#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum
#পর্ব-২
ড্রইংরুমে আমি, আম্মু, আমার হবু শ্বাশুড়ি, আমার হবু ননদ আর পাশে আমার ওই সে 😒 বসে আছি। আকাশি কালার শার্ট, কালো রঙের প্যান্ট, কালো ফ্রেমের চশমা পরিহিত ছেলেটাই যে সে তা আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না। আমি তাকে দেখছি চেহারায় কেমন যেন একটা ব্রিলিয়ান্ট ব্রিলিয়ান্ট ভাব আছে, তাই হয়তো ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে। আমাকে এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে চশমা ঠিক করতে লাগলো। চশমা তার জায়গায়ই আছে কিন্তু ইনি বারবার চশমাকে ঠেলছে কেন? আমি তাকিয়ে আছি বলে সে কী নার্ভাস টার্ভাস হয়ে গেছে? যদি হয় তো এইভাবেই বিরক্ত করতে থাকি নিজেই থেকেই না করে দিবে, এই ভেবে আমি আগের মতো তাকিয়ে রইলাম। সে একবার পায়ে পা ঘষছে আরেকবার চশমাকে ঠেলছে, তার অবস্থা দেখে আমার হাসি পেলো। হঠাৎ আম্মু আমার হাতে চিমটি দিলো। আমি আম্মুর দিকে তাকাতেই আম্মু চোখ গরম দিলো।আমি বিরক্ত হলাম। এই আম্মুটা খালি চোখ গরম দেয়, একটু বুঝতেও চায় না।
আম্মু আমাকে তাদের পাশে বসিয়ে দিলো। ওদিকে পর্দার আড়ালে থেকে আমার বান্ধুবিরা আমার ইশারার অপেক্ষায় আছি। আমি ইশারা করতে যাবো তখনই আব্বু আসলো, আব্বুকে দেখে চাশমিশ ম্যাজিস্ট্রেট দাঁড়িয়ে গেলো, সালাম দিলো। ভাব এমন করলো যেন আমাদের কতো আগে থেকে চেনে। যত্তসব, ঢং!
.
এই ছেলে যতো যাই করুক না কেন একে আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না। আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে মলিন হাসি হাসলো৷ আমি করুন চোখে আব্বুকে দেখলাম, কিছু বলতে পারলাম না। আম্মু এতোক্ষণে ওনার সাথে করা খাজুইরা আলাপ শুরু করে দিয়েছে। আমি ম রা র মতো বসে আছি। সামনে তাকিয়ে দেখলাম ম্যাজিস্ট্রেটমশাই কী যেন ভাবতেছে। অন্য সময় হলে বলতাম যে ভাই এতো কী ভাবেন? কোন পরিক্ষায় কাকে আবার এক্সফেল করবেন তাই কী চিন্তা করছেন?
আমার এতোসব ভাবনার মধ্যে হঠাৎ সেই মধ্যবয়স্ক মহিলা আমার নাম জিজ্ঞেস করলো, আমি ভদ্র মেয়ের মতো বললাম আমার নাম, এরপর সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার নাম কী আন্টি?’
আমার কথায় সে যেন চমকালো। মুখের হাসিটা মুহূর্তেই উড়ে গেলো। উনি কিছু বলার আগে তার পাশে বসে থাকা মেয়েটা বলল, ‘আম্মুর নাম রাশেদা সুলতানা, আব্বু রাশু বলে ডাকে৷’
একটু থেমে আবার বলল, ‘ভাবি! তোমার নাম তো মুন ভাইয়া তাহলে তোমাকে কী বলে ডাকবে’ ( চিন্তিত হয়ে)
আমি একটু ভড়কালাম। এই মেয়ে বলে কী? দেখতে এসেই বিয়ের পর কী ডাকবে সেই নাম জানতে চাচ্ছে! বুঝলাম আমার হবু ননদিনী আমার থেকেও বড় বিচ্ছু। আমি কিছু বলার আগে আম্মু আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল, ‘ সেটা তুমি মুনকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে ভেবো। এখন আগে বিয়েটা করাও তারাতাড়ি ‘
আম্মুর কথা শুনে আমার প্রচন্ড রাগ হলো। অনেক হয়েছে ভদ্রতা এখন আর কোনো ভদ্রতা ফদ্রতা দেখাবো না। মুন যে আসলে কী জীনিস সেটা বুঝানোর সময় হয়ে এসেছে। কী বলে আগে ভেজাল লাগাবো ভাবছিলাম তাই ভাবছিলাম, এরইমধ্যে আমার ননদিনী পেছনে ইশারা করে বলল, ‘ভাবি পর্দার আড়ালে যারা দাঁড়িয়ে আছে তারা কী তোমার ফ্রেন্ড? ‘
-‘ হ্যাঁ, ওরা আমার ফ্রেন্ড ‘
-‘তাহলে ওখানে দাঁড়িয়ে কেন আছে?’
আমি কিছু বলতে যাবো তখন পেছন থেকে একটা বাচ্চাছেলের গলার আওয়াজ শোনা গেলো। সে বলছিলো,
-‘যদি বিয়ে কথা আন্টি আংকেল পাকাপোক্ত করে তোহ আপুরা বিয়ে ভেঙ্গে দিবে।এটা মুন আপুরই বুদ্ধি ‘
আমি চোখমুখ শক্ত করে বন্ধ করে ফেললাম। আমার হার্টবিট অনেক বেড়ে গেছিলো। মনে হচ্ছিলো হার্টটা বের হয়ে সবাইকে ঢি সু ম ঢি সু ম করে ঘু ষি দিয়ে অজ্ঞান করে দিবে। অবশ্য অজ্ঞান করলে ভালোই হতো আমি বেঁচে যেতাম। কিন্তু ভাগ্যের নি র্ম ম পরিহাস এমন কিছুই হলো না। আমি চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখলাম ম্যাজিস্ট্রেটমশাই আমার দিকে ভ্রুঁ কুচকে তাকিয়ে আছে, পাশেই তার বোন আমার দিকে বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে, এর পাশের ওদের মা আমার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আম্মুর দিকে তাকাতে দেখলাম আম্মু আমার দিকে খাইয়া ফালামু লুক নিয়া তাকায় আছি। আমি আম্মুর দিকে তাকিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে রইলাম, কেননা এরা চলে যাওয়ার পর আমার পিঠে যে উত্তম মধ্যম পরবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পিচ্চিটাকে মন চাচ্ছে কি লা য় ভূত বানায় দেই। পিচ্চিটা ভেজাল লাগায় সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে বাহিরে তার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে সে গোল গোল বলে চিল্লাছে,মনে হয় ওয়ার্ল্ডকাপ পেয়ে গেছে। আরে পোলারেএএ তুই তো আমার জীবনের চৌদ্দটা বাজায় দিলি,, হায় হায় রেএএ……..
.
.
.
.
সামনে হাত নাড়তে দেখে ধ্যান ভাঙ্গলো আমার। মনে পড়লো আমার যে আমি ঘুম বাদ দিয়ে মলম লাগাতে বসেছিলাম। মলম লাগাতে লাগাতে অতীতে ডুব দিয়েছিলাম। সামনে তাকিয়ে দেখলাম ম্যাজিস্ট্রেটমশাই হাটুতে ভর করে মেঝেতে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বা ন্দ র পোলা, ই ত র, আমার বারোটা বাজায় দিয়া তুই বসে আছোস!! ইচ্ছে তো করে হার্ডবোর্ডে মাথা বা রি দিয়ে অ জ্ঞা ন করে দিতে বেটা ব জ্জা ত। আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
-‘ কী ব্যাপার মুন? আমাকে কে কী আজ সুন্দর লাগছে নাকি? এভাবে তাকিয়ে আছো! কয়েকদিন আগেও তো বিয়ে করতে চাইছিলে না এখন তাহলে তাকাচ্ছো কেন? (ভ্রুঁ নাচিয়ে) এই তুমি কী আমার প্রেমে টেমে পড়ে গেলা নাকি?'( সন্দেহের চোখে)
-‘আমার এতো ঠ্যাকা পড়ে নাই যে আপনার প্রেমে পড়বো সরেন সামনে থেকে ‘(হাত দিয়ে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে)
-‘আমার সাথে আর জীবনে ক্যারাটে দেখাতে আসবা? আমি ক্যারাটেতে স্কুলে চ্যাম্পিয়ন ছিলাম ‘
হাতে পায়ের ব্যাথা অনেকটাই কমে গিয়েছে ফুরফুরে মেজাজে খাটে বসতেই শুনলাম তার কণ্ঠ। এই সুযোগ! গিয়ে স্যা সু করে কয়েকটা ঘু ষি দিলেই বুঝে যাবে যে আমি কী জীনিস। টপস আর জিন্স পড়েছিলাম বলেই লা ত্থি দিতে সমস্যা হয় নি। এই লা ত্থি ঘুষির জন্যই তো আগে আগে শাড়ী চেঞ্জ করেছি৷ আমি তার দিকে হঠাৎ ফিরে ‘ইয়া’ বলে চিৎকার দিলাম। হঠাৎ আমার হা ম লায় সে টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলো। আমি ভাব নিয়ে বললাম,
-‘ কী যেন বলছিলেন? আপনি স্কুলে ক্যারাটেতে চ্যাম্পিয়ান ছিলেন? তো শুনে রাখেন আপনি যদি চ্যাম্পিয়ান হন আমি তাহলে ক্যারাটে মাস্টার😎। তাই আমার সাথে লাগতে আসবেন না, তার ফল ভালো হবে না। ‘
কথাটা বলেই শুয়ে পড়লাম। চোখ বন্ধ করতেই মনে হলো কেউ আমার পা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমার সেদিনের স্বপ্নের কথা মনে পড়লো। ভ য় হলো, সাথে সাথে সকল হরর মুভির কথা মনে পড়লো। আমি চিৎকার দিলাম। ঠ্যাকনা, খো চা, খেতে খেতে হঠাৎ ধাম করে নিচে পড়ে গেলাম। তখনই কেউ আমাকে মাটির সাথে চেপে ধরে বলল, তুমি যদি মাস্টার হও তাহলে আমিও চ্যাম্পিয়ান। আমার সাথে লাগতে এসো না, নাহলে এর ফল কী হবে তা তো দেখলাই।
কথাটা বলে ভাব নিয়ে খাটে শুয়ে পড়লো। রাগে দুঃখে আমার কান্না চলে আসলো। ভাবা যায়? একটা ছেলে আমাকে এভাবে নাস্তানাবুদ করে দিছে। টানতে টানতে নিচে ফেলে দিছে। আরেএ স্বপ্নের মধ্যে লাফাতে লাফাতেও তো আমি এইভাবে খাট থেকে পড়ি না আর সে জামাই হয়ে আমাকে ফেলে দিলো। কুমড়া পটাশ কথাকার আজ তোর একদিন তো আমার একদিন। এক লাফ দিয়ে উঠে একটা বালিশ নিলাম। উদ্দেশ্য তাকে চা পা দেওয়া। ধীরে ধীরে কাছে গেলাম। মুখের কাছে বালিশ আনতেই সে জেগে গেলো। বড়বড় চোখ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। আমিও তাকিয়ে থাকলাম। এটা সিনেমা হলে লা লা লা লা গান বাজতো রোমান্টিক কিছু হতো, কিন্তু এটা বাস্তব! এটা আমি! তাকে কিছু বলতে না দিয়ে বালিশটা জোরে তার উপর চেপে ধরলাম। আর বলতে লাগলাম,
-‘ ম র বেটা ম র। তুই ম র স না কেন? তুই ডেটল খা! তুই মূলা খা! তুই পানি খেয়ে ম রে যা। আমার বিধবা হইতে আপত্তি নাই , ধুরো বেডা ম র। ‘
অনেক্ষণ চা পা দেওয়ার পরও যখন দেখলাম ম র ছে না তখন বালিশ সরিয়ে শ্যাম্পুর বোতল নিয়ে আসলাম, এইবার তোরে এইডা দিয়া এমন পি ডা ন পিডা মু, যেই পিডানি তুই তোর মা র হাতেও খা স নাই।
চলবে 🤭
#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-৩
শ্যাম্পুর বোতল দিয়ে কয়েকটা ধা ম ধা ম করে বা রি দিলাম। ম্যাজিস্ট্রেট প্রথমে আউ উউ শব্দ করে হঠাৎ আমার হাত ধরে ফেলল। আমি অন্য হাত দিয়ে থা প্প ড় দিতে চাইলে সে আবার ও হাত ধরে ফেলল। আমাকে ধা ক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসলো। সে আশেপাশে তাকিয়ে কী যেন খুজতেছে,আমি অবাক হলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ কি হউছে?’
সে কিছু বলল না। আমি যে তারে এতক্ষণ পি ডা ই লা ম সে তার কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখাইলো না। বিষয়টা অবাক হওয়ার মতো! আচ্ছা ধরেন আমি আপনাকে ইচ্ছা মতো পি ডা ই লা ম, এরপর আবার বালিশ দিয়ে চা পা ও দিলাম।
.
.
তাকে এতো ব্যস্ত দেখে আমি কিছুক্ষণের জন্য সব ভুলে গেলাম। খাটের উপর বে ক্কে লের মতো বসে আছি আর ম্যাজিস্ট্রেট বালিশ মালিশ উল্টায় পালটায় কী জানি খুজতেছে। শত খোজাখুজির পরও যখন কিছু পেলো না তখন খাট থেকে নেমে টেবিলের কাছে চলে গেলো। আজব তো! এই বেডা খুজে কী?
টেবিল থেকে কী যেন একটা নিলো এরপর ওয়াশরুমে চলে গেলো। আমার খানিকটা খটকা লাগলো এর মাথায় চলে কী? শান্তশিষ্ট মানুষদের অসহায় ভাবা বো কা মি, আমি এতোটাও নই। আর এই ম্যাজিস্ট্রেটকে হারে হারে চিনি। বেটা ব জ্জা ত। মাথায় কী খিচুড়ি পাকাইতেছে আল্লাই জানে! নিশ্চয়ই ওয়াশরুমে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় ষ ড় য ন্ত্র করতেছে। আমাকেও প্রস্তুত হতে হবে। নারীজাতির সম্মান আজ আমার হাতে। যে করেই হোক আমাকে জিততে হবে। শ্যাম্পুর বোতল রেখে আরো মজবুত কিছু খুঁজতেছি, এরে আজ যদি আমি চান্দের দেশে আমি না পাঠাইছি তো আমার নাম ও মুন না। অনেক খোজাখুজির পর খাটের নিচে ঝা ড়ু পাইলাম। ঘরটায় কিচ্ছু নাই। শান্তি মতো পি ডা ই তেও পারি না, ধুরো!
কিছুক্ষণ পর সে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। আমি এক হাত পেছনে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সামনে তাকিয়ে দেখলাম কালো ফ্রেমের চশমা পড়া একটা কুমড়াপটাশ দাড়ায় আছে। ওও তারমানে তখন চশমা জন্যই য দ্ধের মাঝ পথ থেকে চলে গেছিলো।
আমি তার দিকে নিষ্পাপ চোখে তাকায় আছি, সে আমার দিকে ভ্রুঁ কুচকে তাকায় আছে। আমি মুচকি হাসলাম। সে চমকালো। আমি আরেকটু হাসলাম। সে আবারও চমকালো। আমি আমার বত্রিশপাটি দাঁত বের করে হেসে পেছন থেকে ঝা ড়ু বের করলাম, সে হকচকিয়ে তাকালো। আমি ঝা ড়ু উঁচু করলাম, সে ভড়কালো। ঝা ড়ু আরেকটু উঁচু করে ‘ইয়া’ বলে তার উপর হা ম লা করবো তখনই ” বাস বাস ” বলে আমাকে থামিয়ে দিলো। আমি ভ্রুঁ নাচিয়ে বললাম, ‘কী? ‘
সে বলল, ‘ কী? ‘
আমি বললাম, ‘ থামালেন কেন? ‘
সে বলল, ‘ঝা ড়ু নিয়ে আসছো কেন?’
আমি বললাম, ‘ আপনাকে মা র তে ‘
তার মুখো ভঙ্গি এমন হলো যেন আমি অনেক বড় কিছু করে ফেলেছি । সে বলল, ‘ ল জ্জা করে না? বিয়ের রাতে জামাইকে মা র তে? ‘
আমি বললাম,’ আপনার ল জ্জা করে না বিয়ের রাতে বউকে খাট থেকে ফেলে দিতে?’
-‘ শুরুটা কে করেছিলো?’
-‘ কে আর আপনি!'( ভাব নিয়ে)
-‘ ওও, ঘরে আমি ঢুকেই দরজার পেছনে গিয়ে তোমাকে ক্যারাটে দেখিয়েছিলাম না?’
-‘ যাই হোক! আমাকে বিয়ে কেন করলেন?কতোবার বলবো? আরে ভাই আমি আপনাকে পছন্দ করি না। ‘
সে মুখ ছোট করে বলল, ‘ বয়ফ্রেন্ডকে ভালোবাসো বলে আমাকে বিয়ে করতে চাওনি। ‘
বিয়ে ভাঙ্গার জন্য তাকে অনেক কিছু বলেছিলাম এরমধ্যে যখন কোনোটাই কাজে আসলো না তখন বললাম, ‘ আমি সাগরকে ভালোবাসি’। সাগর আমার সিনিয়র+ হাল্কা-পাতলা ক্রাশ, কিন্তু তাকে কিছুই আমার বলা হয় নি। আন্তাজে সাগরের নাম যখন বললাম তখন ভ য় হতে লাগলো। এই ম্যাজিস্ট্রেট যদি সাগরকে জিজ্ঞেস করে তাহলে তো আমি শেষ 😫😫 আল্লাহ দড়ি ফালাও পিলিস 🥹
তবে এই কথা বলে যে অনেক লাভ হয়েছে এমনও না, সেই ওনাকেই তো বিয়ে করতে হলো৷ আমার হাবলা ফ্রেন্ডগুলোও কিছু করতে পারলো না। অন্য কাউকে ভালোবাসি বলার পরও বিয়ে ভাঙ্গলো না। বিয়ে ভাঙ্গার জন্য আমি কী না করছি? নিজেকে রাস্তাঘাটে অপমানও করছি। প্রথম যেদিন আম্মু আমাকে তার সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে পাঠালো সেদিনেরই ঘটনা এটা!
আম্মু আমাকে বলছিলো সুন্দর করে সাজতে, আর একটা সুন্দর জামা পরতে। আমিও পরলাম। আলমারি থেকে সবুজ কালার একটা কামিজ নিলাম। লাল কালার কামিজের লাল সেলোয়ার আর ওরনা নিলাম। পিচ্চিরে দিয়া লাল সবুজ স্টিকার আনাইছিলাম, ওইটাও বের করলাম। এরপর সাজুগুজু করে বের হলাম, গন্তব্য রেস্টুরেন্ট!
রাস্তা দিয়া হাটতেছি নিজের মতো করে। আশেপাশের মানুষজন কেমন করে যেন তাকাইতেছে। কেউ কেউ তো যাইতে যাইতে ঘাড় ঘুরাইতে ঘুরাইতে ঘাড় ম ট কা য় ফেলয়াছে। আমার কী? আমি তো খালি আম্মুর কথাই রাখছি! যতোকিছু হোক মায়ের বাধ্য সন্তান আমি, কী করে কথা ফেলিতে পারি🥹?
গাঢ় সবুজ জামা, লাল টকটকে পায়জামা, লাল-সবুজ ওরনা। সৌন্দর্য আরো বাড়ানোর জন্য ডান গালে লাগাইছি সবুজ স্টিকার, বাম গালে লাল স্টিকার, কপালে লাল-সবুজ স্টিকার। মানে মোটকথা আমি সৌন্দর্যের পাশাপাশি মানুষকে জ্ঞান দিচ্ছি৷ বোঝাতে চাইছি যে লাল-সবুজ কেমন লাগে। লালের সাথে সবুজ মিশালে কী রঙ হয় রাস্তার বাচ্চারা আমাকে দেখে শিখতে পারবে। বাচ্চারা যেন আরো শিখতে পারে তাই আমি মাঝখানে সিঁথি করে চারটা চারটা মোট আটটা বেণি করেছি, এতে করে বাচ্চারা গুনতে পারবে। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিয়েছি যেন সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়।
রাস্তা পাড় হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।রাস্তার ওইপাশেই রেস্টুরেন্ট। অনেক রোদ! এরমধ্যে মানুষগুলো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এতে আমার খুবই বিরক্ত লাগছে। এদিক-ওদিক তাকিয়ে সবকিছু দেখছিলাম হঠাৎ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখে চমকে গেলাম। ম্যাজিস্ট্রেট দাঁড়িয়ে আছে আর আমার দিকেই তাকিয়ে আছে দূর থেকে। আমি জানি সে অঅদ্ভুত চোখে ভ্রঁ কুচকে আমাকে দেখছে। দেখলে দেখুক! তার হবু শ্বাশুড়ির কথায় সুন্দর করে সেজেছি দেখুক একটু। আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে গান গাইতেছি। কিছুক্ষণ পর সামনে আবার তাকালাম। দেখলাম সে আগের মতোই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এইবার অন্যকিছু করবো৷ অন্য কিছু ভাবতে হবে, যেন সে আমাকে এইখান থেকেই রিজেক্ট করে দেয়। আমি আঙুল দিয়ে নাক খোচানো শুরু করলাম। এক নাক খোচাতে খোচাতে দেখলাম সে এগিয়ে আসছে আমাকে নাক খোচাতে দেখে রাস্তার মাঝেই থেমে গিয়েছে। আমি এইবার আরেক আঙুল নাকে ঢুকালাম। দুই আঙুল দিয়ে ইচ্ছামতো নাক খোচায় তার বিয়ে করার শখ মিটায় দিবো আজকে। নাক খোচাতে খোচাতে আবার তার দিকে তাকালাম। আমার এইসব কাণ্ডে সে বোধহয় আজ অ জ্ঞা ন ই হয়ে যাবে। অ জ্ঞা ন হতে হতেও সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে, এইবার আমি সেই দুই আঙুল নাক থেকে বের করে মুখে দিয়ে দিলাম। সে আর দুনিয়ায় নেই। উড়ি উড়ি গান করতে করতে পেছন ফিরতেই দেখি সাগর ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে 🌚। আমার দিকে কেমন করে যেন তাকায় আছে। নিজের কপাল নিজের ভাঙ্গতে মন চাচ্ছে। জীবনে তো মনের কথা বলতে পারলামই না, শেষ সময়ে এমন বে ই জ্জ তি!
তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে আমার মতো উজবুক আর জীবনে একটাও দেখে নাই। আমি ল জ্জা য় সেখান থেকে চলে আসলাম। আশেপাশের মানুষজন আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতেছে। বিষয়টা এখন কেন যেন গায়ে লাগলো, খুব খুব লাগলো 😑।
.
চলবে