অদ্ভুত আনন্দ

0
1026

এক.
“আমার কথা কি কানে যাচ্ছে না তোমার?নাকি তোমার পেটে লাথি মারতে বাধ্য করবে আমাকে?”জহিরুলের কথা শুনে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে রুনা।বুঝতে চেস্টা করে সে তার স্বামী, নাকি অন্য কোন পুরুষ।এ জহিরুল, আর তার চেনা জহিরুলের যেন বিস্তর ফারাক।মাত্র দু মাস আগেও রুনা ভাবতে পারতো না যে,তাকে এমন দিনের দ্যাখা পেতে হবে। অনেক কাকুতিমিনতি আর হাত জোড় করে রুনা বলে “আমাকে দয়া করো ক্ষমা করো,আমি আর এ জঘন্য কার্যকলাপ করতে পারছি না।হয় আমাকে মেরে ফেলো,নতুবা তালাক দিয়ে মুক্তি দাও।কিন্তু এ কাজ আর আমাকে দিয়ে করিয়ো না।”কথার কোন হেরফের নেই জহিরুলের।তেমনিভ
াবেই পরস্পরের সাথে চেপে আছে ঠোঁট জোড়া,চোখের চাহনি আরো কঠিন হলো,মুখভঙ্গি শয়তানের চেয়েও ভয়ংকর।রুনার কথার কোন পাত্তা না দিয়ে আবার বলতে লাগলো “আমার কথা নিশ্চয়ই কানে গেছে তোমার?আর একটা কথাও শুনতে চাইনা আমি।যাও ওর সাথে বিছানায় যাও,ওর সুখ মিটিয়ে দিয়ে আসো।” বিভ্রান্তের মত চেয়ে থাকে রুনা।জহিরুলের কথা তার কানে পৌঁছেছে কিনা বোঝা গেলো না।চোখের পানি অনবরত পড়ছেই তার,কিন্তু তা জহিরুলের কাছে সম্পূর্ণ মূল্যহীন।বেঁচে থাকার ইচ্ছা বহু আগেই হারিয়েছে রুনা।কিন্তু তার কাছে শুধুমাত্র জহিরুলের কাছ হতে ক্ষমা পাওয়াটাই সবচাইতে জরুরী।জহিরুলের সব অমানুষিক অত্যাচার সে মাথা পেতে মেনে নিতে রাজী আছে,তার বদলে শুধুমাত্র জহিরুল তাকে ক্ষমা করেছে,সেটাই সে শুনতে ও দেখতে চায়।দরকার হলে সে চলে যাবে,আজীবন বিবাহ না করেই থাকবে।বাবার বাড়িতে আজীবন থাকলেও বাবা টুঁ শব্দটি করবে না।কিন্তু এত অন্যায় শাস্তি দেয়ার পরেও জহিরুলের ওপর তার কোন ক্ষোভ নেই।জহিরুল তাকে তালাক দিলেও সে জহিরুলকে কোন দোষই দিবে না।সমস্ত দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে রেখে দেবে,তার বদলে শুধু জহিরুলের ক্ষমাটাই চায় সে। আর সাথে চায় তার একমাত্র ভুলের খবর ফাঁস না করার প্রতিশ্রুতি।তাহলেই আজীবনের জন্য লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাবে সে।এ মুখ আর কাউকে দ্যাখাবার নয়।তার ভুলের মাশুল গুণতে গিয়ে,আর জহিরুলের অসুস্থ খেলার বলি হয়ে এ পর্যন্ত বাইশ জন পুরুষের সঙ্গে বিছানায় যেতে হয়েছে তাকে।পেটে একটা বাচ্চা রয়েছে এ কথাটা সে রীতিমত ভুলে গেছে।সব ধরনের অনুভূতি লোপ পেয়েছে তার।যন্ত্রের মত জহিরুলের কর্মসম্পাদন করে সে।জহিরুল উঠতে বললে উঠে, আর বসতে বললে বসে।কখনও যদি স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি ফিরে আসে তখনই কেবল কাকুতিমিনতি শুরু করে সে।আর জহিরুলের বলা একটা কথাই কেবল অনবরত বাজতে থাকে কানের ভেতর “আমার কথার একটু উনিশ কি বিশ হয়েছে,তাহলেই হলো।তোমার কুকর্ম ফাঁস হয়ে যাবে।”যে কথা ফাঁস হলে মরেও শান্তি পাবে না রুনা।মরার পরেও লাঞ্ছিত হতেই থাকবে সে। আপন মানুষেরাও ছিঃ ছিঃ করবে তাকে নিয়ে। সে কারনেই সে বেঁচে রয়েছে।সুযোগ পেলে নিজের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়।অনেক প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে হয়েও জহিরুলের কোন ক্ষতিই সে করতে পারছে না,কারন জহিরুল সে ব্যাবস্থাও করে রেখেছে,যাতে তার কোন ক্ষতি হলে রুনার কুকর্ম ফাঁস হয়ে যায়।কোন এক লোকের কাছে নাকি তার উইল জমা দিয়ে রেখেছে।সেখানে লিখে রেখেছে, তার মৃত্যুর জন্য রুনা দায়ী,এবং রুনার কুকর্মের বিবরণ রয়েছে তাতে।হুমকিও দিয়ে রেখেছে আত্মহত্যা করলেও তার কুকর্ম ফাঁস হয়ে যাবে…

সাধাসিধে, হাবাগোবা টাইপের এক ছেলে জহিরুল।অন্তত সামনাসামনি দেখলে তাই মনে হবে।কিন্তু মাথায় প্রচুর বুদ্ধি ধরে তার।কিন্তু তার ভেতর কোন কপটতা নেই।কারো সঙ্গে কখনো অন্যায় করেছে বলে কোন বদনাম নেই তার।পিতামাতার একমাত্র সন্তান,জীবনে দুঃখ কি জিনিস তা সে কখনও দ্যাখেনি।বড়সড় একটা চাকুরী করে সে।বাবা মা আর বৌ নিয়ে মোটামুটি নিঝঞ্ঝাটে কাটিয়ে দিয়েছে জীবনের স্বল্প সময়টা।বছর তিনেক হলো বাবা মায়ের পছন্দে এক প্রভাবশালীর মেয়েকে বিয়ে করেছে।যদিও এতে তার মত ছিলো না,কিন্তু অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে দেখে তার মায়ের আর তর সয়নি।মায়ের অবাধ্য হবার সাহস তার আছে,কিন্তু মায়ের মতকে সম্মান করতে গিয়ে রুনাকে বিয়ে করেছে সে।অবশ্য এ তিন বছরে তার বউয়ের দিক হতে কোন ঝামেলা তাকে পোহাতে হয়নি। মাঝেমধ্যে বউয়ের যেসব আবদার থাকে,সেসব তার সাধ্যের মধ্যেই ছিলো।মুখে কখনও না বললেও বিয়ের প্রথম কয়েকমাসে রুনার বিষণ্ণতা দেখে আঁচ করে নিয়েছে যে,আগে তার সম্পর্ক ছিলো।তবে আস্তে আস্তে তা কাটিয়ে উঠেছে সে।তেমন কোন চাপ বউকে সে দেয়নি, যাতে সে বিগড়ে যায়।বউকে সে পাগলের মত ভালবাসে,বউও তাই।তার কথার অবাধ্য হয় না রুনা।কিন্তু আজকে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেও সে বউকে আটকাতে পারেনি।জোর করেনি বটে,কিন্তু বেশ কয়েকবারই একা একা পার্টিতে যেতে মানা করেছে তাকে।কিন্তু রুনা নাছোড়বান্দা।বহুদিন পর পুরোনো বন্ধুদের সাথে দ্যাখা করার সুযোগটাকে হাতছাড়া করতে চায়নি।সবাই মিলে প্ল্যান করেছে স্বামী স্ত্রী ছাড়া সবাই একদিন দ্যাখা করবে,দিনভর আনন্দ করবে।জিনিসটা পছন্দ হয়নি জহিরুলের,তাই সে বেশ কয়েকবারই রুনাকে যেতে মানা করেছে।কিন্তু রুনা নাছোড়বান্দা,সে যাবেই।বহু মন কষাকষির পর যেতে দিয়েছে সে রুনাকে….

দুই.
কথাটা কিভাবে জহিরুলকে বলবে ভেবে পাচ্ছেনা রুনা।আনন্দে থেকে থেকে শিউরে উঠছে সে।জহিরুল আর তার ঘর আলো করে সন্তান আসবে ভাবতেই খুশিতে নাচছে তার মন।তাদের পরিবারে শান্তির অভাব নেই,কিন্তু একটা জিনিসের অভাব আছে।সেটা হচ্ছে তাদের কোন সন্তান নেই।জহিরুল সবসময়ই সন্তান নেয়ার ব্যাপারে কথা উঠলে বলতো,”পরে দ্যাখা যাবে ক্ষণ”এবার হয়তো সেও চিন্তা করেছে সন্তান নেয়ার ব্যাপারে।জহিরুলকে বড়সড় একটা উপহার দেয়া যাবে বটে!….

“জানো আজ তোমাকে একটা অমূল্য উপহার দেবো আমি”।”কী সেটা?”কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত জহিরুল।কেননা রুনা এর আগে এরকমভাবে রুনা তাকে কখনো এরকম উপহারের কথা বলেনি কিনা।”আমাদের ঘরে নতুন সদস্য আসছে”।কথাটা শোনামাত্র বাজ পড়লো জহিরুলের মাথায়।সঙ্গে সঙ্গে আড়ষ্ট হয়ে গেল সে।পাথরের মত মুখ ঘুরিয়ে চাইলো সে রুনার দিকে।লজ্জায় মুখ ঢেকে আছে মেয়েটা।এরকম কথা বললে সাধারণত লজ্জাই পায় মেয়েরা।রুনা মনে মনে ভাবছে,এই বুঝি জহিরুল তাকে কোলে তুলে নিয়ে নাচবে।কিন্তু জহিরুলের কোন স্পর্শই সে পাচ্ছে না,ঘটনা কি দেখতে মুখ তুলে জহিরুলের দিকে চাইলো সে।মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে জহিরুল।জহিরুলের হাত ধরে রুনা জিজ্ঞেস করলো,”তুমি খুশি হওনি?”কথা সরছে না জহিরুলের মুখে।মনে তার ঝড় উঠেছে।রুনার পেটে তার বাচ্চা এটা তার বিশ্বাস হচ্ছে না,কেননা বাচ্চা নেয়ার ব্যাপারে খুবই সতর্ক ছিলো সে।ইচ্ছা ছিলো আরো বছর দুয়েক পরে বাচ্চাকাচ্চা নেবে।কিন্তু রুনা বলছে তাদের ঘরে সন্তান আসছে।তা কি করে হয়?দু হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে।কি করবে ভাবছে

রুনাকে সে বলেছিল বিয়ের পাঁচ বছর পরে সন্তান নেবে তারা।নিজের বাবা-মাকেও বলেছিল বিয়ের পাঁচ বছরের মধ্যে যেন নাতি নাতনীর মুখ দ্যাখার জন্য ব্যাকুল না হয়ে পড়ে।কিন্তু রুনা যা শোনালো তাতে বিন্দুমাত্র বিশ্বাস হচ্ছে না তার।এটা কি করে হয়?সে কি কামভাবে এতখানিই অসতর্ক হয়ে পড়েছিল?
“ডাক্তার,আমার স্ত্রীর পেটে যে বাচ্চাটা রয়েছে, সেটা কার ওয়ারিশের একটু পরীক্ষা করে দিন।তাতে যতরকম জিনিসের দরকার হয় তার বন্দোবস্ত করবো আমি।আপনি কেবল সঠিক মেডিকেল রিপোর্টটা আমার হাতে পৌঁছে দেবেন।”জহিরুল কথা খানা বলেই হাসপাতালের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।হতভম্ব হয়ে গেছে রুনা।হটাৎ যেন তার বিশ্বাসের পৃথিবী দুলে উঠলো।তার স্বামী তাকে এত অবিশ্বাস করে কল্পনাও করতে পারেনি সে।স্বামীর ভালবাসায় কোন খুঁত পায়নি সে।কিন্তু সেই মানুষটাই এ কথা কিভাবে বলে?রুনার চোখে, ঝাপসা ঠেকছে সামনের সব কিছু…

বাচ্চার ওয়ারিশের রক্তের গ্রুপ B+।পড়া মাত্র হো হো করে হেসে উঠলো জহিরুল।হাসি তার থামছেই না।পেটে খিল ধরে গেছে তার তবুও হাসছে।হাসির দমকে রিপোর্টটা হাত থেকে পড়ে গেলো তার।হাসতে হাসতে চেয়ারে বসে পড়লো সে।রুনা হালকা ঝুঁকে রিপোর্টটা তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করা মাত্রই দম আটকে এলো তার।ভেতর থেকে সব উলটে আসতে চাইছে যেন।এটাতো জহিরুলের রক্তের গ্রুপ না।ধপ করে বসে পড়লো হাসপাতালের মেঝেতে।শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সে।তাদের দুজনকে ঘিরে লোকজনের ভিড় জমতে শুরু করেছে।তারা বোঝার চেস্টা করছে আসল ঘটনা…

তিন.
আবছা ভাবে মনে পড়ছে রুনার,সেদিন পার্টিতে বন্ধুবান্ধবদের সাথে প্রচুর মদ গিলেছিলো সে।কয়েক গ্লাস গেলার পর সে টেবিলের ওপর হেলে পড়েছিল,তারপর?তারপর অনেকক্ষণ তার কোন হুশ ছিলো না তার।একরকম জোর করেই খাওয়ানো হয়েছিল তাকে।হুশ ফেরার পর নিজেকে একটা টেবিলের ওপর শোয়া অবস্থায় আবিষ্কার করেছিল।কিন্তু,কিন্তু সে বেহুশ থাকার সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে তার ছেলে বন্ধুরা…!না না তা কি করে হয়?কয়েকবছর তাদের সাথে চলাফেরা করেছে সে,এরকম কিছুর টের পায়নি সে কোনদিন।তারা কত হাসিঠাট্টা করেছে তার সঙ্গে।কতখানি বিশ্বাস করতো সে তাদেরকে।আর তারাই কিনা ওর সরলতার সুযোগ নিয়ে…।নাহ আর ভাবতে পারছে না সে।মাথাটা অসাড় হয়ে আসছে তার।এত জঘন্য কর্মকাণ্ড ঘটে গেছে তার সঙ্গে আর সে কিছুই বুঝতে পারেনি!লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে তার ভেতরটা।জহিরুলের ভালবাসা তো বটেই নিজের মান ইজ্জতের ওপরও মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে সে।তার এ অসম্মানের কথা রবিউল ছাড়া আর কজন জানে?তার স্বামী জহিরুল আর ডাক্তার ছাড়া আর কেউ কি জানে?যারা জানে তাদের সামনে মুখ দ্যাখাবে কি করে সে? যুক্তি দূরে থাক জিনিসটা ব্যাখা করবে কিভাবে সে তাদের কাছে?জহিরুল কি তাকে ছেড়ে দেবে?নাকি সবার কাছে বলে দিয়ে তার সম্মানহানি করবে?ওর এভাবে হাসার মানেটাই বা কি?আশেপাশে যারা জড়ো হয়েছে তারা কি জেনে গিয়েছে আসল ঘটনা?….এরকম হাজারটা প্রশ্ন ভিড় করছে রুনার মনে।একটারও উত্তর খুঁজে না পেয়ে আত্মহত্যাকে সঠিক পন্থা বলে মনে হলো তার কাছে।হ্যাঁ আত্মহত্যাই সবচেয়ে সহজ উপায়।কেউ জানবে না এ অসম্মানের কথা।স্বামীর কথা অমান্য করেছে বলে সবাই ইচ্ছাকৃত কুকর্ম বলে নেবে সেটাই স্বাভাবিক।অন্তত এতখানি ধরে নেয়াই যায় যে,জহিরুল কাউকে কিছু বলবে না।অন্তত ভালবাসার খাতিরে তার কাছ থেকে ততটুকু আশা করাই যায়।কিন্তু জহিরুলকে সে কতখানি চেনে?….

হ্যাঁ জহিরুল এমন কোন ভুল করেনি, যাতে করে রুনা তার বদলা হিসেবে এমন কাজ করেছে।বহুক্ষণ চিন্তা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছুলো সে।নিজে ইচ্ছে করেই রুনা এমন কাজ করেছে।তার পৌরুষত্ব নিয়েও রুনা কোনদিন প্রশ্ন তোলেনি।বাচ্চাকাচ্চা নেয়ার ব্যাপারেও রুনা তার সঙ্গে দ্বিমত করেনি।যদি বাচ্চা নেয়ার এতই ইচ্ছা থাকতো,অন্তত তাকে জোরাজুরি করতে পারতো, তাও সে করেনি।তার সঙ্গে রুনার এমন কোন দূরত্বও ছিলো না যাতে শরমে,কিংবা দ্বিধার কারনে বলতে পারেনি।এমন অমানবিক অন্যায় হলো কি করে তার সঙ্গে?অন্যের কোন ক্ষতি করেছে বলেও তো মনে পড়ছে না তার।তাহলে তার সঙ্গে এমনটা কি করে করলো রুনা?সে কি অতখানিই খারাপ?ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে জহিরুলের।চোখ দিয়ে পানিও বের হচ্ছে না।যেন কবির বলা, “অল্প শোকে কাতর,অধিক শোকে পাথর”এর প্রতিফলন ঘটেছে।নিজের বউকে সামলে রাখতে না পারার চাইতে লজ্জার বিষয় আর হতে পারেনা।অন্যের কাছে এ কথা কি করে বলবে সে?বেশি ভাল হলে বোধহয় এমনই হয়।

চার.
কত ভাবনা ভেবে রেখেছিল জহিরুল, তার আগামী দিনের সংসারের কথা ভেবে,কিন্তু এভাবে ভেস্তে যাবে তা কে ভেবেছিল?প্রতি মাসকে মাস সে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা খাঁড়া করেছে।রুনাকে না জানিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামের বিশাল এক জায়গা কিনেছে।ড্যাঙা,বাগান,পুকুর,ক্ষেত সবই থাকবে তার সে জায়গায়।আর প্রকৃতিরঞ্জনে ভরপুর থাকবে তাদের আশেপাশের জায়গা।সবকিছুর মধ্যেই বেড়ে উঠবে তাদের সন্তান।কিন্তু বিনা কারনে তার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে রুনা।অন্য যত অন্যায় আছে সব কিছুই মেনে নিতো সে।কিন্তু নিজের স্ত্রী তার স্বামীকে রেখে পরপুরুষের সাথে বিছানায় গিয়েছে,তা কোনভাবেই মানতে পারছে না জহিরুল।কিছুতেই সে রুনাকে ক্ষমা করবে না।প্রতিটা মুহুর্ত তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে রুনার ভূত।সেও এর যথাযথ প্রতিশোধ নেবে।পর পুরুষের সাথে বিছানায় যাওয়ার অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে দেবে সে,রুনার জীবন।যে সুখের সাগরে হাবুডুবু খাবে রুনা।পরিকল্পনাটার কথা মনে পড়তেই সুক্ষ্ণ হাসি ফুটলো তার মুখে।…

“কি ব্যাপার,হলো তোমার সাজগোজের?তাড়াতাড়ি বেরোও বাসা থেকে।দেখো আবার,তোমার নতুন পার্টনারকে সুখ দিতে যেন কোন কসুর না হয়।নইলে নতুন কাষ্টমার জোগাতে বেশ বেগ পেতে হবে।”কথাগুলো শুনে তেমন ভাবান্তর হলো না রুনার।শুধু চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।বার বার লেপ্টে যাবে বলে চোখে কাজল পড়েনি সে।জহিরুল তাকে দিয়ে এ কর্ম শুরু করানোর পর থেকেই কাজল পড়া ছেড়েছে সে।জহিরুল বার বার বলতো, চোখে কাজল পড়লে নাকি তাকে বেশ সুন্দর দেখায়।সেসব দিন এখন গত হয়েছে।ভালবাসা কি জিনিস তা অজানা হয়ে গেছে রুনার কাছে।চার মাসের একটা প্রাণ তার দেহের ভেতরে রয়েছে তাও সে ভুলে গেছে।কোন অনুভূতিই কাজ করে না তার ভেতর,আবার ভালবাসা!স্রেফ জহিরুলের বানানো রোবট সে এখন।খেতে বললে খায়,যেতে বললে যায়।এছাড়া আর কিছু মাথায় আসে না তার।শুধুমাত্র জহিরুলের বাবা-মায়ের সামনে গেলেই নিজেকে সামলে রাখার কথা কিভাবে যেন মনে পড়ে যায় তার।লজ্জার ভয়ে,না কিসের কারনে তা কে জানে।…

রাতে বাসার সামনে আসতেই চারদিকে বেশ ভিড় লক্ষ করলো জহিরুল।লোকজনের চাপা কথার আওয়াজে গম গম করছে।ব্যাপার কি দেখতে ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকলো সে।কেউ কেউ তাকে চেনামাত্র পথ ছেড়ে দিলো।মহিলারা তাকে দেখামাত্রই ফিসফিস করে কি যেন বলছে।সিঁড়ি ভেঙে নিজের ঘরের দরজায় যাওয়ামাত্র পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ করলো সে।তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কি যেন কথা বলছে তারা।সেও গিয়ে যোগ দিলো তাদের আলাপে।তার বাবা তাকে দেখামাত্র বলে উঠলো, “এইযে আমার ছেলে এসে পড়েছে”।একজন পুলিশ তার দিকে তাকিয়ে বললো,”আসসালামু আলাইকুম, এসে ভালোই করেছেন জহিরুল সাহেব।আমি ইন্সপেক্টর শহিদ,ওসি সাহেব অন্য একটা কেস পরিদর্শনে গিয়েছেন,তাই আমার হাতে দায়িত্ব দিয়ে একটা দল এখানে পাঠিয়েছেন,ঘটনা কি দেখতে।আপনি না আসলে আপনার বাবা-মাকে থানায় নিয়ে যেতে হতো।”চোখ কুঁচকে গেলো জহিরুলের।কিছুটা অস্বস্তির সঙ্গে জিজ্ঞেস করলো,”কি কারন?”একই লোক উত্তর দিলো,”আপনার স্ত্রী সুইসাইড করেছে।কিন্ত কি কারনে করেছে তা জানা যায়নি।কোন নোটও লিখে যাননি তিনি।এলাকার লোকজনের কথা শুনে ধরে নিচ্ছি আপনি নির্দোষ।কিন্তু আপনার নামে একটা মামলা হয়েছে।যেটা করা হয়েছে আপনার স্ত্রীর পরিবার থেকে।সে জন্যে থানায় গিয়ে আপনার জবানবন্দী দিতে হবে।”রুনা আত্মহত্যা করেছে?জিনিসটা তার মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি ছড়িয়ে দিলো।তার পরিকল্পনা সফল হয়েছে।ধুঁকিয়ে ধুঁকিয়ে মারতে পেরেছে সে রুনাকে।বুঝিয়ে দিয়েছে তাকে কষ্ট দেয়ার ফল। “ঠিক আছে যাবো।তার আগে আমাকে আমার স্ত্রীর চেহারাটা একটু দেখতে দিন।নইলে আমি কোথাও যাবো না।”…

কি নিষ্পাপ লাগছে আজ রুনাকে।অসম্ভব শাদা দেখাচ্ছে তার মুখটা।নড়তেও ভুলে গেছে জহিরুল।কত স্বপ্ন দেখতো এই সুন্দর মুখটার দিকে তাকিয়ে।এই সুন্দর মুখটার জন্যেই তাকে এত কষ্ট পেতে হয়েছে।অথচ.. এই সুন্দর মুখটা দেখেই সে সব কষ্ট ভুলে যেতে শিখেছিল।..চোখ দিয়ে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো জহিরুলের।হাত ঘষতে শুরু করলো সে।হটাৎ রুনার কানের সামনে মুখ নিয়ে বললো, “কাজটা না করলেও পারতি।আমাকে পশুতে পরিণত করলি তুই।”মুখটা তুলতেই রুনার পরিবারের করা মামলার কথা মনে পড়ে গেলো তার।শয়তানি হাসি ফুটে উঠলো তার মুখে।রুনার পরিবারকে উল্টো ফাঁদে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছে সে।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে