গল্পঃঅটুট বন্ধন(বালিকা বধূ)পর্বঃ৬
#লেখকঃShamil_Yasar_Ongkur
শফিক স্যার আবিরকে তার কেবিনে ঢুকতে দেখে বলল। আবির ইনি সা… আর বলতে পারলেন না তার আগেই আবির বললো সাইফ চৌধুরি।
সাইফ চৌধুরি আবিরের মুখে তার নাম শুনে কিছুক্ষণ আবিরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এরপর বলল তুমি রায়হান ভাইয়ের ছেলে আবির না।
আবির মুচকি হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
সাঈদ চৌধুরীর মুখে ফুটে উঠল বিশ্বজয়ের হাসি। অনেকদিন পর যেন তিনি তার কলিজার টুকরা কে খুঁজে পেয়েছেন।
সাইফ চৌধুরী আবিরের দিকে হাত প্রসারিত করে বললেন। Come on my boy give me a hug fast….
আবির তড়িৎ গতিতে এগিয়ে গেল সাইফ চৌধুরীর কাছে । এরপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সাইফ চৌধুরিকে।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/
সাইফ চৌধুরিও কম যান না। আবিরের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি দিয়ে আবিরকে চেপে ধরে বলল আমার গুন্ডা ছেলেটা দেখি পুরাই হিরো হয়ে গেছে।
কি যে বলো না আঙ্কেল আবির বলল।
তা বিয়ে শাদী করেছ নাকি সাইফ চৌধুরী বললো।
আবির লজ্জা পেয়ে বলল না তোমাকে ছাড়া কি আমি বিয়ে করতে পারি নাকি।
সাইফ: সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল একবার তো দেখা করলে না। আমার কথায় তো ভুলেই গিয়েছিলে।
আবির: তুমি বুঝি দেখা করেছিলে।
শফিক স্যার তো অবাক হয়ে আবির আর সাঈদ চৌধুরী কথোপকথন শুনছে।
সাইফ: আমি তোমাকে হারকিন জড়িয়ে খুঁজেছি কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি।
আবির: রাখো তোমার ফালতু কথা এখন বল নীলা কেমন আছে ভালো মা কেমন আছে।
নিলা মানে তোমার বউ এর কথা বলছ।ওর কথা কি আর বলব ওর জন্যই তো আজ আমার এখানে আসা সাইফ চৌধুরি মজা করে বলল।
তখনই শফিক স্যার বলল আবির ইনি নীলার বাবা ।
কথাটা শুনে আবির চমকে উঠলো। সে তার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কিছুক্ষণের জন্য যেন তার পৃথিবী থমকে দাঁড়িয়ে গেছে।
নীরবতা ভেঙে সাইফ চৌধুরী বললো। আবির আমি স্যারের কাছে সব শুনলাম। জানিনা নীলা এই কাজ কেন করেছে কিন্তু ও এই কাজটা মোটেও ভাল করেনি।
আসলে তোমাদের বাসা থেকে আসার পর থেকেই মেয়েটা কেমন জানি বদলে গেল। এর চার বছর পর নীলার মা মারা গেল। এরপর আমার মেয়েটা একেবারেই বদলে গেল।
আবির: মা মারা গেল মানে ভালো মা মারা গেছেন।
সাইফ: হুম।
আবিরের চোখ পানিতে ভিজে এল সে জলে ছল ছল চোখে সাইফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলল। ভালো মা মারা গেল আর তুমি আমাকে একটি বারের জন্য বললে না। আমাকে শেষবারের মতো ভালো মার মুখটা দেখতে দিলেনা। আমাকে না হয় নাই বললে তাই বলে মাকেও বললে না।
সাইফ আবিরকে সান্তনা দিয়ে বলল আমি তোমার মাকে বলেছিলাম তুমি কষ্ট পাবে এইজন্য হয়তো ভাবি তোমাকে বলেননি।
তোমরা সবাই স্বার্থপর আবির চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল।
তখনই কেবিনের ভেতর নীলা প্রবেশ করলো। শফিক স্যার তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
আবির একবার নীলার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে শফিক স্যার কে বলল। স্যার নীলা ছোট মেয়ে তো ভুল করে ফেলেছে এবারের মত ওকে ক্ষমা করে দে। নেক্সট টাইম যদি এমন ভুল করে তারপর না হয় শাস্তি দিয়েন।
সাইফ চৌধুরি বলল না আবির ও ভুল যখন করেছে তার শাস্তি ওকে অবশ্যই পেতে হবে। এতদিন মা মরা মেয়ে বলে আমি ওকে ছাড়া দিয়ে এসেছি। এজন্যই হয়তো সে এমন জঘন্য কাজ করতে পেরেছে। ওকে তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
নীলা: আমি কখনোই ক্ষমা চাইতে পারবো না।
বেশি কথা বলবি না তুই আবিরের পা ধরে ক্ষমা চাইবি অনেক রাগী কন্ঠে সাইফ চৌধুরী বললো।
নীলা তার বাবার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল কিন্তু বাবা আমি…
তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে সাইফ চৌধুরী বললেন যেটা বলেছি সেটা কর অমন নির্লজ্জ কাজ করার আগে তোর মনে ছিল না।
আবির: আঙ্কেল এসবের কিছু দরকার নেই নীলা তুমি ক্লাসে যাও।
সাইফ: আবির তুমি চুপ থাকো তোকে যেটা করতে বলেছি সেটা কর নীলা।
নীলার গাল বেয়ে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পড়ল সে কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি তার বাবা তাকে এমন কাজ করতে বলবেন।
নীলা আবিরের পা ধরে সরি বলতে গেলে আবির নীলার হাত ধরে বলে ঠিক আছে আমি তোমাকে মাফ করছি। নেক্সট টাইম থেকে আর এমন কাজ করবে না। যাও এখন ক্লাসে যাও।
নীলা রাগে গজগজ হয়ে স্যারের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।
শফিক স্যার এতো ক্ষন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও। নীলার বাবার মুখে ছোট্টবেলার নিলা মা মারা যাওয়ার কথা শুনে তিনি ভেবেছিলেন আবিরকে বলবেন নীলাকে যেন এবারের মত ক্ষমা করে দেয়।
শফিক স্যার বললেন আচ্ছা আপনারা কি একে অপরকে চেনেন…?
সাইফ চৌধুরি মুচকি হেসে বললেন হ্যাঁ চিনি ।
শফিক স্যার: কিভাবে চেনেন আবির কি আপনার আত্মীয় হয়। কি সম্পর্ক আপনাদের।
সাইফ: আসলে আপনি হয়তো জানেন ই আবির দের মেইন বাসা বগুড়ায়। আমি অনেক বছর আগে বগুড়ায় যখন আমার পোস্টিং ছিল। আমি তখন আমার পুরো পরিবারসহ আবিদ দের বাসায় ভাড়া থাকতাম। আর আমাদের সম্পর্ক বাবা ছেলে, বন্ধু, চোর পুলিশ, একেক সময় একেক রকম সম্পর্ক ছিল।
শফিক: তাহলে আবির যে আপনার ওয়াইফ কে ভালো মা বলে ডাকে এটা কেন।
সাইফ চৌধুরি মুচকি হেসে বলে আসলে আপনি যে এখন এই হিরো আবিরকে দেখছেন না। ছোটবেলাতেও কিন্তু কম ছিলনা সে। কিউটের ডিব্বা যাকে বলা যায় সেটা ছিল আবির। আমরা যখন প্রথম আবিদের বাসায় যাই। তখন আবির অনেক ছোট। তখনো নীলার জন্ম হয়নি। আবির প্রতিদিন বিকেলে আমার ওয়াইফ এর কাছে পড়তো তখন। আবির আমার ওয়াইফ কে আন্নি আন্নি বলে ডাকতো।সে তো আবির কে জান দিয়ে ভালোবাসতো ।
আবির তার দু চোখ বন্ধ করে নিল। সঙ্গে সঙ্গে চোখে ভেসে উঠলো পুরনো দিনের কথা গুলো।
আবির: আন্নি আন্নি
কি হয়েছে আবির সোনা আর তোমার হাতে এটা কি…?
আলু ঘাতি (ঘাঁটি) (বগুড়ার ঐতিহ্য বাহি খাবার)
সেটা আবার কি…?
খাও খুব মদা (মজা)
তোমার মা পাঠিয়েছেন বুঝি
আবির বড় মানুষের মত করে মাথা ঝাঁকায়।
আচ্ছা আবির আমি যদি তোমাকে একটা কাজ করতে বলি তুমি করবে।
হুম আমি গুট বই (গুড বয়) আমি ছব(সব) কাদ কলি।
ভালো মা আবীরের কপালে একটা চুমু দিয়ে বলেছিলেন তাহলে আজ থেকে আমাকে মা বলে ডাকবে কেমন।
আবির বড় মানুষদের মত একটু ভেবে সেদিন বলেছিল কিন্তু আমার তো একটা মা আতে (আছে)
তাইতো আবির সোনার তো একটা মা আছে তাহলে আবির সোন আজ থেকে আমাকে ছোট মা বলে ডাকবে কেমন।
ছোট মা আত্তা (আচ্ছা) না না তুমি আমাল ভালো মা।
ওরে আমার সোনার ছেলে বলে ভালো আবিরের গালে কপালে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিয়েছিল।
ছোট মা আবিরকে এত ভালবাসতো যে আবিরকে সারাদিন তার কাছে এনে রাখত। আবিরকে খাওয়াতো গোসল করিয়ে দিত পড়াতো। মাঝে মাঝে ঘুরতে নিয়ে যেত।
নীলিমা যখন ভালো মায়ের পেটে ছিল।
আত্তা ভালো মা তোমাল পেত এতো বড় কেন…?
এখানে যে একটা ছোট্ট বাবু আছে।
তাই ওতা আমার কে হবে
ও তোমার বউ হবে।
বউ
হুম বউ তোমার সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আমি তোমাকে আমার জামাই বানাবো। আর আমার আবির সোনাকে চিরদিনের জন্য আমার কাছে রেখে দেবো।
সত্যি আমি তোমল দামায়(জামাই) হব।
হুম সত্যি।
কি মদা কি মদা আমি দামাই হব।
আবি সেদিন জামাই মানে না বুঝলেও আনন্দে নেচে ছিল।
আবির যখন একটু বড় হল। আবিরের দুষ্টামি বেড়ে গেল। পাড়ার সকল মানুষ আবিরের দুষ্টামিতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল সারাদিনে আবিরের সাবিরের মায়ের কাছে নালিশ করে যেত। তাই আবিরকে মা বাড়ি থেকে বের হতে দিতেন না।
আবির তখন সময় পেলে সাইফ চৌধুরীর সাথে ঘুরতে বের হত।
সাইফ চৌধুরীর সাথে বগুড়ার এমন কোন গুলি নেই যে আবির সেখানে যায়নি। তখনই সাইফ চৌধুরীর সাথে আবিরের খুব ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়।
আবির ক্লাসে বসে একবার নীলার দিকে দেখছে একবার ফোনের স্ক্রিনের দিকে দেখছে।
মাঝে মাঝে আবার কি জানি ভেবে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে।
বিষয়টা আর কারো চোখে না পড়লেও নীলার চোখে ঠিকই পড়েছে বিষয়টা।
আবিরের অমন মুচকি হাসি দেখে
নীলার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এক বাড়িতে আবিরের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে।
আবিরের বাচ্চা খাবির তোরে যদি আমি একবার বাগে পাই রে তোর চৌদ্দ গুষ্টির নাম ভুলে দিব।(নীলা মনে মনে বলল)
এদিকে আবির মনে মনে বলছে নীলা চৌধুরী তোমাকে তো আমি সোজা করেই ছাড়ব।
হঠাৎ রাফি দাঁড়িয়ে বলল স্যার নীলা এতো বাজে কাজ করেও মাপ পেয়ে গেল।
আবির হঠাৎ রাফির কথা শুনে ঝাঁকি খেয়ে উঠল।
আবির: রাফি কিছু বললে
রাফি: জী স্যার বলছিলাম যে নীলা এতো বাজে কাজ করল তাও আপনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন।
আবির: ক্ষমা করা মহৎ গুণ আর ছোট মেয়ে তো বুঝতে পারেনি।
পেছন থেকে মাহি বলল ছোট মেয়ে মানে কি ফিডার খাই ।এ তোরা কেউ ওকে একটা ফিডার এনে দে। বাবুটা এখন ফিডার খাবে…
চলবে…..
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/