গল্পঃ “heart touch love 3” পর্ব:- ০৭

0
1722

গল্পঃ “heart touch love 3”

পর্ব:- ০৭

০৭ই জুলাই ২০১৫,
ভার্সিটি ক্যাম্পাসের একটি গাছের নিচে একা বসে আছে পিয়াল।হঠাতই পিয়ালের বান্ধবী মিষ্টির আগমন।
মিষ্টি :- কিরে এখানে এভাবে দেবদাসের মতো বসে আছিস কেনো?
পিয়াল- এইতো এমনিই বসে আছি।
– এমনি? কারন তো কিছু একটা আছে। সবাই ওখানে আড্ডা দিচ্ছে আর তুই এখানে একা বসে আছিস।
– ভাল্লাগছে না তাই বসে আছি। আমাকে একটু একা থাকতে দিবি? প্লিজ!
– না থাকতে দিবো না। আচ্ছা রুমির কি খবর রে?
– রুমির?
– হ্যা!
– ভালো নেই রে!
– রুমির জন্য আমাদেরও খারাপ লাগে। চাঞ্চল্যতায় ভরা ছেলেটা হঠাতই নিরব হয়ে গেলো।
– হুম।
– আমি তোর মনের অবস্থাটা বুঝতেছি। আমাদের বন্ধু তাই আমাদেরই খারাপ লাগছে ওর জন্য। আর তোরা দুইজন তো ভাই-ভাই। ভাইও হয়তো এতো আপন হয় না।
– হুম। (দীর্ঘশ্বাস)
– দেখা করেছিলি রুমির সাথে?
– হুম,গত কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম।
– কেমন দেখে এলি?
– ভালো নারে! কেমন যেনো হয়ে গেছে।
– কেমন হয়ে গেছে?
– আমাকে যেনো চিনেই না,হাতে একটা ডায়রী নিয়ে সারাক্ষণ ছাদে বসে থাকে। আর…..!আর কি যেনো ভাবে। কিছু জিজ্ঞাসা করলে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু কোনো উত্তর দেয় না।
– কিছু বলিস নি?
– বলেছিলাম তো অনেক কিছু। অনেক বুঝালাম সেইদিন, কিন্তু আমার কথার কিঞ্চিত পরিমানও সারা দেয় নি। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।
একটা ছেলে এসে মিষ্টির পিছনে দাঁড়ায়।
মিষ্টি – তোদের তো পরিচয় করিয়েই দেই নি। এই ছেলেটি আমার বয়ফ্রেন্ড। ওর নাম সিফাত।
পিয়াল – হাই! আমি পিয়াল! (হাত মিলিয়ে)
সিফাত – হাই! আমি সিফাত!
মিষ্টি- আচ্ছা আমি আজকে আসি তাইলে! নিজের খেয়াল রাখিস। কেমন?
পিয়াল – আচ্ছা ঠিক আছে। বায়
মিষ্টি ও সিফাত কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পিয়াল ফোনটা বের করে সময়টা দেখে নিলো। দুপুর বারোটা বাজে, বাসায় যাওয়া উচিৎ এখন। পিয়াল কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে একটা বাসে উঠে পরে।
বিকাল ৫টা,
পিয়াল বাসার ছাদে বসে সিগারেট ফুগছে আর আশেপাশের পরিবেশ দেখছে। হাল্কা বাতাসের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছিলো কিছুক্ষণ পর-পরই। এই অবস্থায় পিয়ালের ভালোই লাগছিলো পরিবেশটা।হঠাতই ফোনটা বেজে ওঠে। মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে ফোনটা বের করে। রুমি কল দিয়েছে। পিয়াল তৎক্ষণাৎ কলটা রিসিভ করে। –
পিয়াল – হ্যালো রুমি!!!
ওপাশ থেকে – হ্যালো পিয়াল। আমি রুমির মা বলছিলাম।
– আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা।
– আন্টি রুমি কোথায়?
– রুমি ওর রুমেই আছে কিন্তু..!!
– কিন্তু কি আন্টি?
– রুমির কি যেনো হয়েছে, অকারণই চেঁচামেচি করছে, নিজে নিজে বকবক করছে, আবার মাঝে মাঝে শুধুশুধুই কান্না জুড়ে দিচ্ছে।
– আন্টি আমি এখনই আপনাদের বাসায় আসছি।
– হ্যা বাবা! তাড়াতাড়ি আসো।
পিয়াল ফোনটা কেটে দিয়ে দ্রুত চলে যায় রুমির বাসায়।
পিয়াল – রুমি কোথায় আন্টি?
রুমির মা – ওর রুমে,ওর বাবা ওরে আটকে রেখেছে।
– আটকে রেখেছেন? মানে?
– হাতের কাছে যা কিছুই পাচ্ছে সব কিছুই ভাঙচুর করছে,চেঁচামেচি করছে তাই।হঠাৎ করেই আমার ছেলেটার কি যে হলো আল্লাহ্ই জানেন। (কান্না করতে করতে)
– ডাক্তারকে ফোন দেন নি?
– হ্যা দিয়েছি, কিছুক্ষনের মধ্যেই এসে যাবে বললো।
– আন্টি আমি একটু রুমির সাথে কথা বলতে চাই।
– কিন্তু….
– কোনো কিন্তু না আন্টি, আপনি ওর রুমের দরজাটা খুলেন একটু।
– আচ্ছা খুলে দিচ্ছি।
রুমির মা রুমির রুমের দরজাটা খুলে দিলেন।পিয়াল, রুমির রুমে ঢুকলো। রুমটা খুবই নোংরা হয়ে আছে। রুমের মধ্যকার কোনো জিনিসই ঠিক জায়গায় নেই।কিন্তু রুম থেকে একটা মিষ্টি সুগন্ধির ঘ্রান আসছে।ঘ্রানটা খুবই পরিচিত ঘ্রান।ডায়রীটা নিচে পরে আছে। রুমি বিছানার উপরে বসে আছে। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নিচে পরে থাকা ডায়রীটার দিকে। পিয়াল আস্তে আস্তে রুমির পাশে গিয়ে বসলো। নিচে পরে থাকা ডায়রীটার দিকে তাকালো, তামান্নার সেই ডায়রীটা। সাদা ডায়রীটায় এখনো তামান্নার রক্তের ছাপ আছে।
পিয়াল – রুমি।
রুমি পিয়ালের মুখের দিকে তাকালো।
রুমি – পিয়াল তুই? (কান্না করে জড়িয়ে ধরে পিয়ালকে)
পিয়াল – কি হয়েছে তোর? বল আমায়। (রুমিকে জড়িয়ে ধরে)
রুমি – তামান্না, টিয়া।
পিয়াল – হ্যা! তামান্না, টিয়া। কি হয়েছে?
রুমি – অই দেখ! ওদের লাশ ওখানে! আমার খুব ভয় করছে।
– কোথায় রুমি? (চমকিত হয়ে)
– অই দেখ! ( নিচে পরে থাকা ডায়রীটার দিকে ইঙ্গিত করে দেখায়)
– রুমি ওটা একটা ডায়রী।
– না না, ডায়রীর পাশেই ওদের লাশ। দেখ!
– না দোস্ত এখানে নেই। ওদের অনেকদিন আগেই কবর দিয়ে দেয়া হয়েছে, ওদের লাশ এখানে আসবে কিভাবে?
– এখানেই আছে। ওদের লাশ আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পারে না। ওরা আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না। আমার খুব ভয় করে আমাকে এখান থেকে নিয়ে চল প্লিজ।
– রুমি, এটা তোর দেখার ভূল। কিচ্ছুই নেই এখানে। তুই দেখ!
– আমি দেখেছি, এখনো পরে আছে তামান্নার রক্তমাখা লাশটা। ওরা আমাকে….
কিছু একটা বলতে যাবে এক মধ্যেই একজন ডাক্তারের আগমন রুমির রুমে,সাথে রুমির বাবাও আছেন।
রুমির বাবা – পিয়াল ডাক্তারকে একটু দেখতে দাও।
পিয়াল – জ্বি আংকেল!
পিয়াল রুমির পাশ থেকে উঠে রুমির বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। ডাক্তার রুমিকে খুব ভালো করে দেখে। এরপর ব্যাগ থেকে একটা ইনজেকশন বের করে রুমির হাতে পুষ করে। পিয়াল জানে এটা হয়তো ঘুমানোর জন্য। বিছানায় রুমিকে শুয়িয়ে দেয়া হলো,প্রথমে শুতে চাইছিলো না। একপ্রকার জোড় করেই শুয়িয়ে দেয়া হয়। ডাক্তার ব্যাগ থেকে বের করা একটা নোট-প্যাডের খালি পৃষ্ঠায় কিছু লেখা শুরু করেন। হয়তো প্রেসক্রিপশন লিখছেন।
ডাক্তার – রুমিকে আপাতত একটু একা থাকতে দিন। মানসিক চাপ দিবেন না, আর ঠিকমত ঔষধ খাওয়াবেন। এরপর যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আমাকে ডেকে নিবেন।
রুমির বাবা – আচ্ছা ঠিক আছে। ( ডাক্তারের দেয়া প্রেসক্রিপশনটা হাত বাড়িয়ে নিলেন)
রুমির বাবা ডাক্তারকে বিদায় দিলেন। পিয়াল রুমির রুমের আলো নিভিয়ে দিয়ে দরজাটা আটকে দিলো।
পিয়াল- আচ্ছা আংকেল আমি আজকে আসি তাহলে।
রুমির বাবা – হ্যা বাবা, আবার এসো।
রুমির বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসার দিকে পা বাড়ায় পিয়াল
১২ই জুলাই ২০১৫,
রাত নয়টা, পিয়াল বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ভার্সিটির অধ্যাপক মতিন সাহেবের সাথে কথা বলছে।
মতিন সাহেব – হ্যা! সবই তো শুনলাম। রুমির যা অবস্থা তাতে ওকে ভালো কোনো মানুষিক বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।
পিয়াল – জ্বি স্যার। রুমির বাবাও তাই বলেছিলেন।
– আসলে! মানুষ যখন অতিরিক্ত মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত হয় তখন এমনটা হয়। রুমির ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছে। একসাথে দুজন কাছের মানুষের এভাবে চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারে নি।
– জ্বি স্যার!
– যার একবার মানসিক বিপর্যয় ঘটে তখন সেই-ই বোঝে কষ্টের গভীরতা কত। আমার এক বন্ধুর কথা তোমাকে বলি।
– জ্বি স্যার বলুন।
– মুক্তিযুদ্ধকালে তো অনেক বাংলাদেশী মানুষ,মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হয়েছিলেন।
– জ্বি স্যার!
– আচ্ছা বলো তো! আমাদের দেশ কত সালে স্বাধীন হয়েছিলো?
– ১৯৭১ সালে স্যার।
– গুড! আমরা মুক্তিযুদ্ধকালে তোমাদের মতই ছিলাম। তখন আমার বিয়ে-টিয়ে হয় নি।যাই হোক, আমি এখন আমার এক বন্ধুর কাহিনী তোমাকে শুনাবো। বন্ধুটির নাম ছিলো আব্দুল্লাহ। পুরো নামটা মনে নেই, অনেক আগের ঘটনা তো! আমি বিয়ে করি নি তো কি হয়েছে? আমার সেই বন্ধুটি তখন নতুন বিয়ে করেছিলো। বিয়ে করার কিছুদিন পরেই শুরু হলো গণ্ডগোল(মুক্তিযুদ্ধ)। যুদ্ধ শুরু হবার সাথে সাথেই যুদ্ধের খবর বাতাসের আগে সবার কানে পৌঁছে যায়। সবাই নিজের জান বাঁচাতে এদিকওদিক ছোটা-ছুটি করা শুরু করে দেয়। আমার বন্ধু আব্দুল্লাহ আর ওর পরিবারও নিজেদের জীবন বাঁচাতে গ্রাম ত্যাগ করলো।তখন তো আবার অনেকেই পালিয়ে ভারত চলে গিয়েছিলো। আব্দুল্লাহ ওর পরিবারকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্যই গ্রাম ত্যাগ করেছিলো। কিন্তু মাঝ পথে এসে আব্দুল্লাহ এবং ওর পরিবারসহ আরো কয়েকশ মানুষ পাক-বাহিনীর হাতে ধরা পরে। আব্দুল্লাহ কোনো রকমে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছিলো কিন্তু তাঁর পরিবার পারে নি। সেখানেই মেরে ফেলা হয় তাদেরকে। আব্দুল্লাহ পরিবারের শোকে একপর্যায়ে পাগল হয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে গ্রামে বেশ কয়েকদিন ঘুরতে দেখা গেছিলো। কিন্তু এরপর আব্দুল্লাহকে আর পাওয়া যায় নি। অনেক খুজেছিলাম আমি এবং ওর কয়েকজন প্রতিবেশীরা। ফল একই দাঁড়ালো। সারাজীবনের জন্য নিখোঁজ হয়ে যায় সে (দীর্ঘশ্বাস)। হয়তো এখনো সেই পুরনো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে, নয়তো সে এই পৃথিবীতেই আর নেই। আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
– (পিয়াল নিশ্চুপ)
– এর জন্যই বলেছিলাম আপনজন বিয়োগে এতোটাই কষ্ট পেতে হয়, যে কষ্টের ভাগ যায় না কাউকে দেয়া আবার নিজের মধ্যেও রাখা যায় না।
পিয়াল মাথা নিচু করে থাকে।
– আচ্ছা পিয়াল। আজকে আমি আসি তাহলে। কালকে ভার্সিটিতে আসলে দেখা হবে।
-আচ্ছা স্যার।
মতিন সাহেব মুচকি একটা হাসি দিয়ে পিয়ালের সামনে থেকে চলে গেলেন। পিয়াল আকাশের দিকে তাকালো।মনে হচ্ছে আকাশের অর্ধেক চাঁদটা উঁকি মেরে পিয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে। পিয়াল বাসায় ঢোকার জন্য পা বাড়ালো।
রাত তিনটা, পিয়াল বিছানায় শুয়ে আছে। চোখ দুটো প্রচণ্ড পোড়াচ্ছে। একটু ঘুমিয়ে নেয়া উচিৎ।
পরেরদিন সকাল নয়টা,
পিয়াল ফ্রেস হয়ে বাথরুম থেকে বের হলো। ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্যে জামা-প্যান্ট পরে নেয়। যদিও ভার্সিটি যেতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু নিজেকে ব্যস্ত রাখার এটাই সব থেকে বড় পদ্ধতি। সকালের নাস্তা করে বেরিয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
পিয়াল বাসে বসে আছে হঠাতই ফোন বেজে উঠলো।পিয়ালের বন্ধু অপু কল দিয়েছে।
অপু- হ্যালো! পিয়াল।
পিয়াল- হ্যা বল!
– কোথায় তুই?
– আমি বাসে, ভার্সিটি যাচ্ছি।
– তুই এখনই ঢাকা মেডিকেলে চলে আয়।
– কেনো?
– অতো কিছু বলতে পারবো না, তুই এখনই আয়।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
ফোন কেটে দিয়ে বাস থেকে নামে পিয়াল। হঠাতই পিয়ালের ভিতরে একটা আতংক কাজ করা শুরু করলো। যাই হোক,অপু যেখানে যেতে বললো সেখানে না গিয়ে আসল ব্যাপারটা বোঝা বোঝা যাবে না।পিয়াল ঢাকা মেডিকেল যাওয়ার জন্য অন্য একটি বাসে উঠে পরলো।
দুপুর একটা,
পিয়াল ঢাকা মেডিকেলের সামনে দাঁড়িয়ে অপু কে কল দিলো –
পিয়াল – দোস্ত আমি মেডিকেলের সামনে দাঁড়ানো।
অপু – তুই মেডিকেলের পাঁচ নাম্বার ফ্লোরে ওঠ। এরপর বাম দিকের মর্গের সামনে আয়।
– আচ্ছা।
মর্গের কথা শুনেই পিয়ালের ভিতরটা দ্বিতীয় বারের মতো কেঁপে ওঠে। লিফট দিয়ে পাঁচ নাম্বার ফ্লোরে উঠে, বাম দিকে হাটা শুরু করে। পা চলছে না, সামনে হয়তো খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে পিয়ালের জন্য। তবুও কিছু একটা প্রবল আকর্ষণে সামনে এগোচ্ছে পিয়াল। একটা রুমের সামনে অপু দাঁড়ানো দেখা যাচ্ছে।আশেপাশে আরো অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। অপু,পিয়ালকে দেখে দ্রুত হেটে এসে পিয়ালের সামনে এসে দাঁড়ালো।
পিয়াল – কি হয়েছে রে?
অপু – নিজেই দেখে নে। (কান্না কন্ঠে)
অপু পিয়ালকে নিয়ে রুমটার মধ্যে ঢোকে। রুমের মাঝখানেই একটা সাদা কাপড়ে ঢাকা লাশ। পিয়ালকে লাশটার সামনে দাঁড় করিয়ে মুখের উপরের কাপড়টা তুলে দেয় অপু। পিয়ালের মাথা বেয়ে প্রচন্ড ঘাম ঝরছে,চোখ দুটো যেনো বাহিরে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। পা কাঁপছে, নিজেকে ধরে রাখার মত শক্তি পাচ্ছে না পিয়াল। সামনের সব কিছুই ঝাপসা লাগছে। একটু পরেই সব অন্ধকার।
পিয়াল চোখ খুললো।মনে হয় সে শুয়ে আছে। কিন্তু কোথায়? উপরে খোলা আকাশ দেখা যাচ্ছে। উঠে বসে পিয়াল। মনে হচ্ছে কোনো একটা বাড়ির ছাদে। দূরে ছাদের কর্নারে একজন বালক দাঁড়িয়ে আছে। পিয়াল উঠে বসে, ছাদটা অতি পরিচিত লাগছে তার কাছে। এই ছাদে সে অনেক বার এসেছে।
পিয়াল:- হ্যা! এটা তো রুমিদের বাসার ছাদ!
পিয়াল দূরে ছাদের কর্নারে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকায়। একটা নীল পাঞ্জাবী পরা।
পিয়াল- এটা তো রুমি! ও ওখানে কি করছে? আর আমি এখানে এলামি বা কি করে?
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রুমি ছাদের রেলিংএর উপরে উঠে দাড়ালো। পিয়াল দৌড়ে রুমির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু চেষ্টা ব্যর্থ, পিয়ালের পা একটা কিছুর সাথে বাধা রয়েছে। পিয়াল পায়ের দিকে তাকালো। হঠাৎ করেই পা বেধে ফেললো কে? আর এই দড়িই আসলো কোথা থেকে? পিয়ালের মনে নানান রকমের প্রশ্ন জেগে উঠলো। যার উত্তর খুঁজতে গেলেই নতুন করে আরেকটা প্রশ্নের উদয়ন ঘটছে। পিয়াল জোরে চিৎকার করে রুমিকে ডাকলো। কিন্তু পিয়ালের মুখ কোনো প্রকার শব্দই বের হচ্ছিলো না। হঠাৎ করেই রুমি রেলিং থেকে ঝাপ দিলো। পিয়াল শুধু দাঁড়িয়ে দেখছে। সব কিছুই স্বপ্নময় মনে হচ্ছে। কিছুক্ষন পরেই নিচে একটা বিকট আওয়াজ হলো।
১৩ই জুলাই সকাল ৭টা,
পিয়াল বিছানায় শোয়া থেকে লাফিয়ে উঠে বসলো। ভিতর থেকে শ্বাস টেনে তুলতে পারছে না পিয়াল। মনে হচ্ছে কেউ এক মুহূর্তের জন্য ফুসফুসটার মুখ চেপে ধরেছিলো। নাক-মুখ বেয়ে প্রচন্ড ঘাম ঝরছে। খুব পানি খেতে ইচ্ছে করছে। পানির খোজে এদিক ওদিক তাকালো পিয়াল। কাছের একটা টেবিলে পানির পাত্র রাখা, পিয়াল বিদ্যুৎ গতিতে পাত্রটা হাতে নিয়ে এক শ্বাসে পানি খাওয়া শুরু করে। এখন একটু ভালো লাগছে পিয়ালের। পানির পাত্রটা আগের জায়গায় রেখে দেয় পিয়াল। পিয়াল একটা রুমের মধ্যের খাটে বসে আছে।রুমটা পিয়ালেরই। কিন্তু পিয়াল এখানে আসলো কিভাবে। তাহলে কি! রুমির ব্যাপারে যা দেখেছিলো তা সব স্বপ্ন? এইসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা খোঁজে। কিন্তু ফোনটা রুমে নেই। ফোনের খোঁজে সামনের রুমের দিকে পা বাড়ায় পিয়াল। রুমের দরজাটা আলগাভাবে লাগানো ছিলো, তাই হাতল ধরে টান দিতেই খুলে যায়। সামনের রুমে পিয়ালের মা এবং ডক্টর বসে আছেন। পিয়ালকে দেখে দুজনেই পিয়ালের মুখের দিকে তাকান। পিয়ালের খোঁজাখুঁজি দেখে ওর মা জিজ্ঞাসা করলো-
পিয়ালের মা – কি খুজতেছো বাবা?
পিয়াল – আমার মোবাইলটা।
ডাক্তার – এই নাও তোমার মোবাইল। (হাত বাড়িয়ে উপরের দিকে তুলে ধরেন)
পিয়াল ডাক্তারের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে রুমির নাম্বার খুজতে থাকে।
ডাক্তার :- পিয়াল এখানে বসো। (একটা খালি চেয়ার দেখিয়ে)
পিয়াল ডাক্তারের মুখের দিকে তাকায়, কিন্তু কিচ্ছু বলে না। আবারো চোখ যায় মোবাইলের স্ক্রিনের উপর।ডাক্তার এবার নিজেই উঠে পিয়ালকে ধরে বসায় চেয়ারে। কিন্তু পিয়ালের চোখ ফোনের কন্ট্রাক্ট-লিষ্টে।কিন্তু, রুমির নাম্বারটা খুঁজে পাচ্ছে না পিয়াল।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে