অবুঝ_বউ পার্ট: ৫

3
6378

অবুঝ_বউ

পার্ট: ৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ আমার বিয়ে ভাবতেই ভালো লাগছে সাথে একটু একটু লজ্জাও লাগছে
মুমু: ভাইয়া তাড়াতাড়ি কর
আমি: শেষ আসছি

তাড়াতাড়ি ড্রয়িংরুমে গেলাম আম্মু আব্বু মুমু সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে
–আমি ভিনগ্রহের প্রাণী নাকি সবাই এভাবে তাকিয়ে আছ কেন
মুমু: ভিনগ্রহের প্রাণীরা তো ভালোই আছে তোকে দেখতে যা খারাপ লাগছে না হিহিহি
আম্মু: এই চুপ কর কিসব বলছিস আমার ছেলেকে তো রাজপুত্রের মতো লাগছে
আমি: সত্যি তো আম্মু
আম্মু: হ্যাঁ এবার চল

সোহাগীদের বাসায় বসে আছি বিয়ে করতে আসছি নাকি মরা বাড়িতে আসছি বুঝতে পারছি না বিয়ে বাড়ির কোনো আমেজই নেই, আমাদের সাথেও কোনো মেহমান নেই ওদের বাড়িতেও কোনো মেহমান নেই এইটা কোনো বিয়ে হলো এখন তো নিজের কাছেই খারাপ লাগছে
মুমু: ভাইয়া দেখ ভাবি আসছে (মুমুর কথা শুনে সামনে তাকালাম সেদিনও সোহাগী কালো শাড়ি পড়ছিল কিন্তু আজ কালো শাড়িতে ফর্সা পিচ্ছি মেয়েটাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে পিচ্ছি হলেও পছন্দ আছে নাহলে কি কেউ বিয়ের বেনারসি কালো শাড়ি পড়তে চায়)
আম্মু: মাশাল্লাহ্ আমার বউমা কে দেখতে একদম পরীর মতো লাগছে
আব্বু: হ্যাঁ খুব সুন্দর লাগছে

বিয়ে পড়ানো শেষ মজার বিষয় হলো সব বিয়েতে মেয়েরা কবুল বলতে একটু সময় নেয় কিন্তু সোহাগী একদমে বলে ফেলছে, পিচ্ছি মেয়ে বুঝতেই পারেনি এই তিন শব্দের কবুল বলেই ও সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে গেছে

বিয়ের সব জামেলা শেষ করে সোহাগীকে গাড়িতে তুলে দেওয়া হলো আমি যখন উঠতে যাবো সোহাগীর বোন পিছন থেকে ডাক দিল তাকিয়ে দেখি উনার চোখ দুইটা ফুলে আছে বোনের জন্য হয়তো একটু বেশিই কাঁদছে, উনি একটু দূর যাওয়ার ইশারা দিলেন আমিও উনার পিছন পিছন গেলাম, একটু দূর যেতেই উনি থেমে গেলেন তারপর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন
–আপু প্লিজ কাঁদবেন না
–না না আমি কাঁদি না আজ তো আমার খুশির দিন আমার বোন এই বাড়ির অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছে ভাই তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাহায্য করার জন্য
–আপু আমি সোহাগী কে ভালোবাসি তাই বিয়ে করেছি
–তোমার এই ভালোবাসার কারনেই ও এই বাড়ি থেকে মুক্তি পেয়েছে
–আচ্ছা এই বাড়ি থেকে মুক্তি পেয়েছে মানে কি
–সময় করে অন্যদিন বলবো সন্ধ্যা হয়ে আসছে আজ তোমাদের যেতে হবে, সোহাগী তো ছোট এখনো অবুঝ রয়ে গেছে এতো কিছু বুঝেনা ওর উপর কখনো রাগ করোনা ও একটু বেশিই বাচ্চামি করে একটু সহ্য করে নিও
–এসব নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না
–তোমার উপর আমার ভরসা আছে সোহাগীকে কষ্ট দিও না এমনি মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে
অন্ধকার হয়ে আসছে কি বকবক শুরু করেছ ওদের যেতে হবে তো (সোহাগীর দুলাভাই এসে রাগি চোখে আপুর দিকে তাকিয়ে বললো আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আপু অনেক ভয় পেয়েছে তারমানে সব নষ্টের মূল এই দুলাভাই)

গাড়িতে বসে আছি সোহাগী আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আম্মু আব্বু যে পাশে মেয়েটা একটু লজ্জাও পাচ্ছে না কি পিচ্ছি মেয়ে হিহিহি

বাসায় আসতে অনেক রাত হয়ে গেলো সব নিয়ম কানুন শেষ করে মুমু সোহাগীকে আমার রুমে নিয়ে আসলো, আমি চেয়ারে বসে বসে আমার বাসর ঘরের সাজটা দেখছি বিয়েতে জাঁকজমক নাহলেও মুমু বাসর ঘরটা সাজিয়েছে বেশ সুন্দর করে, হঠাৎ আম্মু ডাকছে শুনে তাড়াতাড়ি গেলাম
–আম্মু
–হ্যাঁ বস
–কিছু বলবে
–হ্যাঁ
–বলো
–সোহাগীকে আমাদের অনেক পছন্দ হয়েছে কিন্তু আমরা বিয়েটা করাতে চাইনি এতো পিচ্ছি মেয়ে, শুধু তুই ভালোবাসিস বলে বিয়েটা করালাম তোর বাবা তো এখনো রেগে আছে
–হ্যা জানি
–শুন বউমা পিচ্ছি এখনো এতোকিছু বুঝে না তাই ওর উপর কখনো রাগ করিস না কখনো যদি কোনো ভুল করে বুঝিয়ে বলিস বুঝবে
–ঠিক আছে
–ভবিষ্যৎ এ কি হবে তা তো জানিনা কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে তাই কখনো বউমার মনে কষ্ট দিসনা ছেড়ে যাওয়ার সুযোগটা কখনো দিবি না (অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আম্মুর দিকে এমন মা কি কারো হয় কতো সুন্দর করে বন্ধুর মতো বুঝিয়ে বলছেন সত্যি আমি অনেক ভাগ্যবান, আম্মু কে জরিয়ে ধরলাম)
–হইছে এখন রুমে যা বউমা একা আছে
–ঠিক আছে

একটু তাড়াতাড়ি রুমে আসলাম পিচ্ছি মেয়ে একা রুমে আছে যদি ভয় পায়, দরজা খুলে তো আমি অবাক এই মেয়ে নিজের কি অবস্থা করেছে চুল খুলতে পারে না তাই বলে চুল সব জট লাগিয়ে এলোমেলো করে ফেলছে দেখতে একদম পাগলীর মতো লাগছে, আস্তে আস্তে সোহাগীর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম আয়নায় আমাকে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখ ঘুরিয়ে অসহায়ের মতো আমার দিকে তাকালো, আমি মৃদু হেসে আমার পিচ্ছি বউয়ের চুলের জট ছাড়াতে লেগে গেলাম

অনেক সময় নিয়ে আস্তে আস্তে চুলের জট ছাড়িয়ে দিলাম মাত্র কয়েকটা চুল ছিঁড়েছে দেখে তো সোহাগী অবাক, আমি ওর মুখের অবস্থা দেখে মনে মনে ভাবছি জট ছাড়াতে কতো কষ্ট হয়েছে সেটা তো আমি জানি মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধ জয় করেছি
–হিহিহি আমার চুল ছিঁড়েনি থ্যাংকস (হঠাৎ ওর খিলখিল হাসিতে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকালাম সত্যি পিচ্ছিটা দেখতে অনেক মায়াবী)
–কি ভাবছ
–কিছুনা চলো নামাজ পড়ি
–এতো রাতে কিসের নামাজ
–আমাদের নতুন জীবন শুরু করবো তো তাই আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবো
–আচ্ছা

সোহাগীকে নিয়ে দুই রাকাত নফল নামায পড়লাম তারপর চেঞ্জ করতে চলে গেলাম

চেঞ্জ করে এসে দেখি সোহাগী ফুল গুলোকে ছুঁয়ে দেখছে ওর হাতের ছোঁয়ায় যেন ফুল গুলোকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে
–ওই (হঠাৎ সোহাগীর ডাকে হুশ ফিরলো)
–কি আর কিছু লাগবে
–আমি শাড়ি পড়ে ঘুমাতে পারবো না জামা এনে দাও
–(ঘুমাতে পারবে না বলছে যখন পিচ্ছি বউটার সাথে একটু দুষ্টুমি করা যাক)
–কি হলো
–আজকে ঘুমাতে হবে না তো বাসর রাতে কেউ ঘুমায় নাকি

বউ আমার দিকে কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বললো
–বাসর রাত কি
আমার অবুঝ বউয়ের অবুঝ প্রশ্নে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম এই পিচ্ছি মেয়ে তো বাসর রাত কি সেটাই জানেনা এখন কি উত্তর দেই…..

চলবে?

(এই গল্পে তেমন সাড়া পাচ্ছি না মনে হয় ভালো লাগছে না আপনাদের, ভালো না লাগলে বলুন আমি নতুন গল্প লিখবো কিন্তু অনেক দিন পর, আসলে আমি খুব অসুস্থ আছি তো গল্পে তেমন মন দিতে পারছি না কষ্ট করে লিখি কিন্তু কি লিখি নিজেই জানিনা??)

3 মন্তব্য

  1. আপু সত্যি বলছি আমি যাকে ভালোবাসি সে অনেকটা ছোট আর তাই তাকে আমি গল্পকথা , ও পিচ্চি বউ বলেই ডাকি । আপনার golpo ta ( দুঃখিত english লিখার জন্য actually আমি ওকে দেয়া ডাকনামটা আর কোথাও বাংলায় লিখিনা একমাত্র ওকে মেসেজে লিখা ছাড়া ) এখন অবদি অনেক ভালই লাগছে বাকিটা পড়ে বলতে পারব পুরোটা কেমন লেগেছে ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে