলে তোর মতো তুই খা। এত বকবক করতে বলেনি কেউ।”

সায়রা মাথা ঘষতে ঘষতে বলল,
“মাথায় মারিস কেন? জানিস না মাথায় মগজ থাকে। লেগে গেলে কি হবে!”

শাহিয়ান স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলে উঠলো,
“কিছুই হবে না। ফাউ কথা বাদ দে।”

সায়রা মুখ বাঁকিয়ে খেতে লাগলো।

শাহিয়ান নিজের খাওয়া শেষ করে নিত্তিকার দিকে তাকিয়ে বলল,
“রুমে আসো কথা আছে।”

বলেই গটগট পায়ে চলে গেল নিজের রুমের দিকে। নিত্তিকা শাহিয়ান যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজ মনেই বিড়বিড়িয়ে বলল,
“এ্যাহ রুমে আসো কথা আছে। যেন শশুরবাড়ির আবদার। যাবো না আমি। আমিও দেখবো ব্যাটা তুই কি করিস। বদ ব্যাটা মনে করছে আমি সব ভুলে গেছি। রাতে টুক করে কেমন চুমু খেল। নিজের সম্পত্তি পেয়েছে নাকি আমাকে। যে নিজের যা ইচ্ছে তাই করবে। আমাকে তো চিনে না।”

নিত্তিকা বিড়বিড় করতে করতেই খাবার শেষ করে সায়রার সাথে সায়রার রুমে গেল। সায়রার রুমের সাথেই লাগানো একখানা বারান্দা আছে। যেখান দিয়ে শো শো করে বাতাস আসছে রুমে। নিত্তিকা তার ঘন কালো চুলগুলো খুলে দিলো। সারাদিনে গোসল করার সুযোগ হবেনা ভেবে গোসল করেছিলো কিন্তু ঘোমটা দিয়ে ঢেকে রাখায় চুলের অনেকটা অংশই ভেঁজা।

সায়রা নিত্তিকার চুল দেখে মুচকি হেসে বলল,
“আপি তোমার চুলগুলো তো অনেক সুন্দর।”

নিত্তিকাও হাসি মুখে বলল,
“ধন্যবাদ, তা তোমার চুল ও তো সুন্দর। বড় রাখোনা কেন?”

সায়রা নিত্তিকার পাশে বসে ফুস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আর বলো না চুল না শুকালেই আমার ঠান্ডা লেগে যায়। তাই আম্মু বলেছে রাখতে হবে না।”

নিত্তিকা সায়রার ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
“থাক মন খারাপ করো না।”

তখনি গমগমে গলায় শাহিয়ান বলে উঠলো,
“তোমাকে আমি আমার রুমে আসতে বলেছিলাম। তুমি এখানে কি করছো?”

নিত্তিকা পিছনে ঘুরে তাকালো না। বিড়বিড় করে বলল,
“যাইনি যখন তখন বুঝে নে আমি যাবোনা। এখানে আবার বলতে আসা লাগবে কেন, আজব তো!”

সায়রা শাহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভাইয়া,আপি তো এখন রেডি হবে। আজকে যে বউভাতে অনুষ্ঠান আছে তুমি কি ভুলে গেছ?”

শাহিয়ান সায়রার কথায় পাত্তা না দিয়ে গটগট পায়ে নিত্তিকার সামনে এসে দাঁড়িয়ে সায়রাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“রুম থেকে যা তো কিছুক্ষণের জন্য। দাদি এসেছে দেখা কর গিয়ে।”

সায়রা বড় করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আসল কথা বললেই হয়। আমি দরজা পিছন থেকে লাগিয়ে যাচ্ছি।”

বলেই সায়রা চলে গেল। সায়রা দরজা আটকাতেই শাহিয়ান একটানে নিত্তিকার হাত ধরে ওকে দাঁড় করলো। নিত্তিকা ভরকালেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
“কি টানাটানি করছেন? আপনার তো দেখি চরিত্রের সমস্যা আছে মাইয়া মানুষের হাত ধরে টানাটানি করেন।”

শাহিয়ান বাম হাত দিয়ে নিত্তিকার কোমর ধরে নিজের কাছে এনে ডান হাতের তর্জনী নিত্তিকার ঠোঁট ঠেকিয়ে বলল,
“চুপ, এই মেয়ে এতো কথা কেন বলো তুমি? তুমি যখন চরিত্র নিয়ে টানলেই। তাহলে আর ভালো সেজে কি করবো বলো তো বউ।”

শাহিয়ানের স্পর্শে নিত্তিকার শরীর কাঁপছে রীতিমতো। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
“দেখুন আমাকে এভাবে ধরবেন না। ছাড়ুন আমাকে।”

শাহিয়ান আরো শক্ত করে ধরে বলল,
“যদি না ছাড়ি।”

নিত্তিকা মনে মনে বলল,
“ব্যাটার পেটে পেটে এতো। এবার আমি ব্যাটারে উচিত শিক্ষা দিবো দাঁড়া তুই।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে