এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সিজন_২ পর্বঃ ০২

0
3941

এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সিজন_২ পর্বঃ ০২
– আবির খান

নিশিঃ প্লিজ বলেন না কি সারপ্রাইজ যে আমি লজ্জা পাবো??

নেহালঃ রাতেই জানবে।

নিশিঃ আচ্ছা। এই যে??

নেহালঃ হুমমম…

নিশিঃ ফুচকা খাবো।

নেহালঃ তাই, আচ্ছা চলো। আমার একটা পরিচিত চাচা আছে অনেক ভালো ফুচকা বানায়। দেখি আজ আছে কিনা।

নিশিঃ আচ্ছা।

নেহাল নিশির হাত ধরে ঝোড়ো বাতাসের মাঝে হাঁটছে। নিশি নেহালের হাতটা শক্ত করে ধরে ওর মাথা নেহালের কাধের সাথে লাগিয়ে হাঁটছে।

নিশিঃ এই পথচলা যেন আর শেষ না হয়।

নেহালঃ হবে না। আছিতো তোমার পাশে সবসময়।

নিশিঃ এই যে…

নেহালঃ হুমম…

নিশিঃ আপনাকে অনেক বেশি ভালোবালি। মায়া লাগানো কণ্ঠে।

নেহালঃ আমি বাসি না। মজা করে।

নিশিঃ কিহহহ!!!! রাগী ভাবে।

নেহালঃ আরে আরে রাগ করছো কেন?? মজা করছিতো লক্ষ্ণীটি। আদুরে গলায়।

নিশিঃ এমন মজা আর করবেন না। আপনি শুধু আমার। তাই শুধু আমাকেই ভালোবাসবে। আর কাউকে না। বাচ্চাদের মতো করে বলল।

নেহালঃ ওলে বাবারে। আচ্ছা আচ্ছা। আমার পরী বউটাকেই শুধু ভালোবাসবো। আর কাউকে না।

নিশিঃ হুম মনে থাকে যেন। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি??

নেহালঃ দুইটা করো আমার কলিজা।

নিশিঃ নওশিনের জন্য কি কষ্ট পেয়েছেন??

নেহাল হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায়। একদম চুপ হয়ে যায়। আর নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে।

নিশিঃ জিজ্ঞেস করাটা উচিৎ হয়নি তাই না। সরি, এইযে কান ধরছি মাফ করে দেন।

নেহাল নিশির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে হেসে দেয়। অনেক হাসে।

নেহালঃ তুমিতো একটা বাচ্চা বউ আমার। উফফ কি কিউট্টাই না লাগছিলো তোমাকে একটু আগে।

নিশি অনেক লজ্জা পায় নেহালের কথা শুনে।

নিশিঃ আপনার হাসিটাও অনেক বেশি সুন্দর।

নেহালঃ আর আমি?? মজা করে।

নিশিঃ জানি না। লজ্জা জড়িত স্বরে।

নেহালঃ ওরে আমার লজ্জাবতীরে। কি লজ্জা তার।

নিশিঃ উফফ। আপনিও না।

নেহালঃ আচ্ছা নওশিন এর কথা বলছিলে না?? কষ্ট পেয়েছি কিনা?? গম্ভীর কণ্ঠে।

নিশিঃ থাক আর বলতে হবে না। আস্তে করে।

নেহালঃ না শুনো। অসহায় কণ্ঠে।

নিশি দাঁড়িয়ে পরে আর নেহালের সামনে এসে ওর চোখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। নেহাল নিশিকে কাছে টেনে নেয়। নিশি নেহালের বুকে মাথা রাখে। নেহালের প্রতিটি হৃদস্পন্দন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে নিশি। নেহাল বলতে শুরু করে,

নেহালঃ গত কাল বিকালে আমি নওশিন সম্পর্কে সব জানতে পারি। জানো ওকে কতটা ভালোবাসতাম?? নিজের থেকেও অনেক বেশি। খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম ওর সম্পর্কে এসব শুনে। আমিতো প্রথমে বিশ্বাসই করিনি। কিন্তু হিসাম যখন আমার কাছে সব প্রমাণ পাঠায়। তা দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। দুনিয়াটা কেমন অন্ধকার হয়ে যায়। কিন্তু সেই অন্ধকারের মাঝে তুমি মোমবাতি হাতে আলো নিয়ে এগিয়ে আসো। আজ তুমি হয়তো না থাকলে ওই অন্ধকারের মাঝে আমি হারিয়ে যেতাম। আর হয়তো ফিরে আসতা….

নিশি ওর হাত দিয়ে নেহালের মুখ চেপে ধরে।

নিশিঃ আর শুনতে চাই না। আমি মোমবাতি হাতে আপনার এই অন্ধকার জীবনকে আলোকিত করে দিবো। দিবেন না আমাকে করতে??

নেহাল নিশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর বলে,

নেহালঃ আল্লাহ চাইলে অবশ্যই। ভালোবাসি ভালোবাসা।

নিশিঃ আমিও। জানেন একটা কথা??

নেহালঃ কি??

নিশিঃ নওশিন এর মতো মেয়েরাই যে শুধু এমন হয় তা কিন্তু না, অনেক ছেলেরাও এমন হয়।

নেহালঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছো। মেয়েদের থেকে ছেলেরা এসব বেশি করে। মেয়েরাতো অবুঝ কিন্তু ছেলেরা ইচ্ছা করে অনেক মেয়ের মন বা শরীর নিয়ে খেলে। খবরের পাতায় কিংবা টিভিতে যখন ধর্ষন কিংবা ইভটিজিং এর খবর পড়ি বা দেখি তখন নিজেকে পুরুষভাবতেও ঘৃনা করে। ছিহ।

নিশিঃ হুম। জানেন, কোনো মেয়ে কিন্তু ইচ্ছা করে এমন করে না হয়তো কোনো প্রয়োজনে এমন করে। আপনি হিসাম ভাইকে বলে দিয়েন ওকে অল্প শাস্তি দিয়ে ভালো করে বুঝিয়ে ছেড়ে দিয়ে।

নেহালঃ আচ্ছা বলবো। নিশি আসলেই তুমি ঠিক বলেছো, ও একটা মেয়ে ওর সাথে এতোটা কড়া হওয়া ঠিক না। ওকে বুঝিয়ে বললে ও নিশ্চয়ই বুঝবে। ওর যদি কোনো আর্থিক সাহায্য লাগে আমি করবো। তাও ও যেন আর এই পথে না যায় তা ওকে বুঝাতে বলবো নে হিসামকে।

নিশিঃ হ্যাঁ। ও বুঝবে আশা করি।

নেহালঃ হুম। নিশি সত্যিই তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য। এভাবে সবসময় আমাকে সঠিক পথ দেখাবে।

নিশিঃ ইনশাআল্লাহ।

নেহাল নিশির কপালে চুমু খেয়ে আবার হাঁটতে শুরু করে। আর একসময় সেই ফুচকার দোকানে পৌছে যায়।

চাচাঃ আরে নেহাল বাবাজি না?? অনেক দিন পর দেখি। কেমন আছেন??

নেহালঃ চাচা ভালো। আপনি??

চাচাঃ ভালো, বাবা সাথে এটা কে??

নেহালঃ আপনাদের বউমা।

চাচাঃ মাশাল্লাহ খুব ভালো খুব ভালো।

নেহালঃ চাচা দুইটা স্পেশাল ফুচকা দেন।

চাচাঃ দিতাসি বাবা বসো। মা তুমিও বও।

নিশিঃ জ্বি চাচা।

নেহাল আর নিশি একটা বেঞ্চে বসলো। আশে পাশে তেমন কোন লোকজন নেই।

নিশিঃ আচ্ছা উনি আপনাকে এতো ভালো করে চিনে কিভাবে?? আস্তে করে বলল।

নেহালঃ হাহা। আরে ভারসিটি লাইফে বন্ধুরা মিলে ওনার কাছ থেকে সবসময় ফুচকা খেতাম। কত আড্ডা দিয়েছি এখাবে।

নিশিঃ ও আচ্ছা।

চাচাঃ এই নেও বাবা তোমগো ফুচকা। আর মা, বইলো কেমন হইসে??

নিশিঃ আচ্ছা চাচা।

নিশি একটু টক নিয়ে একটা ফুচকা মুখে দিলো। নিশি যত খাচ্ছে আর চোখ গুলো কেমন খুশিতে আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাচ্ছে।

নেহালঃ কি বলছি না। সেই মজা না??

নিশিঃ উহমমম, মানে কি যে বলবো। এরচেয়ে মজার ফুচকা চাচা আমি আগে জীবনেও খায়নি।

চাচাঃ আরে মা কি যে বলো। সবই তোমাদের দোয়া।

নিশি বসে বসে ফুচকা খাচ্ছে তৃপ্তি সহকারে আর নেহাল মুগ্ধ হয়ে তা দেখছে।

নিশিঃ আপনি খাবেন?? ঢেলে দেই??

নেহালঃ হাহাহাহা। এটা কি বললা!!! হাহাহা।

নিশিঃ আপনার সাথে একটু মজা করলাম। আপনাকে হাসলে অনেক ভালো লাগে।

নেহালঃ আর কত খাবে?? ৫ প্লেট তো খেলে।

চাচাঃ আরে বাবা খাকনা। ভালো লেগেছে মনে হয়।

নিশিঃ চাচা, শুধু ভালো অনেক ভালো লেগেছে।

নেহাল এই জিন্দাদিল নিশিকে দেখে খুব ভালো লাগছে। নিশিকে এখন একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে। নেহাল নিশিকে যতই দেখছে ততই ওর প্রেমে পরছে। তবে ভিতরে নেহালের মন আজ অনেক বিচলিত। কারণ আজ রাতে নিশির জন্য এমন এক সারপ্রাইজ আছে যা হয়তো ওদেরকে আরো অনেক কাছে আর ওদের মাঝে যে ভালোবাসা আছে তা আরো গভীর থেকে গভীর করে দিবে। নেহাল শুধু আজ রাতের অপেক্ষায় আছে। নেহাল এসব ভাবনার অনেক ভিতরে চলে গিয়েছে।

নিশিঃ কই কি হলো যাবেন না?? আমার খাওয়া শেষতো।

নেহালঃ হ্যাঁ হ্যাঁ চলো।

নিশিঃ কই হারিয়ে ছিলেন??

নেহালঃ তোমার ভালোবাসায়।

নিশিঃ আপনিও না। লজ্জা পেয়ে।

নেহালঃ চাচা নেন। ২০০০ টাকা দিলো।

চাচাঃ আল্লাহ এতো টাকা। না বাবা এতো টাকা লাগবে না। যতটুকু হয়েছে কতোটুকুর দাম দিলেই হবে বাবা।

নেহালঃ আরে চাচা রাখেন। খুশি হয়ে দিয়েছি। আজ আপনার জন্য আমার পরী বউটা অনেক খুশি হয়েছে। তাই একটু বারিয়ে দিলাম।

চাচাঃ না বাবা তা হয়না। এতো টাকা!!!!

নিশিঃ চাচা রেখে দেন। ধরেন আমি যদি রাগ করে চলে আসি এখানে। আপনি তখন না হয় আমাকে ফ্রীতে খাওয়ালেন। মজা করে৷

চাচাঃ তোমরাও না। হাহা। আচ্ছা রাখলাম। এরপর আসলে অবশ্যই ফ্রী খেতে হবে।

নেহালঃ আচ্ছা। তাহলে আসি চাচা। ভালো থাকবেন।

নিশিঃ আসি চাচা তাহলে। সত্যিই আপনার হাতে ফুচকা সবচেয়ে ভালো।

চাচাঃ আরে তেমন কিছু না। আবার এসো আর তোমরা যেন সুখী হও সেই দোয়াই করি।

নেহালঃ আমিন।

নেহাল আর নিশি ফুচকা খেয়ে কথা বলতে বলতে হেঁটে ওদের গাড়ির কাছে যায়। এরপর নিশির অনিচ্ছা সত্বেও নেহাল ওকে নিয়ে শপিং এ যায়। অনেক শপিং করে ওরা। অবশ্য নিশি কিছুই কিনতে চায়নি। কিন্তু নেহাল জোর করে অনেক কিছু কিনে দিয়েছে। এরপর অনেক জায়গায় ওরা ঘুরে মজা করে। প্রতিটাক্ষনই ওদের ভালোবাসার সাথে কেঁটেছে। নিশি আজ অনেক খুশি। স্মৃতির পাতায় আজকের দিনটা অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে নিশির কাছে।

নেহাল গাড়ি চালাচ্ছে। ওরা এখন বাসায় যাচ্ছে।

নেহালঃ নিশি??

নিশিঃ হুম বলুন। নেহালের কাধে মাথা রাখা অবস্থায় বললো।

নেহালঃ সারপ্রাইজের জন্য রেডিতো??

নিশি ঠাস করে সোজা হয়ে বসে নেহালের তাকিয়ে বলে,

নিশিঃ আমিতো সারপ্রাইজের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। প্লিজ বলেন না কি সারপ্রাইজ??

নেহালঃ আরে এসেইতো পরেছি। আর একটু পর এমনিতেই জানতে পারবে।

নিশিঃ প্লিজ বলেন না।

নেহালঃ না বলবো না। চুপচাপ বসে থাকো। ধমকের স্বরে।

নিশি নেহালের ধমক খেয়ে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। নেহাল তা দেখে মিটিমিটি হাসছে। নেহাল ওর গাড়ি নিয়ে বাসায় ঢুকলো।

রাত ১২.০০ টা,

নেহালঃ নামো।

নিশি একটু ঘুমিয়ে পরেছিলো। নিশি নেহালের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে নামে। নেহাল নিশির হাতটা ধরে। নিশি কিছুই বুঝতে পারছে না। নেহাল নিশির হাতটা ধরে হাঁটা শুরু করে বাড়ির মেইন গেটের দিকে।

নেহালঃ রেডি তো??

নিশি তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনেক চিন্তা আর ভয় হচ্ছে নিশির। বুকের হৃদস্পন্দন অনেক বেড়ে গিয়েছে। নিশি আর নেহাল হাঁটছে।

নেহাল গেটের কাছে এসে গেটে ধাক্কা দিতেই গেট খুলে যায়। তবে ভিতরে একদম অন্ধকার। নিশি কিছুই বুঝছে না। নেহাল নিশিকে নিয়ে ভিতরে গেলো। কিন্তু একটুপরই নেহাল নিশির হাত ছেড়ে অন্ধকারে হারিয়ে গেলো। এতোটা অন্ধকার যে নিশি কিচ্ছু দেখছে না।

নিশিঃ নেহাল আপনি কই?? কোথায় আপনি?? আমার অনেক ভয় করছে। নেহাল…কাঁদো কণ্ঠে।

হঠাৎই বাড়ির সব লাইট একসাথে জ্বলে উঠে। আর নেহাল এবং নেহালের বাবা-মা সহ যারা কাজ করে তারা একসাথে বলে উঠে,

– Happy Birthday to you.
Happy Birthday dear Nishi.
Happy Birthday to you.

সবাই একসাথে করতালি দিচ্ছে। নিশির চোখ জ্বলজ্বল করে উঠছে। এত্তো আলো। আজ বাসাটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। নিশি এসব থেকে কান্নায় ভেঙে পরে।

নেহাল মা নিশির কাছে গিয়ে ওর মাথা হাত বুলিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলে,

মাঃ শুভ জন্মদিন নিশি বউমা।

নিশি অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে নেহালের মায়ের পা ঝরিয়ে ধরে মাফ চাচ্ছে।

নিশিঃ মা আমাকে মাফ করে দিন আমি আপনার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। বাবা আপনিও আমাকে মাফ করে দিয়েন।

মাঃ আরে ওঠ ওঠ। বোকা মেয়ে।

নিশিকে উঠিয়ে,

মাঃ নেহাল গত রাতেই আমাদের সব বলেছে।

বাবার আগমন,

বাবাঃ মারে তোর প্রতি আমাদের কোনো রাগ বা অভিমান নেই। বরং তোকে নিয়ে আমরা গর্বিত। তোর মতো বউমা পেয়ে আমরা দুজন ধন্য।

মাঃ হ্যাঁ ঠিক বলেছো। যে স্ত্রী তার স্বামীর সুখের জন্য সব ছাড়তে রাজি হতে পারে তার চেয়ে ভালো বউ আর কে হতে পারে। মারে তুই সেই বউমা। আমাদের সবার প্রিয় বউমা।

নিশিঃ বাবা-মা আপনাদেরকে পেয়ে বরং আমি ধন্য। মহান আল্লাহর কাছে কোটি কোটি শুকরিয়া জানাই আপনাদেরকে আমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি করে দেওয়ার জন্য৷ কান্না জড়িত কণ্ঠে।

মাঃ হয়েছে আর কাঁদিস না। তুই অনেক কেঁদেছিস। আজ থেকে তুই শুধু হাসবি। তোর কাঁদার দিন শেষ। এখন চল কেকটা কাঁটবি।

নিশি সবার সাথে অনেক আনন্দ আর মজা করে কেক কাঁটে। নিশি আজ বেজায় খুশি। তার খুশি যেন আজ সীমাহীন।

জন্মদিন উদযাপন হলে বাবা-মা আর কাজের লোক্রা যে যার রুমে চলে যায়। শুধু নিশি আর নেহাল আছে এখন নিচে।

নেহালঃ কেমন লাগলো সারপ্রাইজ??

নিশিঃ অনেক বেশি ভালো। সত্যিই আমি ভাবতে পারিনি আপনার মনে আছে আজ আমার জন্মদিন। অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা দিন আমাকে দেওয়ার জন্য।

নেহালঃ নিশি…

নিশিঃ হ্যাঁ বলুন।

নেহালঃ তোমার জন্মদিনের একটা গিফট উপরে আমাদের রুমে আছে দেখবে না?? এই সারপ্রাইজ এর চেয়েও বড় একটা সারপ্রাইজ আছে উপরে আমাদের রুমে। দেখবে না??

নিশিঃ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই দেখবো।

নেহালঃ আচ্ছা চলো তাহলে। বলেই,

নেহাল হঠাৎই নিশিকে ওর কোলে তুলে নেয়। নিশি অনেক অবাক হয়ে যায়। তবে এ অনুভূতি ওর খুব ভালো লাগছে। নিশি নেহালের গলা ধরে ওর ফরসা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নেহাল নিশিকে উপরে নিয়ে ওর রুমের সামনে নামিয়ে দেয়।

নিশিঃ কি হলো নামালেন যে??

নেহালঃ হুম। তোমার চোখটা বন্ধ করো। আমি না বলা পর্যন্ত খুলবে না।

নিশিঃ আচ্ছা। এই যে করলাম।

এরপর নেহাল আস্তে করে দরজাটা খুলে নিশিকে নিয়ে ওদের রুমে ঢুকলো। নিশি ভিতরে ঢুকতেই ওর নাকে ফুলের ঘ্রাণ এসে লাগছে। গোলাপ ফুলের ঘ্রাণ।

নেহালঃ নিশি, আমার পরী বউ এবার চোখ খুলো।

নিশি আস্তে আস্তে করে ওর চোখ খুলে। নিশি চোখ খুলে যা দেখে তা দেখার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিলনা।

নিশি দেখে, পুরো রুমটা গোলাপের পাপড়ি দিয়ে ভরা। বিশেষ করে বিছানাটা খুব সুন্দর করে সাজানো। নিশি এগিয়ে গিয়ে দেখে সেখানে ওর আর নেহালের নাম লেখা লাভ হার্টের ভিতরে। নিশির চোখ ছলছল করছে।

নেহাল হঠাৎ নিশিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আর বলে,

নেহালঃ সেদিন রাতে মনের গোজামেলে ক্লান্ত ছিলাম। আজ কিন্তু আমি একদম ভালো আছি। একটুও ক্লান্ত নেই। অবশ্য পরে কি হবে জানি না। হাহা।

নিশি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ নিশি বুঝে গিয়েছে নেহাল আবার ওদের বাসর ঘর সাজিয়েছে। নিশির কেমন জানি অন্যরকম ফিল হচ্ছে। একটুপরে কি হবে তা ভেবেই ও লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

নেহালঃ সেদিন আমাদের বাসর রাতটা আমি নষ্ট করেছিলাম। তাই আজ তোমার এই জন্মদিনে আমাদের সেই অপূর্ণ বাসর রাত উপহার হিসেবে দিলাম। তুমি খুশিতো??

নিশি ঘুরে নেহালকে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আসলে নিশি প্রচন্ড লজ্জা পাচ্ছে। আজ নেহাল একদম অন্য রকম লাগছে। খুব রোমান্টিক। নিশি ভাবছে, আজ নেহাল ওর হয়ে যাবে। ওদের মাঝে সব দূরত্ব আজ শেষ হয়ে যাবে। নিশির সবটা আজ নেহালকে দিয়ে দিবে। আজ দুটি মন একে অপরের সাথে মিশে যাবে। আজ দুটি আত্না একে অপরের সাথে মিশে এক হয়ে যাবে।

নেহালঃ নিশি এটা পরে আসো আমি অপেক্ষায় আছি।

নিশি নেহালকে ছেড়ে ওর হাতে একটা ব্যাগ দেখে। নেহাল ব্যাগটা নিশির দিকে এগিয়ে দিলে নিশি তা নিয়ে নেয়।

নেহালঃ এটা পরে আসো। আমি অপেক্ষায় করছি।

নিশি ব্যাগটা নিয়ে টয়লেটে চলে যায়। ১৫ মিনিট পর নিশি বের হয়ে আসে। নিশি ব্লাক কালারের একটা শাড়ী পরে এসেছে। চুল গুলো পিছন থেকে ঘুরিয়ে সামনের দিকে ফেলানো। পিঠের দিকটা ফাঁকা। নিশিকে আজ যা লাগছেনা। নিশি নিজেই নিজেকে দেখে অনেক লজ্জা পাচ্ছে। খুব সুন্দরী লাগছে ওকে৷

এদিকে নেহাল মুগ্ধ হয়ে হা করে নিশিকে দেখছে। যেন ডার্ক প্রিন্সেস তার সামনে। নেহাল নিশিকে যতই দেখছে ততই ওর মধ্যে অনুভূতিগুলো গভীর হয়ে উঠছে৷

নেহাল আস্তে আস্তে নিশির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিশির হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। নেহাল নিশির খালি হাতটা স্পর্শ করতে করতে পিঠের কাছে চলে যায়। নিশি নেহালের প্রতিটা স্পর্শে কেঁপে উঠছে৷ নেহাল নিশির ঘাড়ে একটা ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়। নিশি ওর চোখটা বন্ধ করে ফেলে। নেহাল আবার ঘুরে নিশির সামনে চলে যায়। নিশি এখনো ওর চোখ বন্ধ করে আছে। নেহাল কিছুক্ষন ওকে দেখে ওর হাতটা ধরে ওকে বারান্দার সামনে নিয়ে যায়।

জ্যোৎস্নারাতে চাঁদের আলো নিশির মায়াবী মুখের উপর এসে পরেছে। নিশি নেহালের দিকে তাকিয়ে আছে। আর নেহাল সেতো হায় মুগ্ধ হয়ে তার পরী বউকে দেখছে।

নেহালঃ নিশি, আজ আমায় সত্যিই ওই চাঁদটাকে ধন্যবাদ দিতে হবে। কারণ তার জ্যোৎস্নার আলো যদি আমার এই পরী বউএর মায়াবী মুখে এসে না পরতো তাহলে আমি জানতামই না যে আমার পরী বউটা এতোটাও সুন্দর হতে পারে। সত্যিই আমি জানতাম না। নেহাল নিশিকে মন ভরে দেখছে। যাকে বলে নিশিবিলাস করছে নেহাল। নিশি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।

নেহাল আস্তে আস্তে নিশির অনেক কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। নিশি দেখে, নেহাল ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। নিশির শ্বাস দ্রুত ঘন হয়ে আসছে। নেহাল এখন নিশির অনেক কাছে। এতোটা কাছে যে নেহালের প্রতিটা গরম নিশ্বাস নিশির মুখের উপর পরছে।

নিশির চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে। নেহাল নিশির নেশায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। নেহার আর না পেরে তার ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয় নিশির ঠোঁটে। দুজনে হারিয়ে যায় এক অন্যরকম অনুভূতিতে।

এরপর আর কি…বলতে হবে?? আচ্ছা বলছি, এরপর নিশি নেহালকে আর নেহাল নিশিকে একদম আপন করে নেয়। মানে তারা সেই পুরনো আদিম খেলায় মেতে উঠে যা তাদের বহুল অপেক্ষিত ভালোবাসাকে পূর্ণতা দান করে। তারা মিশে যায় একে অপরের মাঝে।

চলবে….?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে