অভিমান হাজারো পর্বঃ২৯

0
1960

অভিমান হাজারো পর্বঃ২৯
আফসানা মিমি

আস্তে আস্তে চোখ খুলার চেষ্টা করছে লাবণ্য। সবকিছু কেমন ঝাপসা ঠেকছে তার চোখে। মাথাটাও হালকা ভার ভার লাগছে। মাথায় হাত দিতে গিয়ে দেখে তার দুই হাত বাঁধা। খেয়াল করলো পা নাড়াতে পারছে না। অনেক চেষ্টা করার পর সম্পূর্ণভাবে চোখ মেলে তাকানোর পর সর্বপ্রথম চোখের সামনে সিলিং দেখতে পেল। পাখাটা বন্ধ করা। ঘামে তার শরীর জবজবে হয়ে আছে। ওর চার হাত পা বাঁধা। মাথা ঘুরিয়ে পুরো রুমটা একবার পর্যবেক্ষণ করলো লাবণ্য। যতদূর মনে হচ্ছে এটা একটা বাংলো। আশেপাশে যানবাহনের কোন আওয়াজ তার কানে আসছে না। তার মানে বাঙলোটা একটা নির্জন জায়গায় অবস্থিত! কথাটা ভাবতেই তার গলা শুকিয়ে এলো। এবং সেই মুহূর্তে সাথে সাথেই সামিরের চেহারাটা তার চোখের তারায় ভেসে উঠলো। সামিরের কথা মনে হতেই ডুকরে কেঁদে উঠে লাবণ্য। না জানি কী অবস্থায় আছে এখন সবাই! কয় ঘন্টা পার হয়ে গেছে সেটা লাবণ্যর জানা নেই। রুমের লাইটটা বন্ধ। ফাঁকফোকর দিয়ে আবছা আলো আসছে। তার ভিতরটা একটা অজানা ভয় এসে গ্রাস করে নিতে লাগলো ধীরে ধীরে। রনক কোথায়! হঠাৎ করেই মাথায় প্রশ্নটা বারি খেল লাবণ্যর। রনকই তো ওকে এখানে অজ্ঞান করে এনেছে। সে কোথায় এখন!?

লাবণ্যর ভাবনার মাঝেই হঠাৎ দরজা খুলে রনক ঢুকলো রুমের ভিতর। ওকে দেখেই ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল লাবণ্য। ওর কাছে এসে ওর দুই গালে ডান হাত দিয়ে জোরে চেপে ধরে বললো
—“তোর সাহস তো মন্দ না, আমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিস!”
মাথাটা বেশ কয়েকবার নেড়ে রনকের হাত থেকে মুখটা সরিয়ে বললো
—“আমাকে এখানে কেন এনেছো? ভালোয় ভালোয় বলছি আমাকে বাসায় দিয়ে আসো। নয়তো এর ফল মোটেও ভালো হবে না এই বলে দিচ্ছি!”
—“এতো দেমাক? এখনো এতো দেমাক দেখাচ্ছিস? আর কিসের ভয় দেখাচ্ছিস তুই আমাকে? তুই আজকে এখান থেকে জ্যান্ত হয়ে যেতে পারলে তো!”
—“দ্যাখো রনক, তোমার কাছে আমি অনুরোধ করছি আমাকে বাসায় দিয়ে এসো। সবাই ওয়েট করছে আমার জন্য। আজ আমার বিয়ে। এতে আমার, আমার পরিবারের মান সম্মান জড়িয়ে আছে। প্লিজ আমাকে যেতে দাও। তোমার সাথে তো আমার কোন শত্রুতা নেই। তাহলে আমাকে এখানে এনেছো কেন?”

লাবণ্যর এমন কথা শুনে ডাকাতের মতো হেসে উঠলো রনক। যেন এর চেয়ে মজার কথা আগে কখনো শুনেনি। পরক্ষনেই চোখমুখ শক্ত করে বলে
—“তোকে এখানে এনেছি কী ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য? এতোদিন আমার সাথে প্রেম করে মজা নিয়ে এখন ঐ ফকিরের বাচ্চার সাথে বিয়ের পিড়িতে বসছিস? তুই কী ভেবেছিস এতো তাড়াতাড়িই তোকে ছেড়ে দেব আমি? আমার পাওনা আমি আদায় করে নিতে জানি। হোক সেটা জোর করে। আমার চোখ যার ওপর পড়ে সে নিস্তার পায় না আমার হাত থেকে।”
—“আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল তোমাকে অন্ধভাবে ভালবাসা। এর প্রতিদান যে আমি এভাবে পাব কোনদিন ভাবতেও পারিনি। দোহাই লাগে রনক, ছেড়ে দাও আমাকে।”
—“এতো তাড়া কিসের সোনা? আমার হকটা আগে আমি আদায় করে নিই। তারপর নাহয় অন্য কথা বোলো!” কথাটি বলেই ঝুঁকে লাবণ্যর ঠোঁটে একটা শক্ত চুমু খেলো। লাবণ্য জোর করে মুখ সরিয়ে নিতে গেলে জোরে একটা কামড় দিয়ে সরে এলো রনক। লাবণ্য চোখমুখ কুঁচকে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে কাঁদতে লাগলো।

এভাবে দুইতিন মিনিট চুপ রইলো লাবণ্য। রনকের উপস্থিতি টের পাচ্ছে না সে। হঠাৎই আরো দুই তিনটা ছেলের আওয়াজ পেলো সে। ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে সে দেখে রুমের ভিতর রনকের পিছন পিছন আরো তিনটা ছেলে ঢুকছে। কিছুক্ষণ আগে রুমে লাইট জ্বালিয়েছিল রনক। সেই আলোতে দেখতে পেল ছেলে তিনটাকে। চেনা চেনা লাগছে ছেলেগুলোকে। কই যেন দেখেছিল মনে করতে পারছে না। এদের মাঝ থেকে একটা ছেলে পিশাচের মতো হেসে বলে উঠলো
—“বাহ্! পাখি দেখি একেবারে বধূসাজে! বাসরটা বেশ উপভোগ্য হবে বোঝা যাচ্ছে।”
আরেকটা ছেলে বিদ্রূপের সাথে বললো
—“শালী ঐদিন হাতের নাগাল থিকা বাইর হইয়া গেছে। আইজকা এর শোধ তুলমু সবাই মিইলা।”
এমন কথায় লাবণ্যর শরীরের সব পশম কাঁটা কাঁটা হয়ে গেল। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে। হাত পা তিরতির করে কাঁপছে। এদেরকে সে চিনতে পেরেছে। এই ছেলেগুলো রনকের বন্ধু। এরাই ঐদিন ওর ইজ্জত ভ্রষ্ট করতে চেয়েছিল। যদি না সামির ওকে বাঁচাতো তাহলে সব শেষ হয়ে যেত ঐদিন। তবে আজকে কী সে রক্ষা পাবে এই নরপশুদের হাত থেকে। হে আল্লাহ্! রক্ষা করো আমাকে। মনে মনে জপছে লাবণ্য।

তর্কাতর্কির আওয়াজে ওদের দিকে চেয়ে দেখলো ওকে নিয়েই ওরা তর্ক করছে। হাত পা অসাড় হয়ে আসতে লাগলো লাবণ্যর।
—“ঐ আমি আগে যামু ঐ শালীর কাছে। শালীর কত তেজ আমি আইজকা দেইখা নিমু।”
এর মাঝে রনক বলে উঠলো
—“কুল ইয়ার। এতো ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? পাখি যেহেতু চোখের সামনেই আছে একজন একজন করে মজা লুটে নে না। ঝগড়া করছিস কেন শুধুশুধু?”
লাবণ্যর শরীর বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে এলো রনকের এমন কথা শুনে। আগাম পরিস্থিতির কথা ভেবে কান্না পেয়ে যাচ্ছে তার। হাত পা নেড়ে চেষ্টা করলো বাঁধন থেমে মুক্তি পাওয়ার জন্য। কিন্তু সে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। এভাবে নিজের সম্মান হারিয়ে মরার চেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করা শতগুণে ভালো। ওর ছুটোছুটি দেখে সবকটা নরপিশাচের মতো হেসে উঠলো। চিৎকার করে লাবণ্য বললো
—“রনক, প্লিজ ছেড়ে দাও আমাকে। আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে যেতে দাও প্লিজ। সবাই আমার জন্য চিন্তা করছে। একটু দয়া করো। তোমার ঘরেও তো মা বোন আছে। আজ তাদের সাথে যদি এমনটা হতো তুমি কী মেনে নিতে পারতে? প্লিজ একটু সদয় হও আমার প্রতি। প্লিজ আমার কোন ক্ষতি কোরো না।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


