সতীনের_সংসার  পর্ব_১৭

0
3360

 সতীনের_সংসার  পর্ব_১৭

Writer: তানজিন সুইটি

আজ তার কাছে বড় শত্রু মনে হচ্ছে ভাগ্য। ভাগ্যের জন্যেই আজ তার কপালটা পুরা।?কেন যে সেই ভাগ্য হলো না তার বাবা মার কাছে চলে যাওয়ার।তাহলে হয় তো এতো কষ্ট পেতে হতো না আজ তার।????

জীবনের শুরুটা ভালো হলেই যে,শেষটা ভালো হবে এমন কথা কোথাও লেখা নেই আনিকা এখন মনে করে।তার ভাগ্য এখন অকুল দরিয়ায় ভেসে গেছে সেই কবে সেটাও সে বুঝে গেছে।ভিতরে হৃদয় বলতে কিছুই নেই এখন তার মাঝে।সবই পাথরের ন্যায় হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন।

দূর আকাশের পানে চেয়ে দেখছে আর ভাবছে।এটাই কি জীবন?নাকি এর পরে আরও কিছু লিখে রেখেছে উপরওয়ালা তার ভাগ্যে।যদি তাই ই হয় তো,তাহলে যেনো অতিদ্রুত তার পথ বেছে নিতে হবে,সেই সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।

বেলকনি থেকে বের হয়ে শুয়ে পরে,একমাত্র ছেলে আরিয়ানকে বুকে নিয়ে।বুকে নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠে।হাপাতে হাপাতে পাশের
টি-টেবলের উপর থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে।স্বপ্নটা দুঃস্বপ্ন থাকলেও কেমন যেনো বাস্তব বাস্তব মনে হচ্ছে তার কাছে।

আরিয়ানের মুখের দিকে অনেকখন তাকিয়ে থেকে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পরতে থাকে।আনিকা ভাবছে,
যদি আরিয়ান না থাকতো তার জীবনে,কবে সে চলে যেতো এই নরক থেকে,দু চোখ যেদিকে যায় সেদিকে।
কিন্তু এখন কিভাবে যাবে সে?শত হলেও ছোট বাচ্চা,
এমন করে কোনো মাই পারবে না নিঃস্বার্থভাবে ফেলে অন্যথায় চলে যেতে।

এমনটা ভাবতে ভাবতে কখন যে আবারও ঘুমের রাজ্যে পারি জমিয়েছে সেটা বুঝতোই না যদি মিসেস সালেহা বেগম ডাকতে ডাকতে দরজা ভেঙে ফেলার মতো করতো।

ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় ৯টা বেজে গেছে।এর জন্যেই হয় তো মিসেস সালেহা বেগমের এমন রাগ রাগ ভাব।

তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দিয়ে বলে…

-আসলে আম্মু কয়েকদিন যাবত শরীরটা অনেক দুর্বল দুর্বল লাগে তার উপরে মাথাটাও উঠাতে পারি না।
তাই হয় তো এমন হয়েছে।

মিসেস সালেহা বেগম কিছু না বলে,রুমে প্রবেশ করে
আরিয়ানকে কোলে নিয়ে চলে গেলো নিচে আর যাওয়ার আগে বলে গেলো…

-ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে আয় অনেক বেলা হয়েছে
খেয়ে নিবি তারপর তো ইফতারের ব্যবস্থা করতে হবে।

আনিকা গভীর দৃষ্টিতে চেয়ে রয় মিসেস সালেহা বেগমের দিকে অনেকখন।তারপর আর দেরি না করে ফ্রেস হয়ে চলে যায়।

সেহরীতে মিসেস সালেহা বেগম ডেকেছিলো আনিকাকে কিন্তু শরীরের কন্ডিশন যে পরিমাণে খারাপ তার জন্য হয় তো উঠতে পারে নি।তাই মিসেস সালেহা বেগম সব বুঝতে পেরে ঐরকম ব্যবহার করে গেলো।
যাক তবুও ভালো,অনেকদিন পর এমন ব্যবহার করলো
সেটাতেও অনেক খুশি আনিকা।


দেখতে দেখতে দিন পার হতে থাকে।অন্যদিকে রায়হানের আসার নাম নিচ্ছে না সেই চিন্তায় আনিকা আরও শুকিয়ে যাচ্ছে।দু দিন পর ঈদ আজও আসার কোনো নাম গন্ধ নাই।তাই ভাবছে কল দিবে আবারও।
এর ই মধ্যে আরিয়ান চিল্লিয়ে উঠে…

-আব্বু এসেছে আব্বু এসেছে।

এটা শুনে আনিকা এক প্রকার দৌড়িয়ে এসে দেখে ড্রয়িং রুমে সত্যিই রায়হান এসেছে।মুখটা কেমন যেনো শুকনো শুকনো লাগছে।হয় তো যার্নি করে আসছে এর জন্যে।আর কোনো ভাবনা না ভেবে কাছে গিয়ে জিঙ্গাসা করে…

-তুমি কি রোজা আছো?

-না..থাকতে পারি নি।

আনিকা আর কিছু জিঙ্গাসা না করে চলে গেলো রান্না ঘরে খাবার রেডি করতে।টেবিলে খাবার সাজিয়ে রায়হানকে খাওয়ার জন্য ডাক দেয় ফ্রেস হয়ে খেতে আসতে।

কিছুখন পরই চলে আসে খেতে।খাওয়া দাওয়া করে রুমে চলে যায় রেস্ট নিতে।আরিয়ানকেও সঙ্গে নিয়ে যায় কোলে করে।আনিকা আর মিসেস সালেহা বেগম ইফতার সেরে এক সাথে নামাজ আদায় করে চলে যায় যার যার রুমে।রুমে প্রবেশ করার পর আনিকাকে কাছে টেনে নিয়ে বসিয়ে দেয় রায়হান।মুখে আলতো করে হাত রেখে…

-কি হয়েছে তোমার? এমন লাগছে কেনো তোমার চোখ মুখের অবস্থা।

আনিকা কিছু যে বলবে,সেটাও পারছে না।যেটা সযত্নে ভিতরে গুছিয়ে রেখেছে অনেক দিন আগে একটু একটু করে।

-আচ্ছা বলতে হবে না।যাও রেডি হয়ে নাও শপিং এ বের হবো।

এমন কথাতে আনিকা একটু হলেও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটেছে।কারণ,ছেলেটা রোজা শুরু হওয়ার পর থেকেই নতুন জামা-কাপড় করতে করতে মাথা খেয়ে ফেলেছে।
আজ ছেলেটার আশা পূরণ করতে যাবে।তাই খুশি হওয়া স্বাভাবিক।নিজের জন্য কখনো মেয়েটা হাসি ফুটে না।শুধু অন্য অন্য বলতে বলতে নিজের জীবন দিয়ে দিতেও পারবে আর তো তার নাড়ি ছেরা ধন।

আর দেরি না করে অতিদ্রুত রেডি হয়ে চলে গেলো শপিং এ।সেখানে গিয়েও আনিকার দয়ালুর শেষ হয় না তিল পরিমাণে।শ্বশুর,শ্বাশুড়ী,ননদ, ননদের বর, ননদের সন্তান,নিজের সন্তানসহ সবার জন্য শপিং করে।
অবশেষে ওর জন্য কিছু নিতে বললে বলে…

-রিয়ার জন্য শপিং করেছো কি?

-না.. পরে করে দিবো।

-কবে করবে?পরশু ঈদ,যদি আজ না করো আর যদি শুনে এবাসার সবার শপিং করা শেষ তো অনেক কষ্ট পাবে।তাই বলছি কি?ওর আর আমার একই ড্রেস কিনো তাতেই অনেক ভালো হবে।

পরে রায়হান মুচকি হেসে,আনিকার কথা মতো সব কিছু শপিং করে ফেলে।তারপর চলে যায় বাসার উদ্দেশ্যে।

বাসায় গিয়ে রুমে প্রবেশ করে ফ্রেস হয়ে শুয়ে পরে।
এমন সময় রায়হানের ফোনে কল আসে আর অনেকখন ধরে কি যেনো কথা কাটাকাটি হয় কার সাথে?তারপর ফোনটা রেখে শুয়ে পরে আনিকার পাশে।বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আরিয়ানকে অনেক মাস পর।এতোটাই নিঃস্বার্থ হয়ে গেছে যে,এক মাত্র ছেলেকেও বুকে নেওয়ার সময় পায় না।আজ তার অনেক ভালো লাগছে, তাদের সেই আগের পরিবার এক সাথে একই খাটে শুয়ে বিলি কেটে দিচ্ছে আরিয়ানের মাথাতে।
এই ভালো লাগার সময় কতখন থাকবে একমাত্র আল্লাহ স্বয়ং জানে।

চোখ বুজে ঘুমের রাজ্যে পারি দেই দেই ভাব এমন সময় কল আসে।রিসিভ করতে পারে না ঘুম ঘুম চোখে একটু বেশিই বলে।লাস্টবার রিসিভ করতেই আরেক মুহুর্ত থাকলো না সেখানে। কোনো রকম রেডিয়ে হয়ে বেরিয়ে গেলো ফোন কলের সেই মানুষটির উদ্দেশ্যে…

শুধু যাওয়ার সময় আনিকা বলে উঠলো

-এতোদিন পর এলে তাও একটি রাত থাকবে না নিজের মানিক রতন ছেলেকে বুকে নিয়ে।কতদিন ধরে শুধু বায়না ধরে আব্বু যাবো আর আব্বুর কাছে ঘুমাবো।
তবুও আম্মু(মিসেস সালেহা বেগম)ছিলো বলে তাই সব কিছু সামলিয়ে নিয়েছে কিন্তু……..

আর কোনো কথা বলার সময় দিলো না?তার আগে চলে গেলো বলতে বলতে,,

-এসে শুনবো,এখন দেরি হলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে রিয়ার যে….

এটা শুনে আনিকা কেঁদেই দিলো।ছেলের থেকে এখন রিয়াল সব হয়ে গেলো। যে একটা রাত তাকে একা রাখতে ভয় পায়।হায় আল্লাহ কেমন হয়ে গেছে এই মানুষটা।



রাত কেটে গেলো কোনো রকম করে।সারাদিন পারও হয়ে গেলো কিন্তু রায়হানের আসার নামই নেই আর?
আজকের দিন পার হলেই ভোরের সূর্যতে ফুটে উঠবে ঈদের আমেজে।”ও মোর রমজানেরি রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ “এই খুশিটা সবার মাঝে হলেও
নেই শুধু আনিকার ভিতরে।কল করেও পাচ্ছে না রায়হানকে। পরে আর থাকতে না পেরে কল করে রায়হানের বন্ধু জীতুর কাছে..

-(কয়েকবার কল করার পর রিসিভ করে) হ্যালো,,,আসসালামু ওয়ালাইকুম ভাইয়া।

-ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাবী।কেমন আছেন?

-আমর কথা বাদ দেন।আপনি কেমন আছেন সেটা বলেন ভাইয়া?আর বাসার সবাই কেমন আছে?

-আমরা সবাই ভালোই আছি।কিন্তু??

-কিন্তু কি ভাইয়া??

-আজ রায়হান আর রিয়া আমাদের বাসার পাশের ইউনিটে উঠেছে।গতকাল রিয়া অনেক পাগলামিনী করেছিলো যেনো রাতে।তাই বাড়িওয়ালা বাসা থেকে চলে যেতে বলেছে।পরে আর কোথাও যাওয়ার জায়গা পাচ্ছে না তাই আমাকে কল করে বলে যে আমাদের পাশের ইউনিটে উঠবে।আর ভাড়াও দিবে।
কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে একটাই?

-কি সমস্যা?

-আমার ছোট বোন অন্য রকম।এমন তেমন অন্যায় দেখলে ঘার থাক্কা দিয়ে বের করে দিবে।দেখবে না সে কার কি হয় সম্পর্কে।হোক সে আমার বন্ধু বান্ধব।
তাই সেটাই রায়হানকে খুলে বলার পর সব স্বর্থে রাজি আছে।তো আর না করতে পারি নি এখানে থাকতে।

এসব কথা শুনে আনিকা বিদায় নিয়ে আলগ্রস্থে রেখে দিলো।

এক সময় ছিলো আনিকার জন্য পাগলামিনি করে যেতো আর এখন…..বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে শুয়ে পরে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।


রাতের তারা মিট মিট করছে।দিনের আলোর জন্যে। নতুন সূর্য কালও আসবে না আনিকার জীবনে।?

চলবে….

(বিঃদ্রঃ আমার ফোনের কীবোর্ডটা এতো স্লো যে টাইপিং করতে গেলে অনেক দেরি দেরি লাগে লেখতে তার উপরে বার বার কীবোর্ডটা সেটিং করতে হয় হ্যাংক হওয়ার কারণে?অনেকটা কষ্ট হয় লেখতে
যদি ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।??
ধন্যবাদ সবাইকে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে