ভালোবাসি
ভালোবাসি—পিছন থেকেই কথাটা বলে উঠলো জিহাদ।
শিমু পিছনে ঘুরে মুচকি হাসি দিলো,জিহাদও হাসলো।
জিহাদ-চল তোকে দিয়ে আসি।
শিমু-তুই কই যাবি?
জিহাদ-আমি অফিসে যাবো।
শিমু-ভালো।
জিহাদ-হুম আমি বিকেলে তোকে আনতে যাবো।
শিমু-আচ্ছা।
জিহাদ-শিমু ভালোবাসি তো।
শিমু-সেটা তো জানি।
জিহাদ-হুম এবার একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধর তো।
শিমু-ধরবো না যা তো।
জিহাদ-তুই এরকম কেনো হুম?
শিমু-আমি তো এরকমি-ই।জানোছ তো তুই।
জিহাদ-হুম জানি।
শিমু-ওই ব্লাক শার্ট পড়লি কেন?
জিহাদ-কোনো সমস্যা?
শিমু-হুম তোর অফিসের মেয়েরা তোর দিকে তাকিয়ে থাকে।
জিহাদ-আরে না কেউ তাকাই না।
শিমু-আমি জানি সব।
জিহাদ-আচ্ছা যা আর পড়বো না খুশি???
শিমু-হুম অনেক।
জিহাদ-আচ্ছা চলে এসেছি।
শিমু-ঠিক আছে সাবধানে যাবি।
জিহাদ-আচ্ছা আসি তাহলে।
জিহাদ চলে গেলো।শিমু আর জিহাদ কলেজ লাইফ থেকে দুইজনের বন্ধুত্ব।পড়ালেখা শেষ করে শিমু জব পেয়েছে আর জিহাদ ওর বাবার কোম্পানীতে জয়েন্ট করে।প্রতিদিনেই জিহাদ শিমুকে “ভালোবাসি” বলে আর শিমু মুচকি হাসে।
জিহাদ জানে শিমুও তাকে ভালোবাসে।ভার্সিটির কোনো মেয়ের দিকে তাকালে শিমু জিহাদকে খুব বকতো।
আচ্ছা একটু ফিরে যাওয়া যাক এক বছর আগের অতীতে—-
জিহাদ-দেখ শিমু মেয়েটা কত কিউট।
শিমু-হুম অনেক কিউট।
জিহাদ-আমার সাথে কেমন হবে?
(কথাটা বলতে না বলতেই শিমু মেয়েটার কাছে গেলো)
জিহাদ-শি….আল্লাহ রে ওই মেয়ে তো পুরাই শেষ।
(দৌড়ে পিছন পিছন গেলো)
শিমু-এই ময়দাসুন্দরী।
নিহা(মেয়েটার নাম)-আমাকে?
শিমু-তোকেই বলতাছি ময়দাসুন্দরী।ভার্সিটিতে আসছোত নাকি ছেলে পটাতে আসছোত।এত সেজে আসতে কে বলছে তোকে?
নিহা-আমি যেভাবে ইচ্ছা ভার্সিটিতে আসবো আপনার কী?
শিমু-আমার অনেক কিছু।তোকে আজ আমি পিটিয়ে ভার্সিটি ছাড়া করবো।
নিহা-এত্ত বড় সাহস.
শিমু-সাহসের দেখলি কী তুই দেখতে কী এমন আহামরি সুন্দরী রে।তোকে হনুমান,গন্ডার,হাতি,এনাকন্ডার সাথে ভালো মানাবে।
নিহা-mind your language.
জিহাদ-(অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে এবার থামানো দরকার)শিমু আয় তো এখানে।
শিমু-যাবো না আমি তোর সাথে।
জিহাদ-পাগলী আমি তোকেই ভালোবাসি।
শিমু-না মিথ্যে।
জিহাদ-সত্যি ভালোবাসি।
শিমু-তাহলে অন্য কারো দিকে তাকাতে পারবি না।
জিহাদ-ঠিক আছে মহারাণী।আর আপু আমি ওর হয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আমিই রাগাইছি ওকে তাই রেগে গেছে।
নিহা-বুজতে পারছি,আপনার পাগলীকে এভাবে রাগান কেন?
জিহাদ-এমনিই।ওর বিহেভের জন্য সরি।
নিহা-ইট”স ওকে।
শিমু-ওই তুই কারো দিকে তাকাতে পারবি না শুধু আমাকে দেখবি।
এভাবেই রাগী,ঝড়গা আর ভালোবাসা দিয়ে কেটে গেলো ১টা বছর।বিকেলে জিহাদ শিমুকে বাসায় দিয়ে গেলো।
বাসায় ডুকতেই শিমুর আব্বু ওকে রুমে আসতে বললো।ফ্রেশ হয়ে রুমে গেলো সে।
শিমুর আব্বু-শিমু আমরা তোর বিয়ে ঠিক করেছি।আমার বন্ধুর ছেলে শুভ।
শিমু-আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।
শিমুর আব্বু-আমি তোর মতামত শুনতে চাইনি।শুধু সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।
শিমু-কিন্তু বাবা…..
শিমুর আব্বু-চুপ আর ওই জিহাদের সাথে মিলামিশা বন্ধ কর।আমি যা বলছি তাই হবে।যা নিজের রুমে যা।
শিমু-বাবা আমি পারবো না অন্য কাউকে বিয়ে করতে।
(ঠাস করে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো শিমুকে)
শিমুর আব্বু-আমি কিছু শুনতে চাই নি।নিজের রুমে যা।
(রুমে এসেই ফোন দিলো জিহাদকে)
জিহাদ-কি রে পাগলী কান্না করছিস কেনো?
শিমু-বাবা বলছে আমাকে তার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।আমাকে নিয়ে যা তুই।
জিহাদ-মানে কখন বললো?
শিমু-আমি পারবো না তোকে ছাড়া থাকতে।আমাকে নিয়ে যা,চল না আমরা পালিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো।
জিহাদ-পাগল হয়েছিস?
শিমু-হুম আমি পাগল হয়ে গেছি.তোর জন্য পাগল হয়ে গেছি।কেনো ভালোবাসা শিখালি তাহলে?(কান্না করতে করতে বললো)
(জিহাদ ফোন রেখে দিলো।শিমু যে কান্না করছে,জিহাদ সেটা সহ্য করতে পারে না)
আজ শিমুর বিয়ে।কার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেটাও জানে না শিমু।চুপচাপ রুমের মধ্যে বসে আছে।জিহাদকে কল দিছিলো কিন্তু জিহাদ ফোনটা রিসিভ করেও দেখলো না।
শিমু-কেনো করলি এটা?আমি তো সত্যিই তোকে ভালোবেসেছিলাম।আর খেলা করলি তুই আমার সাথে।আমি পারবো না তোকে ছাড়া বাঁচতে।(নিজের রুমেই নিরবে কান্না করছে শিমু)
সাথী-আপু.
শিমু-কি হইছে?(মুখ তুলে তাকালো)
সাথী-তোর বর এসেছে।
শিমু-যা তুই এখান থেকে।
সাথী-আপু জিহাদ ভাইয়া এসেছে।
শিমু-মানে কেনো এসেছে সে???
শিমুর আব্বু-মা রে তোর মা চলে যাওয়ার পর এমন কোনো ইচ্ছে আছে যা আমি অপূর্ণ রাখছি।তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই বলিনি।জিহাদের সাথেই তোর বিয়ে ঠিক করেছি।
শিমু-সত্যি বাবা?
শিমুর আব্বু-হুম সত্যি।তুই খুশি তো?
(শিমু হেসে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো)
শিমুর আব্বু-চল মা অপেক্ষা করছে জিহাদ
সাথী শিমুকে নিয়ে নিছে আয়।
(নিছে যেতেই কিছুক্ষনের মধ্যেই বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে গেলো দুইজনের)
বাসররাতে——
শিমু-ওই একদম রুমে আসবি না।
জিহাদ-আমার বউ,আমার রুম আর আমি আসবো না।
শিমু-তোকে খুন করে পেলবো এই দিকে আসলে।
জিহাদ-বাসর রাতে বিধবা হয়ে যাবে তো।বাসর রাতে নাকি মানুষ বিড়াল মারে আর আমার বউ দেখি আমারে মারার প্ল্যান করতাছে।
শিমু-শুভ কে তাড়াতাড়ি বল।
জিহাদ-আমার নাম।
শিমু-আমাকে বললি না কেন?
জিহাদ-এমনিই বলিনি।বিয়ের ব্যাপারে আমিও জানতাম না।পরে তুই যখন কান্না করছিলি,ফোন রাখার পরেই আম্মু বলছে তুই আমার-ই হবি।আর সারপ্রাইজ দিতে তোকে আর বলিনি।
শিমু-আচ্ছা বাইরে থাক।রুমে আসবি না।
জিহাদ-ভালোবাসি তো।
শিমু হেসে উঠলো।শিমুর হাসি দেখে জিহাদও হাসলো।
এভাবেই ভালোবাসা গুলো বেঁচে থাকুক।ভালোবাসার মানুষগুলো যেনো আলাদা না হয় তাদের ভালোবাসার মানুষগুলোর থেকে।
?ভালোবাসি?
লেখা-Jannatul Ferdous