ওর কথা যেন কেউ শুনতে পেলো না এমনভাবে সবাই সজোরে হেসে উঠলো। সবাই ড্রিংক করছে আর একটু পর পর লাবণ্যর দিকে বাজে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকাচ্ছে। এমন দৃষ্টির সামনে লাবণ্য কুঁকড়ে যাচ্ছে। কারণ ওর শরীরের পোশাক এলোমেলো হয়ে আছে। তখনই তাদের মধ্য থেকে একটা ছেলে উঠে দাঁড়ালো। লাবণ্যর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো ধীরে ধীরে। লাবণ্য মনেপ্রাণে বারবার আল্লাহ্কে ডাকতে লাগলো। সে ভেবেই নিয়েছে আজই তার শেষ দিন। এই পৃথিবীর আলো বাতাস সে দ্বিতীয়বারের মতো আর দেখতে পাবে না। তার চোখের তারায় একে একে সবার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে। সবশেষে সামিরের হাসিখুশি মুখটা মনে পড়লো তার। খুব ইচ্ছা ছিল সামিরকে বর বেশে দেখার। তা বোধহয় আর পূরণ হবে না।

লাবণ্য বারবার কাকুতি-মিনতি করতে লাগলো তাকে যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। কোন নির্যাতন যেন তার ওপর না করা হয় তার জন্য কেঁদে কেঁদে অনুরোধ করতে লাগলো। কিন্তু একজনও ওর কথা কানে তুললো না। উল্টো সাউন্ডবক্সে গান লাগিয়ে মাস্তি করতে লাগলো হইহুল্লোড় করে। লাবণ্যর আহাজারি, গগন কাঁপানো চিৎকার, আর্তনাদ ওদের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। ওর ওপর নির্মম অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে রইলো রুমের ভিতরের এক কোণায় খড়কুটো দিয়ে বাসা বানানো এক চড়ুই পাখি। সে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দেখছে এ পৃথিবীর কয়েকটা মানুষের নরপিশাচের রূপ।

সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে এখনো লাবণ্যর কোন খোঁজ পায়নি কেউ। তন্নতন্ন করে এ জায়গায় সে জায়গায় খুঁজে বেড়াচ্ছে সবাই। কিন্তু ফলাফল শূন্য। সবাই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে লাগলো বিয়ে বাড়ি নামক শোকসভায়। ইয়াসমিন বেগম বেশ কয়েকবার ফিট খেয়েছেন। যতবার জ্ঞান ফিরছে ততবারই লাবণ্যর নাম ধরে কেঁদে কেঁদে আহাজারি করছেন। বাড়ির সবাই এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। সামিরও এই মাত্র খুঁজে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলো বিয়ে বাড়িতে। সবার অবস্থা নাজেহাল। অদিতি আর অতশীকে স্পন্দন ধরে সোফায় বসিয়ে দিল। ওদের দুজনের শরীরও অবনতির দিকে দুশ্চিন্তায়। উপরে পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা যেতে রাজী হয়নি। আফরাও ওদের সাথেই বসে আছে।

ঠিক তখনই বাড়ির দারোয়ান দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকলো। হড়বড় করে বলতে লাগলো
—“স্যার গেটের সামনে একটা মেয়ের লাশ ফেলে দিয়ে গেছে একটা গাড়ি থেকে। আপনারা তাড়াতাড়ি আসেন।”
উনার কথা শুনে সবাই উদগ্রীব হয়ে উঠে দাঁড়ায় বসা থেকে। ইয়াসমিন বেগম আলুথালু বেশে এগিয়ে আসে দারোয়ানের কাছে। চিৎকার করে বলতে লাগলো
—“পাগলের মতো কিসব বলছো তুমি মনির? এখানে লাশ আসবে কোত্থেকে? মাথা ঠিক আছে তোমার?”
—“বড়মা আপনারা আসুন। এসে দেখে যান কী বীভৎস দেখাচ্ছে লাশটাকে।”

সবার আগে সামির দৌড় দেয় বাড়ির বাইরে। তারপর একে একে স্পন্দন, আরমান সাহেব, আদিল, ইয়াসমিন বেগম, অয়নসহ আরো বেশ কয়েকজন যায় সেখানে। সামির সেখানে পৌঁছে দেখে এলোমেলো কাপড়ে ঢাকা একটা মেয়ের লাশ। লাশটাকে দেখেই যেন তার পায়ের নিচের মাটি সরে যেতে লাগলো আস্তে আস্তে। মুখের ওপর থেকে অগোছালো চুলগুলো সরানোর পর সে সেখানেই স্থির হয়ে বসে রইলো। যেন সে একটা পাথরে রূপ নিয়েছে। লাবণ্যর ফর্সা চেহারাটা আঁচড়, দন্তাঘাত, হাতের পাঁচ আঙুলের দাগ পড়ে কেমন বীভৎস দেখাচ্ছে। খেয়াল করলো ঘাড়ে, গলায়, হাতে নখের আঁচড়, কামড়ের দাগ। বুকের ওপরও এমন অসংখ্য দাগ রয়েছে। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বুকের ওপর আঁচলটা টেনে আবারো মুখের দিকে তাকালো সামির। মুখের বেশ কয়েক জায়গায় ফুলে কালচে নীল হয়ে আছে। ঠোঁটের কোণ কেটে রক্ত শুকিয়ে তা কালচে বর্ণের হয়ে আছে। দুইটা ফর্সা গাল নখের আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে। যেন নরপিশাচদের মতো
খুবলে খুবলে খেয়েছে। চুলগুলো অগোছালো হয়ে জট পাকিয়ে আছে। লাবণ্যকে এ অবস্থায় দেখে সামিরের কোন অনুভূতিই যেন কাজ করছে না। বেশ বড় শক পেয়েছে বিধায় তা মেনে নিতে পারছে না তার মস্তিষ্ক।

সবাই সেখানে পৌঁছে দেখে লাবণ্যর এই নির্মম অবস্থা। যা দেখে সবার চোখ ফেটে পানি বেড়িয়ে যাচ্ছে। ইয়াসমিন বেগম কাছে গিয়ে লাবণ্যকে বুকে টেনে নিলেন। চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন জড়িয়ে ধরে। সন্তানের মৃত্যুতে এক মায়ের কান্নায় আকাশ বাতাস সুদ্ধ কাঁপতে লাগলো প্রবলভাবে।

বাড়ির ভিতর লাবণ্যর লাশটা এনে মেঝেতে রেখে বড় একটা চাদর দিয়ে ঢেকে দিল। বিলাপ করে কাঁদতে লাগলো তার মা। কোন মা-ই সন্তানের মৃত্যু নিজের চোখে দেখতে পারে না। আর সেটা যদি হয় এমন নির্মমভাবে অত্যাচারিত হয়ে। এর মধ্যে আশেপাশের প্রতিবেশীরা গুনগুন করে এটাসেটা বলতে লাগলো। যা শুনে স্পন্দনের মাথার রক্ত চড়ে গেল। তাই একপ্রকার জোর করেই সব বাইরের মানুষকে বের করে দিল। শুধুমাত্র সামিরদের আর ওদের পরিবারের সবাই এখানে উপস্থিত রয়েছে। লাবণ্যর লাশের তিন চার হাত দূরে ফ্লোরে সামির বসে আছে নির্জীব দৃষ্টি মেলে। সে এখনো মেনে নিতে পারছে না যে লাবণ্য আর এ পৃথিবীতে নেই। ওকে আর সে লাবণী বলে ডাকতে পারবে না এটাও ভাবতে পারছে না সে। কই দুপুরবেলাও তো ওর সাথে কথা হয়েছিল। তখন কী সে ভেবেছিল সে লাবণ্যর বধূসাজে দেখার পরিবর্তে এমন অবস্থায় দেখবে!? কত হাসিখুশিই না ছিল দুপুরে যখন পার্লারে থাকতে ফোন দিয়েছিল।

—“আমার বউটা কী করে রে?”
লজ্জা পেয়ে লাবণ্য বলেছিল
—“ইশ! এখনো তোমার বউ হইনি বুচ্ছো? যখন বউ হবো তখন বেশি করে ডেকো।”
তার কথায় হেসে সামির বলেছিল
—“হওনি তাতে কী হয়েছে? অতিশীঘ্র হয়ে যাবে। তখন আমাকে কে ঠেকাবে তোমাকে বউ ডাকায়? উফফ্! ফাইনালি! ফাইনালি আমি তোমাকে নিজের করে পাচ্ছি। ভাবতে পারছো কতটা খুশি আমি? আল্লাহ্ বোধহয় আমার মনের কথা শুনেছেন। আমি যে তোমাকে ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে পারবো না তা বোধহয় আল্লাহ্ জানতেন। তাইতো তোমাকে আমার ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য করেছেন তোমাকে।”
—“তোমার ভাগ্যে ছিলাম আছি। তাইতো সাড়া না দিয়ে থাকতে পারিনি। এমন নিঃস্বার্থ ভালবাসা বোধহয় আমি অন্যকারো কাছে পেতাম না তাই তোমার সাথে আমাকে মিলিয়ে দিয়েছেন।”
—“এই শুনো না! তোমার সাজ কী কমপ্লিট?”
—“কেন?”
—“ভিডিও চ্যাটে আসো না প্লিজ! তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে বধূবেশে।”
—“সবুরে মেওয়া ফলে। আরেকটু সবুর করো সোনা। স্বচক্ষে দেখতে পাবে।”
—“জানো তুমি একটা পাষাণী। তাহলে অন্তত একটা ফটো তো পাঠাও!” গাল ফুলিয়ে সামির বলে উঠে।
লাবণ্য যেন তাতেও গলে না। বলে,
—“জ্বি না। তাও পাঠাবো না। বলেছি না একেবারে নিজের চোখে দেখবে। সারপ্রাইজ রইলো তোমার জন্য।”
—“উফফ্! ততক্ষণ পর্যন্ত যদি বেঁচে না থাকি!? তাহলে আমার মনের আশাটা পূরণ হবে কী করে?”
—“এতো তাড়াতাড়িই তুমি মরবে না। আমার পরে তুমি মরবে। কারণ আমি তোমার মৃত্যু সহ্য করতে পারবো না। তাছাড়া আমাদের বাবু আসবে না পৃথিবীতে? তাদের বিয়ে না দিয়ে কিসের মরার কথা বলছো তুমি?”
সামির লজ্জা দেওয়ার জন্য টেনে টেনে বলেছিল
—“ও আচ্ছা! তার মানে ফ্যামিলি প্ল্যানিংও করা শেষ আপনার, তাই না? এতো ফাস্ট আমার বউটা? তাহলে তো বাসর ঘরে আমার কিছু করতে হবে না। তুমিই আগে আগে আদর করা শুরু করবে।”
লজ্জা পেয়ে লাবণ্য মুচকি হেসে বলেছিল
—“তুমি আসলেই একটা অসভ্য। ফোন রাখছি আমি। দেখা হবে অতিদ্রুত।”
—“ইশ! এখন মন চাচ্ছে তোমার লজ্জায় লাল হওয়া গালে একটা কামড় দিতে।”
—“ধ্যাৎ! পাগল কোথাকার।” বলেই ফোন রেখে দিয়েছিল লাবণ্য। এটাই লাবণ্যর সাথে সামিরের শেষ কথা ছিল। আল্লাহ্ কেন লাবণ্যর সাথে তার হাতে হাত রেখে চলার সুযোগ দিল না!? নিজের অর্ধাঙ্গিনী রূপে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কেন পূরণ করলো না!? কেন শেষবারের মতো লাবণ্যর হাসিমুখটা দেখার সৌভাগ্য তার হলো না!? বধূবেশে দেখার পরিবর্তে কেন আজ লাবণ্যকে এভাবে দেখতে হলো তার!? এ অভিযোগগুলো মনে মনে আল্লাহর কাছে পেশ করছে সামির। কখনো কী এ না জানা উত্তরগুলো পাবে সে!?

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে