আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৯

0
2822

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

তাসিনের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি যতো দিন যাচ্ছে আমার প্রতি যেন ওর ভালোবাসা বেড়েই চলেছে ইদানীং আমারো কেন যেন মনে হয় আমিও তাসিন কে ভালোবাসি কিন্তু অবনী….
তাসিন: কি হলো দূরে সরে গেলে কেন
–অবনী যদি জানতে পারে তোমার উপর রাগ করবে
–(ও কিছু না বলে চুপচাপ বারান্দায় চলে গেলো)

দুজন বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি
আমি: আজকে কলেজে যাওনি কেন
তাসিন: তুমি আসবে তাই
–আমি যে আসবো তুমি জানতে
–তুমি কখন কোথায় যাও বা যাওয়ার প্ল্যান কর সব আমি আগে থেকে জানি তুমি না সত্যি একটা বোকা মেয়ে
–কি রকম
–একবারো ভাবনি আমার অনুমতি ছাড়া হোস্টেল থেকে বেরিয়েছ কিভাবে
–তাই তো
–আমি অনুমতি দিয়ে রেখেছিলাম আর তুমি হোস্টেল থেকে বাসায় আসা পর্যন্ত আমার দুজন লোক তোমার পিছু পিছু এসেছে তুমি লক্ষ করনি
–মানে কি তুমি আমার পিছনে…..
–আমি জানি তোমার নিজের প্রতি কোনো খেয়াল নেই তাই তোমার নিরাপত্তার জন্য আমাকে এসব করতে হচ্ছে (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ও আমাকে এত্তো ভালোবাসে)
–অরনী জানি তুমি প্রমানের জন্য এসেছ আব্বুকে একটু সুস্থ হতে দাও প্লিজ কথা দিচ্ছি আমিই প্রমান এনে দিব
–হুম

দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে হোস্টেলে চলে আসলাম, বসে বসে গেমস খেলছি
–অরনী পায়েলটা খুব সুন্দর যাই বলিস ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে
–তাহলে অবনী
–(নিশ্চুপ)
–মেয়েটা কাল যা ইচ্ছে তাই বললো তাও তাসিন চুপ করে ছিল
–বাদ দে না
–উহু বাদ দিবো না আমি আর ক্লাসেই যাবো না
–দুর ভাইয়া তোকেই ভালোবাসে নাহলে কি নিজ হাতে পায়েল পরিয়ে দিত
–এখনো আমাদের ডিভোর্স হয়নি তাই বউ যেহেতু পায়েলটা দিয়েছে
–তুই যে কি
–আমি অরনী হিহিহি
–হাসি বের হবে ভাইয়া কে যখন হারাবি তখন
–ওকে

চার দিন কেটে গেলো এই চার দিনের মধ্যে একদিনও ক্লাসে যাইনি, আশ্চর্যের বিষয় হলো যে তাসিন আমাকে পড়া চুরি করতে নিষেধ করে সে তাসিন চারদিনের মধ্যে একবারো জানতে চায়নি কেন ক্লাসে যাচ্ছি না জানবে কিভাবে ও তো চার দিনের ভিতরে একবারো ফোন দেয়নি, অবশ্য এটাই এখন স্বাভাবিক অবনী আছে না, সবাই বলে তাসিন আমাকে ভালোবাসে এখন দেখেছ ওর ভালোবাসার নমুনা
–অরনী তোর ফোন বাজছে
–কে
–ভাইয়া
–চারদিনে ইচ্ছে হয়েছে
–কোনো সমস্যা ছিল মনে হয়
ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছি রিসিভ করবো নাকি কেটে দিবো, ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো একটু পর মেসেজটোন বেজে উঠলো “অন্নি প্লিজ ফোনটা রিসিভ করো প্রয়োজন আছে” তারপর সাথে সাথে আবার ফোন বেজে উঠলো, আল্লাহ জানেন কিসের প্রয়োজন রিসিভ করলাম
–অন্নি প্লিজ একটা হেল্প করবে
–কি
–আমাদের তো ডিভোর্স হয়েই যাবে ডিভোর্স এর আগে নাহয় একটু হেল্প করো
–বলবা তো কি
–অবনীর খুব ইচ্ছে কক্সবাজারে ঘুরতে যাবে কিন্তু সাথে আমাকে যেতে হবে
–তো যাও এখানে আমার কি করার আছে
–বাসায় কি বলবো তুমি যদি আমাদের সাথে যেতে
–মানে কি
–বাসায় বলবো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি তাহলে কেউ কোনো প্রশ্ন করবে না তোমাকে ছাড়া গেলে তো বুঝই
–তাই বলে…
–অন্নি প্লিজ তুমি চাইলে শিলা কে সাথে নিয়ে যেতে পারো
–ভেবে দেখি
–প্লিজ অন্নি না করো না
–হুম রাখ এখন
ইসস প্রেম করতে যাবে ওরা আর আমি পাহারাদার খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তো আমার
–কিরে অরনী কি বিড়বিড় করছিস
–শিলা কক্সবাজার যাবি
–সত্যি নিয়ে যাবি উফফফ আমার অনেক ইচ্ছে কক্সবাজার যাওয়ার
–আমি তোকে নিয়ে যাবো কিভাবে আমাকেই তো যেতে হবে পাহারাদার হিসেবে
–মানে
–তাসিনের অবনী কক্সবাজার যেতে চায় তাসিন বাসায় কি বলে যাবে তাই সাথে আমাকে যেতে হবে আর আমি চাইলে তোকে নিয়ে যেতে পারি
–ওয়াও অরনী প্লিজ না করিস না আমি যেতে চাই
–কি বলছিস যে মেয়ে আমাকে এতো কথা শুনিয়েছে সে মেয়ের সখ পূরন করতে আমি যাবো কক্সবাজার
–অবনীর ইচ্ছেটা বাদ দে আমার ইচ্ছেটার কথা ভাব (সত্যি তো অবনীর কথা নাহয় বাদ দিলাম কিন্তু শিলা যে যেতে চাচ্ছে)
–প্লিজ অরনী আমার জন্য হলেও চল
–ঠিক আছে যাবো
–থ্যাংক ইউ

তাসিন কে ফোন দিলাম ওয়েটিং হয়তো অবনীর সাথে কথা বলছে, একটু পর তাসিন নিজেই ফোন দিল
–অরনী সরি অবনীর সাথে কথা বলছিলাম জানো মেয়েটা আমাকে অনেক ভালোবাসে আ…
–কক্সবাজার যাবো
–সত্যি
–হুম
–অবনী শুনলে খুব খুশি হবে
–আমি তোমার অবনীর জন্য যাচ্ছি না শিলার জন্য যাচ্ছি
–তুমি গেলেই হলো তাহলে আমরা আগামীকালই যাই
–এতো তাড়াতাড়ি
–হ্যা অবনীর আবদার তাড়াতাড়ি পূরন করতে চাই
–ভালো
–আমি বাসায় বলে তোমাকে জানাবো
–ঠিক আছে

আচ্ছা তাসিন যে বলেছিল ও ছোটবেলার কথা ভুলতে পারবে না আমাকে ভুলবে কিভাবে কিন্তু এখন তো তাসিন অবনী কে ভালোবাসে তাহলে কি তাসিন ছোটবেলার কথা ভুলে গিয়েছে, হ্যা ভুলাটাই তো স্বাভাবিক তাসিন তো এতোদিন মনে রেখেছে আমার তো কিছুই মনে নেই, আচ্ছা তাসিন ছোটবেলার স্মৃতি ভুলে অবনী কে ভালোবাসলে আমার কি আমার তো খুশি হবার কথা তাড়াতাড়ি ডিভোর্স হবে কিন্তু আমার এমন লাগছে কেন, অবনী নামটা মনে হলেই কোথাও যেন একটু কষ্ট হয় তাহলে কি আমি তাসিন কে ভালোবেসে পেলেছি
–অরনী সন্ধ্যা বেলায় শুয়ে আছিস কেন
–ভালো লাগছে না
–আমি জানি কেন
–কেন
–অরনী তোকে ছোটবেলা থেকে ভুলের মধ্য দিয়ে বড় করা হয়েছে তাই তোর ভুল ধারনা গুলো ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে এতোটাই বাড়ছে যে এই ভুল ধারনার কারনে তুই তোর ভালোবাসাটা বুঝতে পারছিস না
–(নিশ্চুপ)
–অরনী তুই ভাইয়া কে ভালোবাসিস এটাই সত্যি কিন্তু তুই ভালোবাসা বুঝতে পারতেছিস না প্লিজ অরনী এখনো সময় আছে
–হুম

রাতে তাসিন ফোন করে জানালো বাসার সবাই রাজি সকাল দশটায় যেন শিলা কে নিয়ে রেলস্টেশনে থাকি, রাতেই দুজনের ব্যাগ গুছিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম

সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে শিলা কে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম

রেলস্টেশনে পৌঁছে দেখি তাসিন আর অবনী দাঁড়ানো, বাহ্ অবনী আজ তাসিনের পছন্দের নীল শাড়ি পরেছে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে কিন্তু আমার কেন জানি এই মেয়েটা কে সহ্য হচ্ছে না, সত্যিই কি আমি তাসিন কে ভালোবেসে পেলেছি….

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে