অভিমান হাজারো পর্বঃ৩১

0
1960

অভিমান হাজারো পর্বঃ৩১
আফসানা মিমি

স্পন্দন, আদিল, আরমান সাহেব একেকজন সবাই মাদার কেয়ার হসপিটালের করিডোরে অস্থিরভাবে পায়চারি করছে। অদিতির মা চিন্তিত মুখে ভিজিটরসদের বসার জন্য সাজিয়ে রাখা সিটে চিন্তিত মুখে বসে আছে। আজ বিকেলবেলা হঠাৎ অদিতির লেবার পেইন উঠে। অতিদ্রুত ওকে হসপিটালে নিয়ে আসে ওরা। অতশীর শরীরটা বেশি একটা ভালো না হওয়ায় ইয়াসমিন বেগম আসতে পারেননি। এখানে একটা মহিলা মানুষেরও দরকার। তাই ইয়াসমিন বেগম বুদ্ধি করে নিজের বেয়াইনকে ফোন করে আসতে বলে দিলেন।

ঘন্টা দুই সময় পর একটা নার্স এসে বলে অদিতি ফুটফুটে দুই পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে। সি সেকশনের প্রয়োজন হয়নি। আল্লাহর রহমতে নরমালিই বেবি ডেলিভারি হয়েছে। সবাই খুশিতে আল্লাহর কাছে শুকর আলহামদুলিল্লাহ্ বলে শুকরিয়া জানায়। সবার প্রথমে অদিতির মা ভিতরে যায়। গিয়ে দুই নাতীর কপালে আনন্দের সহিত চুমু খায়। চোখ দিয়ে উনার দুই ফোঁটা পানি বেরিয়ে যায়। অতঃপর অদিতির কাছে গিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চায়

—“মা রে, এখন কেমন আছিস? ব্যথা করছে এখনও?”
সামান্য মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে অদিতি জবাব দেয়
—“না মা, দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকানোর সাথে সাথে অটোমেটিক্যালি সব ব্যথা, যন্ত্রণা গায়েব হয়ে গেছে এক নিমিষেই। এ যেন আল্লাহর এক অপার নেয়ামত।”
—“মা হয়েছিস তো। এখন বুঝবি মায়ের কী জ্বালা! আচ্ছা আমি তোর বাবা ভাইকে ফোনে বলি খবরটা। এদিকে জামাইও এসে দেখে যাক তার সন্তানদের।” বলেই নাতীদের আবারো এক ঝলক দেখে বাইরে বেরিয়ে গেল।

তারা তিনজন রুমে ঢুকে আদিল বাদে ওরা দুইজন নিউবর্ণ বেবিদের কাছে যায়। আদিল সর্বপ্রথম যায় একসাইডে পর্দায় ঘেরা নিজের স্ত্রীর কাছে। গিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে দুই গালে হাত রেখে বলে
—“এখন কেমন লাগছে সোনাবউটা?”
স্বামীর দুই হাতের ওপর নিজের দুই হাত চেপে উত্তর দেয়
—“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। ছেলেদের দেখেছো?”
—“না, আগে তোমাকে দেখতে আসলাম। এতোগুলো মাস অনেক কষ্ট সহ্য করেছো। সব সুদে আসলে ফেরত দেব সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরার পর।”
—“পরেরটা পরে দেখা যাবে। এখন বলো বাচ্চাদের দেখোনি কেন?”
—“দেখার সময় তো আর চলে যাচ্ছে না। দেখবো তো। এতো কষ্ট করে যে আমার সন্তানদের এই পৃথিবীতে এনেছে তাকে আগে দেখেই ওদেরকে দেখবো।”
—“হয়েছে এখন দেখা। যাও ওদের দেখে এসো।”
—“তুমি দেখেছো?”
—“হ্যাঁ।”
—“আচ্ছা যাচ্ছি। মাকেও ফোন করে জানাতে হবে।”
—“হুম এখনই ফোন করো। হয়তো টেনশন করছেন মা আর অতশী।”
বাচ্চাদের কিছুক্ষণ দেখে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে মাকে ফোন দেয় আদিল।

—“বাবা রে….”
—“হ্যাঁ মা বলো।”
—“এভাবে আর কতদিন নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখবি? স্বাভাবিক জীবনযাপন করবি না? তোর কষ্ট দেখে যে আমাদেরও অনেক কষ্ট হয়।” বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন আছিয়া বেগম। মায়ের চোখের পানি মুছে কোলে মাথা রেখে বললো
—“আমি খুব চেষ্টা করি মা। কিন্তু আমি পেরে উঠছি না। যখনই ভাবি স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করবো, ঠিক তখনই লাবণীর ক্ষতবিক্ষত চেহারাটা ভেসে উঠে চোখের সামনে। নিজেকে তখন সামলাতে পারি না মা আমি। জীবনে প্রথম এবং শেষ একজনকে নিজের সবটা উজার করে ভালবেসেছিলাম। কিন্তু বিধাতা ওকে কেন আমার হতে দিল না? কেন এভাবে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিল মা বলতে পারো?”
—“এভাবে বলে না বাবা। আল্লাহ্ সকল ভুলের উর্ধ্বে। উঁনার করা কর্মকাণ্ডের ওপর এভাবে আঙুল তুলতে নেই। যা করেন অবশ্যই তিঁনি তাঁর বান্দার মঙ্গলের জন্যই করেন। লাবণ্যর হায়াৎ যতদিন ছিল ততদিন পৃথিবীর বুকে নিঃশ্বাস নিয়েছিল। তার সময় ফুরিয়ে এসেছে বলেই সে চলে গেছে পরপারে। এসব ব্যাপারে আল্লাহর কাছে প্রশ্নবাণ ছুঁড়া ঠিক না। লাবণ্য তোর জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে তো কী হয়েছে! হয়তো মহান আল্লাহ পাক তোর জন্য আরো ভালো কাউকে সৃষ্টি করে রেখেছেন। উঁনার লীলাখেলা বোঝা যে বড়ই দায়।”
—“আমি তো ভালো কাউকে চাইনি মা। আমি শুধুমাত্র লাবণীকেই চেয়েছি। ওকেই যদি না পেলাম তাহলে আরো ভালো কাউকে দিয়ে আমি কী করবো মা? যাকে নিজের সবটা দিয়ে চেয়েছিলাম তাকেই পেলাম না। শত গুণাবলীসম্পন্ন কাউকে আমার দরকার নেই মা।”
—“তাহলে কী তুই সারাজীবন এভাবেই ছন্নছাড়া জীবন পার করবি? একটু সুখের দেখা কী আমরা পারবো না?”
—“আমার সাথে তোমাদের সুখের কী সম্পর্ক মা?”
—“তুই জীবনে থিতু না হলে আমরা ভালো থাকবো বল?”
—“কিন্তু মা এটা সম্ভব নয়। কারণ লাবণীকে ছাড়া অন্যকারো কথা আমি ভাবতেও পারি না।”
—“তোর কথামতোই কিন্তু লাবণ্যর সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু এখন তো সে দুনিয়াতে নেই। তাই বলে কী এখনও ওর আশায় বসে থাকবি তুই? নিজের এবং আমাদের কথা একবার ভাববি না তুই? তোর এ অবস্থায় যে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি না।”
কিছুক্ষণ ভেবে সামির জবাব দেয়
—“ঠিক আছে। তাহলে আমাকে একটু সময় দাও।”
—“আচ্ছা যা তোর কথা-ই রইলো তবে।”

অতশীর কোলে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে স্পন্দন। খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে অতশী তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। সে অবস্থাতেই স্পন্দন অস্ফুটস্বরে অতশীকে ডাকলো
—“অতশী!”
—“হুম?” আনমনা হয়ে জবাব দেয় অতশী
মাথা তুলে অতশীর দিকে তাকিয়ে বলে
—“আমার কথা ভেবে কী তোমার একটুও কষ্ট হয় না?”
স্পন্দনের মুখে এমন কথা শুনে চকিতে তার দিকে তাকায় অতশী। দেখে অপলক তার দিকেই তাকিয়ে আছে স্পন্দন। চোখে যেন বেদনার ছাপ স্পষ্ট। সে বুঝে উঠতে পারছে না স্পন্দন তাকে এ কথাটা কেন বলেছে! জিজ্ঞাসিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে জানতে চায়
—“কিসের কথা বলছো তুমি স্পন্দন?”
—“এমন একটা সিদ্ধান্ত কেন নিলে তুমি?”
অতশী ফের অবাক হয়।
—“কী সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি?”
—“অপারেশন করাতে কেন রাজী হলে না তুমি?”
স্পন্দনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে জবাব দেয়
—“তোমার মনে আছে, যখন শুনেছো আমি মা হবো তুমি বাবা হবে তখন কতটা খুশি হয়েছিলে?”
—“তার সাথে তোমার অপারেশনের কী সম্পর্ক?”
—“কারণ অপারেশন করালে বাচ্চাটা হারিয়ে ফেলতাম আমি। আমার তরফ থেকে কখনোই কিছু দিতে পারিনি তোমাকে। এই প্রাপ্তির কথা শুনে তুমি এতোটা খুশি হয়েছিলে যে কারণে আমার মনে হয়েছে তোমাকে এই বেবিটা উপহার দেওয়া উচিৎ। তা না হলে আমি মরেও শান্তি পেতাম না। অপারেশন করালে আর কতদিনই বা বেঁচে থাকতাম!? বড়জোর এক বছর! কিন্তু তোমাকে আমি একেবারেই নিঃস্ব করে রেখে যেতে চাইনি। তাই…..”
—“তাই এমন স্বার্থপরের মতো কাজটা করলে তাই তো?” অতশীর মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে স্পন্দন। আবারো বলে
—“কিন্তু একটাবারের জন্যও এটা ভেবে দেখোনি যে তোমাকে ছাড়া আমি কী করে থাকবো! এতোটাই স্বার্থপরের মতো কাজ করেছো যে আমার কথা তোমার একবারের জন্যও মনে হয়নি। কারণ সেভাবে ভালোই বাসতে পারোনি আমাকে।” শেষ কথাটা বলার সময় কেমন কেঁপে উঠেছিল গলাটা। অতশী অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। চোখ তার ক্রমাগতই বাষ্পীভূত হচ্ছে। ভিতরের কান্নাটা থামাতে বড় বড় করে বেশ কয়েকবার শ্বাস টেনে নিল ভিতরে। স্পন্দন ওর অস্থিরতা টের পেয়ে নিজের বুকে টেনে নিল অতশীকে। জায়গাটা পেয়ে নিজেকে দমাতে পারেনি অতশী। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সে। দু’হাতের শক্ত বাঁধনে আঁকড়ে ধরলো অতশীকে। যেন পিষে ফেলবে বুকের সাথে। অতশীকে এ বুকে না রাখলে যে সারাক্ষণ পুড়তেই থাকে তার বুকটা। ওকে ছাড়া বাকিটা জীবন কিভাবে পার করবে!? নিয়তি কেন এমন খেলা খেললো ওর প্রাণভোমরাটাকে নিয়ে!? আল্লাহর কাছে তো সে বেশি কিছু চায়নি জীবনে। তবে একটা মিরাকল কী হতে পারে না!

—“ভাইয়া আসবো?”
চোখ বন্ধ করে শুয়েছিল সামির। কথাটা শুনে চোখ খুলে দেখে দরজার সম্মুখে অরুনিমা দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখেই কেমন জানি বিব্রতবোধ করতে লাগলো সামির। উঠে বসে মুখে মেকি হাসির রেখা টেনে বললো
—“হ্যাঁ এসো।”
অরুনিমা এসে নীরবে বিছানার এককোণে বসলো মাথানিচু করে। কিভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না। সব কথা যেন এলোমেলো হয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। কথার কোন আগামাথা খুঁজে পাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ এভাবে নীরবে কাটার পর সামিরের যেন অস্বস্তির মাত্রাটা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকা যাবে!? তাই দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে নিজেই কথা শুরু করলো প্রথমে।
—“কিছু বলবে তুমি অরুনিমা?”
সামিরের কণ্ঠ শুনে শুধু মাথা তুলে সরাসরি তার চোখের দিকে তাকালো অরুনিমা। কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারলো না। চোখের চাহনি দ্বারাই যেন সব না বলা কথা বলে দিবে। কী দুর্ভেদ্য এই চোখের দৃষ্টি! একেবারে ঘোর লেগে যায়। সামির নিজেও মোহগ্রস্তের মতো কয়েকটা মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো অরুনিমার চোখের গভীরে। এবং আজ প্রথম সে উপলব্ধি করতে পারলো অরুনিমার চোখদুটো ভীষণ মায়াকাড়া। একবার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে সম্মোহিতের মতো তাকিয়ে থাকতেই মন চায়। এবং… এবং ঐ চোখজোড়ায় ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা হানড্রেড পার্সেন্ট। অতি দ্রুততার সাথে নিজের চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। এভাবে তাকিয়ে থাকা যাবে না ঐ আঁখিপল্লবের দিকে। এমন সর্বনাশা দৃষ্টির সামনে যেকেউ এলোমেলো হয়ে যাবে।

বিছানা থেকে দুই পা ফ্লোরে রাখলো সামির। ভিতরে ভিতরে অস্থিরতায় বুঁদ হয়ে রইলো সে। অরুনিমাও সামিরের এমন অস্থির ভাবের কারণ বুঝতে পারলো। সামির আবারো বললো
—“তোমার কী কিছু বলার আছে অরুনিমা? বললে বলে ফে……”
তার কথার মাঝখানেই অরুনিমা বলে উঠলো
—“লক্ষ কোটি না বলা কথা বুকের ভিতর জমা আছে। সেসব শোনার সময় কী আপনার হবে কখনো? অথবা আমার কথা শোনার আগ্রহ কী আপনার আদৌ আছে?”
অরুনিমার এমন কথায় একবার তার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে বললো
—“বলো, আমি শুনছি।”
বসা থেকে উঠে ধীরে ধীরে সামিরের মুখোমুখি গিয়ে দাঁড়ালো। অতঃপর অভাবনীয় এক কাজ করে বসলো অরুনিমা। যার জন্য সামির মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হকচকিয়ে যতটুকু সম্ভব নিজেকে গুটিয়ে নিল সে। অরুনিমা চুপচাপ এখনও সামিরের পায়ের কাছেই হাঁটু গেড়ে ঠায় বসে আছে। সামির ব্যস্ত হয়ে বললো
—“অরুনিমা, পায়ের কাছে বসেছো কেন? উঠো, উঠে দাঁড়াও নয়তো বিছানায় বসো।”
মাথানত করে বসে আছে অরুনিমা। থেমে থেমে বললো
—“আমাকে একবার অরু বলে ডাকবেন?”
সামির ফের হতবাক হলো ওর কথায়। কোনমতে গলা দিয়ে আওয়াজ বের করলো
—“অরুনিমা পাগলামি কোরো না। উঠে বসো প্লিজ!”
—“আমার কথাটা শুনেন।”
—“দ্যাখো অরুনি…..”
—“প্লিজ শুধু একবার!” এবার অরুনিমার গলাটা কেমন কেঁপে উঠলো। যা শুনে সামিরের বুকের ভিতরও কেমন ঘূর্ণিঝড়ের মতো উথালপাতাল শুরু হলো। এমন ছেলেমানুষি পাগলামি শুরু করেছে কেন এই মেয়েটা?!
—“অরু…..”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


সামিরের ডাকে মাথা তুলে তাকায় অরুনিমা। হৃৎপিণ্ডের লাফালাফি দ্বিগুণ হয়েছে তার। ওর কাজল কালো চোখে দিঘীর ন্যায় স্বচ্ছ পানি টলমল করছে। যা দেখে সামিরের বুকের ভিতরে কোথাও প্রবলভাবে ভাঙচুর হচ্ছে। ওর চোখে চেয়েই বললো
—“কেন এমন ছেলেমানুষি জেদ ধরছো অরু? তোমাকে এই দুর্বলভাবে মানায় না। শক্তপোক্ত, হাসিখুশি তোমাকেই মানায়।”
—“এভাবে আর কতদিন নিজেকে কষ্ট দিবেন? আপনি বুঝতে পারছেন না আপনার একার জন্য কতগুলো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে?! তাদের কষ্ট কী আপনার মনে দাগ কাটে না?”
—“তার আগে তুমি প্লিজ উঠে দাঁড়ায়। আমার অস্বস্তি হচ্ছে।”
সামিরের দুই পায়ে নিজের দুই হাত রেখে ভর দিয়ে ঝুঁকে বসলো। আচমকা অরুনিমার এমন কাণ্ডে সামির নির্বাক হয়ে গেল। পরমুহূর্তেই অস্থিরভাবে বলে উঠলো
—“এই এই কী করছো কী তুমি? পায়ে হাত দিয়েছো কেন? উঠো, উঠো বলছি।”
সামিরের কথার কোন পরোয়া না করে সেভাবেই সে বললো
—“আপনার আমাকে ভালবাসতে হবে না। শুধু আপনাকে আমি ভালবেসে যেতে চাই। সেই সুযোগটা দিন প্লিজ। আমাকে আপনার জীবনের সাথে জড়িয়ে নিন প্লিজ দোহাই লাগে। কিছু কিছু সময় নিজের কথা চিন্তা না করে পরিবারের সদস্যদের মুখের হাসির জন্যও নিজের সুখ বিসর্জন দিতে হয়। এতে হয়তো আপনার প্রাপ্তির খাতাটা শূন্যই রয়ে যাবে। কিন্তু যাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করবেন তাদের মুখে হাসি দেখে হলেও সেই শূন্য জায়গাটা পূর্ণতা পাবে। আপনার জীবনে আমি রাণীর স্থান চাইছি না। আপনার পায়ে একটু জায়গা দিলে দাসী হয়েই না হয় জীবন পার করে দেব।”

ব্যাস! শেষ কথাটাই যথেষ্ট ছিল লাবণ্যকে ফের মনে করার কারণ হিসেবে। নিজেকে সামলে নিয়ে সামির বললো
—“দ্যাখো অরুনিমা, তুমি আমার চেয়েও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো। শুধুশুধু আমার জীবনে দাসীর মতো থাকতে হবে না। অন্যকাউকে জীবনসাথী বানালে রাজরাণীর মতোই থাকতে পারবে।”
—“আমি তো অন্যকাউকে চাইছি না। আর না চাইছি অন্যকারো জীবনে রাজরাণী হয়ে থাকতে। আমি শুধু আপনাকেই চাই। আপনার জীবনে দাসী হয়ে থাকতে পারলেও এটা আমার পরম পাওয়া হবে।”

একপ্রকার জোর করেই অরুনিমাকে বসা থেকে তুললো সামির। বিছানায় বসিয়ে অধৈর্য বললো
—“তুমি কেন বুঝতে পারছো না অরুনিমা?”
—“আপনি কেন বুঝতে পারছেন না? কেন সবার কথা এভাবে অবমূল্যায়ন করছেন? আপনার কোন রাইট নেই স্বার্থপরের মতো নিজের সুখের জন্য অন্যকারো সুখকে বলিদান দেওয়া।”
সামির হাল ছেড়ে দিয়ে বললো
—“ওকে ওকে আমাকে একটু সময় দাও। আমার কাছে যা ভালো মনে হয় তা-ই করবো আমি।”
—“সময় নিন তবে বেশি দেরি করবেন না যেন। কারণ সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। নাহলে পরে পস্তাতে হয়।” বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল অরুনিমা। সেদিকে চেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সামির। মেয়েটা যেন উন্মাদ হয়ে গেছে। যেকোন উপায়েই হোক ওর জীবনে আসা চাই-ই তার। মা-ও আবার একই সুর তুলেছে। বিয়ে করলে অরুনিমাকে করতে। নইলে তার সাথে উনারা কথা বলা-ই নাকি বন্ধ করে দেবেন। ভালো জ্বালায় পড়া গেল। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আর উপায় নেই কোন। এবার তবে ওর গলায় ঝুলিয়েই ছাড়বে এই ডেস্পারেট মেয়েটাকে।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে