অভিমান হাজারো পর্বঃ১০

0
2306

অভিমান হাজারো পর্বঃ১০
আফসানা মিমি

মোবাইলে রিংটোনের আওয়াজ পেয়ে ব্যালকনি থেকে উঠে রুমে গিয়ে দেখলো আফরা ফোন দিয়েছে। রিসিভ করার পর আফরার কান্নামাখা কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়ে উদ্ধিগ্ন হয়ে অতশী জানতে চায়লো
—“এই আফরা, কি হয়েছে তোর? এভাবে কাঁদছিস কেন?”

আফরা কান্নার দমকে কথা বলতে পারছে না। অতশীর চিন্তা হচ্ছে। এমন হাসিখুশি, প্রাণবন্ত একটি মেয়ে এভাবে কাঁদছে কেন?
—“প্লিজ আফরা বল না কি হয়েছে? আমার কিন্তু এবার বেশ চিন্তা হচ্ছে!”
—“অতশী একটু পর আমার বিয়ে।”

আফরার হঠাৎ এমন কথায় অতশী চমকে উঠলো। সে ঠিক শুনছে তো!
—“কি? কি বললি তুই? তোর বিয়ে!”
—“হ্যাঁরে। আমার বিয়ে।”
—“আচমকা তোর বিয়ে দিচ্ছে কেন আঙ্কেল? কোন সমস্যা হয়েছে? তোর মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দিচ্ছে নিশ্চয়?”
—“না।”
—“না! তাহলে এতো তাড়াতাড়ি তুই বিয়েতে রাজী হয়ে গেলি কেন? প্লিজ খুলে বল না সবকিছু!”
—“অতশী তুই তো জানিসই বাবার শারীরিক অবস্থা কেমন! উনার মুখের দিকে তাকিয়ে না করতে পারিনি। তাছাড়া বিয়ের প্রপোজালটা অয়…অয়ন ভাই এনেছে।”
—“অয়ন ভাই!”

অবাক হয়ে গেল অতশী। নিজের মনকেই প্রশ্ন করলো ‘অয়ন ভাই কি আফরাকে পছন্দ করে?’ বিস্ময় লুকিয়ে রেখে অতশী প্রশ্ন করলো
—“তোদের মাঝে কি কিছু চলছে নাকি আফরা? হঠাৎ অয়ন ভাই তোর বাসায় বিয়ের প্রপোজাল দিল!”
—“না তেমন কিছু না। উনি বোধহয় আমাকে পছন্দ করে। আর….”
তারপর সেদিনের ঘটনাটা খুলে বললো অতশীকে। এটা শুনে অতশী কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে বসে রইলো। সে জানে অয়ন মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করার মতো ছেলে না। খুবই ভদ্র একটি ছেলে। আফরা যা করেছে তা অবশ্যই ভুল করেছে। এসব বলা আসলেই ঠিক হয়নি।

—“কই আমাকে তো এতোদিন কিছুই জানালি না। জানালে অন্তত তোকে ধারনা দিতে পারতাম অয়ন ভাই কেমন ছেলে। সেদিনও এসেছিস ভালো করে দুটো কথা না বলেই একপ্রকার পালিয়েই চলে গেলি। এতোই পর ছিলাম তোর যে আমাকে বলতে পারলি না! কই আমি তো তোর কাছে কিছুই লুকাই না। এমনকি যে কথাটা আমি স্পন্দনকেই বলিনি সেটা শুধু তোকেই বলেছি। তাহলে তুই কি করে লুকালি আমার কাছ থেকে এতো বড় সত্যিটা? পর করে দিয়েছিস তাইনা?”

অতশী অনেক কষ্ট পেয়েছে আফরার কর্মকাণ্ডে। তাই ভিতরের চাপা কথাগুলো বলেই ফেললো।
—“প্লিজ অতশী অন্তত তুই এভাবে কথা বলিস না আমার সাথে! তুই পর হবি কেন আমার? তুই যে আমার কতটা আপন তুই ভালো করেই জানিস এটা। তবুও এভাবে বলছিস কেন? আমার ভুল হয়ে গেছে। আমার তোকে বলা উচিৎ ছিল কিন্তু আমি জানিনা কেন তোকে বলতে পারিনি। প্লিজ মনে কষ্ট রাখিস না অতশী।”
—“আচ্ছা তাহলে এটা বল অয়ন ভাইকে এসব বলেছিলি কেন? উনার এতোদিনের চলাফেরায়, কর্মকাণ্ডেও কি তুই বুঝতে পারিসনি উনি মানুষ হিসেবে কেমন?”
—“অতশী তুই তো সবই জানিস, আমার ভাঙা হৃদয়টা টুকরো টুকরো হয়ে এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমার এতো সাহস নেই আবারো টুকরো হৃদয়ের অংশগুলো জোড়া লাগিয়ে ফের ভাঙার। আমি যে ভেঙে গুড়িয়ে গেছি রে অতশী। কি করে আবারো একই ভুল করি!” কান্নারা দলা পাকাচ্ছে আফরার গলায়
—“সবাইকে এক পাল্লায় মাপিস না আফরা। হাতের পাঁচটা আঙুল কিন্তু সমান হয় না। তেমনি তোকে এক ছেলে ঠকিয়েছে বলে তুই বাকি সব ছেলেদেরকেই যে এমন প্রতারক ভাববি এটা কিন্তু ঠিক না। তোর তো সেই জ্ঞান আছে কে কেমন তা চেনার। তাহলে তুই অয়ন ভাইয়ের মতো এমন ডিসেন্ট ছেলেকে এগুলো কি করে বললি?”
—“তাহলে রনককে কেন চিনতে পারলাম না আমি? কেন ওর মতো ছেলের কাছ থেকে প্রতারণার স্বীকার হয়েছি?” বলতে বলতেই কেঁদে দিল
—“ভেবে নে তোর ভাগ্যের খারাপ ফাঁড়াটা কেটে গেছে। ঐ প্রতারকের কথা আর জীবনেও মুখে নিবি না।”
—“অতশী প্লিজ আমার কাছে আয় না রে! তোকে আমার এই মুহূর্তে খুব দরকার।”
—“আমি কি করে যাব আফরা? এদিকে স্পন্দনও বাসায় নেই।”
—“ভাইয়া তো এখানেই। অয়ন ভাইয়ার সাথে এসেছে।”
—“স্পন্দন তোদের বাসায়?” অতশী কিছুটা অবাক হলো
—“হ্যাঁ।”
—“আচ্ছা তাহলে তুই একটা কাজ কর স্পন্দনকে বল আমাকে এসে নিয়ে যেতে। যদি শুনে আমি একা গিয়েছি ভষ্ম করে দিবে আমাকে। যেই রাগ তার!”
—“আচ্ছা দেখছি কি ব্যবস্থা করা যায়!”

ড্রয়িংরুমে সবাই একসাথে বসে গল্প করছে। এখন আফরা কিভাবে স্পন্দনকে ডেকে পাঠাবে মাথায় আসছে না। তার রুমের ভিতর মা’কে প্রবেশ করতে দেখে টেনে তার কাছে এনে বললো
—“মা স্পন্দন ভাইকে একটু ডাক দিবে? উনার সাথে একটু কথা ছিল।”
—“কেন? কি কথা বলবি? তুই কি এই বিয়েতে রাজী না?”
—“উফ্ফ মা! কিসের মধ্যে কি টানছো? উনি কিন্তু অতশীর হাজবেন্ড।”
—“অতশীর এই ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে? বাহ কপাল ভালো বলতে হয়!”
—“এখানে কপাল ভালোর কি দেখলে মা? চার বছরের সম্পর্ক ছিল তাদের। তারপর বিয়ে হয়েছে। এখন যাও উনাকে একটু ডেকে দাও।” আফরা বিরক্ত হলো কিছুটা ওর মায়ের কথায়।
—“আচ্ছা যাচ্ছি। কিন্তু কি বলবো গিয়ে?”
—“বলবে তোমার বউয়ের বান্ধবী ডাকছে তোমাকে। আজব! অবশ্যই বলবে আফরা তোমাকে ডাকছে। সেটাও জিজ্ঞাসা করছো? যাও গিয়ে ডেকে আনো।”
আফরাকে আগের চেয়েও অসন্তুষ্ট দেখালো তার মায়ের কর্মকাণ্ডে। কি বলে ডেকে আনবে সেটাও জিজ্ঞাসা করছে। এটুকু বুদ্ধি কি ওর মায়ের ঘটে নেই! আজব!
—“উফ্ফ! এতো প্যাঁচ ধরিস কেন কথায় কথায়? যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি।”

আছিয়া বেগম গটগট করে চলে গেল। সেখানে গিয়েও আরেক ঝামেলায় পড়লেন উনি। স্পন্দন সেখানে নেই। কই চলে গেল! এদিকে বিয়ে বাড়িতে এতো কাজ! কাজ ফেলে রেখে এখন তাকে কইথেকে খুঁজে বের করবেন উনি! ভাবতে ভাবতেই দেখলেন স্পন্দন আর অয়ন বাইরে থেকে ঘরের ভিতর ঢুকছে। তাদের সামনে গিয়ে ইতস্তত করতে লাগলেন। তা দেখে অয়ন জানতে চায়লো
—“কোন সমস্যা মা?”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


অয়নের মুখে হঠাৎ এভাবে ‘মা’ ডাক শুনে আছিয়া বেগম চমকে উঠলেন। উনার চমকে উঠা যেন অয়ন টের পেল। তারপর সে বললো
—“আমার মা নেই। ছোটকাল থেকেই মায়ের অভাবে বড় হয়েছি আমি। যদিও আপু, আব্বু যথেষ্ট আদর স্নেহ দিয়েছেন। ফুপ্পিও মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসতেন। তবুও একটা কিছু একটার অপূর্ণতা যেন রয়ে যেত ভিতরে ভিতরে। আজ আপনাকে মা ডেকে যেন প্রশান্তি অনুভব করছি বুকের ভিতরে। আপনার কোন আপত্তি নেই তো মা!”

আছিয়া বেগমের চোখে পানি এসে গেল অয়নের এমন কথায়। তার মেয়ের ভাগ্যটা আসলেই অনেক ভালো। ভাগ্য করে এমন ভালো মেয়ের জামাই পাবেন উনি ভাবতেও পারেননি। উনি মাথা নেড়ে সায় জানালেন উনার কোন আপত্তি নেই। অয়নের মাথায় হাত বুলিয়ে একটু আদর করে দিলেন। মায়ের দেরি দেখে আফরা উঁকি দিয়েছিল। উঁকি দিতেই দেখে তার মা অয়নের মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর অয়ন হাসছে। অবুক! এটা কি হলো! সবটাই যেন আফরার মাথার ওপর দিয়ে গেল। তার মাকে কি কাজে পাঠাইছিল আর সেখানে গিয়ে করছেটা কি তা দেখে আফরার কিছুটা রাগ হলো। তার মাকে ডাক দিতে যাবে তখনই অয়ন তার মাকে জিজ্ঞাসা করলো
—“আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?

হঠাৎ করেই যেন মনে পড়ে গেল কথাটা। আফরা স্পন্দনকে ডেকে পাঠিয়েছিল। তারপর বললেন
—“ইয়ে স্পন্দন বাবাজি, তোমাকে আফরা একবার ডেকেছে। কি যেন বলবে!”
অয়নের ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসে। স্পন্দনকে কি কাজে ডেকে পাঠালো!
—“আন্টি আপনি আমাকে নাম ধরেই ডাকতে পারেন। আমার ভালো লাগবে। আচ্ছা আফরা কিজন্য ডেকেছে আপনি জানেন কিছু?”
—“না বাবা আমি তো কিছু জানিনা। শুধু বললো কি যেন জরুরী কথা বলবে। আচ্ছা আমি যাই ঐদিকটা দেখি গিয়ে।”

—“কিরে আফরা হঠাৎ তোকে ডেকে পাঠালো!”
—“কি জানি বুঝতে পারছি না। আমি গিয়ে দেখি।”
—“আচ্ছা যা। আমার বোধহয় একবার বাসায় যেতে হতে পারে অরুকে আনতে।”
—“কষ্ট করে তুই যাবি কেন শুধুশুধু? ড্রাইভার পাঠিয়ে দে।”
—“হুম দেখি, তুই যা।”

—“অতশী শোন।”
—“হ্যাঁ বল।”
—“তুই রেডি হয়ে নে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অয়ন ভাইদের ড্রাইভার পৌঁছুবে তোদের বাসায়। অয়ন ভাইয়ের ছোটবোনের সাথে এসে পড় তুই।”
—“কিন্তু……”
—“আরে আমি স্পন্দন ভাইকে বলার পর উনি অয়ন ভাইকে গিয়ে বলেছেন। তারপর অয়ন ভাইই ওদের ড্রাইভারকে বলে দিয়েছে ওর বোনের সাথে করেই যেন নিয়ে আসে। খুব বেশিক্ষণ লাগবে না বোধহয়। তুই রেডি হয়ে যা। গাড়ির হর্ণ বাজলেই বেরিয়ে পড়বি বাসা থেকে।”
—“ওকে রাখছি এখন।”

—“হয়েছে এবার ছাড় না! আধঘন্টা যাবৎ এভাবে ধরে বসে আছিস। না ছাড়ছিস না কথা বলছিস। পিঠ ব্যথা করছে তো আমার।” অতশী বলে উঠলো হালকা হেসে। আসার পর থেকে সেই যে তাকে জড়িয়ে ধরেছে পাগলীটা এখন অবধি ছাড়ার নাম নিচ্ছে না। এদিকে বিয়ের সময় ঘনিয়ে আসছে। তাকে রেডি করাতে হবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা!
—“না ছাড়বো না। সবাই আমাকে পর করে দিচ্ছে। এখন তুইও আমাকে পর করে দিচ্ছিস তাই না? যা কথা নাই তোদের কারো সাথে।”
আফরা বললো মিথ্যে অভিমান দেখিয়ে।
—“আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রেখে তোর সোনালী সময়গুলো নষ্ট করছিস কেন? আজ সারারাত অয়ন ভাইকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখিস। তখন কেউ কিছু বলবে না। উল্টো এত্তোগুলা আদর আলবাসা দিবে।” ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে বললো অতশী।
কপট রাগের সাথে আফরা বললো
—“যাহ তো! ফাজলামো করবি না একদম। এমনিতেই ভয়ে সারা হাত পা অসাড় হয়ে পুরো শরীর ঘেমে যাচ্ছে আমার। আর তুই আছিস ফাজলামোর মুডে।”
—“আরে ভয়ের কি আছে? আজকে তো শুধু…..”
হালকা চাপড় মেরে অতশীকে থামিয়ে দিয়ে বললো
—“উফ্ফ! চুপ কর তো!”
—“এই এই তুই কি লজ্জা পাচ্ছিস?”
—“প্লিজ আর লজ্জা দিস না আমাকে। এমনিতেই লজ্জায় মরে যাচ্ছি আমি।” মুখ ঢেকে বললো আফরা
অতশী হেসে উঠলো আফরার কথায়।

—“ভাইয়া বৌমণি কোথায়? আমি দেখবো তাকে।”
অরুনিমার প্যানপ্যানানিতে মাথা খারাপ হবার জোগার অয়নের। এসে থেকে এক গানই বারবার গাইছে ‘বৌমণি কোথায়? তাকে দেখবো।’
—“ভাইয়াআআআআ! কথা বলো না কেন? বলো না বৌমণি কোথায়?”
—“উফফ্ অরু! বিরক্ত করিস না তো! সময় হলেই দেখতে পাবি।”
—“না না না আমি এখনই দেখবো। হুহ্ তোমার দেখাতে হবে না। আমি কাউকে জিজ্ঞাসা করে নেব আমার বৌমণি কোনটা!”
—“এখানে এসেও এমন চঞ্চলমতি ভাবটা না দেখালেই হচ্ছে না তোর?”
এবার স্পন্দন বলে উঠলো
—“অয়ন এভাবে বলছিস কেন? আর অরু আফরা বোধহয় ভিতরের ঘরে আছে। অতশীও সেখানেই আছে। গিয়ে দেখা করো যাও।”
অয়ন বাগড়া দেওয়ার চেষ্টা করলো
—“আরে….”
—“তুমি থাকো এখানে। আমি আমার একমাত্র বৌমণিকে দেখে আসি।”

খুঁজে খুঁজে শেষ পর্যন্ত আফরার রুমের সন্ধান পেল অরুনিমা। রুমে ঢুকেই সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো দরজার মুখে। সে কি ভিতরে যাবে! তার কি এই মুহূর্তে ভিতরে যাওয়া ঠিক হবে! কিন্তু গেলে যদি সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়! তার সারা হাত পা তো তিরতির করে কাঁপছে। যেকোন মুহূর্তে সেন্সলেস হয়ে যেতে পারে। তাঁকে সে এখানে দেখবে কল্পনাও করতে পারেনি। আচ্ছা বৌমণির কি কিছু লাগে তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটি! মনে মনে এসব ভাবছে আর দোটানায় ভুগছে। সে যখন ঘুরে চলে আসতে যাবে তখনই অতশী তাকে দেখতে পেয়ে ডাক দিল

—“সেকি অরুনিমা! তুমি চলে যাচ্ছো যে! তোমার ভাইয়ের একমাত্র বউ দেখবে না?”

আসার পথে গাড়িতে পরিচয় হয়েছিল অরুনিমার সাথে অতশীর। খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। মনে কোন প্যাঁচগোচ নেই। সরলমনে মুখে যা আসে তা-ই বলে দেয়। অতশীর ডাকে অরুনিমা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়ে। পায়ের নিচের মাটিটা বোধহয় কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা পায়েই ঘুরে তাকালো। চোখ গেল সরাসরি সেই মানুষটার দিকে, যাকে দেখলে তার পৃথিবীতে হাজারো রঙিন প্রজাপতি উড়াউড়ি করে খুশিতে। ঠিক এখনও তার বুকের ভিতর কয়েকশো প্রজাপতি ডানা ঝাপটাচ্ছে। ইশ এতো লজ্জা লাগে কেন তার এই মানুষটা ওর সম্মুখীন হলে! লজ্জায় তাকানোই যায় না আবার না তাকালেও মনে অশান্তি বিরাজ করে। ভালো জ্বালায় পড়েছে সে।

—“অরুনিমা তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো?” অতশীর প্রশ্ন
এমন কথায় যেন লজ্জা পেয়ে আরো কুঁকড়ে গেল অরুনিমা। তা দেখে অতশী আর আফরা দুজনেই বেশ অবাক। মাথা নিচু করে অরুনিমা উত্তর দিল
—“না না লজ্জা পাব কেন?”
—“লজ্জা না পেলে তোমার মুখ কান এমন লাল বর্ণ ধারণ করছে কেন?”
এ কথা শুনে অরুনিমা তাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে অতঃপর সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটার দিকে তাকালো। দেখলো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তার চোখ পড়ার সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। তা দেখে অরুনিমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। মানুষটার গমনপথের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অরুনিমার এমন আচরণ তারা দুজনেই লক্ষ্য করে সামান্য মুচকি হাসলো তবে কিছু বললো না এ ব্যাপারে। নীরবতা ভেঙে অতশী বললো
—“অরুনিমা এই যে তোমার একমাত্র ভাইয়ের বউ আফরা। আর আফরা এটা হচ্ছে তোর একমাত্র আদরের ননদিনী।”
অরুনিমা এগিয়ে এসে আফরার দুইহাত ধরে বললো
—“কেমন আছো বৌমণি? তোমাকে কিন্তু আমি এই নামেই ডাকবো। তোমার আপত্তি নেই তো!”
—“না আপু আমার কোন আপত্তি নেই।”
—“সেকি তুমি আমাকে আপু ডাকছো কেন? আমাকে নাম ধরে ডাকবে।”
—“আচ্ছা ঠিক আছে ননদিনী।”

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে