সুখের আশা 

0
2303

সুখের আশা 

লেখা –সুলতানা ইতি

মধ্যভিত্ত ঘরের মেয়ে জিমি, স্বপ্ন তার আকাশ ছোঁয়া সবে মাত্র ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠলো,,
এইটে খুব ভালো রেজাল্ট করেছে সে, স্বপ্ন অনেক বড় লয়ার হবে সে,
এই বয়সে মেয়েরা পড়াশুনার পাশা পাশি আর অনেক কিছু স্বপ্ন দেখে
যেমন,একদিন কোন এক রাজকুমার এসে ঘোড়ায় করে নিয়ে যাবে স্বপ্নের দেশে,,,

জিমি ও তার বিপরীত নয়,কিন্তু সে তার মনে এই সব কিছুর থেকে পড়া লেখার স্থান বেশি দিয়েছে,

একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে জিমি বসার ঘরে অনেক মেহমান দেখতে ফেলো
যখন সে তার মাকে জিজ্ঞাস করলো
– মা বসার ঘরে এরা কে?
জিমির মা তার মামির সাথে কি যেন কাজে ব্যাস্ত, তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– এরা তোকে দেখতে এসেছে,তোর মামা গত কাল ই আমাকে পাত্র পক্ষের কথা জানিয়েছিলো,
কিন্তু আমার তোকে বলতে মনে ছিলো না,

জিমি মায়ের কথা শুনে অবাক হলো,কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না,যেন সব কথা তার হারিয়ে গেছে,

জিমির বাবা নেই, মামার বাসায় থাকে তারা,মামি ব্যাপার টা ভালো চোখে দেখে না, হয়তো এই জন্য,তাড়া তাড়ি তাকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে চাইছে,

জিমি নিঃশব্দে চোখের পানি ছেড়ে দিলো কান্না করা ছাড়া সে আর কি করতে পারে,

জিমির মা মেয়ের পাশে এসে বসে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বল্লো কাঁদছিস কেনো মা
জিমি অশ্রুভেজা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– মা আমি বিয়ে করতে চাই না এখন,আমি আর ও পড়া শুনা করব,জিমির মা কিছু বলার আগে

তার মামি বল্লো
-তা বললে কি হয় বিয়ের পরে জামাইকে পড়াতে বলিস, গরিব ঘরের মেয়ে, আবার বাবা নেই,এদের এতো আহ্লাদ থাকতে নেই,,কোন ভাবে স্বামির হাতে মৃত্যু পর্যন্ত কাটাতে পারলে ই ভালো

জিমি মামির কথা শুনে কিছু বলতে যাবে,জিমির মা জিমি কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– ভাবি আপনি কিছু চিন্তা করবেন না, আমি জিমি কে বুঝিয়ে বলবো

জিমির মা মেয়েকে নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো, মেয়েকে বুকে ঝড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন
– মা রে তুই আমার একমাত্র মেয়ে তোকে নিয়ে কম স্বপ্ন আমি দেখিনি,কিন্তু সবার সব স্বপ্ন পূরন হয় না, তোর পড়া শুনার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়,সে গুলা কি আর তোর মামার পক্ষে দেয়া সম্ভব বল,

জিমি – মা, আমি আর মামার কাছে বই কিনার টাকা চাইবো না,আমি ও কাজ করবো পড়া ফাকে ফাকে

জিমির মা বল্লো
– পাগলি মেয়ে, এতো কথা বলতে নেই মা,তা ছাড়া দেখতে এলেই যে বিয়ে হয়ে যাবে এমন কোন কথা নেই

অবশেষ এ মায়ের কথাতে জিমি পাত্র পক্ষের সামনে যেতে রাজি হয়,
পাত্র পক্ষ জিমি কে দেখে যাওয়ার সময় জানিয়ে দেয় মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে

এ কথা জিমি শুনতেই কান্নায় ভেংগে পড়লো, ছেলে কে তার পছন্দ হয়নি,কালো,মোটা,বেটে, কথা গুলো ও বলতে পারে না ঠিক করে,

জিমি তার মাকে জানিয়ে দেয় ছেলে তার পছন্দ হয়নি, কিন্তু জিমির মামার একটা ই কথা ছেলে বিদেশ থেকে এসেছে টাকা পয়সার অভাব নেই, ১০ ভরি গয়না দিয়ে তারা জিমি কে সাজিয়ে নিবে

জিমি মামার সামনে থেকে চলে আসে কান্না ছাড়া তার কোন পথ নেই মা, মামার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কথা বলবে না, এটা সে জানে,

তা হলে কি টাকার কাছে তাকে বিক্রি করে দিচ্ছে,জীবন সংগী নির্বাচন করার কোন অধিকার তার নেই কারন সে গরিব, বাবা নেই,এদের কোন ভাবে দিন কাটলে ই হলো,

বিয়ে হয়ে যায় জিমির, সে তার মন থেকে পড়া শুনা করার স্বপ্ন টা ঝেড়ে ফেলে দেয়,এখন তার একটা ই স্বপ্ন স্বামির ভালোবাসা পাওয়া,কিন্তু ভয় হয় এর থেকে ও যদি সে বঞ্চিত হয়,

বিয়ের দিন রাতে জিমি বসে আছে ফুল দিয়ে সাজানো একটা খাটে, মনের মধ্যে হাজার কথা আকি জুকি দিচ্ছে, জিমির বর ঘরে প্রবেশ করতে ই জিমি উঠে গিয়ে তাকে সালাম করে

জিমির বর যেন একটা রোবট কোন কথা না বলে ই সে খাটের এক কোনায় বসলো

জিমি সাহস করে কথা বল্লো আগে,,
-আপনাকে একটা কথা বলতে চাই
– বল

জিমি তার বরের কথা শুনে একটু বিস্মিত হলো, তবু ও নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– আমি পড়া শুনা করতে চাই

– বিয়ের পরে মেয়েদের পড়া শুনা করা আমি পছন্দ করি না,বউ, বউয়ের থাকিস, এই বলে সে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো

জিমি সারা রাত কান্না করে পার করলো,
বিয়ের কয়দিন পরে ই জিমি জন্ম দিন আসে,

জিমির স্বপ্ন দেখে তার বর যদি তাকে জন্ম সারপ্রাইজ কোন গিপ্ট দিয়ে চমকে দিতো
কিন্তু কি করে সে তো জানে ই না জিমির জন্ম দিনের কথা, রাতে জিমি সেধে সেধে তাকে বলো
– এই যে শুনছেন আগামি কাল আমার জন্ম দিন

জিমি চায় তার বিয়ের পর জন্ম দিন টা নতুন মানুষের সাথে নতুন ভাবে কাটাতে

জিমির বর জিমি কে, ধমক দিয়ে বল্লো,এই সব রং ডং বাদ দে, তুই কি বাচ্ছা নাকি যে জন্ম দিন পালন করতে হবে

জিমি সেদিন রাতে ও খুব কান্না করে,একটু ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার কি তার নেই,

একটু সুন্দর করে কথা বললে কি হতো

জন্ম দিনে উইশ না ই বা করলো,কথা টা সুন্দর ভাবে বললে কি এমন ক্ষতি হতো

আজ জিমির বিয়ের এক বছর পূর্ন হলো,কিন্তু জিমি আজ আর বলেনি তাকে ম্যারেজ ডের কথা,
হয়তো বললে আবার সেই রকম ধমক মাখানো কয়টা কথা শুনতে হবে,

তবু ও জিমি হাল চাড়েনি অপেক্ষায় আছে এক দিন সব কিছু তার মনের মতো হবে,
ঘোড়ায় চড়ে রাজকুমার এসে তাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের দেশে,
যেখানে কান্না বলে কিছু থাকবে না,,এই আশা টা ই হয়তো জিমি কে বাছিয়ে রেখেছে,

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে