না, অন্য আট/দশটা ছেলের মতো মাস্তানি কিংবা রাজনীতিতে দক্ষ ছিলো না সে।
সে ছিলো ভিষণ শান্ত।
খুব একটা সাহস তার ছিলো না।
বরং চুপচাপ নিরবে সবকিছুর সাক্ষী হয়ে রয়ে যেতো।
রাজপথে মিছিল চলছে।
সেখান দিয়ে হেঁটে গেলেই, আমার হাতে কারো হ্যাঁচকা টান অনুভব করতাম।
পরক্ষণেই নিজেকে আবিষ্কার করতাম ফুটপাতে, মিছিলের বিপরীত পথে।
না, না! ওকে কখনো ভিতু মনে হয় নি আমার।
শুধু বুঝতে পারতাম- ওর সাহসটা একটু কম ছিলো।
প্রতিবাদ করার ধরনটা ছিলো একটু অন্য রকমের।
গায়ের জোরে নয়, ও চাইতো ওর কলমটাকে শক্তি দিতে।
আমার সাহসী প্রেমের সাথে মিশে ওর ভীরু প্রেম একটু একটু করে কখন যেন জমাট বেঁধে গিয়েছিলো বুঝতেই পারি নি!
আর যখন বুঝলাম, ফেরা হয়নি আর।
সেদিন শিবপুরের একটা কম দামি রেস্টুরেন্টে বসে ওর দুটো হাত নিজের হাতে নিয়ে বলেছিলাম
– ‘এবার তো দুজনকে দুজনের বাড়িতে বলা উচিত।
‘ কথা ছিলো পরের শনিবার দেখা হলে বলবো যে বাড়ির সবাই শুনে কি বললো,
মেনে নিলো কি না।
কিন্তু তার আগেই তো সেই অচেনা বুলেট টা!
নাম বদলে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে গেলো স্বপ্নটাই।
যে ছেলেটা সব রকম গন্ডগোল থেকে দুরে সরে থাকতো!
যে নিজেকে কোনো ঝামেলাতে জড়াতোই না কখনো!
যে কেনো সে দিন কলেজের বাইরে দুর থেকে হলেও দেখার চেষ্টা করছিলো ভেতরে এতো পুলিশ কেনো!
সেই ছেলেটা কোথায় যেন হারিয়ে গেলো।
অনেক খুঁজেছি তাকে কিন্তু পাইনি। কোন কথাবার্তা ছাড়াই সে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো।
আচ্ছা, এটাই কি নিয়তি! এভাবেই কি শেষ হয়ে যায় ভালোবাসারা?
না চাইলেও কি এভাবেই প্রিয়জনকে ছেড়ে থাকতে হয়?
ধীরে ধীরে অতল অন্ধকারে তলিয়ে যাই আমি।
হয়ে যাই ডিপ্রেশনের রোগী।
আমার বাবা খুব কঠিন মনের মানুষ।
যেটা বলেন সেটাই হয়।
ছোটো বেলা থেকে যা বলেছেন সেটাই শুনে আসতে হয়েছে।
তবু আমি জানতাম বাবাকে ঠিক মানিয়ে নেবো।
চেষ্টা করবো বুঝাতে- ‘আমি আর ও’ সুন্দর একটা স্বপ্ন,
যা সব মেয়েরাই দেখে।
এই যে যার সাথে বাবা হঠাৎই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললেন,
এই যে আমার হাজার বারণ কোনো দাম পেলো না আর, সত্যিই যদি কাল আমায় তিন শব্দের কবুল বলতে হয়!
তখন কি করবো আমি?
যে তিন শব্দের কবুল একদিন মনে মনে বলে আমি আর সেই ছেলেটা হৃদয় বদলে নিয়েছিলাম আল্লাহ’কে কে সাক্ষী রেখে, তার কথা কি আমার তখন মনে পড়বে না এক বারও?
আমি কি চোখ বুজলেই দেখবো না সেই হাসি মুখটা?
যে হাসি মুখটার প্রেমিকা ছিলাম আমি।
চলবে….
‘সর্বনাশের দিনে’
(পর্ব-০৩)