গল্প খোলা চিঠি পর্ ০৩

0
1081

গল্প খোলা চিঠি পর্ ০৩

——– ??আসাদ নামাজ পড়ে এসে দেখে নীলিমা খাটের এক পাশে হেলান দিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পরেছে,
সারা রাতভর তারা নানান ধরনের দুষ্টুমি খুনসুটি করেই কাটিয়ে দেয় কারন নীলিমা মেয়েটাই একটু মজার!
আসাদের খুব ভালো লাগে নিলীমার বাচ্চা টাইপ কথা গুলো,,,

আসাদ নীলিমাকে ঘুমের ঘোরেই ঠিক করে শুইয়ে দেয় এবং সে ও পাশে শুয়ে পরে,
আসাদের একমাত্র ছোট ভাই আজাদ ছাড়া তেমন কেউ থাকেনা তার সাথে তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে নতুন বউয়ের কিছু ফরম্যালিটি থাকে তার জন্য নীলিমাকে কিছুই করতে হয়না,,,

দুদিন পর থেকেই আসাদ তার নিয়মিত কাজ গুলো করতে থাকে,
সারাদিন বিজনেস এর কাজ দিন শেষে ঘরে ফিরে ছোট ভাই আর নীলিমার সাথে টাইম স্পেনট করা এসব ছিলো নিত্যদিনের রুটিন,
এমন করেই কাটতে থাকে আসাদ আর নীলিমার সাংসারিক জীবন,

নিজের ছোটবেলা আর হাস্যকর কিছু ঘটনার মধ্যদিয়ে কাটে তাদের প্রায় রাত!
আসাদ ভাবে নীলিমার হয়তো সময়ের দরকার
নীলিমা এখন ও মেবি ফিজিক্যাল রিলেশন এর জন্য প্রিপেয়ার না তাই প্রতি রাতেই তারা কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে যেতো,

একদিন রাত তিনটায়—-
আসাদ ফিল করলো নীলিমার হাত তার শরীরে,
আসাদ ভাবলো হয়তো ঘুমের ঘোরে,
কিন্তু না,,,
নীলিমার চাওয়া ছিলো অন্য কিছু,
আসাদ বুঝতে পারলো তার ডিমান্ড,
আসাদ ও নিজের সবটা দিয়ে নীলিমাকে খুশি চেষ্টা করে,,

আসাদ সেইদিন বুঝতে পারে সে একজন নারীকে শারীরিক ভাবে খুশি করতে অক্ষম,
আসাদ নিজেই অবাক হয়ে যায়,
এটা কেমন করে সম্ভব?
আসাদ নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে—
“”এটা কেমন করে সম্ভব?
এমনতো হবার কথা ছিলো না!
তাহলে এখন কেন এমনটা হচ্ছে?

এর পর থেকেই প্রতিরাতে আসাদের ব্যর্থ প্রচেষ্টা আর হতাশার দিন শুরু!
নিজের চোখে নিজে ছোট হয়ে যায় আসাদ!
সাথে নীলিমার কাছেও!
কি করবে বুঝতে পারেনা!
একটা সময় দুজনই বুঝতে সক্ষম হয় হয়তো আর কিছু পসিবল না,

হঠাৎ আসাদের মনে হয় তার এক বন্ধু ডাক্তার!
তার সাথে এই বিষয়ে আলাপ করা যেতে পারে,
যেমন ভাবা তেমন কাজ!
আসাদ ফোন করে নীলিমাকে বলে তার আজকে আসতে একটু দেরি হবে,

আসাদ সব খুলে বলে তার ডাক্তার বন্ধুকে,
সে আসাদকে কয়টা টেষ্ট দেয়,
কিন্তু টেষ্টের রিপোর্ট সব নরমাল!
সে আসাদকে বলে-
শোন দোস্ত সব নরমাল তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে শুধু একটু সময় আর ধৈর্যের প্রয়োজন,

আসাদঃ এমনটা কেনো হল দোস্ত?
বন্ধুঃ শোন এটা ডিপ্রেশন বা মানুষিক চাপ থেকে হয়েছে,
অনেক পুরুষের এমনটা হয়,
মেন্টালি প্রিপেয়ার না থাকলে যা হয় আরকি!
যাক তুই ভাবির কাছে একটু সময় নে,,
তাকে বুঝিয়ে বল সব!

একটা বিষয় মনে রাখবি!
এ সময় তোদের দুজকেই দুজনের বুঝতে হবে!
তুই ভাবীকে সময় দে,
আসাদঃ যেমন!
–যেমন তাকে নিয়ে ঘুরতে যা,
সিনেমা দেখতে যা,
সপিং এ যা,
ছুটির দিনে ফুচকা খেতে অফার কর,
এতে তুই ও টাইম পেলি ভাবি ও বোরিং হবেনা,,,

আসাদঃ ওকে দোস্ত ঠিক আছে আমি তাই করব,
বাসায় এসে নীলিমার সাথে আসাদ সব শেয়ার করে,
তবুও আসাদ একটি অপশন রাখে যে,
তারপর ও যদি আপনার প্রবলেম হয় আপনি চলে যেতে পারেন,
নীলিমা আসাদের কথায় কিছু বলেনা,,,

তাদের দাম্পত্য জীবন স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকে,
কেউ তেমন কিছু বুঝতে পারেনা,
—-নীলিমা ও স্বাভাবিক আচরণ করে আসাদের সাথে,
আসাদ ভাবে নীলিমা হয়তো বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে!!!
আসাদ মনে মনে অনেক খুশি থাকে এই ভেবে যে,
নীলিমা সম্পর্কটা ভেঙ্গে যেতে দেয়নি!
নীলিমাকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে সে মোটেও ভুল করেনি,,,

★এমন ভাবেই চলতে থাকে দিনকাল,
আসাদ টাইম মতো কাজে যায় আসে,
আসাদ এমন কোনো কিছু নাই যা নীলিমার পায়ের কাছে হাজির করে না দেয়,
চাইবার আগেই আসাদ নীলিমাকে সব কিছু এনে দেয়,
কিন্তু দুধের স্বাদ কি ঘোলে মিটে?
না মিটেনা,
নীলিমার ও মিটেনি,

★একদিন বিকেলে আসাদ জরুরী একটা কাজে বাসায় আসে নীলিমাকে কিছু না জানিয়েই!
ভাবে বউকে সারপ্রাইজ দিবে অসময়ে এসে,
কিন্তু আসাদ একবার ও সেদিন ভাবে নি সে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যাবে!

★অনেক সময় ধরে কলিং বেল বাজতে থাকে কিন্তু নীলিমা দরজা খোলেনা,
আসাদ ভাবে হয়তো ঘুমাচ্ছে নীলিমা,
ফোনে কল দেয় তবুও সাড়াশব্দ নাই,
আসাদ একটু চিন্তায় পরে যায়,
কি করবে দরজা ভাঙ্গবে,ওর কিছু হলো না তো?
মাথা ঘুরে পরে গেলো না তো?
এমন সব ভাবছে,
হঠাৎ হাপাতে হাপাতে দরজা খুলে দাড়ালো নীলিমা,

★আসাদঃ কি হয়েছে তোমার?
শরীর খারাপ এই বলে কপালে হাত দিতেই দেখে নীলিমার সারা শরীর ঘামে ভিজা,
একি তুমি এভাবে ঘামছো কেনো?
নীলিমাঃ কিছু না তুমি এসময়?
হুম একটা জরুরী কাজে আসতে হলো,
আসো ঘরে চলো,

ঘরে যেতেই দেখে বিছানা এলোমেলো,
আজাদ ঘর থেকে বের হয়ে এলো,
আসাদ বলল —
“”কিরে তুই এখন এই সময় বাসায়!
অফিসে যাসনি?
হুম! মানে না যাইনি শরীর ভালো লাগছিলো না!
আসাদঃ ওমা কেনো সকালে তো বললি না খারাপ লাগছে! আর তুই এভাবে ঘামাচ্ছিস কেনো?

–এমনিতে ভাইয়া,
আমি যাই তোমরা কথা বলো,
এই বলে আজাদ তড়িঘড়ি করে নিজের রুমে চলে যায়,
আসাদ সেদিন কিছু বুঝতে পারলো না,
কারন যা কিছু ঘটছে তা ছিলো আসাদের ধারনার বাইরে,

এরপর কেটে যায় আরো কিছু দিন!
আসাদ নিজেকে প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য প্রস্তুত করতে থাকে আর প্রিয়তমা স্ত্রী নিজের স্বামীর অগোচরে নিজের সর্বস্ব দেবরের কাছে সমর্পণ করে দিনের পর দিন স্বামীকে ঠকিয়ে যাচ্ছে,,,

–একদিন রাতে হঠাৎ আসাদ খেয়াল করে নীলিমা তার পাশে নেই,
সে ভাবে বাথরুমে হয়তো কিন্তু অনেক সময় পার হয়ে যাবার পরও দেখে নীলিমা নেই,
আসাদ খাট থেকে উঠে সারা ঘর দেখে,
ডাইনিং এ যায় আসাদ,

হঠাৎ আজাদের রুম থেকে শব্দ শোনে সে,
একটু এগিয়ে যায় আর যা দেখে তা আসাদ সেইদিনই মরে যেতে চাইলো,
আসাদ ঘরে এসে চুপচাপ শুয়ে থাকে,
নীলিমা কিছুক্ষণ পর এসে তার পাশে শুয়ে পরে,
নিজের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা হয় আসাদের,

★আসাদের দুচোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে,
তবে সে কিছুতেই নীলিমাকে দেষ দিতে রাজি ছিলোনা,
কারন সে ও মানুষ,
তারও জৈবিক চাহিদা আছে,
তবে এমন করে প্রতারণা করার দরকার ছিলো কি?
আমি তো তাকে আমার কাছ থেকে চলে যাবার অনুমতি দিয়েছি অনেক আগেই,
তবে কেনো এই প্রতারণা?
আমিতো তাকে আমাকে ছেড়ে নতুন করে বাচার অপশন দিয়েছিলাম!
তাহলে কেনো আমার সাথে এতো বড় প্রতারণা!!”

এমন করেই চলতে থাকে কিছু সময়,
আসাদ সময় ও পরিস্থিতির কাছে অসহায়,
সে যানে তার প্রাণের চাইতে ও প্রিয় তার স্ত্রী তারই ছোট ভাইয়ের সাথে অবৈধ কাজে লিপ্ত কিন্তু তবুও সে নিরব থাকে,
আসাদ জানে তার এই নিরবতা কোনো সমাধান না,
কিন্তু কি করবে?
একদিকে প্রিয়তমা স্ত্রী আরেক দিকে একমাত্র ছোট ভাই!!

বড্ড বেশি ভালোবাসে যে নীলিমা কে,
কিন্তু এমন করে কি বেচে থাকা যায়?
একটু সময় চেয়েছিলো নীলিমার কাছে আসাদ,
নীলিমা আসাদকে একটা সুযোগ দিলোনা,
তার পিছনে ছুরি মেরে দিলো,,,
রক্ত বিহীন আঘাতে যেন আসাদের সারা শরীর নীল হয়ে যায়,,,

(চলবে)

লেখা : মুসকান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে