অন্যরকম ভালোবাসা পর্বঃ ০৬

0
3166

অন্যরকম ভালোবাসা পর্বঃ ০৬
– আবির খান

মায়া আর দেরি না করে আবিরের বাইকে উঠে পরলো কিন্তু যেভাবে বাইকে বসলো তা আবিরের মোটেও পছন্দ হয়নি…তাই আবির বলল..

আবিরঃ এটা কি বাইক জানো??এর কত পাওয়া জানো??তুমি যেভাবে বসেছো তাতেত পরে যাবে..আমাকে ধরে বসো..
মায়াঃ না সমস্যা নেই আমি পরবো না..

আবির আর একটা কথা না বলেই..পিছনে তার দু হাত দিয়ে মায়ার নরম দুহাত ধরে তার কোমরে রাখলো..ঘটনার আকস্মিকতায় মায়া অবাক হয়ে যায়…

অন্যদিকে ক্যাম্পাসের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে..কারণ ওরকম প্রিন্সের বাইকের পিছনে উঠার অনেক মেয়েরই সখ ছিলো.. কিন্তু আমাদের একমাত্র ভাগ্যবতী মায়া সেই সুযোগটা শুধু পেয়েছে…মায়া খুব ভালোই বুঝতে পারছিল..যে তার এই বাইকে বসায় কত মেয়ের মন পুরেছে..কারণ সব মেয়েরা সেভাবেই তাদের রিয়েকশন দিচ্ছিলো…আজ মায়ার নিজেকে খুব এস্পেসাল মনে হচ্ছিলো..

এরপর আবির বাইক স্টার্ট করে ফুল স্পিডে চালাতে শুরু করলো….
মায়াঃ আরে আস্তে চালান…আমিতো পরেই যাবো..
আবিরঃ এ বাইক আস্তে চলেনা..মজা করে..
মায়াঃ কেমন পচা বাইক একটা… আস্তে চলেনা…পরে যাবো ত..
আবিরঃ আমাকে ভালো করে ধরো তাহলে আর পরবে না…

মায়া ভয়ে আবিরের আরো কাছে গিয়ে তাকে ভালো করে জরিয়ে ধরে.. যা মায়াও বুঝতে পারেনি..অপরদিকে আবিরের ত অবস্থা পুরাই খারাপ… জীবনে প্রথম কোন মেয়ে তাকে এভাবে বাইকে জরিয়ে ধরে বসে আছে..তার উপর মানুষটা আবার তার প্রিয়.. মনের ভিতর উতালপাতাল হাওয়া চলছে আবিরের… খুব ভালো লাগা কাজ করছে এ মায়াবতীর স্পর্শে..

আবির খুব তারাতাড়িই মায়ার বাসার সামনে এসে পরলো…আবিরের খুব ইচ্ছে ছিলো আরো কতক্ষণ ওকে নিয়ে ঘুরার কিন্তু হাতে সময় না থাকায় তাই তারাতাড়ি আসা..

আবির খেয়াল করলো মায়া এখনো তাকে জরিয়ে আছে….আবির ভাবছে..ব্যাপার কি ও নামছে না কেন..আসলে মায়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে আবিরকে জরিয়ে ধরে বসে ছিল..তাই তার খেয়াল নেই..

আবিরঃ মায়া নামবে না..
মায়াঃ চলন্ত বাইক থেকে নামবো??
আবির এবার হেসে দিলো ওর কথা শুনে..
আবিরঃ ম্যাম একটু ভালো করে আশেপাশে দেখেন..

এবার মায়া আস্তে করে চোখ খুলেত সে পুরোই অবাক.. আরে সেতো এসে পরেছে…কিন্তু আবার পরক্ষণেই লজ্জার চরম শিকরে উঠে গেলো.. মায়া দেখলো সে আবিরকে কিভাবে জোরে জরিয়ে ধরে বসে আছে… মায়া লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে.. যা আবিরের চোখ এড়ালো না..(বাইকের মিররে দেখেছে)..মায়া আস্তে করে আবিরকে ছেড়ে নিচে নেমে দাড়ালো.. মায়া লজ্জায় কিছু বলতে পারছেনা..কি করলোটা কি সে..

আবির ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল..
আবিরঃ আচ্ছা মায়া আমি যাই..কাল সাবধানে এসে পরো..
মায়াঃ…কিছু বলার আগেই আবির সাই করে একটানে চলে গেলো আর মায়া দাড়িয়ে দেখছে..

হঠাৎ মায়া ভাবলো..
মায়াঃ ইস..আমিও না..ওনাকে একটা থ্যাংকস বলা উচিৎ ছিল… আর আমি চুপ করে দাড়িয়ে ছিলাম..ধুর..থাক কালকে বলে দিবো..এখন ভিতরে যাই..

মায়া বাসার দিকে পা বারাতেই সে যেনো আকাশ থেকে পরলো…
মায়াঃ ওয়েট এ মিনিট…মানে হাউ…উনি আমার বাসা চিনলো কিভাবে…আমিতো ভয়ে কিছু বলিই নি..তাহলে উনি আমার বাসা চিনলো কি ভাবে??
উনিতো আসলেই ডেঞ্জারাস.. নাহ আর ভাবতে পারছি না…বাসায় গিয়ে ভালো করে শাওয়ার নিতে হবে…মাথা ঘুরাচ্ছে..মায়া চলে গেলো…

আবিরঃ মা আমাকে আর্জেন্ট ডেকেছিলে??
মাঃ হ্যা বাবা..আগে একটু মিষ্টি মুখ কর..
আবিরঃ একটু খেয়ে কেনো কি হয়েছে মা??
মাঃ জানিস বাবা তোর আব্বুর যে ড্রিম ছিলো না উত্তরাতে একটা গরিবদের জন্য ফ্রী হাসপাতাল বানাবে..
আবিরঃ হ্যা কি হয়েছে??
মাঃ সেখানে প্লটে কিছু লোক অনেক দিন যাবত বাধা আর সমস্যা করছিলো.. কিন্তু হঠাৎ তারা সবাই আজ এসে আমার কাছে মাফ চেয়ে ওখান থেকে চলে গেসে..
আবিরঃ তাহলে ত ভালোই..
মাঃ একটা জিনিস কি বাবা জানিস.. ওদের না অবস্থা খুব খারাপ ছিলো.. মনে হলো কেউ মেরেছে..
আবিরঃ মার খাবে না মা একেকটাকে যা সাইস করছি না..বিড়বিড় করে আস্তে বলল..
মাঃ কিছু বললি??
আবিরঃ না মা..যাক ভালোই হইছে এখন আর বাবার ড্রিম পূরনের আর কোন সমস্যা নেই..
মাঃ হ্যা বাবা খুব টেনশনে ছিলাম..তোর বাবার ড্রিম..যদি পূরন করতে না পারতাম…বলেই মায়ের চোখে পানি..

আবির তার মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বুকে জরিয়ে ধরলো মাকে..আর বলল..
আবিরঃ মা আমি থাকতে বাবার কোন স্বপ্নই অপূরন থাকবে না…
মাঃ বাবা তুই এবার ধরনা এই বিশাল দায়িত্ব.. আমি একা যে আর পারছি না..
আবিরঃ ধরবো মা ধরবো..শুধু তোমার বউমাকে আগে বাসায় আনি..
মাঃ কি দুষ্ট রে বাবা…আচ্ছা যা দোয়া করে দিলাম যাতে আমার বউমাকে তারাতাড়ি পাই..
আবিরঃ আমার সুইটহার্ট মা..
মাঃ হইছে হইছে..চল বাসায় যাই..
আবিরঃ আচ্ছা…

রাতে…
মায়াঃ হ্যালো অনু কেমন আছিস??আর আন্টি কেমন আছেরে??
অনুঃ দোস্ত এখন একটু ভালো আছে… জানিস খুব ভয় পেয়ে গেসিলাম…হঠাৎ এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে ভাবতেও পারিনি..
মায়াঃ থাক টেনশন করিস না..আল্লাহ ভরসা আন্টি খুব তারাতাড়িই ভালো হয়ে যাবে দেখিস…
অনুঃ হুম…তুই আজকে কিভাবে আসছিলি??
মায়াঃ উনি দিয়ে গেছেন…
অনুঃ তা উনিটা কে হুম??মজা করে
মায়াঃ আবির…
অনুঃ কি বান্ধপী কালা ডাল কি এখন বুঝতাছো..হাহা…
মায়াঃ দোস্ত একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার কি জানিস..আমি না উনাকে আমার বাসার এড্রেস বলি নাই..কিন্তু উনি ঠিক মতো আমাকে পৌছে দিলেন..
অনুঃ ওইযে বললাম না..ডাল ম্যা…
অনু বলার আগেই মায়া বলে উঠলো..
মায়াঃ হইছে হইছে আর বলিস নাতো একি কথা..লজ্জা পেয়ে..
অনুঃ আচ্ছা যা বললাম নাহ..
মায়াঃ কালকে কি আসবি ক্যাম্পাসে??
অনুঃ না দোস্ত আম্মুর পাশে থাকতে চাই এখন.. উনি আমাদের জন্য সবসময় করেন…তাই এবার আমি কিছু করতে চাই..
মায়াঃ এই না হলে আমার বান্ধবী…
অনুঃ কিন্তু তুই কার সাথে যাবি??তুই আর আমিতো একসাথে আসাযাওয়া করতাম..
মায়াঃ আমিও ভাবছি কালকে যাবো না..
অনুঃ সরিরে দোস্ত..
মায়াঃ ধুহ..কিসের সরি…আমারই যেতে ইচ্ছা করছে না..তাই..
অনুঃ তুই অনেক ভালোরে দোস্ত..
মায়াঃ হইছে রাখ..এখন..
অনুঃ আচ্ছা বাই দোস্ত

মায়া ফোনটা রেখে দিলো..মায়া বারান্দায় গিয়ে ভাবছে..আজকে তার সাথে কি হলো.. আবির কিভাবে তার বাসা চিনলো..হঠাৎই মায়ার ফোনটা আবার…
চলবে…?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে