সতীনের_সংসার পর্ব_৮
Writer: তানজিন সুইটি
আনিকাও বালিশে মুখ চেপে শুয়ে পরে।
ভোরের সূর্য আনিকার জন্য কি অপেক্ষা করছে?সেটা হয় তো নিজেও জানে না যে।কালো অন্ধকারের মতো আটকেও ধরতে পারে তার জীবনের প্রথম দিনটাতে।
সুদূরে সুরেলা কণ্ঠে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে।
আনিকার ঘুম ভেঙে গেলো তারই আওয়াজ শুনে।
বিছানায় আর শুয়ে না থেকে উঠে পড়লো তাড়াহুড়ো করে নামাজের উদ্দেশ্যে।
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে অজু করে বের হলো।
এই প্রথম কোনো অজানা অচেনা জায়গায় রাত কাটালো আনিকা।রাতে তো ঘুমও হয় নি তার ভালো করে। সে যে অপরাধ করে ফেলেছে,তার ক্ষমা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।যেনো সবাই তাকে ভুল না বুঝে। আল্লাহ কাছে সেই দোয়া করবে।নামাজ আদায় করে
আল্লাহর কাছে বলতে লাগলো…
আল্লাহ তুমি তো সব জানো।তুমি তো সবই দেখেছো।
আমার কোনো দোষ নেই। আমি কারো মনে কষ্টও দেই নি।তবুও আমার সাথে এমন হলো কেনো?এখন তো সবাই আমাকে ভুল বুঝবে।আপু, দুলাভাই, রাজ সবাই।
ওরা যদি ভুল বুঝে, আমি কোথায় গিয়ে দাড়াবো।
আল্লাহ তুমি এমন কিছু করো। যাতে ওরা আমাকে ক্ষমা করে দেয়।ওদের ছাড়া যে পঙ্গুত হবে আমার জীবন।চলতে পারবো ঠিকই কিন্তু বাঁচতে হয় তো কষ্ট হবে পঙ্গুত্বের মতোরই জীবন??
তুমি পরম দয়ালু।করুণাময়। তুমি চাইলে সব হয়।
আমার বেলাতেও সেই রকম চমৎকার দেখাও আল্লাহ একবার।???
বলে কাঁদতে থাকলো চিৎকার করে।রুমে যে রায়হান ছিলো ভুলেই গেছে সে।আনিকার চিৎকার শুনে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে পরে।খনিকটা ভয়ের মতো কাজ করে তার বুকে।চোখটা হালকা ডলতে ডলতে আনিকার সামনে গিয়ে বসে।
আনিকার জায়নামাজ থেকে সরে যখনই উঠতে যাবে
রায়হানের সাথে ধাক্কা লাগে।অবাকের থেকে ভয়টাই বেশি পায় সে। কিছুখন চেয়ে থেকে, চুপ করে মাথা নিচু করে সরে যায় রায়হানের কাছ থেকে।
রায়হান চুপ করে ঐ একই জায়গায় থ হয়ে বসে থাকে।
কিছু বুঝার চেষ্টা করতে থাকে।সকাল সকাল এমন কি হলো যে আনিকার জায়নামাজে বসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।
আর কিছু চিন্তা করতে পারছে না সে।আনিকার কষ্ট যে তার সহ্য হয় না।তাই তো উঠে তার কাছে এগিয়ে যায়
কি হয়েছে জিঙ্গাসার উছিলায়।
-কি হয়েছে বলা যাবে একটু?
আনিকা কিছু বললো না।অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে পরলো।কারণ এখনও আলোর হয়নি বাহিরে?চারিদিকে অন্ধকার রয়ে গেছে অনেকটা।
রায়হানও আর কিছু জিঙ্গাসা না করে।পুনরায় শুয়ে পরলো সোফাতে।
দুজন দু জায়গাতে,এক আলাদা অনুভূতি কাজ করছে।
কারো পাওয়ার অনুভূতি।আর কারো হারানোর অনুভূতি।
কিছুখন আগে চোখ বন্ধ করলো।আনিকার কাছে মনে হলো,বাহিরে একটু হইচইয়ের শব্দ।ঘুম ঘুম চোখে ওয়ালের সাথে দেওয়াল ঘড়ি আটকানো তার দিকে তাকিয়ে থ হয়ে যায় কিছুখনের জন্যে।প্রায় ১২টাআআ
এতো বেলা পর্যন্ত কখনো আনিকা ঘুমাইয়ো নি।
কিন্তু আজ…..?তার উপরে এ বাসার কেউ ডাকলো না কেনো এখনও আনিকাকে?
সেটা ভেবে রুম থেকে বের হয়ে নামতে থাকে সিঁড়ি দিয়ে এক পা এক পা করে, কারা যেনো চিল্লাচ্ছে,
সেই উদ্দেশ্য দেখার জন্যে।
সিঁড়ির শেষ প্রান্তে যখন এসে হাজির আনিকা।তখন তো অবাক হয়ে গেছে ড্রয়িং রুমে যারা চিল্লাচিল্লি করছে তাদের দেখে।
কথা বলার সাহসও হারিয়ে ফেলেছে সে।ভিতরে ভুমিকম্পের মতো নরে উঠলো মুহূর্তে।ভয়ে তো শব্দও বের হচ্ছে না একটাও যে।বড় বড় চোখ করে,শুকনা গলায় ঢোক গিলে কষ্ট করে বলে উঠে…আপুউউ
আনিয়াও চিল্লানো বন্ধ করে আনিকার কাছে হুরমরিয়ে এগিয়ে যায়। শক্ত করে দু হাতের ডানা ধরে ঝাকিয়ে বলতে শুরু করে….
-তোর মনে এই ছিলো আনিকা।তাহলে আগেই বলতি আমাদের।আমরা কি তোর এতোটাই পর হয়ে গেলাম এক বেলাতেই?এতো বড়লোক ছেলেকে ফাঁদে ফেলে হাত করে নিয়েছিস যে, সে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেও প্রস্তুত হয়ে গেছে তোর ভালোবাসার পাবার পাগলে।
এর জন্য তুই এতোদিন ভারে ভারে রেখেছিস আমাদের,
বিয়ে করবি না বলে।আরে তোর দুলাভাই আর আমি গতকাল পাগলের মতো খুঁজেছি এখানে সেখানে।
আর তুই এখানে বিয়ে করে বাসর রাত সেরে ফেললি আমাদের একবার না বলে।বাহ বাহ..তোকে বাব্বাহ দিলেও কম হবে।
এই কারণে মা তোকে আমার হাতে তুলে দিয়ে গেছে। শুধু এই দিনটি দেখার জন্যে।আগে জানলে তোকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম রে।তোর মতো বোন কোনো ঘরে থাকার চেয়ে মেরে ফেলাটা অনেকটা ভালো রে।
আনিকা যে কোনো কথা বলবে সেটাও পারলো না
ওর বোনের ভুল বুঝা দেখে।শুধু অঝরে কেঁদে চলছে মাটির দিকে মাথা নিচু করে।?
-please তোর ন্যাকা কান্না বন্ধ কর।তোর জন্য আজ আমাদের পুরো বংশের মুখে আচ পরলো।আমরা গরিব হতে পারি কিন্তু সম্মানটা ধরে রাখতে চেষ্টা করেছি এবছরে?কিন্তু তোর কারণে আজ সেটা মাটিতে মিশে গেলো আর তুই মাটিতে চেয়ে চেয়ে রঙ্গো দেখছি।
যাক তোর মুখ দেখেই বুঝা হয়ে গেছে সব। আর কিছু বলার নেই।শুধু একটা কথায় বলবো। যার জন্য আজ এমন কান্ড করলি বংশের মুখে কালি মেখে।একদিন পঁচকাবি বলে রাখলাম এই আমি তোকে।
বলে চলে যেতে লাগলো আনিয়া মিরাজের হাত ধরে।
কি মনে করে ফিরে আসলো পা ঘুরিয়ে।
আনিকার মুখোমুখি হয়ে…তোর জন্য আমাদের দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো শুনতে পেরেছিস কান দিয়ে।মানে তুই আজ থেকে আমাদের কাছে মৃত…..
বলাটা যতটুকু, স্থান ত্যাগ করতে সেকেন্ডও লাগেনি ওদের বের হয়ে যেতে।
এমন কথা শুনে আনিকা ফ্লোরে বসে পরে।
কেঁদে ফেলে জোরে জোরে করে।
মিসেস সালেহা বেগম দৌড়িয়ে এসে আনিকাকে জড়িয়ে ধরে।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে শান্ত হতে বলে।কারণ ঘরে যে দু দুজন রোগী আছে।
আবারও মায়ের ভালোবাসা আর অসুস্থতা রোগীদের নিয়ে ব্লাকমেইল করে বলে…
-মা রে তুই কিন্তু কথা দিয়েছিস আমাকে।মায়ের দেওয়া কথা ভুলে গেলি এক রাতেই।
বাসস হয়ে গেলো ঠিক জায়গায় তীরটা মেরে।শান্ত করতে চেষ্টা করছে একটু একটু করে ফ্লোরে বসে।
হঠাৎ দরজা ভেদ করে প্রবেশ করলো অতি প্রিয় মানুষটা যে, এতো তাড়াতাড়ি ফেস করতে হবে আনিকার ভাবতেও পারে নি একবারের জন্যে।
প্রবেশ করতে করতে রায়হান বলে চিৎকার করছে।
হঠাৎ করে মেঝেতে বসে থাকতে দেখে আনিকাকে।
অবাক হয়ে যায় সে।
-আনিকা তুমি এ বাড়িতে।
আনিকার মুখ দিয়ে এবারও কথা বের হচ্ছে না।
হয় তো এবারও বোবা হয়ে গেছে।বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে।এক অনু সূচনা কাজ করছে আনিকার মধ্যে। কি বলবে তাকে?তার কাছে যে কোনো প্রশ্নের উত্তরই নেই আজ যে? তাই তো অসহায়দের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে কেঁদে চলছে।
-কি হলো কথা বলছো না যে?
এবার মিসেস সালেহা বেগম মুখ খুললো। আরে রাজ তুই… কথা ঘুরানোর চেষ্টা করলো মিসেস সালেহা বেগম কিন্তু কোনো কাজ হয় নি?
রাজ একের পর এক প্রশ্ন করেই চলছে?তাই আর থাকতে না পেরে মিসেস সালেহা বেগম বলেই ফেলে।আনিকা মিসেস রায়হান চৌধুরী হয় এখন এবাড়িতে।
চলবে……