সতীনের_সংসার পর্ব_১৯

0
3347

 সতীনের_সংসার পর্ব_১৯

Writer: তানজিন সুইটি
 

আর কিছু না বলে আনিকা ঘুমিয়ে পরে।রায়হানও আর দেরি না করে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।

আল্লাহ আজ তাদের ঘুম কতোটুকু ভাগ্যে লেখে রেখেছে ঘন্টাখানেক পর প্রমাণ পেয়ে যায়। যখন আবার কলের উপরে কল আসতে রয়।

এতো আওয়াজ হলে কি ঘুম হয়?কলের উপরে কল বাজতেই আছে।অবশেষে রিসিভ করেই বসে আনিকা।

-আসসালামু ওয়ালাইকুম।কে বলছেন?

-ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভাবী আমি জীতু..

-ওও হ্যাঁ বলুন ভাইয়া.. এতো রাতে কি করতে কল করেছেন?

-ভাবী রিয়া সুইসাইড করার জন্য দরজা বন্ধ করে থাপ্পাস থাপ্পাস কিসের যেনো আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।

-কি বলছেন?আর কেনো বা রিয়া সুইসাইড করতে যাবে হঠাৎ করে।

-উফফ ভাবী আপনিও না..একদম বোকা,কিছুই বুঝেন না।

-বোকার কি করবলাম ভাইয়া??

-আপনার কাছে কি রিয়া কলই করে নি?আর এমন তেমন ব্যবহারও প্রয়োগ করে নি আপনার সাথে।

এখন আনিকা মন খারাপ করে চুপ করে থাকে।

-কি হলো ভাবী..কথা বলছেন না কেনো?

জীতুর সারা পেয়ে ভাবনার জগত ভেদ করে..

-হুমম..বলেন ভাইয়া।কি আর বলবো তাকে?ভাগ্যের লেখা কেউ খন্ডাতে পারে।

-খন্ডাতে পারে না মানে,,,কে বলেছে আপনাকে?
জানেন রিয়া কি কি করেছে?

-কি???

-জানি না আপনারা যাদু টোনা বিশ্বাস করেন কিনা?
কিন্তু আমার বোন আর আম্মু বলেছে?রিয়া যেনো রায়হানকে তাবিজ কবজ করে বেধে রেখেছে।

-ধ্যাতত কি যে বলেন না?বর্তমানে কি এসব বিশ্বাস যোগ্য হয় আপনার কাছে?

-কে বলেছে হয় না?আর বিশ্বাস করা আর না করা আপনার ব্যপার..তবুও বললাম যেটা সেটার প্রমাণ পাচ্ছেন।তাও নাকজ করছেন। থাক আর কোনো কথা বাড়াবো না।এখন রায়হানকে একটু দেন।

-কিভাবে দেই ভাইয়া ওকে।ছেলেটা যে আজ বায়না ধরেছে বাবার বুকে ঘুমাবে।

-দেখেন ভাবী..সবই বুঝি তবুও ওকে দিতে হবে।কারণ
রিয়াকে আমার ছোট বোন আর আম্মু এক মূহুর্ত রাখবে না সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

পাশ থেকে রায়হানের ঘুম ভেঙে গেলে বলে উঠে..

-কি ব্যপার আনু??এতো রাতে কার সাথে বক বক করছো এতোখন ধরে।

-ইয়ে মানে…. (রায়হানকে ফোন দিতে চাচ্ছে না।কারণ, দিলেই চলে যাবে রিয়ার কাছে তাই।)

-ইয়ে মানে কি?কে কল করেছে বলবে কি?

-ইইইয়ে.. জীতু ভাইয়া..

-তো এতো তোতলানোর কি আছে?দাও আমার কাছে।

ফোন ধরে আর বেশি দেরি করলো না এতো রাতে।
চলে গেলো সেই মনসার কাছে।বিষকে মনে করছে মধু।
সেটা যে কত মধু হবে..সময় হলেই টের পাবে।

রায়হান চলে গেলো।পিছু ফিরে তাকিয়ে দেখলো না
আনিকার মুখের অবস্থা।বেচারির ভিতরে কুরে কুরে খাচ্ছে রাত শেষ হচ্ছে না বলে।কখন রাত পোহাবে আর কখন জীতু ভাইয়ের বাসাতে গিয়ে দেখবে রিয়ার কি হয়েছে?

রাত গেলো কোনো রকম কেঁদে আর ফোনের উপরে ফোন দিয়ে।অন্য পাশ থেকে বার বার কল কেটে দেওয়া রায়হানের বাহানা। তবুও লেইলা কুত্তার মতো সারা রাত কল করা বন্ধ হচ্ছে না আনিকার।লাস্ট সময়ে রিসিভ করেছে তবুও শুনতে হয়েছে চু**মা***, খা**মা**বে***
ইত্যাদি বিচ্ছিরি বকা।যেটা শুনলে যেকোনো মানুষই বমি করবে।

হায়রে লিলাখেলা,,,সব দুঃখই কি লিখে রেখেছিলো আনিকার একার কপাল পোড়ার?এই কপাল পোড়া
হয় তো বেড়ে যাবে ভোর হওয়ার সাথে সাথেই।

কোনো রকম ঘুমের জগত পার করলো।তারপর সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলো জীতুদের বাড়িতে।বাসায়
প্রবেশ করার পর পরই দেখতে পেলো এখানে সেখানে জিনিস পত্র ভেঙে চুরে একাকার।দরজাও ভেঙে ফেলা হয়েছে।আনিকা বুঝতে পারে গতকাল রাতে বড় সর একটা ব্যাপার ঘটে গেছে।এখন শুধু সেটার আসল তথ্য জানার জন্য জিঙ্গাসা করে।

-কি হয়েছে কাল রাতে?

-সেটা কি তোর কাছে বলতে হবে?

-আমার কাছে বলতে হবে না তো কার কাছে বলতে চাও।

-তোর মতো নষ্টা মেইয়ার কোনো কৈফিয়ত করতে চাই না।আর তুই এ বাসায় আইছোস কেন?বিগার উঠছে নাকি রায়হানকে কাছে পাওয়ার।

এমন কথাতে এবার আনিকা নিজেকে আর ধরে রাখতে না পারে..

-ঐ চুপ কর বলছি…অনেক সহ্য করেছি প্রায় এক বছর ধরে তোকে।কাকে কি বলছিস এসব বাজে কথা?
তোর মতো রাস্তার মেয়ে আবার আমারে বলে বিগারের কথা।আরে আমার যদি বিগারই থাকতো তাহলে নিজের জামাইরে তোর কাছে শুইতে পাঠাইতাম না।
আর তাবিজ কবজ করে বেধে রাখতাম না।
বিগার তো তোর বেশি।তাই তো বিয়ের আগেই আমার জামাইর সাথে এক বিছানায় শুইতেও তোর ঘৃণা প্রীত্তি হলো না।তবুও স্বাদ মেটে নাই তোর।যাদু টোনা করে নিজের এলাকাতে নিয়ে মানুষ জনের সামনে ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছিস প্রেগনেন্ট বলে।তার উপরে যে তোর অনেক লোভ রে। ওর সম্পত্তির উপরে।তাই তো আর দেরি না করে,এ এলাকাতে এসে আগে চাকরিতে জয়েন্ট করে ভাড়া নিলি আমাদের বাড়ির পাশে।যেনো পেট ভরে ভাত কাপড় পাস দেওয়ানা বানিয়ে।

-ঐ…??

-চুপ তোর ঐ ঐ..ভাতার ভাতার করোস খালি।আরে আমি তোরে ভিক্ষা হিসেবে দান করেছিলাম।আমি সব জানতাম তোর ফ্যামিলির অবস্থা।তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখে রায়হানকে বলেছিলাম রিয়াকে মেনে নিয়েছি কিন্তু ওর সংসার ও নিজেই গুছিয়ে যেনো নেয় আর আমার সংসারে নাক যেনো না গলায়।

ইত্যাদি কথা বলতে বলতে রায়হান বাহির থেকে চলে আসে।আর রিয়াও রায়হানকে দেখে ন্যাকা কান্না জুড়ে বসে আর বানিয়ে বানিয়ে এক গাদা কথা বলে আনিকার নামে।তার উপরে আরও বলে আনিকা এসেই মারধর করেছে, এমন কি মেরে ফেলার হুমকিও দেয় এতোখন ভরে?এসব শুনে রায়হানের মাথা়র রক্ত টকবগিয়ে উঠে.! আর কিছু বুঝতে না দিয়ে,আনিকার চুলের মুঠা খপ করে ধরে আর বলে..

-তোরে বার বার বলছি না,রিয়ার সাথে কথা বলবি না এমন তেমন করে।তার উপরে কে বলেছে তোকে এবাড়িতে আসতে?

অন্যদিকে আনিকাকে কিছুই বলার চান্স দিচ্ছে না একবারের জন্যে।কথা বলবে কি করে?যে পরিমানে চুলের মুঠো ধরে রেখেছে প্যাচিয়ে প্যাচিয়ে হাতের মধ্যে।তার সাথে কিছুখন পর পর ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে
এপাশ ওপাশ করে চলেছে চুল সহ আনিকাকে।

আনিকাও সহ্য করতে না পেলে বকা দিয়ে ফেলে।

-জানোয়ার ছার বলছি।যত পারোস আমার সাথেই খালি।আর রিয়া কি তোর…?

বলার আগেই হাতের কাছে একটা বাটাম পেয়ে আনিকাকে ফেলে ইচ্ছা মতো পিটাতে থাকে।আনিকার চিৎকার শুনে দৌড়িয়ে আসে জীতুর মা বোন আর অন্য ভাড়াটিয়ারা।

যতখনে সবাই দৌড়ে আসলো।ততখনে মাটিতে নিথুন দেহ নিয়ে লেপ্টে রয়লো আনিকা।জায়গায় জায়গায় ফুলে গেছে বেচারির।রক্তও জমাট বেঁধে গেছে।এখানে সেখানে চুল পরে পরে রয়েছে।অন্যপাশে রিয়ার মনে হয় তো তৃপ্তি মিটেছে। তাই তো ন্যাকা কান্না বন্ধ করে পিটানোর উপভোগ করছে,ঠেকানোর বদলে।

জীতুর মা আর বোন এবার রেগে গেলো রায়হানের উপরে।বলে উঠে…

-ছিঃ রায়হান…তোর কাছ থেকে এসব কখনোই আশা করি নি ।বিয়ে করেছিস ভালো কথা।তাই বলে কি তোদের খোপ ঝারবি বেচারির আনিকার উপরে?
আর এটাও ভুলে গেলি আনিকা গর্ভবতী এখন যে।

জীতুর মা কথাগুলা শেষ করার আগেই পাশ থেকে জীতুর ছোট বোন এবার বলে উঠে..

-ছিঃ ভাইয়া…এতো বছর ভেবে আসছি,আমার ভাই দুটা।এক জীতু আরেকজন রায়হান।কিন্তু এখন আমার ঘৃণা হচ্ছে এমন একজনকে ভাইয়ের স্থান দিলাম বলে?
আরে ভাই যদি তোমার এতোই মেয়েলি স্বভাব ছিলো তো তাহলে একটা কাজ করতে..এখন দেশে ওলি গলিতে পতিতালয় খোলা আছে,সেখানে গিয়েই নিজের ইচ্ছা পূরণ করে আসতে।আর এই যে রিয়া..ওকে আমি প্রথম দিন ই বলেছি…

বিয়ে যখন হয়েছে তখন একটা কাজ করো plzzz..
আনিকা অনেক ভালো মেয়ে।তাই তো তোমাদের মেনে নিয়েছে।যদি তুমি মিলে মিশে খাও তো সারাজীবন খেতে পারবে।কিন্তু একটা কথা মনে রেখো সব সময় ?
তোমার কাছে যদি রায়হান ভাইয়া দুদিন থাকে তাহলে আনিকা ভাবীর কাছে তিনদিন থাকার অধিকার আছে।
কারণ সে বড় বউ বলে।তো হিংসা বাদ দিয়ে ছোট বোন হিসেবে থাকো।দেখবে তোমাকে বড় বোন হিসেবে জীবন দিয়েও সব উজার করে দিবে যে কোনো সময়ে।

কিন্তু আজ এমন একটা কাজের জন্য নিকৃষ্ট লাগছে তোমাদের দুজনকে?বেশি লাগছে রিয়াকে।কোনো ভালো ঘরের মেয়ে বউ সন্তান দেখে এমন কাজ করবে না।আমার তো রিয়ার জন্ম নিয়ে সন্দেহ আছে।

এই কথাতে রিয়া ফুস ফুস করে উঠে সাপের মতো করে।

অন্যপাশে জীতুর মা আনিকাকে জ্ঞান ফিরানোর জন্য চোখে মুখে পানি দিয়েই চলেছে নিজের কোলে শুইয়ে।

চলবে….

(বিঃদ্রঃ বিচ্ছিরি ভাষা প্রয়োগ করার জন্য plzzz কেউ
বাজে মন্তব্য করবেন না।আসলে লেখার দৃষ্টান্ত তুলে ধরার জন্যই এমন লেখা প্রয়োগ করেছি আর কিছু নয়।
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ সবাইকে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে