সতীনের_সংসার পর্ব_১৮

0
3320

 সতীনের_সংসার পর্ব_১৮

Writer: তানজিন সুইটি
এক সময় ছিলো আনিকার জন্য পাগলামিনি করে যেতো আর এখন…..বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে শুয়ে পরে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।


রাতের তারা মিট মিট করছে।দিনের আলোর জন্যে। নতুন সূর্য কালও আসবে না আনিকার জীবনে।?

আসবে তো ফণী মনসা।যে কিনা ছবল দিয়ে যাবে
তার বিষাক্ত বিষে।প্রাণ হানিও হতে পারে যেকোনো সময়ে,সেই ছবলে।

ভোর হলো।নতুন সূর্য, নতুন দিন,বছরে এলো খুশির দিন।সেটা হলো ঈদের দিন।ঈদ মানেই ছিলো আনিকার জীবনে রায়হান আর ওর পরিবার।আর এখন শুধু তার একমাত্র সন্তান আরিয়ান।

ঘুম থেকে উঠে সম্পূর্ণ কাজ সেরে ফেলে আরিয়ান ঘুম থেকে ওঠার আগে।তা না হলে যে, ছেলেটা পাগল হয়ে যাবে ঈদ ঈদ করে।

এসব কথা একটু উচ্চ সরেই বলে বলে কাজ করে যাচ্ছে।এমন সময় পিছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো?

-পাবনা থেকে ফেরত এলে কবে?

কণ্ঠটা চেনা লাগছে বলে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রিয়া……

মুচকি হেসে বলে..

-হুমম?কিন্তু তোমার থেকে পরে ফেরত?

এটুকু কথাতেই তেলে বেগুনে ছেদ করে উঠলো রিয়া।
আর কোনো কথা না বারিয়ে চলে গেলো ড্রয়িং রুমে।
বাংলার পাঁচ করে রেখেছে চেহারাটাকে।সোফায় বসে বসে কি এমন ভাবছে যে,আশেপাশে বাড়ির আন্টিগন এসেছে,তাদের দিকে একবারও দেখছে না সে।

তার উপরে আনিকা কাজের উপর কাজ করে চলেছে আর সে নবাব নন্দিনী হয়ে সোফায় পা তুলে গভীর চিন্তায় চিন্তি হয়ে বসে আছে।

আন্টিগনরা বলে উঠে..

-কি গো নতুন বউ?কোনো মুরব্বী আসলে যে তাকে সালাম করতে হয়,সেটা শিখিয়ে দেয় নি তোমার বাবা মা।

এমন কথাতে রিয়ার ইগোতে তীরের মতো লেগেছে।তাই আর এক মূহুর্ত থাকলো না সেখানে বসে।সবার সামনে থেকে হন হনিয়ে চলে গেলো রায়হানের রুমে।

এটা দেখে আন্টিগনরা নানান জনে নানান রকমের কথা বলে যাচ্ছে মিসেস সালেহা বেগমকে।কিন্তু মিসেস সালেহা বেগমও হয়েছে তেমন?তাদের কথা কানে না নিয়ে চলে গেলেন রান্না ঘরে আনিকার কাছে সবাইকে নাস্তা দিতে বলে।তারা নাস্তা খেয়ে আনিকাকে দোয়া করে যায়।যেনো আল্লাহ দুঃখ-কষ্ট না দেয়।

অন্যথায়,রিয়া ফুস ফুস করতে থাকে সারাদিন।রাতে চলে যায়,তার বাসায়।আর পরে রয় একা রুমের কোণায় আনিকা।

দিন চলে যায়।রায়হান আবারও আসা বন্ধ করে দেয় আনিকার বাসায়।আনিকারও শরীরটা কেমন কেমন হয়ে গেছে।ঠিক মতো কিছু খায় না।কিছু মুখেও যেনো দিতে পারে না।মুখে দিলেই যেনো পেট থেকে আপনা
আপনিই বের হয়ে যায়।কার কাছে কি বলবে?কেউ
তো নেই এখন তার পাশে।এরই মধ্যে আরিয়ানেরও অনেক জ্বর এসেছে।আব্বু আব্বু করে প্রলেপ বকছে।
মিসেস সালেহা বেগমও কম আদর যত্ন করে না নাতনী নাতনী করে তবুও বাবার আদর সেটা কি পূরণ করতে পারে কেউ?তাই হয় তো আরিয়ানের জ্বর কমছে না কোনো মতেই।

এবার কল করেই বসে রায়হানকে আনিকা।কয়েকবার দেওয়ার পর রিসিভ করলে আসতে বলে আরিয়ানের অবস্থা বেশি ভালো না।সেটা শুনে এক মূহুর্ত দেরি না করে চলে আসে রকেটের মতো করে।

আরিয়ানকে সঙ্গে করে চলে যায় ডাঃ এর কাছে রায়হান।চেকআপ করে মেডিসিন নিয়ে চলে আসে।
বাসায় এসে ড্রয়িং রুমে বসে রেস্ট নিতে থাকে এমন সময় পানির গ্লাস নিয়ে রায়হানকে দিয়ে চলে যেতে নিলে,মাথা ঘুরিয়ে ফ্লোরে পরে যায় ধাপ্পাস হয়ে।
রায়হান পানির গ্লাসটা হাত থেকে তাড়াতাড়ি রেখে আনিকাকে পাজর কোলে তুলে নিয়ে যায় রুমে।
তারপর ডাঃ ওয়াজেদকে কল করে অতিদ্রুত বাসায় আসতে।

আনিকার এমন অবস্থা দেখে এতোটা ভয়ে আত্মা যায় যায় বলে।এমন সময় ডাঃ ওয়াজেদ চলে আসে।
সব কিছু চেকআপ করে আনিকার কাছ থেকে কিছু তথ্য নিয়ে অনুমান করে বলে রায়হান আবারও বাবা হতে চলেছে।বাকিটুকু সিউর হবে টেস্টগুলো হাতে পেলে।এসব বলে চলে যায় ডাঃ ওয়াজেদ।

পাশে বসে পরে আনিকার।মাথায় হাত রেখে আনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে থাকে আর বলতে থাকে

-কেনো বলো নি আমায় আগে,তোমার এ অবস্থা?

আনিকা নিজেই অবাক।আর রায়হানকে কি বলবে?
চোখ বেয়ে পানি পরে চলেছে বেবি আসার কথা শুনে।
ভাবছে,,নিজেরই কোনো খবর নেই আর তো আরেকটা বেবি।একটা নিয়েই জীবন শেষ এখন কিভাবে তাকে
ফেলে দেবে।যদি হারিয়ে যায় তো,তখনএই বাচ্চা রেখে কি হবে?তার থেকে এ বাচ্চা পৃথিবীতে আসার আগে শেষ করে ফেলতে হবে।নয় তো….

-কি হলো,কথা বলছো না যে?

ভাবনার জগত ভেদ করে রায়হানের ডাকে।

-কোথায় কিছু না তো? আমার ভালো লাগছে না।আমাকে একা থাকতে দিবে একটু।

-আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও। আমি আম্মুকে বলছি কিছু দিয়ে যেতে।

এটা বলে চলে গেলো বাহিরে।কিছুখন পর আবার এলো নিজেই মিসেস সালেহা বেগমের সাথে।মিসেস সালেহা বেগমও কিছুটা খুশি হয়েছে।কারণ তার বংশধর আবার পৃথিবীতে আসছে।আনিকাকে বলছে

-এবার কিন্তু একটা মেয়ে চাইরে আনিকা তোর কাছ থেকে?

এমন কথাতে আনিকার ভিতরে ফেটে যাচ্ছে।মেয়ে চায়
বউকে মেয়ের মতো কখনো দেখেছে যে আবার মেয়ে চায়।যদি দেখতো তাহলে আজ এমন হতো না তার।

সেই রাতে ধর্ষণ হয়েছে।কোনো ভালোবাসার ফলন নয় তার পেটে।শুধু স্বামী-স্ত্রী নামে হলেই হয় না।ভালোবাসার মাধ্যমে মিলন হলেই সেটা সুদ্ধ ফলন হয়।
অবৈধভাবে জোড়পূর্বক করে মিলন করলেই তাকে বৈধ বলে না সন্তানকে।ধর্ষণের মতো অত্যাচার করে গেছে সেদিন রাত।

চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলতে চাচ্ছে।এই বেবি চাই না আর।ঘৃণা করছে শুনে এটা কি করে পৃথিবীর মুখ দেখায়?হঠাৎ পাশ থেকে কলের আওয়াজে ভাবনা শেষ তার।তাকিয়ে দেখে রায়হানের ফোন বেজে চলেছে একটার পর একটা।যখন রায়হান রিসিভ করছে না।তখনই বুঝে গেলো আনিকা।এটা আর কেউ না?এটা রিয়া…তার সুখের ঘরে আগুন লাগানোর একমাত্র দিয়াশলাই।

মুখ ঘুরিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে দেখে কিছুখন।
আনিকার তাকানো দেখে রায়হান বাহিরে চলে যায় ফোন হাতে করে।অনেকখন পর রুমে এসে আনিকার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায় রিয়ার বাসায়।

আনিকাও কোনো রকম ঠেকানোর চেষ্টা করে না আর।
কাকে ধরে রাখবে সে এখন আর।যে আগেই পারলো না ধরে রাখতে আর তো এখন।চলে গেলো মিসেস সালেহা বেগমও।যাওয়ার আগে বলে গেলো।

-আজ থেকে তোর কোনো কাজ করতে হবে না।তুই শুধু নিজের আর বেবির খেয়াল রাখবি।এটাই হলো তোর বড় কাজ।

আনিকা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।আজ বেবি হবে বলে কতো আদর যত্ন তাদের মধ্যে।কিন্তু রায়হান মুখে খুশি হলেও কি ভিতরে খুশি হয়েছে?

এটা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।সন্ধ্যার সময় ঘুম ভেঙে গেলো আরিয়ানের আম্মু আম্মু ডাক শুনায়।
চোখটা মেলে দেখে আরিয়ান পাশে শুয়ে জ্বরে সারা গা পুরে যায়।হাতে ফোনটা নিয়েই রায়হানকে আবারও কল করে আসতে বলে আরিয়ানের জ্বর বেরে গেছে বলে।

রায়হান এসে ডাঃ এর কাছে নিয়ে যায়।ভালো করে চেকআপ করে মেডিসিন দেওয়ার পরে রাত অনেক হয়ে যায়।বাসায় ফিরে আসে তিনজনের মিলে।আরিয়ান বায়না ধরে তার কাছে রাতে থেকে যায় যেনো।রায়হানও আর মানা করে না।কারণ,রাতে যদি জ্বর আরও বেড়ে যায় তখন কি করবে আনিকা গর্ভাবস্থায়।

সবাই মিলে ডিনার সেরে চলে যায়,যার যার রুমে।
রাত প্রায় সাড়ে ১১টা।এমন সময় আবারও কল আসে রায়হানের ফোনে।রায়হান তো মরার মতো ঘুমে পরে আছে।তাই আনিকাই রিসিভ করে রিয়ার নাম সেভ দেখেই।

রিসিভ করার পর পরই।আনিকা হ্যালো বলতেই রিয়ার মাথায় রক্ত গরম হয়ে যায় টগবগিয়ে।

-তোর হাতে ফোন কেন?রায়হান কয়?ওর কাছে শুইতে মন চায় তোর অনেক তাই না।ভাতার কাছে পাইলে আর ছারতে মন চায় না।তাই তো পেটে আরেকটা
বাজায় ফেলাইছোস।

এমন কথা শুনে আনিকা আসমান থেকে পরে।ছিঃ এগুলা কি সব বলে রিয়া?এগুলা তো রিয়ার মুখে মানায় না।এটা তো নিজের বলা উচিত।তবুও তার দিয়েছি বলে সে আজ এমন কথাগুলো বলতে
পারলো ছিঃ।

হঠাৎ কান থেকে ফোন নিয়ে যায় রায়হান।রিয়াকে বলে কাল আসবে।এটা শুনে রিয়ার মাথা আরও খারাপ হয়ে যায় এক মূহুর্তে।

ফোনের ওপাশ থেকে কি কি বলে?সেটা আনিকা একটুও শুনতে পায় নি বলে।বার বার জিঙ্গাসা করে রায়হানকে কি হয়েছে তাদের মধ্যে আজ?রায়হান চুপ করে ঘুমিয়ে থাকতে বলে আনিকার শরীর খারাপ হবে বেশি টেনশন করলে।

আর কিছু না বলে আনিকা ঘুমিয়ে পরে।রায়হানও আর দেরি না করে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।

আল্লাহ আজ তাদের ঘুম কতোটুকু ভাগ্যে লেখে রেখেছে ঘন্টাখানেক পর প্রমাণ পেয়ে যায়। যখন আবার কলের উপরে কল আসতে রয়।

চলবে….

(বিঃদ্রঃ কিছু কিছু ভাষা শৃঙ্খলার মধ্যে নয়,তো মাফ করে দিবেন সবাই।আসলে যেভাবে ভাষা ব্যবহার করেছে সেটাই তুলা ধরা।ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ সবাইকে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে