অভিমান হাজারো পর্বঃ-৫

0
2110

অভিমান হাজারো পর্বঃ-৫
আফসানা মিমি

অদিতি আর ইয়াসমিন বেগম ড্রয়িংরুমে বসে কি নিয়ে যেন কথা বলছিল। তার থেকে একটু দূরে অতশী এসে দাঁড়ানোর পর তার শাশুড়ী বললেন
—“একি অতশী তুমি ঐখানে দাঁড়িয়ে কেন? এখানে এসে বোসো আমাদের পাশে।”

মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে তাদের পাশে এসে বসলো
—“তোমার সাথে তো ভালো করে কথাই বলা হয়ে ওঠেনি আসার পর। বলতে পারো সময় সুযোগের অভাবে কথা বলতে পারিনি। তুমি আবার রাগ করোনি তো!”
—“ছিঃ না না রাগ করবো কেন আন্টি? আমার কাছেই বরং খারাপ লাগছে যে আমি নিজে থেকে আপনাদের কারো সাথে ভালো করে দুটো কথা বলিনি। আমারই ভুল হয়ে গেছে।”
—“না মামনি তোমার কোন ভুল নেই। আসলে হুট করে বিয়েটা হয়ে গেল তো তাই কিছুটা ছন্নছাড়া লাগছে সবকিছুতে। তোমার ওপর দিয়েও বেশ ঝড় বয়ে গেছে বুঝতে পারছি। স্পন্দন তোমার কথা অনেক বলতো জানো! কখনো ভাবিনি এমন মুখচোরা স্বভাবের ছেলেটা আমার কাউকে এমন প্রবলভাবে ভালবাসবে। আমার কাছে কখনো কোন জিনিস চায়নি সে সেই ছোটকাল থেকেই। যে ছেলেটা সারাক্ষণ বইয়ে ডুবে থাকতো সে হঠাৎ করেই বইয়ের প্রেম বিসর্জন দিয়ে একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল! কি গম্ভীরই না ছিল স্পন্দন! কিন্তু যখন থেকেই তোমাকে ভালবাসতে শুরু করেছে তখন থেকেই খেয়াল করেছি সবসময় ঠোঁটের কোণে একটা হাসি লেগেই থাকতো। তখনও পর্যন্ত অবশ্য জানতাম না কে সেই মেয়ে যার জন্য ওর এমন পরিবর্তন! পরে হঠাৎ একদিন তো এসে বলেই বসলো ‘মা তোমার আরেক পুত্রবধূর সন্ধান পেয়ে গেছি আমি। আমার জন্য আর কষ্ট করে বউ খুঁজতে হবে না তোমার। নিশ্চিন্তে থাকতে পারো তুমি।’ ওকে এমন প্রাণোচ্ছল আর কোনদিন দেখিনি আগে। তোমার কথা যখনই বলতো ওর মুখে সুখী সুখী ভাবটা উপচে পড়তো। আর আমি তখন ভাবতাম ‘কে সেই ভাগ্যবতী, গুণবতী মেয়ে! যে কিনা আমার স্পন্দনের মুখের হাসির কারণ!’ কয়েকবার তো ওকে চেপেও ধরেছিলাম আমি আর অদিতি মিলে মেয়েটার নাম, ঠিকানা, পরিচয় বলতে। কিন্তু সে শুধু তোমার নামটাই বলেছে। তোমার ফটো দেখতে চায়লে বলতো ‘একেবারে বিয়ে করার সময় দেখবা, তার আগে নয়।’ পাগল ছেলে আমার!’

কথাগুলো বলেই হেসে দিলেন ইয়াসমিন বেগম। উনার চোখের কার্নিশে অশ্রুকণাও দেখা গেল। তবে সেটা যে সুখের পানি তা বুঝতে সমস্যা হয়নি অদিতি আর অতশীর। অতশী সত্যিই অবাক হয়ে গেছে সাথে লজ্জাও পেয়েছে কিছুটা। মুখ নিচু করে বসে রইলো সে। শাশুড়ী মায়ের মুখে স্পন্দনের এমন পাগলামির কাহিনী শুনে তার সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। সত্যিই স্পন্দন নামের শুকতারা ছাড়া তার জীবনটা অচল।

ইয়াসমিন বেগম আবার হঠাৎ হালকা হেসে বলে উঠলেন
—“অতশী তুমি কি লজ্জা পেয়েছো?”
শাশুড়ীর এমন কথায় ফের লজ্জারা এসে ভীড় করলো তার চোখেমুখে। তা দেখতে পেয়ে তিনি বললেন
—“আমাকে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। স্পন্দনের মা বলো আর বান্ধবী বলো দুইটাই আমি। আচ্ছা সে প্রসঙ্গে আর না যাই! তা তোমার পরিবারে কে কে আছে অতশী?”

নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে বললে
—“আব্বু আর ছোট একটা ভাই আছে। কাকু, কাকিমা, তাদের তিনজন ছেলেমেয়ে আর দাদু আছেন আমার পরিবারে।”
—“আর তোমার মা?” অদিতি জিজ্ঞাসা করলো

মায়ের কথা শুনেই চোখটা ঘোলা হয়ে এলো অতশীর। তার অর্ধেক পৃথিবী ছিল তার মা। মাথা নিচু করে কান্নাটা গিলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
—“মা নেই আমার।”

তারা কেউ জানতো না যে অতশীর মা নেই। হঠাৎ এভাবে বলায় বেশ খারাপ লাগলো তাদের কাছে। তাই ওর কাছে এসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের শাশুড়ী বললেন
—“মন খারাপ করে না মা। দুনিয়াতে কেউই চিরস্থায়ী নয়। একদিন না একদিন সকল মায়া কাটিয়ে সবাইকেই পৃথিবী ছাড়তে হবে। তাই বলে কিন্তু কারো জীবন থেমে থাকে না। তোমার মা নেই তো কি হয়েছে? আমিই তোমার মা। আমাকে মা ভাবতে পারবে না?”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


শাশুড়ীর এমন কথা শুনে নিজেকে আর আঁটকে রাখতে পারলো না অতশী। জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল। মা মারা যাওয়ার পর কেউ এভাবে বলেনি যে আমিই তোর মা। যার মা নেই সে বুঝে মায়ের অভাব কি জিনিস! আসলেই তার শাশুড়ীটা অনেক ভালো। এই যুগে এমন শাশুড়ী পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার।

—“এই যে আমারও কিন্তু কোন বোন নেই তোমার মতো। তাই আজ থেকে তুমিই আমার ছোট বোন।”

অদিতির কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় অতশী। আসলেই কি সে এতো ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য?
—“এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই বুঝলে! আজ থেকে আমরা দুই বোন এবং এটা হচ্ছে আমাদের মা।” বলেই শাশুড়ীকে দুইপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো তারা দুই বউ মিলে।

দুইজনের দুই গালে নিজের হাতজোড়া রেখে বললো
—“পাগলী মেয়ে আমার।”

—“কি কথা নিয়ে এতো হাসাহাসি হচ্ছে শাশুড়ী বউদের মাঝে?”

কথাটা কানে আসার পর তিনজনেই সেদিকে তাকালো। আরমান সাহেব বাড়ির ভিতরে ঢুকছে আর বলছে।

—“কি আর বলবো! দুই মেয়েকে নিয়ে সুখ দুঃখের গল্প করছি। এমন লক্ষ্মী দুইটা মেয়ে যার পরিবারে থাকে তার আর কি চায়!”
একটু অভিমানী স্বরে আরমান সাহেব বললেন
—“ও অমনি নিজের মেয়ে বানিয়ে নিলে! আর আমি বুঝি কেউ না ওদের?”
—“ঢং তো ভালোই করতে পারো।” মুখ ঝামটা মেরে বললের উনার পত্নী।

অদিতি বললো
—“মন খারাপ করবেন না বাবা। আপনাকেও তো আমাদের বাবার স্থানেই বসিয়েছি।”
—“আমার পরিবারটা সম্পূর্ণ। আসলেই তোমরা দুই বউ আমার দুই মেয়ে। তিন কন্যার বাবা আমি।”

তাদের সকলের কথা শুনে অতশীর মনে যেন প্রশান্তির বাতাস বয়ে গেল। সত্যিই সে আজকে একটা পরিবার পেয়েছে। যেখানে রয়েছে অফুরন্ত ভালবাসা। কিন্তু তার কপালে এতো ভালবাসা সইবে তো!

—“এক কাপ কফি নিয়ে আসো তো।” ল্যাপটপে মুখে গুঁজে অর্ডার করলো স্পন্দন।
—“দুই মিনিট পরে যাই?”
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো
—“এখন গেলে কি সমস্যা?”
—“না আসলে…..”
—“না আনতে পারলে আমার সামনে থেকে দূর হও। যেন হাতি ঘোড়া জবাই করতে বলেছি!”

রেগে কথাটা বলেই ফের ল্যাপটপে মনযোগ দেয় স্পন্দন। বমি বমি ভাব হচ্ছিল অতশীর। সাথে মাথাটাও কেমন যেন ভন ভন করে ঘুরছে। উঠে দাঁড়ালে নির্ঘাত পড়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। তার জন্য অতশী বলেছিল একটু পর যেতে। কিন্তু স্পন্দন তো রেগেমেগে ফায়ার হয়ে গেছে। তাই অতশী আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় কফি আনার উদ্দেশ্যে। কয়েক পা এগোতেই যেন হঠাৎ মাথাটা খুব জোড়েই চক্কর দিয়ে উঠলো। ড্রেসিংটেবিলের কোণায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে একটু সামলে আবারো পা বাড়ায় রুমের বাইরে। কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। ভারসাম্য না রাখতে পেরে ফ্লোরে গড়িয়ে পড়লো।

হঠাৎই কিছু একটা পড়ার শব্দে সামনে তাকায় স্পন্দন। তাকিয়েই অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গেল। অতশী ফ্লোরে পড়ে আছে! তাও আবার সেন্সলেস হয়ে! ঝড়ের বেগে অতশীর কাছে এসে ওর মাথাটা স্পন্দনের হাঁটুর ওপর তুলে নিল। দেখল কপালের একপাশটা একটু কেটে গেছে। সেখান থেকে রক্ত বেরুচ্ছে। নিশ্চয়ই ড্রেসিংটেবিলের সামনে রাখা টুলটায় আঘাত লেগেছে। দিক্বিদিক শূন্য হয়ে তাড়াতাড়ি করে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দিল। তারপর ওর মুখে হালকা চাপড় মেরে ডাকতে লাগলো ‘অতশী, এই অতশী! কি হয়েছে তোমার? এই চোখ খুলো।’ কিন্তু অতশীর কোন সাড়া না পাওয়ায় একটু ভয় পেয়ে যায় স্পন্দন। তাড়াহুড়ো করে মা আর ভাবীকে ডাকতে থাকে।

—“মা, ভাবী তাড়াতাড়ি একটু আমার রুমে এসো। কুইক!”

স্পন্দনের এমন ডাক শুনে হন্তদন্ত হয়ে রুমে আসে তারা দুজন। এসেই অবাক হয়ে যায় অতশীকে এ অবস্থায় দেখে। তার মা জিজ্ঞাসা করলেন

—“কিরে অতশীর কি হয়েছে? আর ওর মাথায়ই বা আঘাত লাগলো কি করে?”
—“আমি জানিনা মা। আমি তো ব্যালকনিতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। হঠাৎই আওয়াজ শুনে দেখি ও সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেছে। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি।”

কাঁদো কাঁদো হয়ে স্পন্দন উত্তর দিল। অতশীর হঠাৎ এভাবে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া স্পন্দন মেনে নিতে পারছে না। কি কারণে এমন হলো!

—“ফার্স্টএইড বক্সটা তাড়াতাড়ি বের করো বউমা আর একটা পেয়ালায় করে পানি আনো।”

স্পন্দনের হাত-পা এবং সারা শরীর তিরতির করে কাঁপছে অজানা আশঙ্কায়। তাই অদিতিই অতশীর কপালটা পানিতে তুলো ভিজিয়ে আশেপাশের রক্ত মুছে এন্টিসেপটিক লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। তার ভাই ডাক্তার হওয়ার সুবাদে প্রাথমিক চিকিৎসাগুলো ভাইয়ের কাছ থেকেই শিখে নিয়েছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর চোখে পানির ছিটে পেয়ে আস্তে আস্তে চোখ খুললো অতশী। চোখ খুলেই তিনটা ভয়ার্ত মুখ দেখে চমকে ওঠলো। কি হয়েছে তার? সবাই এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? শুয়া থেকে ওঠতে গিয়ে মাথায় হালকা ব্যথা অনুভব করলো। হাত দিয়ে দেখে সেখানে ব্যান্ডেজ করা। তাকে ওঠতে দেখে শাশুড়ী বললেন
—“আরে আরে করছো কি? শুয়েই থাকো, ওঠছো কেন এ অবস্থায়?”
—“কিন্তু আমার কি হয়েছে? কপালে ব্যান্ডেজ কেন?”
—“সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে। আচ্ছা তোমার কি শরীর খারাপ নাকি অতশী?” অদিতির প্রশ্ন
—“না তেমন কিছু না। আসলে মাথাটা খুব ঘোরাচ্ছিল আর….”

মুখের কথা কেড়ে নিয়ে শাশুড়ী বললেন
—“খারাপ যখন লাগছিলোই তাহলে শুয়েই থাকতে।”

সেখানে আর বসে না থেকে ব্যালকনিতে চলে গেল স্পন্দন। সেকি অতশীর সাথে একটু বেশিই বাজে ব্যবহার করে ফেলছে? কিন্তু বিয়ের আগে কেন এতো ইগনোর করতো তাকে তার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না স্পন্দন। পাগলীটার প্রতি তার ভালবাসার তো কোন কমতি ছিল না। হয়তো তাদের জীবনটাও অন্যান্য স্বামী স্ত্রীদের মতো স্বাভাবিকই হতো। কিন্তু মানুষ যা চায় তার সব কি আসলেই এতো সহজে পেয়ে যায়? সে একা চায়লে তো হবে না। অপরপক্ষের মানুষটাকেও তার মতো করেই চাওয়ার মতো চায়তে হবে। তবেই না দুটি মন আবদ্ধ হয়ে এক সুতোয় বাঁধা পড়বে! হাসি কান্নায় ঘিরে সংসার হবে খুনসুটি ও ভালবাসাময়।

বেশ কয়েকদিন কেটে গেল কিন্তু তাদের সম্পর্কের কোন উন্নতি হয়নি। বরং অবনতি হচ্ছে দিনকে দিন। আগের স্পন্দন সেই আগের মতোই আছে। অতশী ভেবে পায় না কিভাবে তার অভিমান ভাঙাবে! অভিমানের পাহাড় গড়ে তুলেছে নিজের মাঝে। কিভাবে সেই পাহাড় ভেঙে গুঁড়িয়ে সেখানে ফের তার জন্য ভালবাসার সৃষ্টি করবে মাথায় আসে না অতশীর। স্পন্দনের ভালবাসার অভাব কুরে কুরে খাচ্ছে তার ভিতরটা। এক মন কেমন করা সন্ধ্যেবেলায় কষ্টটা বুকের ভিতর চাপা দিতে না পেরে স্পন্দনকে চরম আক্রোশে বলেছিল

—“আমাকে যেমন তুমি ভালবাসার অভাব দিয়ে কষ্ট দিচ্ছো, একদিন দেখবে তুমিও ভালবাসার অভাবে ছটফট করবে। সেদিন বুঝবে ভালবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা কেমন কষ্টের!”
ভ্রু কুঁচকে স্পন্দন জানতে চেয়েছিল
—“অভিশাপ দিচ্ছো আমাকে?”

তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে অতশী বলেছিল
—“অভিশাপ না। আমার বুকের ভিতরের তোমার দেওয়া মানসিক আঘাতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাওয়া হৃদপিণ্ডের চাপা আর্তনাদ এটা। যা তুমি শুনেও শুনো না। কিন্তু আমি বলছি এর জন্য একদিন তুমি আফসোস করবে, চরম আফসোস। সেদিন খুঁজবে আমাকে। আমার স্মৃতি হাতরে বেড়াবে কিন্তু ব্যর্থ হবে তুমি। কপাল চাপড়ে কান্না করবে। তড়পাতে থাকবে প্রতিনিয়ত। ”

স্পন্দনও তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো
—“হুহ দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকো। মরে গেলেও তোমার এ স্বপ্ন পূরণ হবে না কোনদিন।”

স্পন্দনের এমন কথা শুনলে বড্ড কান্না পায় অতশীর। কান্না আঁটকে জানতে চেয়েছিল
—“এতো নিষ্ঠুর কবে থেকে হয়ে গেলে তুমি স্পন্দন?”
—“যে বেশি ভালবাসতে পারে প্রয়োজনে সে অনেকটা নিষ্ঠুরও হতে পারে। এতোদিন শুধু আমার ভালবাসাটাই দেখিয়েছি। কিন্তু এখন থেকে দেখবে শুধু আমার নিষ্ঠুরতা। যে জীবনে নিষ্ঠুরতা ছাড়া ভালবাসার কোন ছোঁয়া নেই। বিয়ের আগে যখন আমাকে এড়িয়ে চলতে তখন তোমাকে আমি জিজ্ঞাসা করিনি যে কেন এমন করছো? কি উত্তর দিয়েছিলে তুমি মনে আছে তো? সেদিন একবারের জন্যও তোমার মনে হয়নি যে তোমার ঐসব কথা শুনে আমি কতটা কষ্ট পাব! যে হৃদয়ে আমাকে ঠাঁই দিয়েছিলে ঐ হৃদয়টা একটুও বাধা দেয়নি অন্যকারো কথা বলে আমাকে কষ্ট দিতে? আরে আমিও কিনা পাগল! বিশ্বাসঘাতকদের আবার হৃদয় বলে কিছু আছে নাকি? তারা তো শুধু পারে কিভাবে কি করলে, কি বললে অপরপক্ষের মানুষটা কষ্ট পাবে! ভালবাসার মূল্য কি আদৌ তাদের কাছে আছে! অবশ্য থাকবেই বা কি করে! মূল্য দেওয়ার জন্য সুস্থ মস্তিষ্ক তো থাকা চাই। মেন্টালিটি ভালো থাকা চাই। তোমার সেই মেন্টালিটি আছে নাকি!”

স্পন্দনের কথা শুনে চোখের পানির বাঁধ মানে না। বেহায়ার মতো পড়তেই থাকে সারাক্ষণ। মনে মনে বলে কোন পাপের সাজা দিচ্ছো আমাকে স্পন্দন? তোমার ভালোর কথা ভেবে তোমার থেকে দূরে সরতে চেয়েছি তাই? নাকি তোমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসার প্রতিদান দিচ্ছো আমাকে এভাবে তিলে তিলে? কিন্তু আমি আসলেই ব্যর্থ। তোমাকে আমার ভালবাসার গভীরতা উপলব্ধি করাতে পারিনি। অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করার পিছনেও কোন না কোন যুক্তিযুক্ত কারণ থাকে। অপরপক্ষের মানুষটার ভালো চায়তে গিয়েও খারাপ ব্যবহার করতে হয় বাধ্য হয়ে। সেটা বুঝার ক্ষমতা কি আল্লাহ্ তোমাকে দেয়নি স্পন্দন?

—“কিরে আমাদেরকে কি একেবারেই ভুলে বসে আছিস?”
—“তোদেরকে কিভাবে ভুলবো রে?”
—“তাহলে কোন যোগাযোগ করিস না কেন আমাদের সাথে? বিয়ে হয়েছে বলে কি একেবারেই পর করে দিবি?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অতশী বলে
—“নারে অরিন, এসব বলে আমাকে কষ্ট দিস না। এমনিতেই অনেক কষ্টে….। যাইহোক তোর কথা বল। কি খবর তোর? শ্বশুরবাড়ির সবাই কেমন?”
অরিন মাঝপথে বাগড়া দিয়ে বললো
—“আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে। তুই কি কোন কষ্টে আছিস অতশী? তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে না যে তুই খুব সুখে আছিস।”
—“নারে খুব সুখে আছি আমি। বাড়ির সবাই কত্ত ভাল তুই জানিস? সবাই আমাকে অনেক আদর করে।” কাঁপা কাঁপা গলায় বললো অতশী। কিন্তু চোখে অশ্রুকণারা তাদের উপস্থিতিও জানান দিচ্ছে সাথে।

—“আর স্পন্দন ভাইয়া?”
—“হুম?”
—“বলছি যে স্পন্দন ভাইয়ার সাথে তোর সব ঠিকঠাক তো?”
—“ঠিক না হওয়ার কি আছে?”
—“তুই এরকম একটা কাজ করার পরও সব ঠিকঠাক! কেন যেন বিশ্বাস হচ্ছে না রে।”

অরিনটা কেমন যেন! তার মনের সব কথা কিভাবে যেন বুঝে যায়। কান্নাটা আঁটকে বলে
—“নারে সব ঠিকঠাকই আছে।”
—“আচ্ছা? তা ভাইয়া তোকে আগের মতোই ভালবাসে তো? আগের মতোই পাগলামী করে তো?”

কেঁদে দেয় অতশী। এতো মিথ্যে সে বলতে পারে না।
—“আমাকে মিথ্যে বলে কোন লাভ নেই অতশী। ভাইয়াকে সবকিছু জানিয়ে দে। দেখবি তোর বুকের ওপর থেকে একটা পাথর সরে গেছে। ভাইয়াও তার ভুলটা বুঝবে। সত্যিটা প্লিজ বলে দে বোন! স্বস্তি পাবি তুই।”

খুব জোর দিয়ে চিৎকার করে কেঁদে দিয়ে বললো
—“না! কখনো বলবো না ওকে এসব কথা। ও যে খুব কষ্ট পাবে রে। আর ওর কষ্ট যে আমি সইতে পারবো না। খুব ভালবাসি যে ওকে।”
—“তিলে তিলে মরে কি সুখ পাচ্ছিস তুই অতশী? এভাবে চলতে থাকলে যে তুই মরেও শান্তি পাবি না।”
—“শান্তি চাই না আমার। আমি শুধু চাই ও যাতে ভালো থাকে। ওর সুখের জন্য সব করতে রাজি আমি।”

—“তোকে ছাড়া ভাইয়া কিভাবে ভালো থাকবে বল! জানিনা তুই এতো জেদ ধরে বসে আছিস কেন! তবে আমার মনে হচ্ছে ভাইয়াকে সবটা জানিয়ে দেওয়াই উচিৎ হবে।”
—“এ ব্যাপারে আর একটা কথাও না অরিন।”
—“হুম ঠিকাছে। তবে মনে রাখিস সত্য কোনদিন চাপা থাকে না। তা একদিন না একদিন মাটি ফেড়ে হলেও বেরিয়ে আসবে। তখন সবটা সামলাতে পারবি তো!”
—“তখনেরটা তখন দেখা যাবে। এখন এ ব্যাপারে আপাতত কিছু বলতেও চাইছি না ভাবতেও চাইছি না।”

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে