গল্পঃঅটুট_বন্ধন(বালিকা বধূ)পর্বঃ৪

0
2597

গল্পঃঅটুট_বন্ধন(বালিকা বধূ)পর্বঃ৪
#লেখকঃShamil_Yasar_Ongkur

নীলা কথাটা শেষ করতে পারেনি তার আগে তার গালে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পর হাঁকিয়ে দিল মুসকান।

এমন জোরে থাপ্পড় মেরেছে যে পুরো ক্লাস কেঁপে উঠেছে।

ক্লাসে সবাই অবাক চোখে মুসকান দিকে তাকিয়ে আছে।মুসকানের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে….

তুই যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সেটা আমার ভাবতে লজ্জা করছে। এখন আমার মনে হচ্ছে তোর সাথে ফ্রেন্ডশিপ করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। তুই আমার কেন কারো ফ্রেন্ড হওয়ার যোগ্য নোস বলে মুসকান আরেকটা থাপ্পড় দিল নীলার গালে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


নীলার ফর্সা গালে পাঁচ আঙুলের রক্তের মতো লাল টকটকে দাগ উঠে গেছে।

নীলা কোন কথা বলতে পারছেনা গালে হাত দিয়ে ছল ছল চোখে মুসকানের দিকে তাকিয়ে আছে শুধু।

মুসকান ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল নেক্সট টাইম থেকে আমার সঙ্গে কথা বলার আগে কথাটা 100 বার ভেবে তারপর বলবি।

কাজটা তুই একদম ঠিক করলি না মুসকান। এর ফল মোটেই ভালো হবে না দেখে নিস।

মুসকান ক্লাস থেকে না ভিড়িয়ে নীলা দিকে এগিয়ে এসে আরেকটা চড় মেরে বলল এই তুই কি করবি আমার হুম কি করবি? হাজতে পাঠাবি আমাকে। তোর বাবা পুলিশের এসপি বলে কি নিজেকে কি মনে। তুই যা খুশি তাই করতে পারবি যা খুশি তাই বলতে পারবি।

একটা কথা শুনে রাখ তোর বাবা যদি পুলিশের এসপি হয় আমার বাবাও কিন্তু কম না। আমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার। সো আমার সাথে লাগতে আসবি না।

আবির সহ ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে মুসকানের কাজ কারবার দেখতেছে।

মুসকান এর মতো শান্তশিষ্ট মেয়ে যে এভাবে রেগে যেতে পারে কেউ কোনদিন কল্পনাও করেনি।

মুসকান ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই আবির বলল কই যাচ্ছ তুমি।

স্যার ফালতু মেয়ের সাথে বসে ক্লাস করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

কেন নীলা কি এমন করেছে যে তুমি সবার সামনে ওকে থাপ্পর মেরলে।

কি করেছে সেটা আমি আপনাকে বলতে পারব না। অমন কথা আমার মুখ দিয়ে বের হবে না। আমি তো চারটা থাপ্পর মেরেছে আপনি যদি কথাটা শুনতে তাহলে আপনি দশটা মারতেন।

তাহলে কি বলেছে সেটা বল

আমি বলতে পারব না

তাহলে সিটে গিয়ে চুপচাপ কান ধরে দাড়িয়ে থাকো।

কিন্তু ভা… মুসকান আর কিছু বলতে পারল না।

কোনো কিন্তু না যেটা বলেছি সেটা করো। ক্লাসে স্যার উপস্থিত থাকতে তুমি তার সামনে একজন ছাত্রীকে কখনোই মারতে পারো না। সে হতে পারে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড অথবা দুচোখে শত্রু। আমার সামনে তুমি কিভাবে ওকে থাপ্পর মারলে। দেখেছ ওর গাল কতটা লাল হয়ে গেছে তোমার আঙ্গুলের ছাপ ওর গালে উঠে গেছে। তোমার পরিবার থেকে কি তোমাকে এটাই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যে ভার্সিটিতে এসে মারামারি করবে

কিন্তু স্যার ও তো উল্টাপাল্টা কথা বলতেছিল।

উল্টাপাল্টা কথা বলবে আর তুমি ওকে সবার সামনে এমন ভাবে থাপ্পর মারবে।

নীলা যাও গিয়ে মুখে পানি দাও।

থাক আমার প্রতি আর আলগা পীরত দেখাতে হবে না। আপনি নিজের চরকায় তেল দিন। আর মুসকান তোকে তো আমি দেখে নিব বলে নীলা চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেল।

আবির মুসকানের সামনে বাইক নিয়ে প্রায় 15 মিনিট ধরে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু মুসকান আবিরের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না।

আবির: আরে বাবা আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে রাখবে আমার তো পা ব্যথা ধরে গেল।

মুসকান: তোমার সাথে কোন কথা নেই তুমি আজকে ক্লাসে সবার সামনে আমাকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। তাও আবার ওই ফালতু মেয়ের জন্য।

আবির: তখন স‍্যার হিসেবে আমার যেটা দায়িত্ব আমি সেটা পালন করেছি।

মুসকান: ওকে তাহলে এখন স‍্যার হিসবে একা একা বাসায় চলে যাও।

আবির: আচ্ছা বাবা সরি আর কখনো এমন করবো না। আমার লক্ষী বোন এবার তো বাইকে উঠ । চল আজকে তোকে ফুচকা খাওয়াবো।

মুস্কান খুশিতে লাফাতে লাফাতে বলল সত্যি।

হুম সত্যি

তাহলে আমার সাথে তোমাকেও খেতে হবে কিন্তু তা না হলে আমি তোমার সাথে যাব না।

তুই তো জানিস ওসব খেলে আমার পেটের সমস্যা হয়। যদি ডায়রিয়া হয় তাহলে ভার্সিটিতে ক্লাস নিব কিভাবে।

আমি অত কিছু জানিনা।

এরপর দুই ভাইবোন মিলে ধুমসে ফুচকা খায়। বাসায় যাওয়ার সময় আবির মুসকান কে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা নীলা তোকে কি বলেছিল ?

আমি ওসব নোংরা কথা বলতে পারবোনা।

এরপর আবির আর কোনো কথা বলেনি।

এদিকে নীলা আর আকাশ দুজন মিলে থাপ্পর এর প্রতিশোধ নেওয়ার ছক আঁকতে থাকে। তাদের পরিকল্পনা সম্পন্ন হলে দুজন হাসিতে ফেটে পড়ে।

নীলা যে গালে থাপ্পড় খেয়েছে সেখানে হাত দিয়ে বলে আমাকে থাপ্পড় মারা নীলা চৌধুরী কে থাপ্পড় মারা। মুসকান তুই নীলা চৌধুরী কে চিনিস না নীলা চৌধুরী নিজের স্বার্থের জন্য যে কতটা নিচে নামতে পারে সেটা তুই স্বপ্নেও কোনোদিন কল্পনা করিস নি। এতদিন বন্ধুত্ব দেখেছিস কাল দেখবি শত্রুতা।

আজ যা খুশি করে নে কাল তোকে আর ওই দুই টাকার স‍্যার কে বদনাম করে এই ভার্সিটি থেকে যদি তাড়িয়ে না দিয়েছি তাহলে আমার নাম নীলা চৌধুরী না।

পরের দিন মুসকান ক্লাসে ঢুকতেই সবাই কেমন নজরে তার দিকে তাকায়। এরপর মুসকান সিটে বসতে দেখতে পাই হোয়াইট বোর্ডে তার আর আবিরের কিছু আপত্তিকর ছবি টেপ দিয়ে আটকানো।

ক্লাসের সবাই তাকে আর আবির কে নিয়ে বাজে বাজে কথা বলতে থাকে।

যদিও সেদিন মুসকান দের সাথে আবিরের ক্লাস ছিল না। কিন্তু মাসকানের কাছে আবিরের কিছু দরকারী কাগজ থাকায় সেটা নেওয়ার জন্য সে ক্লাসে ঢুকে।

ক্লাসে ঢুকে আবির দেখে মুসকান কান্না করতেছে । আবির মুসকানের কাছে যেতেই মুসকান আবিরের বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়।

কি হয়েছে কাঁদছিস কেন মুসকান কিছু বলে না শুধু নখ দিয়ে হোয়াইট বোর্ডের দিকে দেখিয়ে দেয়।

আবির হোয়াইটবের্ড দিকে তাকিয়ে ছবিগুলো একবার দেখে করুণ চোখে নীলার দিকে তাকায়।

আবির চোখে চোখ পড়তেই নীলা চোখ নামিয়ে নেয়।

আবির পকেট থেকে ফোন বের করে নীলাদের ডিপার্টমেন্ট হেড শফিক স্যার কে ফোন করে 202 নম্বর কক্ষে আসতে বলে।

আবির মুস্কান কে শান্ত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু মুসকানের কান্না কিছুতেই যেন থামছে না। কান্না করতে করতে হিচকি উঠতে শুরু করেছে।

এদিকে ক্লাসের সবাই আবির আর মুস্কান কে নিয়ে কানাঘুষা করা শুরু করে দিয়েছে।

শফিক স্যার ক্লাসে ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে যায়।

শফিক: কি হয়েছে আবির হঠাৎ এত জরুরি তলব।

আবির বোর্ডের দিকে দেখিয়ে বলে দেখুন স্যার আপনার সোনার ছেলে মেয়েরা কি করেছে।

শফিক স্যার বোর্ডের কাছে গিয়ে ছবিগুলো দেখে একটানে সেগুলো ছিঁড়ে ফেলে এরপর চিৎকার করে বলে এগুলো কে করেছে।

সবাই নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

শফিক স্যার আবার বলে কি হলো কথা বলছো না কেন এখন কি বোবা হয়ে গেছো এগুলো কে করেছে । এই মুহূর্তে আমার জবাব চাই।

হুট করে আকাশ বলে স্যার যে করেছে ভালোই করেছে। স্যারের আসল চরিত্র তো সবার সামনে প্রকাশ করেছে। সবার সামনে কতইনা সাধু সেজে ঘুরে বেড়াতো। এমন ক্যারেক্টার লেস স্যারের সাথে আমাদের ক্লাস করা সম্ভব না। দরকার হলে আমরা আন্দোলন করবো তাও এস‍্যারকে আমাদের ভার্সিটি থেকে বের করে ছাড়বো কি বলো সবাই।

শফিক স্যার চিৎকার করে বলল সবাই বস শুধু তুমি দাঁড়িয়ে থাকো কি যেন নাম তোমার।

আকাশ বলল স্যার আকাশ

তুমি আবীরের ক্যারেক্টার সম্পর্কে কতটুকু জানো হুম। কতটুকু জানো তোমরা একজন শিক্ষককে সম্মান করতে জানেনা। একটা ছবি দেখেই বলে দাও যে স্যার ক্যারেক্টার লেস হুম। আরে এই ছবি তো খালি চোখেই বোঝা যাচ্ছে ফটোশপ করা ছবি। আর সেটা দেখে তোমরা শিক্ষককে বের করে দেওয়ার জন্য আন্দোলনে নামতে চাচ্ছ না। খুব নেতা হয়ে গেছো ।

এই তোমরা যে একটা ছবি দেখেই স্যার আর মুসকানের ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দিচ্ছ। তোমরা কি জানো মুসকান আর আবির স্যার এর কি সম্পর্ক। স্যার চিৎকার করে বললো কি হলো বলো তোমরা কেউ জানো।

পুরো ক্লাস নিশ্চুপ হয়ে গেল।

মুসকান আবিরের ছোটবোন।( শুধু আবিরের পরিবারের কিছু লোক জানেন যে মুসকান আবিরের খালাতো বোন তাছাড়া সবাই জানে মুসকান আবিরের নিজের বোন।)

কথাটা শুনে নীলা যেন আকাশ থেকে পড়ল।

ক্লাসের সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে স্যারের কথাটা শুনে। আমার গল্প সবার আগে পড়তে চাইলে গল্প গুলো আমাদের পেজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন

আচ্ছা এমন জঘন্য কাজ করতে তোমাদের কি একবারও বুকটা কাপে নি। তোমাদের ও দোষ দিয়ে লাভ নেই তোমাদের বাবা-মা তো তোমাদের শিক্ষা দিতে পারেন। যদি সঠিকভাবে শিক্ষা দিত তাহলে এমন জঘন্য কাজ তোমরা কখনোই করতে পারতানা। আমার তো ভাবতেই লজ্জা করছে যে এমন ছাত্র-ছাত্রীদের আমি পড়াই।

সবাই মাথা নিচু করে বসে রইল।

শফিক স্যার বলল তোমাদের মধ্যে যে যে এই জঘন্য কাজের সাথে জড়িত তারা প্রস্তুত থাকো টিসি খাওয়ার জন্য। যে ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষককে সম্মান করতে পারে না তাদের এই ভার্সিটি তে পড়ার কোন অধিকার নেই। যে ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষককে তাড়ানোর জন্য শিক্ষকের নামে মিথ্যা অপবাদ রটনা করে তাদের এই ভার্সিটিতে কোন জায়গা নেই।

আজি একটা তদন্ত কমিটি গঠিত হবে। কেউ তোমরা ছাড় পাবে না যে যে এর সাথে জড়িত ছিল সবাইকে আমি টিসি দিয়ে ছাড়বো বলে দিলাম।

আবির তুমি এখনি একটা লিখিত অভিযোগ জমা দাও । কোনো কোনো নেতা এর সাথে জড়িত তাই আমি দেখতে চাই।

স‍্যার আবার চিৎকার করে বলল এই ছেলে কি যেন বলছিলে তুমি। আন্দোলন করে আবিরকে এই ভার্সিটি থেকে বের করে দেবে। তোমাদের কি মনে হয় তাহলে আবিরের ভাত বন্ধ হয়ে যাবে সে না খেয়ে মরবে। তোমরা আবিরের ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানো।

সবাইকে চুপ থাকতে দেখে শফিক স্যার বলল আবির গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রি নাম তো শুনেছ। যারা যারা শুননি মোবাইল তো সাথে আছে একবার গুগলে সার্চ দিয়ে দেখে নেও। আর আকাশ আশা করি তোমার এসবের মধ্যে কোনো involvement নাই।আর যদি থাকে তাহলে হাজতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকো বলে শফিক স্যার ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়।

আবির ক্লাস থেকে বের হওয়ার আগে শুধু একটা কথা বলে তোমাদের যদি আমাকে পছন্দ নাই হতো তাহলে বলে দিতা আমি স্বইচ্ছায় রিজাইন দিয়ে ভার্সিটি থেকে চলে যেতাম। কিন্তু তোমরা যেটা করলে এতে খুব কষ্ট পেলাম।

জানিনা এর সাথে কে কে জড়িত আছে। তাদের শুধু একটা কথাই বলবো ওপরে কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আছেন তিনি কিন্তু সব দেখছেন। এই পৃথিবীতে সুষ্ঠু বিচার না হলে তার কাছে কিন্তু সুষ্ঠু বিচারি হবে। আল্লাহ কাছে কিন্তু কেউ রেহাই পাবে না।

চলবে…..

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে