সতীনের_ সংসার
Writer: তানজিন সুইটি
#পর্ব_১৩
আনিকার কাছে মনে হচ্ছে।সবাই ঠিকই বলেছিলো সুখি হবো না কোনো দিনও।তাহলে কি এটাই তাদের অভিশাপ মূল ছিলো?
আনিকা ভাবছে,জীবনে কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি,প্রতারণা-ঠকায়ও নি।তবুও কেনো নিজের জীবন হলো এমন।
কারো ভালো করতে গিয়ে,নিজের কাছের মানুষদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।তাদের অভিশাপের ভাগিদার হয়ে নিজেকে শক্ত করে তৈরি করতে চেয়েছে।কিন্তু তার মূল্য এমনভাবে পাবে,কখনোই ভাবে নি সে?
আনিকার কান্নার শব্দ শুনে পাশের রুম থেকে মিসেস সালেহা বেগম ছুটে আসে,সঙ্গে আশরাফ সাহেবও আসে।আনিকার চোখের পানির থেকে বংশধরের চোখের পানির মূল্য বেশি মনে হলো মিসেস সালেহা বেগমের কাছে।
নাতিকে কোলে নিয়ে আনিকাকে ধমকের সরে বলে উঠে…
-তোর কি দুদিন পর পর ভূতে ধরে?মাঝে মাঝে তোর এমন আচরণে মেজাজটা খারাপ হয়ে যায়।তোকে বার বার বলেছি, যদি কান্না আসে তো আরিয়ানের সামনে কখনো কান্না করবি না।ওর মস্তিষ্কে বিঘ্ন ঘটে অনেক।
এমন কথাতে আনিকা অসহায়ের মতো মিসেস সালেহা বেগমের দিকে তাকিয়ে দেখে।হয় তো এটাই ভাবে।
হায় রে মানুষ।পরিবর্তন হতে সময় নেয় না রাতের প্রহালে।
পাশ থেকে আশরাফ সাহেব বলে উঠে…
-রায়হানের মা একটু বেশিই বকে ফেলছো কিন্তু? মানুষ এতো তাড়াতাড়ি চেঞ্জ হয়, তোমাকে দেখেই শিখবে।
মুখ খুলাবে না এখন কিন্তু?চুপ করে নাতিকে নিয়ে দারিয়ে আছো।থাকো দাড়িয়ে।অযথা মাথা খারাপ করবে না আমার।
এমন কথা বলে,আনিকার কাছে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসে পরে।মাথায় হাত রেখে জিঙ্গাসা করে?
-কি হয়েছে রে মা?বলবি আমাকে।
আনিকার কান্না বাধ ভেঙে গেলো শ্বশুরের ভালোবাসার পরশে।থাকতে না পেরে,আশরাফ সাহেবের কাধে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে উঠে।মনে হয় কালো মেঘ জমে ছিলো বুকের ভিতরে।হালকা আভাস পেতেই বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরছে অঝরে দু’নয়ন ভরে।
-আ..আ..আব্বু..
-কি হয়ছে???
-আব্বু রায়হান বিয়ে করেছে।
এটা শুনে মিসেস সালেহা বেগমের মুখ কালো হয়ে গেলো।কথা বলার মুখ নেই তার।অন্যের মেয়েকে যতই বলুক না কেনো মেয়ে হিসেবে আগলে রাখবে?সেটা কি কোনো শ্বাশুড়ী গ্যারান্টি দিতে পারে?নিজের পেটের মেয়ের বেলা ১৬ আনা।কিন্তু অন্যের বেলার খালি ন্যাকা কান্না মনে হয় মিসেস সালেহা বেগমের কাছে।
সেটা তার ব্যবহারেই প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছে ইদানীং।
আশরাফ সাহেবের মাথায় চোখে মুখে আগুন জ্বলে উঠে।হয় তো এখন রায়হানকে হাতের কাছে পেলে কুপিয়ে মেরেই ফেলবে।বার বার মিসেস সালেহা বেগমের দিকে রাগান্বিত চোখে তাকায়।মনে হয় এখনই কয়েকটা কিলঘুষি দিয়ে ফেলবে চোখ মুখ বুজে।
-এই তোমার জন্য এমন হয়েছে।বার বার বলেছিলাম ছেলেকে একটু শাসনে রাখো।কিন্তু তখন কান দিয়ে নাও নি তিল পরিমাণে, আরও আমাকে বলেছো ইয়াং বয়সে একটুআকটু এমন করবেই। পরে বয়স হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।এখন তো দেখলে কি করে ফেললো অন্যের মেয়ের কপাল পুরিয়ে ? ওকে আমি আজ এই মুহূর্তে….
কথাটা শেষ কথার আগেই থামিয়ে দিলো মিসেস সালেহা বেগম আশরাফ সাহেবকে।
-আচ্ছা এখন এটা না বলে ওকে খুঁজে এনে দু তিনটা বাটাম দিয়ে বারি দিলেই হয়ে গেলো তো আর কে কি বললো সেটা আগে একটু ভালো ভাবে খোজ নিতে তো হবে।পরে না হয় ঐ মেয়েকে বাদ দিয়ে দিবে।
মিসেস সালেহা বেগম কতোটা যে চালাক কেউ তার সাথে না মিশলে বুঝবে না।ত্যাজ্যপুত্র করবে বলে
কথার ধরনটা চেঞ্জ করে দিলো অন্য দিকে। আসলে উনার মতো মহিলা অনেক কম আছে এ পৃথিবীতে।
সেটা আনিকা হারে হারে টের পাচ্ছে।
আনিকাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় আশরাফ সাহেব,সেই বন্ধুর বাড়িতে,যার কাছ থেকে রায়হানের খবর পেয়েছে।
সেখানে গিয়ে আসলেই সব সত্য জানতে পারে।আর প্রমাণ হিসেবে ফোনে তুলা ছবিগুলো পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখিয়েছে।
একজন স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো তার স্বামী।কিন্তু স্বামীর এমন দৃশ্য দেখলে,কোন স্ত্রী সুস্থ থাকবে জানা নেই কোনো নারীর?
যে মেয়েটার ছবি দেখালো।তাকে দেখে আনিকা থ হয়ে দাড়িয়ে রয়লো।যাকে কয়েক মাস আগে দেখেছিলো তারই বেড রুমে রায়হানের সাথে অন্তরঙ্গভাবে।সেই হলো তার সতীন।বুক ফেটে চুরমার হয়ে যাচ্ছে আনিকার ??কি অভাব ছিলো তার মধ্যে?যে অন্য নারীর দরকার ছিলো তার।
চুপ হয়ে বসে রয়লো।আর পাশ থেকে আশরাফ সাহেব রায়হানের বন্ধুকে সব জিঙ্গাসা করতে লাগলো এক এক করে।কে এই মেয়ে?কোথায় থাকে?কোথায় দেখা হয়েছিলো আর কিভাবে বিয়ে হলো? তখন বলতে শুরু করলো সব…
-আংকেল আপনি তো অসুস্থতার কারণে অফিসে আসেন না ঠিক মতো করে।রায়হানের উপর সব দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তায় ঘরে বসে আছেন।আর অন্য দিক দিয়ে আপনার ছেলে অফিসে নতুন পিএ রেখেছে। ওর নাম রিয়া। এ শহরে নতুন এসেছে।ওর পরিবারসহ আপনাদের বাড়ির পাশে ভাড়া নিয়েছে।আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়।ওর বাবা মা দুজনই কাজ করে ছোটখাটো ফ্যাক্টরিতে।ছোট একটা বোন আছে।এবার হয় তো ৪-৫ম শ্রেনীতে উঠেছে।
রিয়া যেদিন অফিসে জয়েন্ট করেছে। সেদিন থেকেই রায়হানের সঙ্গ দিতেই থাকে। মেয়েটার রুচিশীলতাও ভালো নয় মোটে শুধু চেহারাটাই সুন্দর আর স্মার্ট কিন্তু নোংরা টাইপের মেয়ে?রায়হান বিবাহিত,বাচ্চা আছে জেনেও রায়হানকে সঙ্গ দিতে কতবার আপনাদের বাসায় গিয়েছে,তার কোনো ঠিক নেই আপনারা বাসায় না থাকলে।
এই কথাতে আশরাফ সাহেবের রাগ তিনগুণ বেরে গেলো।অন্যদিকে আনিকা মাটির দিকে তাকিয়ে কেঁদে চলেছে।কারণ, সেই দৃশ্য তার দেখা হয়ে গেছে কবেই। তবুও তাকে মাফ করে দিয়েছে ভুল হয়ে গেছে বলে।
আবার বলতে থাকে…
-রিয়া সপ্তাহখানেক আগে রায়হানকে চাপ দেয় বিয়ের জন্যে।সেটা আবার রায়হান নাকজ করে দিলে রিয়া রেগে মরার ডিসিশন নিয়ে ফেলে আর বলে কয়েক মাস ধরে ধর্ষণ করেছে সেটার প্রমাণ রেখে যাবে।তারপর বিয়ে করে ফেলে হারানো ও মান-সম্মানের ভয়ে।পরে রিয়ার পরিবার আপনাদের এলাকা থেকে ভয়ে চলে যায়,যদি লোকজন শুনে তো রামপেদানি পেদাবে।তাদের যাওয়ার দুদিন পরে, রায়হানকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় রিয়াদের গ্রামে।তাদের সপরিবারে বলে আনিকাকে ছেরে রিয়াকে নিয়ে সংসার করতে।
এমন কথা শুনে আনিকার বুকের বাম পাশে চিন করে উঠে।
-পরে সেখানে যে কয়েক দিন ছিলো তাদেরকে টাকা পয়সা ভেঙে ভেঙে খাইয়ে শেষ করে ফেলেছে সব।
পরে ফোন আর বাইকটা পর্যন্ত বিক্রি করে খাইয়েছে।
তারপর যখন বাসায় আসার কথা ছিলো তখন রিয়ার পরিবার রিয়াকে সঙ্গে করে নিয়ে ফিরতে বলেছে।
তখন চিন্তায় পরে যায় রায়হান কি করা যায় কি করা যায়?হঠাৎ মাথায় বাসার কথা আসে।তখন আপনাদের কাছে টাকা চায় মিথ্যা বলে।যেনো ঐটাকা দিয়ে রিয়াকে আলাদা ফ্লাট ভাড়া করিয়ে থাকতে পারে।
কারণ আপনারা ওকে ঘরে তুলবেন না কখনো এটা শুনলে।এখন বর্তমানে রিয়াকে নিয়ে আপনাদের অফিসে থেকে দূরে বাসা নিয়েছে যেনো অফিস থেকে যাতায়াত সহজ হয় ওর সেই ভেবে।
একথা শুনে আশরাফ সাহেব রাগে দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করতে থাকে।নিজের ছেলেকে চিনতেও এতো বছর পার করতে হলো তার।সে ভাবছে,তারও তো একটা মেয়ে আছে।যদি তার সাথেও এমন হয়ে যায় যেকোনো সময়ে।
সম্পূর্ণ কথা শেষ করে আনিকার দিকে বার বার দেখে অসহায়ের দৃষ্টিতে।আনিকাও বুঝতে পেরে আর অপেক্ষা না করে আশরাফ সাহেবকে নিয়ে চলে গেলো বাসার উদ্দেশ্যে।
চলবে…..
(ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে)