গল্পঃ “heart touch love 2” ৪র্থ (শেষ পর্ব)

0
2685

গল্পঃ “heart touch love 2”

৪র্থ (শেষ পর্ব)

রাত প্রায় শেষ!! আবছা অন্ধকার
ফুরে হালকা আলো ফুটতে শুরু
করেছে চারদিকে।।
হঠাৎ কি যেন একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম
ভেঙে গেলো মিমের!! স্বপ্নটা খারাপ
না ভালো বুঝতে পারছে না সে!! মায়ের
কাছ
থেকে শুনেছে স্বপ্ন
দেখে নাকি ওটাকে খারাপ
বলতে নেই!!! কিন্তু ওর
কাছে মনে হচ্ছে তার
জীবনের সবচেয়ে খারাপ স্বপ্নটাই
হয়তো আজ
দেখেছে!! শেষ রাতের স্বপ্ন
নাকি সত্যি হয়!!!
তবে কি ওর এই স্বপ্নও….?? নাহ, আর
ভাবতে পারেনা মিম! ওর মাথা যেন
কাজ
করছেনা!!! স্বপ্নের সেই বিভৎস দৃশ্য
গুলো বার
বার ভাসছে চোখের সামনে!!
তারাতারি বিছানা ছেড়ে উঠে পাশের
রুমে যায়
ও!! ঢক ঢক করে পানি খায়!! তারপর
আবার
ফিরে আসে বিছানায়।। বিছানায় শুতেই
আবার
সেই দৃশ্য গুলো ভাসতে থাকে চোখের
সামনে!!
মিম খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারে আজ
আর
ঘুম আসবে না তার।।
বিছানা ছেরে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ
হয় ও।।
তারপর
আস্তে আস্তে সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠলো মিম।।!
যদিও সকালে ঘুম থেকে উঠেই
ছাদে উঠা ওর
নিত্যদিনের অভ্যাস, কিন্তু আজকের মত
এত
সকালে কোনদিনই ছাদে উঠেনি ও!!!
ছাদের উপর
ইটের তৈরী টুলে বসে এক মনে কুয়াশার
দিকে তাকিয়ে থাকে মিম!! খুব
ঠান্ডা লাগছে।। চাদরটা আনার দরকার
ছিলো।।
কিন্তু এখন আর
নীচে যেতে ইচ্ছে করছেনা!!!
ঠান্ডার
মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে বসে সকালের
প্রকৃতি দেখতে থাকে মিম!!! হঠাৎ
কারো পায়ের শব্দে চমকে উঠে ও!!!
পিছনে ফিরে দেখল সিহাব এসেছে!!!
এত
সকালে তো ওর আসার কথা না!! ও
তো ছাদেই
আসেনা!!! তাহলে কি সিহাবও খারাপ
স্বপ্ন
দেখল?? ভাবনায় ছেদ ঘটল সিহাবের
কথায়!!
– কিরে মিম?? এত সকালে ছাদে??
ঘুম
হয়নি??
– এই প্রশ্নটাতো আমার করা উচিৎ
ছিলো!!
আমিতো প্রতিদিন সকালেই ছাদে আসি!!!
– হ্যা আসিস, কিন্তু এত
সকালেতো আসিসনা!!!
– তুই কিভাবে জানিস যে আমি এত
সকালে আসিনা??
– মনের টান থাকলে সব জানা যায়!!!
কথাটা শুনে মুহুর্তের মধ্যেই স্বপ্নের
কথা ভুলে গেলো মিম!! এক অন্যেরকম
ভালো লাগায় ভরে ওঠে ওর মন-প্রান
সব!!
সিহাবের কথাটা শুনে চমকে উঠলেও
কিছুটা চমক
হয়তো বাকি ছিলো তখনও!!! ওকে অবাক
করে দিয়ে সিহাব বলল,
– এই নে চাদর!!
শীতে তো একেবারে বরফ
হয়ে যাচ্ছিস!!!
মিম কোন
কথা না বলে চাদরটা গায়ে জড়িয়ে নিলো।।
মিম এতটাই অবাক হয়েছে যে একরকম
বাকরুদ্ধই
হয়ে গেছে!! সিহাবকি তাহলে একবার
এসে দেখে গেছে তাকে??
কথাটা জিজ্ঞেস
করা দরকার সিহাবকে!!
– আচ্ছা সিহাব, আমি যে চাদর
ছাড়া এসেছি তুই
কিভাবে জানলি??
– ঐ যে বললাম না, মনের টান থাকলে সব
জানা যায়!!
– ফাজলামো করিস না।।
সত্যি করে বলনা??
– আরে আমি একটা চাদর
আনতে গিয়ে ভুলে দুইটা নিয়ে এসেছি!!!
এসে দেখি তুই চাদর ছাড়াই
বসে আছিস!! তাই
তোকে দিলাম!!
– ও!!
তারপর কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে থাকে।।
কিছুক্ষন
পর মিম বলে,
– আচ্ছা সিহাব, তুই কি সত্যি সত্যিই
টান অনুভব
করিস আমার জন্য??
– কেন?? তোর কি মনে হয়??
– আমার যাই মনে হোক!! তুই অনুভব করিস
নাকি সেটাই বল!!
– কেন তুই বুঝিস না??
– আমি যা বুঝি তা তো ভুলও হতে পারে!!
– না, পারেনা
– কেন পারেনা??
– কারন ভালোবাসা কখনো ভুল হয়না!!
সিহাবের এই কথাটা যেন মিমের
ভালো লাগার
পরমান আরো বহুগুনে বাড়িয়ে দিলো।।
নিজেকে সামলে নিয়ে মিম বলল,
– সত্যি ভালোবাসিস আমাকে??
– হুম, যেদিন
থেকে বুঝতে শিখেছি সেদিন
থেকেই তোকে শুধু আমার করে ভেবেছি।।
– তাহলে এতদিন বলিসনি কেন??
– বলার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু তুই
কি মনে করবি তাই ভেবে আর
বলা হয়ে ওঠেনি!!!
– তাহলে এখন কেন বললি??
– মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে!!
সত্যি কথা কখনো চাপা থাকেনা তাই!!
– আমিও খুব ভালোবাসি তোকে!!
– আমি জানি মিম
– কিভাবে জানিস??
– বললাম না মনের টান!!
– ও!! তাই তো!!
– জানিস,
তোকে অন্যকারো ভাবতে পারিনি কখনোই!!
সেদিন আসার সময় যখন বললি তোর
বিয়ের কথা,
তখনই ইচ্ছে করছিলো বলে দেই
তোকে ভালোবাসার কথা!!
– তাহলে বললি না কেন??
– ঐ যে, তোকে হারানোর ভয়
– হুম
তারপর আবার কিছুক্ষন নিস্তব্ধতা!!
হঠাৎ
মিম বলল,
– সিহাব
– হ্যা বল
– আরেকবার বলবি??
– কি?
– ভালোবাসি
– হুম, ভালোবাসি তোকে!!! পৃথিবীর অন্য
যেকোন
কিছুর থেকে বেশি!!! এমনকি নিজের
জীবনের
চেয়েও!!
– আমিও
– কি??
– ভালোবাসি তোকে।। তোর
বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে চাই
সারাটি জীবন!! পারবি সারাজীবন
আমার হাত
ধরে রাখতে??
– সে অপেক্ষাতেই তো ছিলাম পাগলী।।
– একবার হাতটা ধরবি??
সিহাব এসে মিমের হাতটা ধরল শক্ত
করে!!
তারপর বলল,
– ‘সারা জীবনেও ছাড়ব না এই হাত
– তাই যেন হয়!!
তারপর দুজনে পাশা-
পাশি দাড়িয়ে সূর্যোদয়
দেখতে থাকে!! দেখে কিভাবে রাতের
আধারকে রাঙিয়ে দেয় সকালের সূর্য!!
হ্যা, আজ
সিহাবকে তার জীবনের সূর্যই
মনে হচ্ছে মিমের
কাছে!!! ভাবতে ভাবতেই সিহাবের
হাতটা আরো শক্ত করে ধরে মিম।।
শক্ত
হয়ে যায় নিজের অজান্তেই!!! এ
ভালোবাসা যেন
কখনোই ছিন্ন হবেনা!!! এক মাত্র মৃত্যু
ছাড়া আর
কিছুই যেন
আলাদা করতে পারবেনা তাদেরকে!!!
.
সকাল ১০ বেজে ৪৮ মিনিট!!! হঠাৎ
একটা কল
এলো সিহাবের মোবাইলে!!
ওদের কলেজের এক ফ্রেন্ড কল করেছে!!!
কাল
নাকি কলেজে কি কাজ আছে, তাই আজই
ওদের
দুজনকে ঢাকায় ফিরতে বলেছে!!! অবশ্য

না বললেও ২/১ দিনের মধ্যেই
ফিরে যেত ওরা!!
কারন নিধির বিয়ের কাজ শেষ
হয়ে গেছে কালই।।
তাই আর ভালো লাগছেনা এখানে!!!
বাবা-মার
সাথে কথা বলে ঠিক করল ওরা দুজন আজ
দুপুরেই
রওনা দিবে ঢাকার উদ্দেশ্যে!!
.
দুপুরে লাঞ্চ করেই ঢাকার
উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল সিহাব আর
মিম।
প্রতিবার গ্রাম থেকে ফেরার সময় খুব
মন খারাপ
থাকে মিমের। কিন্তু এবার
তা হলোনা!! কারন
তার ভালোবাসার মানুষটি যে তার
সাথেই
আছে।। বাসার থেকে রওনা দিয়ে ভ্যান
যোগে “গোসের হাট” নামক
বাজারে পৌছাতে পৌছাতেই প্রায়
বিকেল
হয়ে এলো!! এখান থেকে মাওয়ার
উদ্দেশ্যে বাসে চড়তে হবে তাদের।।
তার
মানে ঢাকায় পৌছতে পৌছতে রাত
হয়ে যাবে তাদের!!! বাসে উঠে পাশা-
পাশি দুটো সীটে বসল দুজন!! কিছুক্ষন
পর বাস
চলতে শুরু করল।। দুজনেই নিরব!!
নিরবতা ভাঙল
মিম!!
– কিরে সিহাব?? কি ভাবছিস??
– ভাবছি একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস!!
– কি এমন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস??
বলতো শুনি!!
– আমরাতো একে অপরকে ভালোবা-
আমরাতো একে অপরকে ভালোবাসি তাইনা??
– হ্যা বাসিতো!!! তো??
– তাহলে দেখ, আমাদের কিন্তু
একে অপরকে তুমি করে বলা উচিৎ!!
– কেন?? তুই হচ্ছে কাছের মানুষের
ভাষা!!!
তাছাড়া ভালোবাসলেই
তুমি করে বলতে হবে এমন
কোন কথা আছে নাকি??
– হ্যা আছে!! তুমির
মধ্যে অনেকটা ভালোবাসা মাখানো থাকে!!!
তাই
তুমি করে বললে ভালোবাসা আরো গভীর
হয়!!
– তাই নাকি?? কিন্তু
একটা সমস্যা আছে!!!
– কি সমস্যা??
– আপনি থেকে তুমিতে যাওয়াটা সহজ,
কিন্তু তুই
থেকে তুমিতে যাওয়াটা খুব কঠিন!!
– হ্যা, তবে বলতে বলতে আবার ঠিক
হয়ে যাবে!!
– হুম
– তাহলে বল!!
– আগে তুই বল!!
– আমি?? আচ্ছা!!
সিহাব মুহুর্তের মধ্যে চেহারায়
একটা সিরিয়াস
ভাব নিয়ে এলো!! তারপর
আলতো করে মিমের
হাতটা ধরে বুকের
সাথে চেপে ধরে বলল,
– মিম, আমি তোমাকে নিজের জীবনের
চাইতেও বেশি ভালোবাসি!! এই
যে তোমার
হাতটা ধরেছি, সারাজীবন
এভাবে জড়িয়ে রাখব
তোমাকে।। পৃথিবীর কোন শক্তিই
আমাদের
আলাদা করতে পারবেনা!!!
বলেই একসাথে হেসে উঠল দুজন!! তারপর
থেকে মিমও তুমি করে বলার
প্রাকটিস শুরু
করল!!!
.
ফেরীতে পদ্মা পার
হতে হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত
হয়ে গেলো!!!
মাওয়া পৌছে থেমে থাকা অনেক
বাসের মধ্যে একটা বাসে গিয়ে উঠল
দুজন।।
কিছুক্ষন পর বাস চলতে শুরু করল।। বাস
ছাড়ার
কিছুক্ষন পরই মিম খেয়াল করল তার
কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে সিহাব!
সারা দিনের খাটা-
খাটনিতে হয়তো ক্লান্ত
হয়ে গিয়েছিলো, তাই বাসের মধ্যেই
ঘুমিয়ে পরেছে!!! বাসের
জানালা দিয়ে শীতের
বাতাস আসছে।।
মিম আস্তে করে সিহাবের
ওপাশে থাকা জানালাটা বন্ধ
করে দিলো।।আজ
কুয়াশা পড়েছে বেশ!! মাওয়ার
এখানে রাস্তা প্রায় খালি।। তাই বাসও
চলছে দ্রুত গতিতে!!! মিম একবার
সিহাবের
ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকালো।। তারপর
ওর
একটা হাত আলতো করে ধরে নিজের
কোলের উপর
রাখল।। প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ
করছে ওর
ভিতরে।। যা ভাষায় প্রকাশ
করা যাবেনা।।
যাবার কথাও না!!! কারন ভালোবাসার
মানুষকে কাছে পাবার আনন্দ কেবল সেই
দুটি মানুষই বুঝে, যারা তাদের
ভালোবাসার
মানুষকে নিজের করে পায়!!! হঠাৎ
বিকট আওয়াজ
করে বাসটা ঝাকি খেলো!!! কল্পনার
জগৎ
থেকে বাস্তবে ফিরে আসার আগেই জ্ঞান
হারালো মিম!!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চোখ
মেলে নিজেলে হাসপাতালে আবিষ্কার
করল মিম! পাশে বাবা,মা,
খালা,খালু সবাই
বসে আছে!! কিন্তু সিহাবকে কোথাও
দেখতে পেল না ও!! বাবাকে জিজ্ঞেস
করল,
– বাবা, সিহাব কোথায়??
-…… (বাবার চোখ
দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে)
– কথা বলছোনা কেন?? মা সিহাব
কোথায়??
হঠাৎ খালু(সিহাবের বাবা) চিৎকার
করে কাদঁতে কাদঁতে বলল,
-সিহাব আর নেই মা!!! সেদিন বাস
এক্সিডেন্ট
আমার সিহাবকে কেরে নিয়েছে!!!
মিমের বুক থেকে যেন হঠাৎ
কলজেটা খুলে বেরিয়ে আসে!!! চিৎকার
করে বলে,
– এসব কি বলছো খালু??? বাবা,
বাবা তুমি বলো এসব মিথ্যে….. প্লিজ
বাবা একবার বলো খালু যা বলছে সব
মিথ্যে….
প্লিজ বাবা
বলতে বলতেই আবার জ্ঞান
হারালো মিম!!!

(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে