আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ১৫

0
2810

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

ক্লাসে বসে আছি কিসের ক্লাস করবো সারাক্ষণ তাসিনের কথা মনে পরছে মনে হয় এই বুঝি ও পাশে থেকে বকবক করছে, সবসময় ওর বকবক করাটা বিরক্ত লাগতো কিন্তু আজ কেন যেন খুব মিসস করছি ক্লাসেও মন বসছে না কি যে করি
–এই অরনী কি হয়েছে তোর
–কিছুনা
–বল
–কি বলবো তাসিন কে মাথা থেকে সরাতে পারছি না
–হিহিহি
–হাসছিস কেন
–তুই না ভাইয়া কে ভালোবাসিস না তাহলে মিসস করছিস কেন
–জানিনা
–হুম বুঝেছি ভালো বাসতে শুরু করেছিস
–মোটেও না কোনো খুনির ছেলে কে আমি ভালোবাসবো না
–অরনী প্রমান ছাড়া কাউকে খুনি বলা ঠিক না
–প্রমান পেলে তো ওদের সবাই কে জেলে পাঠাইতাম
–নাই যেহেতু অযতা খুনি বলবি না
–ক্লাস করবো না চল
–কোথায়
–ঘুরতে যাবো
–ওকে

শিলার সাথে কথা বলতে বলতে গেইটের কাছে চলে আসলাম বেরুতে যাবো তখনি দারোয়ান গেইট লাগিয়ে দিল
শিলা: কি হলো
দারোয়ান: স্যার এর অনুমতি ছাড়া ম্যাডাম বেরুতে পারবে না
শিলা: কোন স্যার আর ম্যাডাম কে
দারোয়ান: তাসিন স্যার
আমি: কি (দারোয়ানের দিকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চেয়ে রইলাম কি বলে এইসব)
দারোয়ান: উনি কড়া নিষেধ করে গেছেন উনার অনুমতি ছাড়া যেন আপনাকে বাইরে যেতে না দেই
শিলা আর আমি দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি আমার এখন হাসা উচিত নাকি কান্না করা উচিত বুঝতেছি না তবে তাসিন কে সামনে পেলে এখন কষিয়ে একটা তাপ্পর দিতাম এইটা নিশ্চিত
–অরনী চল হোস্টেলে চলে যাই
–আমি তো বাইরে যাবোই
–কিভাবে যাবি
–দাড়া
তাসিন কে ফোন দিলাম কিন্তু ফোন ধরছেই না মন চাইছে ওকে, যাক ফোন রিসিভ করেছে
–অন্নি আমি ভিজি আছি পরে ফোন দেই
–তুমি কি ভেবেছ আমার সব স্বাধীনতা কেড়ে নিবা
–মানে
–আমি বাইরে ঘুরতে যেতে চাই কিন্তু দারোয়ান যেতে দিচ্ছে না এসব কি তাসিন
–এখন হোস্টেলে যাও আমি কাজ শেষ করে এসে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো
–আমি তোমার সাথে যাবো কেন আমি একা যেতে চাই
–একা যেতে দিচ্ছি না চুপচাপ হোস্টেলে চলে যাও বলেই ফোনটা কেটে দিল

মোবাইলটা একটা আছাড় দিয়ে গেইটের কাছে ফেলে রেখে হোস্টেলে চলে আসলাম, ছোট থেকে স্বাধীনতা পেয়েছি চাচ্চু কখনো আমার কোনো কিছুতে বাঁধা দেননি আর দুদিনের তাসিন এখন আমাকে সব কিছুতে বাঁধা দিচ্ছে আমার সব স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে
–অরনী এভাবে কাঁদছিস কেন
–ও আমার স্বাধীনতা কেড়ে নেবার কে
–দেখ আমার মনে হয় ভাইয়া তোর কোনো বিপদ হতে পারে বুঝতে পেরেছে তাই এমন করছে প্লিজ কান্না করিস না
–ছয়মাস যেদিন পূরন হবে সেদিনই আমি ওকে ডিভোর্স দিব ওকে আর সহ্য হচ্ছে না
–আচ্ছা দিস এখন কান্না থামা
–হুম তোর ফোন বাজছে
–দাড়া আমি কথা বলে আসি
–হুম

দুর ওর উপর রাগ করে ফোনটা কেন ভাঙ্গলাম এখন তো অন্তত গেমস খেলতে পারতাম
–অরনী আমাকে একটু হসপিটালে যেতে হবে
–কেন
–আমার কাজিন অসুস্থ সন্ধ্যার আগেই চলে আসবো
–হুম
–দুপুর হয়ে গিয়েছে তুই গোসল করে ঘুম দে কান্নাকাটি করিস না
–আচ্ছা যা

গোসল করে বের হতেই শুনি বাইরে হর্ন বাজছে একটার পর একটা বাজছেই বিরক্ত হয়ে কে এভাবে হর্ন বাজাচ্ছে দেখার জন্য জানালা দিয়ে নিচে থাকালাম, আশ্চর্য তাসিন এই জানালার দিকে তাকিয়ে এভাবে হর্ন বাজাচ্ছে, আমাকে দেখা মাত্র ইশারা দিল নিচে যাওয়ার জন্য, যাবো কি যাবো না এসব ভাবছি তখন তাসিন ইশারা দিয়ে বুঝালো আমি না গেলে ও উপরে চলে আসবে, ও উপরে না আসাটাই ভালো তাই আমিই নিচে গেলাম
–এই ফোন ভেঙ্গেছ কেন এতোক্ষণ ধরে হর্ন বাজাতে হয়েছে
–ভেঙ্গেছি বেশ করেছি এখানে কেন এসেছ
–তুমি না বলেছিলে ঘুরতে যেতে চাও
–তোমার সাথে যাবো কেন আমি একা যাবো
–এইটা সম্ভব না
–তাসিন আমাদের মধ্যে কিন্তু এমন কথা ছিল না তুমি বলেছিলে আমি এখন হোস্টেলে থাকবো ছয়মাস হলে আমাদের ডিভোর্স হবে কিন্তু তুমি এখন তার উল্টো করছ
–আমি তোমাকে ভালোবাসি ডিভোর্স দেওয়া সম্ভব না আর তোমার বিপদ হতে পারে তাই এমন করছি
–আমার কোনো বিপদ হবে না আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
–সম্ভব না এই নাও তোমার ফোন
–আমার জন্য ফোন এনেছ কেন
–আমি তোমার সাথে কথা বলবো কিভাবে
–তাহলে আমার সিম দাও
–ফোনের মধ্যেই আছে গাড়িতে উঠো
–না যাবো না বাসায় চলে যাও বলেই হনহন করে হেটে হোস্টেলে চলে আসলাম

কিছুই ভালো লাগছে না আমি চাই একা বাঁচতে কিন্তু তাসিন আমার পিছুই ছাড়ছে না, ফোনের দিকে চোখ পরলো ফোন হাতে নিয়ে অফ করে ফেললাম, এখন শান্তিতে ঘুমাবো নাহলে তাসিন ফোন দিবে

সকালে মুখে পানি ছিটায় ঘুম ভাঙ্গলো
–ওই পানি দিছিস কেন
–কি করবো এতোক্ষণ ধরে ডাকতেছি খবর নেই ক্লাসে যাওয়া লাগবে না নাকি
–আমার তো খিদা লেগেছে
–রাক্ষসী পরে খাবি ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি চল
–হুম

উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে দৌড়ে ক্লাসে গেলাম কিন্তু গিয়ে শুনি ক্লাস হবে না এখন নতুন স্যার আসবে সবাই উনাকে বরণ করতে ব্যাস্ত, এই প্রথম শুনছি নতুন স্যার আসবে বলে ক্লাস হবে না, শিলার দিকে রাগি চোখে তাকালাম
–এই এভাবে তাকাস না প্লিজ ক্যান্টিনে চল খাওয়াই
–হুম

ক্যান্টিনে বসে বসে সমুচা খাচ্ছি পাশ দিয়ে দুটি মেয়ে যাচ্ছে আর বলছে
–নতুন স্যার কে দেখেছিস কি হ্যান্ডসাম
–হ্যা আমার তো ইচ্ছে হচ্ছিল গিয়ে জরিয়ে ধরে কিস করি
ছি কি মেয়ে স্যার কে কিস করার কথা ভাবছে
–অরনী চল নতুন স্যার কে দেখে আসি
–তোরও কিস করার সখ জাগছে নাকি
–আরে চলনা
–তুই যা আমি খেয়ে আসি
–সমুচাটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে চল বলেই আমাকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসলো

–অরনী দেখ কি সুন্দর স্যার (সমুচা মুখে দিতে দিতে সামনে তাকালাম আমার চোখ তো কপালে উঠে গেছে সমুচা গলায় আটকে বিষম খেলাম)
–কিরে কি হয়েছে স্যার কে দেখে বিষম খেলি হিহিহি
–হ্যা আপনার স্যার কে দেখেই বিষম খেয়েছি কারন এটাই তাসিন
–কি
–ও আমার পিছু ছাড়বে না বুঝে গেছি

আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাসিন আমার কাছে আসলো তারপর কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বললো “পড়া চুরনি আর পড়া চুরি করতে পারবা না একেবারে তোমার টিচার হয়ে এই কলেজে ঢুকেছি আর এতো দিন যতো কষ্ট দিয়েছ তারচেয়ে বেশি ভালোবাসা আমাকে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও”

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে