আমার_প্রতিশোধ
পার্ট: ১৩
সকালে তাসিনের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো চোখ ডলতে ডলতে ওর দিকে থাকালাম, ভয় পেয়ে গেলাম ওকে দেখে চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে চুল গুলো উসকোখুসকো একদম রোগা রোগা মনে হচ্ছে
–হা করে কি দেখছ ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নাও বের হতে হবে
–হুম
ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম তাসিন টেবিল রেখে সোফায় বসে নাস্তা করছে, ওর থেকে চোখ ফিরাতে গিয়ে ফ্লোরে চোখ পরলো, ফ্লোরের অবস্থা দেখে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে
–তাসিন এসব কি
–কোন সব
–ফ্লোরে অর্ধেক অর্ধেক সিগারেট পালানো কেন
–ওহ তারমানে পুরোটা খাওয়া উচিত ছিল
–আগে তো সিগারেট খেতে না
–এখন পরিস্থিতি খেতে বাধ্য করছে
–তাই বলে তুমি….
–চুপ করে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও এখনি রওনা দিব
–হুম
চুপচাপ খেয়ে নিলাম তাসিনের দিকে আর থাকালাম না কথাও বললাম না
আয়নার সামনে বসে রেডি হচ্ছি তাসিন ফিছনে এসে দাঁড়াল
–কিছু বলবে
–হুম
–বলো
–রাখবে তো
–চেষ্টা করবো
–শেষ অনুরোধ এইটা প্লিজ রেখো
–কি
–জানো তো আমার নীল রঙ পছন্দ তোমার জন্য একটা শাড়ি এনেছিলাম নীল রঙের আজ পরবে প্লিজ
–শাড়ি কখন আনলে
–এখানে এসে তো ঘুরতে যাওনি ঢাকা থেকই এনেছিলাম ভেবেছিলাম হানিমোনে আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে
–রেখে যাও
–হুম
শাড়ি পরে রেডি হয়ে তাসিনের সামনে গেলাম ও হা করে তাকিয়ে আছে কিছু না বলে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম, তাসিন চুপচাপ গাড়িতে উঠে গাড়ি ছেড়ে দিল, বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখছি মাঝে মাঝে আয়নায় চোখ পরছে আমার শাড়ির আচল বাতাসে উড়ে বার বার তাসিনের মুখে গিয়ে পরছে কিন্তু ও একটু বিরক্তও হচ্ছে না, তাসিন পারেও বটে
বিকেলের দিকে আমরা ঢাকায় পৌছালাম, বাসায় যেতেই সবাই আমাদের দেখে অবাক, আজ পর্যন্ত কোনো দম্পতী মনে হয় একদিনের জন্য হানিমোনে যায়নি
তিথি: ভাবি এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে
ভাবি: কি হয়েছে কোনো সমস্যা একদিন থেকেই তোরা চলে আসলি যে
তাসিন: তেমন কিছু না ভাবি অন্নির কলেজ থেকে ফোন এসেছিল ওকে কলেজে যেতে হবে
মা: নতুন বউ এতো তাড়াতাড়ি কলেজে যাবে
তাসিন: তাতে কি হয়েছে বিয়ের জন্য কি পড়াশুনার ক্ষতি করবে নাকি
মা: ঠিক আছে তাহলে তোর আর অফিসে যেতে হবে না এসব ব্যবসা তোর বাবা আর আসিফ বুঝে নিবে তুই বরং প্রতিদিন বউমা কে কলেজে দিয়ে আসবি আবার নিয়ে আসবি
তাসিন: মা ও হোস্টেলে থাকবে
মা: কেন
তাসিন: পড়াশুনার সুবিধা হবে
মা: হোস্টেলে কিসব খাবার দেয় আমার বউমা তো অসুস্থ হয়ে পরবে (মায়ের কথাটা শুনে চমকে উঠলাম উনার দিকে তাকিয়ে আছি, কি মায়াবী চেহারা হোস্টেলে থাকবো বলে কতো চিন্তা করছেন)
তাসিন: পড়তে হলে একটু কষ্ট তো করতে হবেই
মা: ঠিক আছে
ভাবি: তাসিন আমার সাথে চল তো
তাসিন: কোথায়
ভাবি তাসিনের হাত ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে গেলো, আমিও উপরে চলে গেলাম রুমে ব্যাগ রেখে বের হতেই দেখি ভাবি আর তাসিন তিথির রুমের সামনে দাঁড়িয়ে কি যেন কথা বলছে তাসিন কাঁদছে, কাঁদছে কেন জানার জন্য একটু এগুলাম
ভাবি: আরে গাধা বউয়ের ভালোবাসা পাবার জন্য কি সিগারেট খেতে হয়
তাসিন: তাহলে কি করবো অন্নি তো আমাকে একটুও ভালোবাসে না
ভাবি: আমি যা বলি তাই কর
তাসিন: কি বল
ভাবি: কানেকানে বলি
দূর কি বলে জোরেই বলতো আমি শুনতাম কিন্তু ভাবি উনার দেবরের কানেকানে বলছে যত্তোসব, আবার রুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি তাসিন সোফায় বসে বসে গেমস খেলছে আর হাসছে, বুঝলাম না ভাবি ওকে কি এমন বললো যে কান্না থেমে গেছে এখন বসে বসে হাসছে
–অন্নি আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছ কেন এখানে এসে বস
–ভাবি তোমাকে কি বলেছে
–এইটা বলা যাবে না
–বলবা কিনা
–জ্বী না
–তাসিন
–রাগ দেখিয়ে লাভ নেই আর শুনো সন্ধ্যায় তোমাকে হোস্টেলে রেখে আসবো
–তোমার থেকে দূরে গেলেই আমি বাঁচি
–দেখো আবার না কোনো সময় আমাকে কাছে না পেয়ে মরতে বস হিহিহি
–তোমার হাসিটা একদম ভূতের মতো
–হুহ ইউনিভার্সিটি তে যখন পড়তাম তখন ক্লাসের মেয়েরা তো আমার হাসি দেখে ক্রাশ খেত সাথে বড় আপুরাও খেত
–ওদের রুচি খারাপ তাই তোমার হাসি দেখে ক্রাশ খেত
–তুমিও একদিন এই হাসির প্রেমে পরবা
–তোমার সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না প্লিজ মুখটা বন্ধ রাখো
–অন্নি আমার একটা কথা রাখবে
–আবার কথা বলছ বললাম না চুপ থাকতে
–প্লিজ এই কথাটা রাখবে বল শুধু
–কি বলো
–হোস্টেলে গিয়ে তুমি তোমার চাচ্চুর সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবে না বলো
–মানে কি চাচ্চু আমার মা বাবা সব উনি আমাকে বড় করেছেন আর তুমি উনাকেই ভুলে যেতে বলছ
–হ্যা বলছি প্লিজ বল আমার এই কথাটা রাখবা
–তাসিন তুমি পাগল হয়ে গেছ ডক্টর দেখাও
তাসিনের চোখের সামন থেকে চলে আসলাম বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, খুব খারাপ লাগছে তাসিন কি বললো এসব চাচ্চু কে ভুলে যেতে বলছে তাসিন এমন আগে জানতাম না তো, আমি আর ওর কাছে থাকবো না এখনি হোস্টেলে চলে যাবো, রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছাতে শুরু করলাম
–অন্নি ব্যাগ গুচাচ্ছ কেন
–চলে যাবো
–এখনি
–হ্যা
–একা যাবে
–হ্যা একাই যাবো আমার সাথে কাউকে যেতে হবে না
–বাসার সবাই ভাববে তুমি ঝগড়া করে যাচ্ছ রেডি হয়ে নাও আমিই দিয়ে আসবো
–হুম
রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম, তাসিন ড্রাইভ করছে আর বার বার আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে
–অন্নি
–কথা বলতে ভালো লাগছে না চুপ থাকো
–একটু পর তো কেউ আর এভাবে বকবক করবে না এখন নাহয় একটু সহ্য করো (কথাটায় কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে সত্যিই তো তাসিন আর আমার সামনে বকবক করবে না আমিও বিরক্ত হবো না, আচ্ছা তাসিন আমাকে বিরক্ত করবে না এইটা তে তো আমার খুশি হবার কথা কিন্তু আমার কষ্ট হচ্ছে কেন)
–অন্নি সোনা কাঁদে না চিন্তা করো না তুমি যেন আমাকে রোজ দেখতে পারো সে ব্যবস্থা করবো (চোখে হাত দিয়ে তো আমি অবাক নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি পরছে)
–কি ম্যাম তুমি না আমায় ভালোবাস না তাহলে কাঁদছ কেন
–তোমার জন্য কাঁদতে আমার বয়েই গেছে, চোখে কি যেন পরেছে
–হুম বুঝেছি হোস্টেলে চলে এসেছি এবার নামো
হোস্টেলের সব জামেলা শেষ করে তাসিন আমাকে রুমে দিয়ে চলে গেলো, আশ্চর্য আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তাসিন একটু মন খারাপও করলো না, দৌড়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম তাসিন কে দেখা যাচ্ছে গাড়িতে উঠে চলে গেলো একবার পিছন ফিরে থাকালো না…..
চলবে?