আজ আমার বিয়ে পার্ট ২+৩+৪+৫

0
3791

আজ আমার বিয়ে পার্ট ২+৩+৪+৫
লেখা আশিকা জামান

পরদিন সকালে ঘুম ভাংগে ফোনকলের শব্দে।
ঘুম ঘুম চোখে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে…
— হ্যালো কে??
— অরিন, আমি ইভান বলছি..

— জি বলেন…
— আচ্ছা তুমি কি তোমার বাসার সামনে আসতে পারবা??
— এখন, এতো সকালে??
কিভাবে??
আমি ঘুমাই…

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



— কী?? তুমি ঘুমাও..
কয়টা বাজে জানো ১১:৩০
বলেই হেসে কুটিকুটি হচ্ছে..
অসম্ভব সুন্দর হাসি..
অন্যকেউ এতক্ষন আমাকে নিয়া এমন হাসি দিলে পুরা তুলকালাম বাজিয়ে দিতাম।
কিন্তু আমি কি করলাম..
কপট হাসি দিলাম। তালে তাল মিলিয়ে..
– আচ্ছা পনেরো মিনিট পর আসছি।
– ওকে। বাই…
ফোন্টা কেটে দিলো..
কোনরকম দাত ব্রাশ করে, চুলটা ঠিক করে নিচে নামলাম।
গেটে আসতেই দেখি, স্কাই কালার টি শার্ট আর জিন্স প্যণ্ট পরা ইভান আমার দিকেই আসছে…
আমি ওনাকে আসতে দেখে থেমে গেলাম…
একদম আমার কাছে চলে এলো, এই প্রথম কাছ থেকে দেখলাম…
অদ্ভুত সুন্দর চাহনি।
চোখ সরাতে পারলাম নাহ…
কিন্তু ইভান আমার সাথে কোন কথা না বলেই…
কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে…
চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিলাম…
সুনসান নিরবতা বিরাজ করছে…
নিরবতে ভেংগে সেই প্রথম বললো..
— নাহ, আমি খুবি দুঃখিত তোমার ঘুমটা ভাঙার জন্য…
— আপনি কি মজা করছেন??
— একদমিই না। আচ্ছা এই নাও টাকাটা..
বলেই আমার দিকে এক হাজার টাকার ২ টা নোট এগিয়ে দিলো.
আমি হাতের দিকে তাকাই দেখি ইভানের হাত কাপছে…
আমি হাত বাড়াতেই আমার হাতে ইভানের স্পর্শ লাগলো…
একটা অন্যরকম ভালোলাগা ছুয়ে গেলো।
টাকাটা হাতে নিয়ে, দ্রুতগতিতে হাতটা সরিয়ে নিলাম।
ইভানকে কোন কথা বলার সু্যোগ না দিয়েই, আসি বলে তড়িৎ গতিতে চলে আসলাম…
ইভান আমার যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো।
সেদিন রাতে যখন ইভান আবার কল দিলো, আমি খুব একটা অবাক হয় নাই। কেন যানি আমার মন বলছিলো, ইভান আমাকে কল করবে।
— হ্যালো…
— অরিন, কেমন আছো??
— ওই সকালে যেমন দেখেছিলেন, তার থেকে খুব একটা ভালো বোধ হয় নই.
ইভান কিছুক্ষন চুপ করে গেলো…
— কি হলো, কিছু কি বলবেন??
নাকি চুপ হয়ে থাকবেন…
— তমার সাথে তোমার কথা হইছে??
আসলে ওকে ফোনে পাচ্ছিলাম নাতো তাই…
আমি ইভানকে থামিয়ে দিয়ে বললাম.
— ও তাহলে তমা আপুর খবর নেয়ার জন্য ফোন করেছেন??
না সে খুবি ভাল আছে। আর টেনশন করবেন না শীঘ্রই চলে আসবে..
— আসলে…
ব্যাপারটা তা নয়।
আচ্ছা আমি এখন রাখি….।
ফোন্টা কেটে গেল…
ভেবেছিলাম ইভান ব্যাটা আমাকে আর কল দিবেনা।
কিন্তু নাহ..
সে আমাকে পরদিন আবার কল করলো…
আমিও নাছোড় বান্দা এইবারো জিজ্ঞাস করি, আচ্ছা ভাইয়া তমা আপুর খবর নেয়ার জন্য কি আজকেও কল করেছেন??
না অধিক সাহস অর্জন করে সে যা বলে তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না…
— নাহ, আমি তোমার খবর নেয়ার জন্যই ফোন করেছি।
আমি পুরা চুপসে গেলাম।
— আচ্ছা আমি তোমাকে ফোন করতেই পারি। কি কোন প্রবলেম আছে থাকলে বলো..
না আর দিবোনা তাহলে.
আমি আবার কাওকে ডিস্টার্ব করিনা।
মনে মনে ভাবি ফুটানিতো কম না বাবু.
আমাদের কথার সুত্রপাতটা এইভাবেই হয়…..
ফোনে কথা বলাটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে…
একসময় বুঝতে পারি আমরা দুজনেই দুজনের প্রতি দুর্বল হয়ে গেছি..

পার্ট ৩

ইভান আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি বুঝাতো সে আমাকে ভালবাসে।
বাট সবকিছু আমি ফান হিসেবে হেসে উড়িয়ে দিতাম।
আমি ইভানকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম কিন্তু আমার বাবা প্রেম ভালোবাসা এইসব প্রছন্দ করে না।
এই সম্পর্ক সে কোনদিন মেনে নিবে না, তাছাড়া বাবার মুখের উপর কিছু বলার সাহস আমার নাই।
যে সম্পর্ক কোনদিন পূর্নতা পাবে না তাকে প্রস্ফুটিত করে কি লাভ।
এরপর থেকে আমি ইভানকে ইগ্নোর করার চেষ্টা করলাম।
সে ফোন করলে আমি রিসিভ করতাম না।
বাহিরে বের হলে দেখা হলে এড়িয়ে যেতাম…
সে কোন উপায় না পেয়ে তমা আপুকে সবটা বলে…
আপু এসে আমাকে অনেক বোঝায় দেখ, ইভান খুব ভালো ছেলে ও তোকে খুব ভালোবাসে..
তুই ওর সাথে এমন করছিস কেন??
ওকে অন্তত ওর কথাগুলা বলার সুযোগ দে..
আমার কানে ফোন রিসিভ করে তমা আপু ধরতো…
আমি সাথে সাথে কেটে দিতাম।
কারন, জানি আমি ওর সাথে কথা বললে ওকে ফিরিয়ে দিতে পারবো না।
আমি তমা আপুকে শুধু এক্টাই কথা বলেছিলাম দেখো, আমি চাইনা তোমার আর আমার সম্পর্কটা কোন তৃতীয় ব্যাক্তির জন্য নষ্ট হয়ে যাক। আর এই বিষয়ে আর একটা কথাও আমি শুনতে চাই না।
তমা আপু এর পর আমার সামনে ইভানের প্রসঙ্গ তুলে নাই..
ইভানকে সে কি বলেছিলো সেটা সেই জানে..
একদিন আমি তমা আপুকে নিয়া শপিং এ যাই…
আসতে আসতে ৮ টা বেজে যায়…
যেহেতু রাত্রি তাই ওইটাইমে মানুষ জন খুব কমই রাস্তায় থাকে..
বাসার সামনে নামতেই দেখি ইভান…
আমি আমার চোখ নিচের দিকে দিয়ে সামনে হাটতে লাগলাম…
কয়েক কদম পা ফেলে আর হাটতে পারছিলাম না…
পিছন থেকে হাতে টান অনুভব করছিলাম.
ইভান আমার হাতে টান দিয়া ধরে আছে…
— দাঁড়াও কথা আছে….
তমা তুই বাসায় যা, অরিন একটু পর আসবে…
— হাত ছাড়ুন প্লিজ, আর আপু তুমি যাবানা দাঁড়াও….
আমি হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম..
কিন্তু পারলাম না….
— ইভান এইগুলা কি হচ্ছে??
তুই অরিনকে ছাড় বলছি…
তুই শুনতে পাস নাই, তোর সাথে অরিনের কোন কথা নাই…
ইভান চিৎকার করে উঠে…
তুই যাবি নাকি যাবিনা…
তমা আপু ধমক খেয়ে চলে যেতে থাকে…
আমি ভয়ে জমে যাচ্ছিলাম…
ইভান আমার হাত ছেড়ে দেয়..
আমি নিচের দিকে মাথাদিয়ে কাচুমাচু করে তাকাই…
— তুমি আমাকে ভালোবাসো অর বাসো না??
উত্তর দাও…
ওর দিকে না তাকায়েই…
বলি
— না বাসি না। আপনি আমাকে যেতে দিন..
— উহু এইভাবে না..
বলেই ইভান আমার দুই গাল তার দুই হাত দিয়ে ধরে উপরে তুলে…
— আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো ভালবাসি না…
কি হলো বলো…
আর সাথে এইটাও বলবা আমার কি অপরাধ??
কেন এমন করতেছো??
আমি ওর চোখের দিকে তাকাই দেখি কেমন লাল চোখ…
কেমন মলিন চাহনি…
আমি ওর দিকে তাকাতে পাচ্ছিলাম না..
আমি পারছি না কিছু বলতে..
উত্তেজনায় আমার শরীর কাপছে…
— কি বলো??
তখন যা বললা এখন সেটা বলো??
যতক্ষন না বলবা ততক্ষন যেতে পারবা না…
কি হলো সহজ প্রশ্নের উত্তরটা দিয়ে চলে যাও..
বিশ্বাস করো এই আজকেই শেষ বাকী জীবনে চোখের সামনে আর আমাকে দেখতে পাবা না…
— হাত সরান বলছি, আমাকে টাচ
করার সাহস কি করে পান??
— সাহসটা আসলে অর্জন করতে হয়..
যেটা সবাই পারেনা.
যেমন তোমার সাহস নেই সত্ত্যিটা স্বীকার করার…
— কোন সত্যি???
— তোমার চোখ বলছে ভালোবাসি
মুখে বলছো অন্য কথা…
কেন??
কেন অরিন ??
আমি জোর করে অন্যদিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম…
চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে…
ইভান আমাকে ছেড়ে দেয়…
— বাসায় যাও। আমার যা বোঝার আমি বুঝে গেছি..
ফোনটা অন রেখো..
যদি না ধরো…
তাহলে কালকে সকালে আর আমাকে খুঁজে পাবানা…
চিরতরে চলে যাব সব ছেড়ে মাথায় রেখো…
— ইভান, আপনার মুখে কিছু আটকায় না। নাহ…
যা মুখে আসে সব বলে ফেলেন
— হ্যা, দাত থাকতে তো কেউ দাতের মর্যাদা বুঝে না।
আর পুরাটা তোমার উপর ডিপেন্ড করছে…
ইভান উল্টোদিকে হাটা শুরু করলো..
আমিও চলে এলাম..
বাসায় এসে অনেক্ষন কান্না করছিলাম..
তমা আপু আমাকে অনেকবার করে জিজ্ঞাস করছিলো ইভান কিছু করছে কিনা??
আমি কিছুই বলছিলাম না।
একটু পর তমা আপু আমার কানে ফোন গুজে দিয়ে চলে যায়.
— কি সমস্যা??
এইভাবে ভ্যা ভ্যা করতেছো ক্যান??
আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি??প্লিজ
কান্না থামাও..
— আচ্ছা আপনার কি মনে হয় নিজেকে??
আপনার জন্যই আমি কান্না করবো.
না আর কোন রিজন থাকতে পারে নাহ.
— এইযে আবার মিথ্যা বলছো..
— কি??
আমি মিথ্যা বলছি??
আর শোনেন আমার যখন যা করতে ইচ্ছা করবে আমি তখন তাই করবো, তাতে আপনার কি??
— আমার কি??
সেটা যদি তুমি বুঝেও না বুঝার মত এই কথাগুলো বলো তাহলে তো আর কিছু করার নাই…
দুজনেই চুপ করে গেলাম…
— খুব ভালোবাসি তোমায়..
অরিন…
আই লাভ ইউ..
একদমে কথাটা বলে ফোন কেটে দিলো।

পার্ট ০৪

সকালে ইভান আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাস করেছিলো আমার আজকে ক্লাস আছে কিনা??
কেন জিজ্ঞাস করলো সেটা সেই জানে।
আমি ১০ টার সময় রাস্তায় রিক্সার জন্য দাড়য়ে আছি অনেকক্ষন ধরে…
হঠাৎ করে পিছনে তাকাই দেখি ইভান আসছে…
— অরিন তুমি দাঁড়াও আমি রিক্সা নিয়াসছি…
আমি আচ্ছা বলে দাঁড়িয়ে থাকলাম
রিক্সা নিয়া এসেই ইভান আমাকে উঠতে বললো..
উঠে দেখি ইভানও রিক্সায় উঠতে লাগলো..
— আপনি কোথায় যাবেন??
— তুমি যেখানে যাচ্ছ। সেখানে..
— মানে??
— অত মানে টানে বুঝি না.
তুমি ওইদিকে সরে বসো…
— আমি আপনার সাথে একসাথে যেতে পারবো না..
আপনি নামেন.
ইভান একদম আমার গা ঘেষে বসে পড়লো…
–এই মামা যাও তো..
লেট হয়ে যাচ্ছে..
আমার খুব আনইজি লাগছিলো..
এই প্রথম কোন ছেলের সাথে আমি এত কাছে…
আমি যতই কাচুমাচু করে সরে বসতেছি..
ইভান ততোই আমার গা ঘেষে বসতে লাগলো..
কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম রিক্সা অন্যদিকে যাচ্ছে…
— আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন??
দেখুন আমার ক্লাস আছে.
— থাকুক। চুপ করে বসো..
নাহ আমি রাস্তায় তাই কোন সিনক্রিয়েট করতে পারছি না।
রাগে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে আছি…
– আচ্ছা তুমি কি এমন প্যাচার মত মুখ করে রাখবা। আরে বাবা একটু তো হাসো..
— নাহ আমার দাত কেলিয়ে হাসি আসছে না।
ওইটা,আপ্নাকেই মানায়..
আপনি একটা ক্লোজআপ মার্কা হাসি দেন আমি মুগ্ধ নয়নে অবলোকন করি। কেমন….
— তুমি না খুব দুষ্টু…
ইভান খিলখিল করে হেসে উঠে…
আমার রাগে শরীর জ্বলছে…
ইভান আমাকে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়.
আবহাওয়াটা খুব সুন্দর…
মৃদুমন্দ বাতাস বারবার আমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছিলো..
আমার মনটা এক নিমিষেই ভালো হয়ে যায়…
— আচ্ছা অরিন তোমার চুলগুলো এতো সুন্দর কেন??
— থাক আর আমাকে ফুলাতে হবে না। লোড বেশি হলে উড়ে যাবো কিন্তু…
ইভান আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলে, উড়ে যেতে দিবোনা..
একদম শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখবো…
ওর কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে মুখ লুকাই…
— তুমি অন্য দিকে তাকিয়ে আছো কেন??
আমার দিকে তাকাও..
আমি তাকাচ্ছিলাম না…
সে জোর করে আমার চিবুক ধরে তার দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করে…
আমি তখনো নিচের দিকে তাকাই আছি..
আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলে..
— তুমি এমন লজ্জা পেলে, আমার খুন হয়ে যেতে ইচ্ছা হয়…
— ইভান!!..
— কি বলো..??
কিছুই বলছি না..
— আচ্ছা তোমার মুড কি এখন ভাল হইছে…?
— হুম..
থ্যাংকস আপনাকে, এখানে নিয়ে আসার জন্য…
— এইবার অন্তত আপনি থেকে তুমিতে আসো…
আর কত দূরে সরাই রাখবা??
— পারবোনা। আমি তোমাকে সারাজীবন আপনিই ডাকবো..
ইভান খিল খিল করে হেসে উঠে..
— কি বলছো তুমি….??
এনি ওয়ে থ্যাংকস তুমি করে বলার জন্য..
— এইভাবে হাসবা না। অসহ্য লাগে..
— জু হুকুম ম্যাম..
কিছুক্ষন দুজনেই চুপ.
ইভান নিরবতা ভেংগে বলে উঠে
— তুমি কিন্তু এখনো আমার উত্তর দাও নাই…
আমি ইভানের কাধে মাথা রেখে বলি..
— কিছু কথা বুঝে নিতে হয়…
— আই লাভ ইউ অরিন..
–লাভ ইউ সো মাচ…
এইটা বলতেই ইভান আমাকে জড়িয়ে ধরলো…
একদম ওর বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো..
আমিও ওকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম
কথা দাও কোনদিনো ছেড়ে যাবেনা…
ইভান আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার দুই হাত ধরে বলেছিলো…
— এই তোমাকে প্রমিজ করলাম, যত ঝড় বাধাই আসুক তোমাকে আমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না…
আমার চোখে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে….
আচ্ছা প্রেমের শুরুতে এই সব কমিটমেন্ট মানুষ করে কেন??
আসলে সব মিথ্যে সব মিথ্যে…
মানুষ প্রমিজ করে প্রমিজ ভাংগার জন্য…
নওরিন আমাকে জড়িয়ে ধরে…
— আপু ইভান ভাইয়াকে খুব মনে পড়ছে নারে??
তুই কেন বাবাকে সব কিছু খুলে বললি না..
বল আপি??
কি হয়েছিলো তোর আর ভাইয়ার মাঝে??

পার্ট ০৫

— নওরিন প্লিজ আজকে অন্তত আমি পুরোনো কথা মনে করতে চাই না।
— আপি তুমি মিথ্যে বললে সবসময় ধরা পড়ে যাও,
তুমি প্লিজ অন্তত আমাকে এই মিথ্যেটা বলো না….
যাকে এত ভালোবাসো তাকে এইভাবে কষ্ট তুমি দিতে পারো না…
— এখানে আমার কি করার আছে…
আমি কি বলবো বাবাকে বল…
ইভান আমাকে ঠকিয়েছে..??
ও ওর ছাত্রী টুকটুকির সাথে যা করেছে….
ছিঃ কত নোংরা মানুষ..
ভাবতেও আমার গা ঘিনঘিন করে…
এইগুলা জানা সত্ত্বেও আমি ওকে মেনে নিবো বল…
আর ও টুকটুকিকে ভালোবাসে..
আমাকে মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়েছে..
— আপু তোমার অন্তত ভাইয়াকে একবার জানানো উচিৎ ছিলো..
— নাহ কোন লম্পটের সাথে আমার কোন কথা নাই।
অলরেডি ব্লক লিস্টে নাম্বার…
আমিই সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিছি..
তবে আমি এই মুহুর্তেতে বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না..
আই নিড টাইম…
কিন্তু বাবা সেটা বুঝলো নাহ..
— আপি সব দোষ মিথিলার। ও যদি ওর বি এফের সাথে পালিয়ে না যেতো..
তাহলে আজকে বাবা ভয় পেয়ে এত তাড়াতাড়ি সোহান ভাইয়ার সাথে তোর বিয়েটা দিতে চাইতো নাহ…
বাবা তোর আর ইভান ভাইয়ার ব্যাপারটা কানা ঘুষা শুনেছে..
পুরাটা ক্লিয়ার জানে না।
বাবার ভয় তুই ও যদি মিথিলা আপির মত এমন করিস।
যেদিন মিথিলা আপি এই কাজটা করেছিলো সেদিন চাচা স্ট্রোক করেছিলো।
আর বাবা তো হার্টের পেশেন্ট…
বাবা সত্যিই নিতে পারতো নারে…
তবুও আপি লাইফটা তোমার..
সারাজীবনের প্রশ্ন…
আচ্ছা ভালো করে ভেবে দেখতো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে নাতো…
ইভান ভাইয়াকে যতদূর দেখেছি সে এমন কাজ করতেই পারেনা…
— তুই কিছু জানিস না তাই এমনটা বলতে পারছিস। আমি সেইসব চিরতরে ভুলে যেতে চাই, কিন্তু তোর জন্য আবার মনে করতে হচ্ছে.
ইভানের সাথে আমার সম্পর্কটা খুব ভালোই চলছিলো…
আমি ওকে এতোটাই ভালোবেসে ফেলেছিলাম, যে ওকে ছাড়া এক মুহুর্ত চলতে পারতাম না।
আমার কাছে মনে হয়ে ছিলো একজীবনে যত সুখ পাওয়ার সব আমি পেয়ে গেছি..
কিন্তু সবকিছুতো আর কারো ইচ্ছাও চলে না।
প্রকৃতি সবসময় তার নিজের গতিতেই চলে..
ইভান একটা নিউ টিউশনিতে যায়..
মেয়েটার নাম টুকটুকি.
ইভানের এক দূর সম্পর্ক এর খালাতো বোন।
সামনে ইন্টারমিডিয়েট এক্সাম দেবে.
মেয়েটার কথা ইভান আমাকে প্রায়শই বলতো, আমার কেমন যেন সুবিধার মনে হত না। আমি প্রথম এতটা পাত্তা দিতাম না…
একদিন আমি ইভান কে কল দেই ওইটাইমে আবার ইভান টুকটুকিকে পড়াচ্ছিল…
মেয়েটা আমার ফোন ধরে…
হ্যালো বলেতেই…
এই আপনি কে বলুন তো??
জানেন না এখন ভাইয়া শুধু আমাকে টাইম দিবে।আপনি ডিস্টার্ব করবেন না।
আমাকে কোন কথা বলার সু্যোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো।
আমার খুব মেজাজ খারাপ হয়..
সন্ধ্যায় ইভানের সাথে দেখা হলে ইচ্ছারকম ঝগড়া করি…
ইভান বলেছিল…
— অরিন তুমি অঝথাই আমার উপর রাগ করছো??
দেখো ও একটা বাচ্চা মেয়ে ও কিনা কি বলেছে তার জন্য এত রাগ করতে আছে। আর আমি ওকে বকা দিয়ে দিয়েছি..
— ও বাচ্চা মেয়ে নাহ…
বেশ ভালো কথা।
তুমি ওকে আর পড়াবা না ব্যাস…
— অরিন ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড ওর সামনে এক্সাম…
পরে আমি নিজেই বাদ দিয়া দিবো, তোমাকে বলতে হবে…
আমি রাগে উঠে পড়ি…
ইভান আমার হাত ধরতে আসলে আমি চলে আসি।
এইভাবে প্রায়শই কোন না কোন কারনে ঝগড়া লেগেই থাকতো।
ওই মেয়ে একদিন আমাকে ফোন করে বলে…
আপনি ইভান ভাইয়া আর আমার মাঝখান থেকে চলে যান, আমি ইভানকে ভালোবাসি।
আমি মেয়েটাকে ইচ্ছামত বকা ঝকা করি।
বিকেলে ইভানকে আসতে বলি..
ইভান আসলে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকি.
— অরিন চোখ মুছো। বল কি হইছে??
আমি ওকে সব খুলে বলি।
ও রেগে যায়.
আমার সামনে টুকটুকিকে ফোন দিয়ে ব্যাপারটা জিজ্ঞাস করাতে, সে উত্তর দেয় এইগুলা সে বলেই নাই..
আমি কেমন আছি এইগুলা নাকি জিজ্ঞাস করছে…
এইবার আমার দিকে তাকাই বলে…
— অরিন, কই টুকটুকিতো এইগুলা কিছুই বললো না।
— তাহলে আমি কি মিথ্যা বলছি??
কি বলতে চাচ্ছ…
ইভান চুপ করে যায়…
— অরিন সত্যি কথা বলতে কি জানো, তুমি ওই মেয়েকে নিয়া সারাদিন উল্টাপাল্টা ভাবো, আর উদ্ভট উদ্ভট বানোয়াট গল্প আমাকে শোনাও..
তুমি আসলে মেন্টালি সিক…
— কি??
আমি পাগল…??
ওই মেয়ে এতোটা প্রায়োরিটি পায় কেমনে তোমার কাছে??
তুমি আমাকে মিথ্যাবাদী প্রমান করলেতো…
বেশ তুমি ওই মেয়েকেই বিশ্বাস করো কেমন…
আমি চললাম।
— যাও আমি তোমাকে আটকাবোনা। তোমার মন এত চিপ…
আমার সত্ত্যি জানা ছিলো না।
সেইদিন অনেক রাগারাগি র পর আমাদের ব্রেকাপ হয়…
এরপর ইভানকে দেখলে আমি এড়িয়ে যেতাম…
আমি ওকে ফোন দিতাম না। সেও দিতো না
ইভানের চাচাতো বোন আমাদের ব্যাপারটা জানতো…
তার বাসায় ইভানের সাথে আমি বেশ কয়েকদিন বেড়াতে গিয়েছি…
সে একদিন তার বাসায় আমাকে ইনভাইট করে তার মেয়ের জন্মদিনে..
আমি অনেক জোড়াজোড়ির পরে রাজী হই..
রাজী হওয়ার আরেকটা কারন হলো, আগের দিন ইভানকে দেখেছি ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে।
তারমানে সে তাদের বাসায় চলে যাচ্ছে। আর সেখানে ইভান যেহেতু যাবেনা সেহেতু নিশ্চিন্তেই যেতে পারি…
আমি রেডি হয়ে সেই বাসায় পৌছে দেখি ইভান আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই সেখানে..
চলবে।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে