গল্পঃ “heart touch love 3” পর্ব- ০১

0
2540

গল্পঃ “heart touch love 3”

পর্ব- ০১

আজ পিয়ালের বিয়ে, সবাই খুশী হলেও পিয়াল হতে পারে নি। তবুও মুখে মিথ্যা হাসি নিয়ে তিনবার কবুল বলেছে।অনেক বন্ধুরাই উপস্থিত সেখানে, তাদের জন্য আলাদা বাজেট রাখার কথা ছিলো পিয়ালের,যেমনটা বলা চেয়েছিলো মিলা। কিন্তু বাজেট রাখা সত্যেও তার বন্ধুরা উপভোগ করতে পারে নি ব্যাপারটা।পিয়ালের পরিবারের কেউ কেউ মিলাকে নিয়ে ব্যস্ত, আবার কেউ অন্যান্য কাজে মন দিয়েছে। মিলা,মিলা পিয়ালের কিছুক্ষন আগে বিবাহ করা স্ত্রী।চারদিকে একটা বিয়ে বিয়ে ভাব।আসলেই কি পিয়াল বিয়ে করেছে? সবার মুখেই হাসি,কিন্তু তা কি আদৌ সুখের হাসি? পিয়াল একটা ঘোরের মধ্যে আছে,কিছুটা নেশা করার পরে যা হয়।সবার কথা-বার্তা শুনছে, দেখছে কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। পিয়ালের বন্ধু রাসেদ এসে ওর কানে কানে বলে গেলো – দোস্ত, মন খারাপ করে থাকিস না, মিলাকে কিছু বুঝতে দিস না।
কথাটা শুনে পিয়াল রাসেদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। রাসেদ মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। হঠাতই মিলার কন্ঠে পিয়াল নিজেকে নিজের মধ্যে আবিস্কার করলো। মিলা সবার সাথে কতো হাসি খুশী কথা বলছে। হয়তো আর কিছুক্ষন পরে এই হাসিটাকেই সবাই সব থেকে বেশি মিস করবে।
তারিখটা ছিলো ১৫ই জুন ২০১৫,
পিয়াল ভার্সিটির সামনে ওর বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে,নতুন ছাত্রীদের দেখে পছন্দ করে তাদেরকে প্রেম নিবেদনের আশায়।পিয়াল এবং ওর বন্ধুদের বড়-ভাই হিসেবে এটা ওদের কর্তব্য (ওরা মনে করে)।পিয়াল ভার্সিটির মধ্যকার মেয়েদের কাছে সব থেকে ঘৃণিত ব্যক্তি।আর ছেলেদের কাছে রোমিও।তার জুলিয়েট কোনটা বা কে? তা বুঝে ওঠা কঠিন। সকালে এক জুলিয়েটের সাথে,বিকালে আরেক জুলিয়েটের সাথে।
যাই-হোক,ভার্সিটির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে পিয়াল আর ওর বন্ধুরা নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে ইয়ার্কি -ফাইজলামি করছিলো।হঠাৎ করেই শাড়ী পরা একটা মেয়ের আগমন ভার্সিটির সামনে।মেয়েটাকে আগে কখনই দেখে নি পিয়াল।ওর ভার্সিটি লাইফে কাউকে শাড়ী পরে আসতে দেখে নি, তাও আবার প্রথম দিনে। হ্যা পিয়ালের চোখ ওখানেই আটকে যায়। শুধু পিয়াল না, তার সহচরদেরও।ওদের সামনে থেকে একটা লাল পরী চলে গেলো। বাংলা সিনেমা একদম।
পিয়াল ক্লাসে চলে যায়।পিয়ালের ভাবনা চিন্তা এখনো অই মেয়ের প্রতি যায় নি যদিও। তার ভাবনাটা একটু দেখে নেয়া যাক। পিয়ালের ভাবনাটা একটু অন্য টাইপের, সে চিন্তা করছিলো তার অন্য গার্লফ্রেন্ডদেরকেও শাড়ী পরালেও অই একই রকম লাগবে। পিয়ালের মনে এতোটুকুও জায়গা করে নিতে পারে নি মেয়েটি যদিও। যখন দেখছিলো শুধু অই সময়টুকুই।
ক্লাস শেষে পিয়াল আর ওর বন্ধু রুমি ক্যাম্পাসে হাটছে। রুমি তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা বলছে।রুমিও কিছুটা পিয়ালের মতই। সে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ করতেছে।হয়তো রুমিকে ছাড়তে চাচ্ছে না ওর প্রেমিকা। যদিও পিয়ালের সাথে এমন কোনো ঘটনাই ঘটে নি। ব্রেকাপের কথা বলার পর হয় আরেকটা সুযোগ চেয়েছে, নয়তো তারাও ব্রেকাপ বলে ব্রেকাপ করে দিয়েছে।রুমী বেশ কিছুক্ষন আজেবাজে ভাষায় কথা বললো ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে। পিয়াল ওর সাথে হাটছে আর শুনছে।
প্রায় একঘন্টা পর রুমী ফোনটা কান থেকে নামালো।
রুমি- উফফ, কি জ্বালা এই মাইয়া তো এক্কেবারেই নাছোড়বান্দা। অনেক কষ্টে ছাড়াইলাম।
পিয়াল – অনেক ভালোবাসে মনে হয় তোরে।
-আরেহ ধুরো,বাদ দে তো। তা বাবা তুমি হঠাৎ ভালোবাসা নিয়া পরলা ক্যান? বাংলা নাটক কি বেশি দেখো?
-আরেহনা না, এমনিই বললাম। মজা করলাম আর কি।
-দেখ আবার কল দিতেছে, খারা ব্লাকলিষ্টে হান্দাইয়া লই।
-হুম, হান্দা।
-শেষ, চল একখান বিড়ি খাইয়া মাথাডা ঠান্ডা করি।
-চল।
পিয়াল রুমির সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।হঠাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো পিয়ালের ফোনে। পিয়াল রিসিভ করলো-
ফোনের ওপাশ থেকে- হ্যালো! (নাড়ী কন্ঠ)
পিয়াল- জ্বি! বলুন।
-পিয়াল ভাইয়া বলছেন?
-হ্যা বলছি। আপনি কে?
-আমি…আমি….।
-হ্যা বলুন।
-একটা কাজ করতে পারবেন?
-কি কাজ?
– আপনি বিকালে একটু রমনায় আসতে পারবেন?
-পারবো, কিন্তু আপনি কে বলছেন?
-সেটা আসলেই দেখতে পারবেন।প্লিজ ভাইয়া, মাত্র ১০ মিনিটের জন্য হলেও আসতে হবে।আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
-হ্যা বুঝলাম, কিন্তু আপনি কে? আমি তো আর আপনাকে চিনি না। অচেনা কেউ একজন বললেই তো আর আশা যায় না। তাই না? আর হ্যা! এই আজাইরা সময় নষ্ট করার কোনো ইচ্ছাই আমার নাই।রাখলাম।
পিয়াল ফোনটা কেটে দিয়ে মনে মনে আবল তাবল গালি দিতে থাকে।কিন্তু কিছুক্ষন পরেই আবার ফোনটা বেজে ওঠে। আগের অচেনা নাম্বার। পিয়াল এবার ফোনটা কেটে দেয়। রিক্সা পিয়ালের বাসার সামনে এসে পরেছে।ভাড়াটা মিটিয়ে পিয়াল বাসায় চলে যায়।
পিয়াল গোসল সেরে,দুপুরের খাবারটা খেয়ে নিলো। একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে, নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা আটকে দিলো। ঝুলানো প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকটটা বের করে,বারান্দায় চলে যায়।বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসে পরে।
ফোনে পিয়ালের বন্ধু আদনানের কল-
আদনান – হোয়াটস আপ? ডুড।
পিয়াল- এইতো, তোর?
-এইতো বস!
-তারপর কি রকম চলছে সব?
-চলে কোনো রকম আর কি! আজকে ভার্সিটিতে আসিস নাই ক্যান?
-আর বলিস না, কাজিনের বান্ধবির বিয়েতে গেছিলাম।
-কাজিনের বান্ধবির বিয়েতে কেনো? দাওয়াত তো তোর কাজিনের পাওয়ার কথা।তুই পেলি কোথা দিয়া?
-আরে বোকা**! কাজিনের বান্ধবির একটা বোন আছে। সে আমাকে ইনভাইট করছে।
-যাক তোর কাজিনের বান্ধবির মা তরে ইনভাইট করে নাই।
-মানে?
-ও কিছু না, আচ্ছা তুই কি কাউকে আমার নাম্বার দিছিলি?
-কই না তো! ক্যান বল তো?
-না এমনি। আমাকে একটা নাম্বার থেকে কল দিয়ে দেখা করতে বলে। কিন্তু পরিচয় দিতেছে না।
-তোমার তো ভাই প্রেমীকার অভাব নাই। দেখো মাঝ রাস্তায় যাদের ছেড়ে দিছো তাদের কেউ হয়তো।
-তুই থামবি?
-আচ্ছা থামলাম।
-আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। ঘুমাবো, কিছু বলার থাকলে বল।
-নাহ কিছুই বলার নাই। ঘুমা যাহ।
-আচ্ছা, বায়।
ফোনটা কেটে দিয়ে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরায় পিয়াল।দুই টান দেয়ার পর আর ভাল্লাগছে না। খুব ঘুম পাচ্ছে। সিগারেটটা ফেলে দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে বারান্দা থেকে রুমে গিয়ে বিছানার উপরে শরীরটাকে এলিয়ে দেয়।ফোনটা হাতে নিয়ে সময়টা দেখে নেয়। ৩টা বাজে, ঘুম থেকে ৫টায় উঠে আড্ডা মারতে চলে যাবে। এই ভাবতে ভাবতে ফোনের স্ক্রিন অফ করে।কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমের দেশে পা বাড়ায় পিয়াল।
ঘুমিয়ে পরতে না পরতেই ফোনে কল আসে। হাতরে হাতরে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নেয়। কলটা রিসিভ করে কানের উপরে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে-
পিয়াল-হ্যালো!
ফোনের ওপাশ থেকে – হ্যালো, পিয়াল ভাইয়া।
-হুম।পিয়াল বলছি। আপনি কে?
-অই যে দুপুরবেলা কল দিয়েছিলাম।
-আপনি কে বলবেন একটু? (উঠে বসে পিয়াল)
-আমাকে চিনবেন না, আপনি একটু রমনায় আসতে পারবেন?
-কেনো? আপনার নাম কি?
-আমাকে চিনবেন না বললাম তো! প্লিজ একটু সময়ের জন্য আসুন।
-আচ্ছা আমার নাম্বার আপনাকে কে দিছে?
-সব বলবো, কে দিছে, আমি কে, আমি আপনাকে কেনো ডেকেছি। সব, সব বলবো, কিন্তু প্লিজ একটু সময়ের জন্য রমনায় আসুন।
-আচ্ছা আমি দেখতেছি, আসতে পারলে জানাবো। এখন রাখি।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।
-আচ্ছা, আচ্ছা।
ফোনটা কেটে দিয়ে আবার শুয়ে পরে, হঠাৎ আবার ফোন বেজে ওঠে।স্ক্রিনে জেরিন নামটা জ্বলে ওঠে।জেরিন, জেরিন পিয়ালের গার্লফ্রেন্ড। কয় নাম্বার তা পিয়াল নিজেও জানে না হয়তো।
জেরিন – হ্যালো বাবুউউ!
পিয়াল- হ্যা! বলো।
-কি করো গো?
-ঘুমাচ্ছিলাম।
-আমাকে তো একটুও সময় দাও না। এখন ভার্সিটিতেও আমাকে ইগনোর করো। কি হইছে তোমার?
-কিছু না, একটু ঘুমাইতে দিবা? ঘুম থেকে উঠে ফোন দিচ্ছি।
-তুমি দিবা না আমি জানি। তুমি কেমন যেনো হয়ে গেছো।
-মাফ চাই! দিবো কল বললাম তো।এখন দয়া করে একটু ঘুমাইতে দাও।
-কতদিন দেখা করি না। একসাথে সময় কাটাই না। একটু দেখাও তো করতে আসতে পারো।
-সব করবো, এখন একটু ঘুমাই?
-তোমার খালি ঘুম -ঘুম। যখনই কল দেই তখনই ঘুমাও। তাই না?
-আরে বাপ! আমি সব সময় ঘুমাই না, বরং আমি যখন যখন ঘুমাই তখনই তুমি কল দাও।
-বুচ্ছি।
-আচ্ছা ঘুমাই এখন? বায়।
-শুনো না!
-আবার কি?
-আমার না একটা ড্রেস পছন্দ হইছে। অনেক কিউট একটা ড্রেস।
-আচ্ছা, খুব ভালো। ড্রেসটা কিনে পইরা পিক পাঠাইও।কেমন? রাখি এখন?
-তুমি মোটেও রোম্যান্টিক না। ভাবছিলাম তুমি আমাকে নিয়ে কিনতে যাবা।
-ধুরো, রাখি তো। বায়।
ফোনটা কেটে দেয় পিয়াল।সুইচ অফ করে আবারো শুয়ে পরে পিয়াল।ঘুমানোর জন্য কিছুক্ষন চেষ্টা চালায়। কিন্তু ঘুমটা যেনো নিমিষেই কেটে গেছে।মনে মনে জেরিনের গুষ্টি উদ্ধার করছে পিয়াল।ঘুম সম্পূর্ণ না হওয়ার ফলে খুবই খারাপ লাগতে থাকে পিয়ালের। বিছানা ত্যাগ করে ফ্রেস হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় পিয়াল।চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হয় পিয়াল। এখন একটু ভালো লাগছে তার। ফোনটা হাতে নিয়ে সুইচ অন করে সময়টা দেখে। ৩:৫৫ বাজে,পিয়াল তার বন্ধু রাফিকে কল দিতে কন্ট্রাক্ট লিষ্টে ঢুকতেই অচেনা নাম্বারটা সামনে এসে পরে। একটু কৌতূহল জাগে নাম্বার এবং নাম্বারের ওপাশে থাকার মানুষটার ব্যাপারে।নাম্বারটায় কল দেয় পিয়াল –
ফোনের ওপাশ থেকে -হ্যালো! পিয়াল ভাইয়া।
পিয়াল- হ্যা! কোথায় এবং কয়টায় দেখা করতে হবে?
-আপনি আসবেন?
-আমি মজা করছি বলে মনে হয়?
– না না!! কি যে বলেন। আচ্ছা আপনি রমনার সামনে আসুন আমি বলে দিচ্ছি কোথায় আসতে হবে।
– সময়টা?
-এখন তো প্রায় ৪টা বেজে গেছে। ৫টার ভিতরেই আসুন।
-৫টায় রমনা বন্ধ হয়ে যায়।
-ও হ্যা! তাও তো। আচ্ছা আপনি রমনার সামনে আসুন, আমি আপনার সাথে ওখানেই দেখা করবো। এরপর কোথায় যাওয়ার হলে যাবো।
-আচ্ছা রাখি।
পিয়াল কল কেটে শার্ট -প্যান্ট পরে নেয়। হাল্কা বডি স্প্রে দিয়ে বের হয়ে পরে রমনার উদ্দেশ্যে।বাসা থেকে রমনায় যেতে ৩০-৪৫ মিনিট সময় লাগবে তাই একটা রিক্সায় উঠে পরে পিয়াল।

চলবেই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে