আমার_প্রতিশোধ
পার্ট: ০৮
আয়নার সামনে বসে গুনগুন করে গান গাইছি আর গহনা খুলছি হঠাৎ তিথি দৌড়ে আসলো
–ভাবি পরী কি তোমার কাছে
–না কেন
–পরী কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না (বলেই কেঁদে দিলো খুব খারাপ লাগছে কেন করলাম আমি এমন আমারই বা কি করার আছে মা বাবার খুনের বদলে খুন করা উচিত ছিল এইসব তো কমই করছি)
নিচে এসে দেখি তাসিন আর আসিফ ভাইয়া বাদে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে কাঁদছে, আমি ভাবির কাছে যেতেই আমাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল কি বলবো কি বলে শান্তনা দিব খুঁজে পাচ্ছি না কারন অপরাধী যে আমি
রাত দশটা বাজে তাসিন আর আসিফ ভাইয়া এখনো বাইরে খুঁজছে ভাবি কাঁদতে কাঁদতে বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে ইচ্ছে হচ্ছে পরী কে এখনি এনে দেই কিন্তু এইটা করলে যে ওদের কষ্ট দেওয়া হবে না
পুলিশে রিপোর্ট করা হয়েছে তারা তদন্ত করছে কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না জানি পাবেও না কারন পরী চাচ্চুর বাসায় আছে, সারা রাত কেউ ঘুমায়নি সবাই কাঁদতে কাঁদতেই রাত কাটিয়ে দিলো
ভোরের দিকে চারদিকে যখন অন্ধকার কেটে আলো ফুটতে শুরু করেছে তখন হঠাৎ দারোয়ান দৌড়ে এসে হাপাতে শুরু করলো, দারোয়ানের হাতের দিকে থাকিয়ে সবাই চিৎকার করে কেঁদে উঠলো, পরীর পরনে যে জামা ছিল সেইটা রক্তাক্ত অবস্থায় দারোয়ানের হাতে তাহলে কি চাচ্চু পরী কে মেরে ফেললো, না না তা হবে কেন আমার অনুমতি ছাড়া তো চাচ্চু পরীর গায়ে একটি টোকাও দিবে না আর চাচ্চু তো এমন না,বাবা দৌড়ে গিয়ে দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলেন
–এইটা কোথায় পেয়েছ
–গেইট খুলে বাইরে যাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখি পরী মামুনির জামা গেইটের সামনে ফেলে রাখা (কথাটা শুনেই বাবা বুকে হাত দিলেন তারপর মাটিতে লুটিয়ে পরলেন)
বাবা হার্ট এট্যাক করেছেন তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করে তাসিন আর ভাইয়া বাবা কে নিয়ে হসপিটালে চলে গেলো, বাড়িতে কান্নার রুল পরে গেলো সবাই কাঁদছে একদিকে পরী কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না অন্য দিকে বাবা হার্ট এট্যাক করেছেন আচ্ছা আমি কি অন্যায় করলাম নাকি কথাটা ভাবতে ভাবতে মায়ের দিকে থাকালাম উনি অজ্ঞান হয়ে ফ্লোরে পরে গেছেন, তাড়াতাড়ি ধরে উনার রুমে নিয়ে গেলাম মাথায় পানি দিলাম অনেক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো
মা এখন একটু সুস্থ, তিথি কে মায়ের পাশে বসিয়ে দৌড়ে রুমে এসে চাচ্চু কে ফোন দিলাম
–চাচ্চু
–কিরে এভাবে হাপাচ্ছিস কেন
–পরী কোথায়
–এইতো এখানেই পুতুল নিয়ে খেলা করছে
–তাহলে সকালে যে পরীর জামা…
–ওইটা তো পাঠিয়েছি আফজাল চৌধুরী কে কষ্ট দেওয়ার জন্য
–চাচ্চু উনি হার্ট এট্যাক করেছেন
–এটাই তো আমি চেয়েছিলাম
–কিন্তু
–দেখ অরনী তোর যে মন এই মন নিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া যায় না শক্ত হ মা তোর বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নে
–হুম
ফোন রেখে চুপ করে ভাবছি
আমি যে এসব করছি সেগুলো কি অন্যায়….?
তাহলে আফজাল চৌধুরী যে আমার বাবা মা কে খুন করলো সেটা কি অন্যায় না….?
আমি তো কাউকে খুন করিনি শুধু ওদের তিলেতিলে কষ্ট দিচ্ছি তাহলে আমার কাজ গুলো অন্যায় হবে কেন….?
হ্যা আমি উনাকে পুলিশে দিতে পারতাম কিন্তু লাভ হতো না কারন উপযুক্ত প্রমান আমার হাতে নেই উনি ঠিক টাকার জোরে বেরিয়ে আসতেন তখন কি আমার বাবা মায়ের খুনের শাস্তি উনি পেতেন….?
আমি যা করছি তা তো খুব কম তাহলে অন্যায় হবে কেন….?
সবকিছু ভেবে মন স্থির করলাম আমি আমার বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিবই তাতে যা করা লাগে করবো প্রয়োজন হলে ওদের সাথে নিজেকেও শেষ করে দিবো
হসপিটাল থেকে তাসিন ফোন করে জানালো বাবা এখন একটু সুস্থ কিন্তু ডক্টর বলেছে বাবা কে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলতে হলে পরী কে উনার কাছে এনে দিতে হবে, এখন আমি কি করবো পরী কে ফিরিয়ে আনবো নাকি আর দুদিন রেখে দিবো কিন্তু বাবা যদি মারা যান, আমি তো এইটা চাই না আমি চাই ওরা কষ্ট পেয়ে তিলেতিলে শেষ হয়ে যাক
–ভাবি
–হ্যা তিথি বল
–মা তো শুধু কান্না করছে এভাবে চলতে থাকলে মা আরো অসুস্থ হয়ে পরবে ভাবির অবস্থাও ভালো না
–এক কাজ করো দুজন কে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ঘুম পারিয়ে রাখো
–ঠিক বলেছ ভাবি
–হুম যাও
নাহ আর পারছি না চেয়েছিলাম ওদের শাস্তি দিতে এখন দেখি তিন তিনটা মানুষ মারা যাবে, যতোটুকু শাস্তি পেয়েছে ততোটুকুই থাক অন্য উপায়ে নাহয় আবার দিব এখন পরী কে এনে দেই, চাচ্চু কে ফোন দিলাম
–চাচ্চু পরী কে পাঠিয়ে দাও
–কি বলছিস
–হ্যা যা বলছি তা করো
–কিন্তু কেন
–পরীর মা তো এই বাড়ির বউ উনার তো কোনো দোষ নেই উনি কেন শুধু শুধু কষ্ট পাবে
–হুম
–জামাটা যেভাবে রেখেছিলে ভোরবেলা ঠিক সেভাবে পরী কে রেখে যাবা কিন্তু অজ্ঞান অবস্থায়
–ঠিক আছে
এছাড়া আর কিছু করার নেই আমি আমার বাবা মায়ের খুনের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে পরী কে মা হারা করতে পারবো না, ভাবির যা অবস্থা আর দুদিন গেলে মারা যাবে আর বাবা মায়ের তো অবস্থা আরো বেশি খারাপ, ফোনে রিংটোন বাজছে তাসিন ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–কি করছ
–কিছুনা বাবার অবস্থা এখন কেমন
–সেটা জেনে তুমি কি করবে
–মানে (তাসিন কি কিছু বুঝে ফেললো নাকি)
–না কিছু না বাবা ভালো আছে একটা কথা বলার জন্য তোমাকে ফোন দিয়েছি
–কি কথা
–ভাবছি হানিমোনে যাবো
–কি
–অবাক হচ্ছ কেন
–পরিবারের এমন অবস্থায় তুমি হানিমোনের কথা ভাবছ
–সব ঠিক হয়ে যাবে পরী ফিরে আসবে তুমি ভয় পেয়ো না
–কিন্তু আমি হানিমোনে যাচ্ছি না
–অন্নি দেখো আমাদের মধ্যে যা মান অভিমান চলছে হানিমোনে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে
–আর একবার যদি হানিমোনের কথা বলেছ তো আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো
–সেটা তুমি পারবে না
–কেন
–আমি যেতে দিব না তাই
–তাসিন তুমি কিন্তু বেশি করছ
–মোটেও না তুমি বেশি করছ আর হ্যা আমরা হানিমোনে যাচ্ছি এটাই ফাইনাল এখন তুমি শুধু ঠিক করো কোথায় যাবে (বলেই ফোন কেটে দিলো)
তাসিন এভাবে কথা বলছিল কেন তাহলে কি ও কিছু বুঝতে পেরেছে কিন্তু বুঝবে কিভাবে আমি তো চাচ্চুর সাথে খুব সাবধানে কথা বলি……
চলবে?