অজানা_অনুভূতি পার্ট: ১৯

0
2800

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ১৯

#Rabeya Sultana Nipa

 

__সকাল বেলা প্রাপ্তির ঘুম ভাঙতেই দেখে ফারহানের একটা হাত তার শরীরের উপর।
ফারহানের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ঘুমাচ্ছে।
প্রাপ্তি আস্তে করে হাতটা সরিয়ে উঠে বসলো।ফারহান কে বুজতে দেওয়া যাবেনা, না হলে আমি নিজেই লজ্জা পেয়ে যাবো।হয়তো ও ইচ্ছে করে রাখেনি।ঘড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখে ৮.০০ বেজে গেছে।কেউ আমাকে একবারো ডাকলোনা।সবাই কি মনে করবে আল্লাই ভালো জানে।কথাটা ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তি তাড়াতাড়ি করে ওয়াসরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।

__সকাল বেলা উঠে নাস্তা করার জন্য ডাইনিং টেবিলে এসে বসেছে প্রাপ্তির বাবা আর মেজো কাকা।আজ টেবিলে প্রাপ্তির আর নীরার সেই বকবকানি আর নেই।বাড়ীটা যেন আজ ঠাণ্ডা হয়ে আছে।বাড়ীর চারদিকে শূন্যতায় খাঁ খাঁ করছে।

প্রাপ্তির মেজো কাকী নাস্তা দিয়ে গেছে। প্রাপ্তির মা চা নিয়ে এসেছে সবার জন্য।

মেজো কাকা- ভাবী! ইমরান এখনো ঘুম থেকে উঠেনি?

প্রাপ্তির মা-ওকে এতো সকাল কখনো উঠতে দেখেছেন? যতোক্ষণ পর্যন্ত ডাকাডাকি না করি।

প্রাপ্তির বাবা-ওকে ডেকে তুলো।একটু পর ফারহানদের বাসায় যেতে হবে। সবাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিবে।তোমরা মেয়েরা তো সাজতে সাজতে দুই দিন লাগিয়ে পেলো।

প্রাপ্তির মা- আচ্ছা ঠিক আছে,

মেজো কাকা-ভাইয়া প্রাপ্তিকে আজ আসার সময় আমাদের সাথে নিয়ে আসবো।কি বলিস?

প্রাপ্তির মা -না! আজ আনার দরকার নেই।
প্রাপ্তির মায়ের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়েছে।

প্রাপ্তির বাবা-তুমি মা হয়ে এই কথা বলছো?

প্রাপ্তির মা কিছু বলছেনা মনে মনে ভাবছে,আমারও কষ্ট হয় কিন্তু কি করবো বলো।তোমার মেয়ে এই বাড়ীতে আসলে তোমাদের সবাইকে নিয়েই থাকবে।আর ফারহানকে আরো দূরে ঠেলে দিবে।এর ছেয়ে ভালো ওই বাড়ীতে আরো ২ দিন থাকলে ফারহানও আরো কাছে আসার সুযোগ পাবে।

প্রাপ্তির বাবা-কি হলো কিছু বলছোনা কেন?

প্রাপ্তির মা-(কথা ঘুরিয়ে নিয়ে)আসলে ওই বাড়ীতে সবার সাথে মিশতে হবে না?একদিনে তো আর সবার সাথে মিশা যায়না।তাই বললাম আরকি।ওর শাশুড়ি কেও ফোন দিয়ে জানলাম তার আজ প্রাপ্তিকে দিবেনা।

মেজো কাকা-তাই বলো।আমি তো কথাটা শুনে অবাক হয়ে গেলাম।আচ্ছা ওনারা যা ভালো মনে করেন।

এইদিকে ফারহান এখনো ঘুম থেকে উঠিনি।প্রাপ্তি গোসল করে এসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়তেই চুলের পানি এসে ফারহানের মুখে ছিটকে পড়লো।
ফারহান চোখ খুলে তাকাতেই দেখে প্রাপ্তি চুলের পানি মুছতেছে।
ফারহান কিছু না বলে তাকিয়ে আছে প্রাপ্তির দিকে।
প্রাপ্তি ফারহানের দিকে চোখ পড়তেই দেখে ফারহান তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

প্রাপ্তি-কি ব্যাপার ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
ফারহান -দেখছি! আমার বউটাকে।আর ভাবছি।
বউ শব্দটা শুনে প্রাপ্তি অট্র হাঁসি দিয়ে বললো
প্রাপ্তি- হুম বউ! তবে তোমার বউ এইটা কখনো ভাবিনি। যাইহোক ভাবছোটা কি?

ফারহান- ভাবছি তুমি আমার এমন বউ যাকে ছোঁয়া যায়না। শুধু দূর থেকেই দেখা যায় আর,,,,,,

প্রাপ্তি-থেমে গেলে কেন?আর এর পর কি?

ফারহান -কিছু না।,,,

এমন সময় দরজা ধাক্কানো শব্দ শুনে
ফারহান এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখে বড় ভাবী, মেজো ভাবী, আর তার কাজিনদের ওয়াইফ।

ফারহান- ব্যাপার কি সব একি বারে এক সাথে দল বেধে এসেছো?

মেজো ভাবী -আমরা না আসলে তো আজ দরজাই খুলতেনা।ভাই! এক রাতেই যদি সব ভালোবাসা দিয়ে ফেলো বাকী দিন এখনো পড়ে আছে।এখন দরজার সামনে থেকে সরো রুমের ভিতরে ঢুকতে দাও।

প্রাপ্তি তাদের দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো
বড় ভাবী -তোকে দাঁড়াতে হবেনা বস।সুমিটা কই গেছে।প্রাপ্তিকে সাজিয়ে দিলেই তো হয়।দুপুরের আগে সব গেস্ট এসে যাবে।তখন আবার সাজাতে সাজাতে দেরি হয়ে যাবে।

ফারহানের কাজিনের ওয়াইফ লিজা বললো ভাবী থামোতো পরে সাজাতে পারবে।আগে প্রাপ্তির সাথে গল্প করবো।

কথাটা শুনেই প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকালো।এরা কি গল্প করতে এসেছে প্রাপ্তির ভালো করেই জানা আছে।

ফারহান প্রাপ্তির তাকানো দেখে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাঁসছে।

মেজো ভাবী -প্রাপ্তি তুই কাল রাতে ফারহানকে ভালোভাবে দেখিস নাই? ওই ভাবে ওর দিকে বার বার না তাকিয়ে আমাদের দিকে তাকা।

(কথাটা শুনেই প্রাপ্তি লজ্জা পেয়ে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।)
আগে এইটা বল কাল রাতে ফারহান তোকে কি gift করেছে?

প্রাপ্তি কথাটা শুনেই মেজো ভাবীর দিকে তাকিয়ে ভাবছে,ফারহান তো আমায় কিছুই gift করেনি।আর করবেই বা কেন? ফারহান তো সেই অধিকার আমি নিজেই দিইনি।

লিজা- কি হলো প্রাপ্তি চুপ করে আছো কেন?

ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে ভাবছে কাল রাতে আমি ঠিকি তোমার জন্য gift এনেছি।
সকাল বেলা এই মুখটা দেখার জন্যই কাল রাতে দিইনি। আমি জানতাম এরা তোমায় আগে এই কথাই জিজ্ঞাস করবে।আগে দেখি কি আনসার দাও।তারপর না হয় আমি আনসার দিবো।

মেজো ভাবী -প্রাপ্তি মনে হয় আমাদের বলতে চায় না।তাই চুপ করে আছে।
কথাটা শুনে প্রাপ্তির আরো মন খারাপ হয়ে গেলো।

প্রাপ্তির মন খারাপ দেখে ফারহানের খারাপ লেগে উঠলো।আমি এখন কিছু না বললে প্রাপ্তি সবার কাছে ছোটো হয়ে যাবে। আর সহ্য করতে না পেরে ফারহান বললো।
প্রাপ্তি! কাল রাতে যে তোমাকে গহনার সেট টা দিয়েছিলাম তুমি তো ওইটা ড্রয়ারেই রেখে দিয়েছো।ওইটা তোমার মনে নেই?কাল রাতে গহনা পরে ঘুমাবে না বলেই ওইটা রেখে দিয়েছো আর সকালেই ভুলে গেলে।ওইটা নিয়ে এসো ভাবীদের দেখাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

কথাটা শুনেই প্রাপ্তি অবাক হয়ে ফারহানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।এইটা মানুষ নাকি অন্য কিছু? কাল রাতে আমাকে বলে মেয়েদের মন বুজা বড় মুশকিল। এইতো দেখছি মেয়েদের থেকেও খারপ।কখন কি করে কিছু বুজতেছি না।

মেজো ভাবী -প্রাপ্তি এতো ভুলা মন হলে চলবে।সব কিছু নিজেকেই সামলাতে হবে।আচ্ছা gift পরে দেখবো। এখন হাতে এতো সময় নেই।এইবার বাকী গুলা বলো।

প্রাপ্তি -কি বলবো?

লিজা-মেজো ভাবী আমার একটা কথা মাথায় ঢুকছেনা যেই ফারহান মেয়েদের সাথে তেমন কথা বলতো না সেই ফারহান শুনলাম প্রাপ্তিকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছে।

কথাটা শুনে প্রাপ্তি মনে মনে বলছে মেয়েদের সাথে কথা না বললে অন্য মেয়েকে ভালোবাসে কিভাবে? সবার সামনে এমন ভাবে চলে মনে হয় ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেনা।

মেজো ভাবী -লিজা এইগুলো রাতে শুনবো এখন প্রাপ্তির গল্প শুনবো।মামনি একটু পরে আবার ডাকাডাকি শুরু করলে শুনা হবে না।প্রাপ্তি শুরু কর।

প্রাপ্তি -ভাবী আমি কিছু বলতে পারবোনা আপনি ফারহান আসুক তার মুখ থেকে আমার থেকে ভালো শুনতে পাবেন।

বড় ভাবী -লামিয়া! ও ঠিকি বলেছে।পরে ফারহানের কাছ থেকে শুনিস।এখন চল প্রাপ্তির বাবার বাড়ীর লোক এসে যাবে।নাস্তা রেডি করতে হবেতো।তোরা আয় আমি সুমিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি ওকে সাজাতে।

সবাই চলে যাওয়ার পর প্রাপ্তি সুস্থির নিশ্বাস পেলে বসলো। কিছুক্ষনের জন্য মনে হলো তার উপর বড়সড় একটা ঝড় বয়ে গেছে।
ফারহান ওয়াসরুম থেকে গোসল করে তোয়ালে দিয়ে চুল গুলো মুছতে মুছতে বললো সবাই চলে গেছে দেখছি? কি বলে এদেরকে তাড়িয়েছো?
প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তি ফারহান কে কখনোই আগে এই ভাবে দেখিনি।সারাজীবন শুনেছি মেয়েরা গোসল করে আসলে অনেক সুন্দর দেখায়। ও তো মেয়েনা ওকে কেন এতো ভালোলাগছে।ধুত আমি এইসব কি উল্টাপাল্টা ভাবছি।ওকে যেমন ইচ্ছা তেমন লাগুক আমার কি যায় আসে।
ফারহান-ওই ভাবে তাকিয়ে আছো কেন? প্রেমে পড়লে নাকি?

প্রাপ্তি-আমার খেয়েদেয়ে আর কাজ নাই।ওদেরকে বলেছি কাল রাতে তুমি আমায় এতো এতো ভালোবাসা দিয়েছো আমার মুখ দিয়ে এই গুলো আসবে না।
কথাটা বলেই প্রাপ্তি অন্যদিকে নিজেই লজ্জা পেয়ে জ্বিবহা কামড় দিয়ে, প্রাপ্তি! মাঝে মাঝে কেন এতো আগ বাড়িয়ে কথা বলিস।

ফারহান-( বুজতে পেরে)এইযে ওই দিকে ফিরে কি বিড়বিড় করছো বলোতো?

প্রাপ্তি -কিছুনা ওদের কে বলেছি আমার থেকে তুমি ভালো বলতে পারবে।ওরা বলেছে তাহলে পরে তোমার কাছে থেকে সব শুনবে।

ফারহান- এএএএএ

প্রাপ্তি -এএএএ না হ্যাঁ।

ফারহান -এইটা কি করলে তুমি?ঠিক আছে আমি সামলিয়ে নিবো।আচ্ছা শুনো(গলার স্বর নামিয়ে) প্রাপ্তি! sorry! I am really sorry.

প্রাপ্তি -কেন?

ফারহান- রাতে তোমায় gift টা দিইনি বলে।আমি ছেয়েছিলাম ভাবীদের কাছে তুমি কি বলো আমি শুনতে ছেয়েছিলাম ।
ফারহান গিয়ে গহনার সেটটা নিয়ে এসে প্রাপ্তির হাতে দিলো। খুলে দেখো তোমার পছন্দ হয় কিনা।

প্রাপ্তি- আমি কিছু বুজলামনা।তুমি আমায় এতো কিছু কেন দিচ্ছো?এই গুলো আমার মন কখনোই খুশি হবেনা।আমার যা চাই তা তুমি কখনোই দিতে পারবেনা।।আমি এইগুলোর কিছুই চাইনি।
কথা গুলো বলতে বলতে প্রাপ্তির চোখ দিয়ে অঝরে পানি ঝরছে।

ফারহান কিছু বলতে যাবে সুমি এসে দরজা দাঁড়িয়ে ভাইয়া আসবো?

প্রাপ্তি অন্য দিকে ফিয়ে চোখ মুছচ্ছে। ফারহান একটু এগিয়ে এসে

ফারহান -কোনদিন থেকে এতো ফর্মালিটি মানছিস।

সুমি-আজ থেকেই।এখন তো আর যখনতখন তোমার রুমে আসা যাবে না তাই বললাম আরকি।

ফারহান- এতো কথা না বলে যে কাজে আসছিলি সে কাজ কর।আমি একটু আসছি।

প্রাপ্তি-ফারহান তুমিকি কোথাও যাচ্ছো?

ফারহান-না! মায়ের রুমে যাচ্ছি।কেন কিছু বলবে?

প্রাপ্তি-তেমন কিছুনা।আম্মুকে ফোন দিয়ে বইলো আসার সময় আমার ফোনটা নিয়ে আসতে।
ফারহান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।মনে মনে ভাবছে প্রাপ্তি ফোন দিয়ে কি করবে? আবার আয়ানের সাথে কথা বলবে নাতো? এখন কিছু বললে মন খারাপ করতে পারে।সব কিছু মিটে যাক।পরে না হয় বুজিয়ে বলা যাবে।

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে